1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশের অর্থনীতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ মনে করেন বাংলাদেশের অর্থনীতি ভুল পথে চলছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের এই মতামত দিতে প্রভাবিত করছে। কারণ ৮৪ ভাগ মানুষ একইসঙ্গে জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছেছবি: Samir Kumar Dey/DW

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই জরিপে বাংলাদেশের ঠিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয়েছে। তারা মনে করেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত  না নেয়ায় অর্থনীতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন," যারা বলেন অর্থনীতি ভালো নেই, তারা অর্থনীতি বোঝেন না।”

এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপে ওই তথ্য উঠে এসেছে। তাদের জরিপের শিরোনাম: ‘দ্য স্টেট অব বাংলাদেশ'স পলিটিক্যাল, গভর্ন্যান্স, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি: অ্যাকর্ডিং টু ইটস সিটিজেনস'।

তারা ৬৪ জেলার মোট ১০ হাজার ২৪০ নাগরিকের মতামত নিয়েছে। প্রতিটি জেলা থেকে সমানসংখ্যক নারী-পুরুষ এ জরিপে অংশ নেয়। এর মধ্যে গ্রামের বাসিন্দা ৬৪ ও শহরের ৩৬ শতাংশ। গবেষণাটি ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি সময়কালে করা হয়।

উত্তর দাতাদের কাছে রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিদের বিষয়ে নাগরিকদের উপলব্ধি, সমাজ ও অর্থনীতির গতিশীলতা, গণতন্ত্র ও নির্বাচন, নাগরিকত্ব, নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নীতির প্রভাব এবং সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।

'দ্রব্যমূল্য বাংলাদেশের মানুষকে সবচেয়ে সংকটে ফেলেছে'

This browser does not support the audio element.

সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকোন পথে রয়েছে- এমন প্রশ্নে ৬৯.৭ শতাংশ উত্তরদাতা জানায়, অর্থনৈতিকভাবে দেশ ভুল পথে আছে। সঠিক পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে ২৫.২ শতাংশ উত্তরদাতা। এই একই জরিপ তারা আগেও করেছিলেন।  ২০১৯ সালে করা জরিপে  ৭০.৩ শতাংশ নাগরিক মনে করত, বাংলাদেশের অর্থনীতি ঠিক পথে রয়েছে আর ২৮ শতাংশ মানুষ মনে করত ভুল পথে রয়েছে । কিন্তু এখন সেই মতামত অনেকটাই উল্টে গেছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাবফেলেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। দেশের ৮৪ শতাংশ মানুষের জীবনে এ সমস্যা গুরুতর প্রভাব ফেলেছে বলে জরিপে জানা গেছে। কিছুটা প্রভাব ফেলেছে ১৩ শতাংশ মানুষের জীবনে। বাড়তি দ্রব্যমূল্য জীবনে প্রভাব ফেলেনি এমন মানুষ রয়েছে কেবল ১ শতাংশ। মোটেও আঘাত পায়নি এমন লোকও রয়েছে ২ শতাংশ। ৪৪ শতাংশ মনে করছে, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি।

২০১৯ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশ সঠিক পথে ছিল বলে মনে করত ৭৭ শতাংশ মানুষ এবং ২১.৯ শতাংশ মনে করত ভুল পথে এগোচ্ছে দেশ। তবে ২০২২ সালে সঠিক পথে আছে বলে মনে করে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। সেক্ষেত্রে সাড়ে ১৯ শতাংশেরই আস্থা কমেছে। এখন ভুল পথে রয়েছে বলে মনে করে ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা আগের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি।

'সঠিক নীতি নির্ধারণের অভাবে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকট'

This browser does not support the audio element.

সিরডাপের পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন বলেন," জরিপে বাংলাদেশের অর্থনীতির বাস্তব অবস্থাই প্রতিফলিত হয়েছে। দ্রব্যমূল্যই বাংলাদেশের মানুষকে এখন সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় ফেলেছে। আর অর্থনীতির সূচক দেখলেও স্পষ্ট যে বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথে যাচ্ছেনা।”

তিনি বলেন, " এমন মনে হতে পারে এটা সাময়িক সমস্যা হচ্ছে, আমরা আবার সঠিক পথে উঠে যাবো। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটা সাময়িক কোনো সমস্যা নয়। বৈদেশিক মুদ্রার চাপ সামলাতে গিয়ে আমরা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছি। এর ফলে আমাদের দেশজ উৎপাদন কমে গেছে। রপ্তানি কমছে। বিনিয়োগ কমছে। কর্মস্থান কমছে। আমরা বেশি দামে বিদেশি  পণ্য আনছি। সেইভাবে আমাদের পণ্য যাচ্ছেনা। তাহলে তো মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়তেই থাকবে।”

তার কথায়, "রাজস্ব আদায় ঠিক মত করতে না পেরে টাকা ছেপে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। রাজস্ব আদায় যে সহসাই বেড়ে যাবে তা নয়। তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এভাবে টাকা ছাপতে থাকলে তো মূল্য স্ফীতি আরো বাড়বে। টাকার মান তো কমতেই থাকবে।”

পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন," ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত দিয়ে আর কত চলবে? বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমে আসছে। আমাদের কমছেনা। ডাবের  দাম, ডিমের দাম বাড়ার কী কারণ থাকতে পারে? আসলে আমাদের সঠিক নীতি নির্ধারণের অভাবে এই সংকট  হয়েছে। আমার মনে হয় অর্থনীতির অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে। রিজার্ভের ওপর চাপ আরো বাড়বে। কারণ সংকট কাটাতে দৃশ্যমান কোনো নীতি আমরা দেখতে পাচ্ছিনা।”

তার কথায়," জরিপে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা তো সঠিক বলেই মনে হয়। আমদানি কমছে, রপ্তানি বাড়ছেনা, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, রেমিট্যান্স কমছে, রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। ফলে অর্থনীতি তো খারাপের দিকেই যাচ্ছে। অবস্থা বেশি ভালো মনে হচ্ছেনা। এটা তো হঠাৎ করে হয়নি। এক দুই বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ”

তবে অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন," যারা বলছেন দেশের অর্থনীতি ভালো নেই, তারা আসলে অর্থনীতিই বোঝেন না। আমরা যখন দায়িত্ব নেই তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.২ শতাংশ। এরপর অধিকাংশ সময় ছিল ৯ শতাংশের মধ্যে, আদারওয়াইজ ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। কে বলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি খারাপ পরিস্থিতিতে? বিশ্বে অর্থনীতি নানাভাবে চাপে থাকলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো চলছে। যতটুকু খারাপ হয়েছে তা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে।''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ