দেশের প্রশ্নে এক হওয়ার ভিত্তি হোক গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধ
সালেক খোকন
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
একাত্তরের গণহত্যার একটি ঘটনা দিয়েই শুরু করছি। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল । পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা চালায় রাজশাহীর চারঘাট থানাপাড়ায়, সারদা পুলিশ একাডেমির ভেতরে।
বিজ্ঞাপন
হাজারের ওপর মানুষকে হত্যা করেছিল তারা। অধ্যাপক ড. জিন্নাতুল আলম জিন্নাকেও হত্যা করা হতো। কিন্তু দৈব্যক্রমেই বেঁচে যান তিনি।
পুলিশ একাডেমির সঙ্গেই তার বাড়ি। একাত্তরে তিনি ছিলেন অনার্স ফোর্থ ইয়ারের ছাত্র। থানাপাড়া গণহত্যায় খুব কাছ থেকে প্রিয়জনের মৃত্যু দেখেছেন, লাশ টেনেছেন, শহিদদের রক্তে ভিজেছে নিজের শরীর। সেসব কথা তার বুকের ভেতর জমে আছে কষ্টের মেঘ হয়ে।
জিন্নাতুল আলমের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন যেভাবে, "বেলা তখন দুইটা বা আড়াইটা হবে। এক পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের কমান্ডে পাকিস্তানি আর্মি সারদা পুলিশ একাডেমির ভেতরে ঢোকে। থানাপাড়াসহ আশপাশের মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল একাডেমির ভেতরের চরের মধ্যে। আর্মি দেখে সবাই ছোটাছুটি শুরু করে।ওরা সবাইকে একত্রিত করে প্রথমে। অতঃপর মহিলা ও শিশুদের আলাদা করে বলে, ‘‘তুম ঘার চলে যাও।''
সিপাহিরা অস্ত্র তাক করে চারদিক ঘিরে ফেলে। ওই ক্যাপ্টেন তখন অস্ত্র লোড করছে। আমাকে ওরা ডেকে নেয়। ব্রাশফায়ার করার প্রস্তুতি নিতে থাকে। এটা শুরু করে ওই পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন। ২০ বা ২৫ মিনিট নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় সে। মানুষের রক্তে ভেসে যেতে থাকে গোটা চরের মাটি।
সবকিছু ঘটছে চোখের সামনে। চাচাতো ভাই খায়রুল আলম পরাগ ‘আম্মা' বলে একটা চিৎকার দেয়। এরপর আর কোনো সাড়া নেই!'' ‘আমিসহ কয়েকজনকে ওরা প্যারেড গ্রাউন্ডে নিয়ে আসে। সেটি বেশ উঁচুতে। খানিক পরেই সেখান থেকে দেখা গেল চরে স্তূপ করা লাশের ভেতর থেকে অনেকেই পালাচ্ছে।''
‘৫০ বছর পর কঠিন হবে’
00:48
‘‘রক্তাক্ত অবস্থায় কেউ ওপরে, কেউবা নদীর দিকে ছুটে যাচ্ছে।'' ‘‘ওই ক্যাপ্টেন তখন চিৎকার দিয়ে বলে, ‘এলএমজি ছোড়ো, এলএমজি ছোড়ো।'
তখন এলএমজি দিয়ে ওরা নৃশংসভাবে মানুষগুলোকে মারে। চরের দিকে আসতেই দেখি চাচা আজিজুল আলমকে। গুলি লেগে তার ভুড়ির অনেকটাই বের হয়ে এসেছে। যন্ত্রণায় তিনি কাতরাচ্ছেন। জ্ঞান তখনও ছিল। প্রতিবাদ করে চাচা তখন ওই ক্যাপ্টেনকে চেচিয়ে বলেন, ‘ইয়ে ক্যায়সা জুলুম হ্যায় ভাই? ইয়ে ক্যায়সা জুলুম হ্যায়? খোদাতালা বরদাসত নেহি করেগা।' কথাগুলো পরপর তিনবার বলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আদ্যপান্ত
বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে কয়েকজন মুক্তিপাগল মানুষের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ সেই জাদুঘর নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
যাত্রা শুরু
১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচার একটি পুরনো বাড়ি ভাড়া নিয়ে যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর৷ আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের প্রয়াস নিয়েই যাত্রা হয় এই জাদুঘরের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
নতুন ঠিকানায়
ভাড়া বাড়ির স্থান-স্বল্পতার কারণে সংগৃহীত স্মারকগুলো যথাযথভাবে প্রদর্শন করা সম্ভব না হওয়ায় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আগারগাঁও এলাকায় জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়৷ ২০১১ সালের ৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন৷ প্রায় ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় জাদুঘরের নয়তলা ভবন৷ ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল নতুন ভবনে যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বীরশ্রেষ্ঠদের প্রতীক
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সামনে সাত বীরশ্রেষ্ঠর প্রতীক হিসেবে প্রাচীন স্থাপত্যরীতির সাতটি স্তম্ভ রাখা হয়েছে৷ এই স্তম্ভগুলো নওগাঁ জেলার পত্নীতলায় দিবর দিঘিতে স্থাপিত একাদশ শতকের রাজা দিব্যকের স্তম্ভের অনুকৃতি৷ ঐতিহাসিকদের মতে, দিব্যকের সেই স্তম্ভই বাংলার প্রথম বিজয়স্তম্ভ৷ এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশিদের অবিস্মরণীয় বিজয়ের স্মারক হিসেবে এই স্তম্ভগুলো স্থাপন করা হয়েছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বিশাল সংগ্রহশালা
মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মারক, মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদদের ব্যবহৃত সামগ্রী, অস্ত্র, দলিল, চিঠিপত্র ইত্যাদি মিলিয়ে ১৭ হাজারের বেশি নিদর্শন রয়েছে জাদুঘরের বিশাল সংগ্রহশালায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শিখা অম্লান
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম তলায় রয়েছে শিখা অম্লান৷ কালো মার্বেল পাথরে পানির ভেতর থেকে জ্বলছে সেই শিখা৷ উদ্বোধনের আগে সেগুনবাগিচার পুরোনো ভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও নতুন প্রজন্মের ৭১ জন মানুষ হেঁটে শিখা অম্লানটি নতুন জাদুঘরে নিয়ে আসেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য
জাদুঘরের প্রথম তলায় শিখা অম্লানের পাশে স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ব্রোঞ্জ নির্মিত ভাস্কর্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বিমান ও হেলিকপ্টার
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম তলার দুইপাশে ছাদের সঙ্গে আটকানো রয়েছে একটি যুদ্ধবিমান ও একটি হেলিকপ্টার৷ একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল বিমান ও হেলিকপ্টারটি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম গ্যালারির নাম ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’৷ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান পর্ব, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়ে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত দেশের ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে এ গ্যালারিতে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
প্রথম গ্যালারিতে আর যা কিছু
‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’ গ্যালারিতে আরও আছে ফসিল, প্রাচীন টেরাকোটা, মৃৎপাত্র, শিলাখণ্ডসহ নানা প্রকার নিদর্শনসহ ঐতিহাসিক ঘটনা ও ব্যক্তির আলোকচিত্র৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
দ্বিতীয় গ্যালারি
জাদুঘরের দ্বিতীয় গ্যালারির নাম ‘আমাদের অধিকার আমাদের ত্যাগ’৷ এই গ্যালারি থেকেই দর্শক সরাসরি ঢুকে পড়বেন মহান মুক্তিযুদ্ধের পর্বে৷ স্বাধীনতার দাবিতে রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭০ সালের ৩ জানুয়ারির সমাবেশ, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি৷ মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত রাইফেল আর গুলির বাক্সসহ আছে শহিদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত নানা সামগ্রী৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অপারেশন সার্চলাইট
দ্বিতীয় গ্যালারির একটি অংশে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যার চিত্র৷ অন্ধকার এই গ্যালারিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইটের দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকছে হেডলাইট জ্বালানো একটি সামরিক যান৷ গাড়ির সেই আবছা আলোয় দেখা যাবে মেঝের চারপাশে পড়ে থাকা গুলিতে নিহত মৃতদেহ৷ আর দেয়ালে আছে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চালানো গণহত্যার আলোকচিত্র৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তৃতীয় গ্যালারি
জাদুঘরের তৃতীয় গ্যালারিটি চতুর্থ তলায়৷ এর নাম ‘আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র’৷ এখানে আছে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের জীবনযাত্রা, বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বড় আকারের ডিজিটাল প্রিন্ট৷ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ হওয়া, রাজাকারদের তৎপরতা, মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধের আশ্রয়স্থল এসব৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ
তৃতীয় গ্যালারিতে আরো আছে পণ্ডিত রবিশঙ্করের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ বিটলসের বিখ্যাত শিল্পী জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানের জর্জের নিজ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি ও সুরের স্টাফ নোটেশন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
চতুর্থ ও সবশেষ গ্যালারি
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সর্বশেষ গ্যালারিটির নাম ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ’৷ এতে আছে নৌযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শন৷ বিলোনিয়ার যুদ্ধের রেলস্টেশনের রেলিং, ট্রলি ইত্যাদি৷ এছাড়া আছে মিত্রবাহিনীর ছত্রীসেনাদের আক্রমণ, দগ্ধ বাড়িঘর৷ সবশেষে বিজয় অর্জন৷ শেষ হয়েছে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের অনুলিপিটি দিয়ে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় ঘুরে প্রদর্শনী করা হয়৷ ২০০১ সাল থেকে দু’টি বড় বাসের মাধ্যমে এ ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর ইতিমধ্যেই ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছে, তুলে ধরেছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
সময়সূচি ও অন্যান্য তথ্য
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গ্রীষ্মকালীন (মার্চ-সেপ্টেম্বর) সময়সূচি সকাল ১০টা-বিকেল ৬টা৷ আর শীতকালীন (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি) সময়সূচি হলো সকাল ১০টা-বিকাল ৫টা৷ রোজার মাসে জাদুঘর খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত৷ জাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধ রোববার৷ প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
16 ছবি1 | 16
ওই পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন তখন গর্জে উঠে। ‘শুয়োরকা বাচ্চা' বলেই চাচার খুব কাছে গিয়ে কপালের মাঝ বরাবর একটা গুলি করে। তিনি শুধু একবার ‘উ্হ' শব্দটি করেছিলেন, এরপরই উপুর হয়ে পড়ে যান। চাচার করুণ মৃত্যুতে বুকের ভেতরটা তখন খামচে ধরে।
এরপর লাশগুলোকে স্তূপ করে ওরা পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছোটভাই পান্নার শরীর গুলিতে ঝাজরা হয়ে গিয়েছিল। আগুনে এক হাত বেকেও যায়। ভগ্নিপতি মহসীন ভাইয়ের বুক ও পেটে গুলি লেগে ভোগলা হয়ে যায়। থানাপাড়ায় আনুমানিক ১৩শ মানুষ শহিদ হয়েছেন। গোটা গ্রামে এমন কোনও পরিবার পাবেন না যে কেউ শহিদ হয়নি। অথচ স্বাধীনতা লাভের পর কোনও সরকারই শহিদদের তালিকা করেনি, করার চেষ্টাও হয়নি।আর্থিক সুবিধার দরকার নেই, রাষ্ট্র তো শহিদ পরিবারগুলোর সম্মানটা অন্তত দিতে পারতো।তাহলে শহিদ পরিবারগুলোকে কি রাষ্ট্র বোঝা মনে করে?''
জিন্নাতুল আলমের প্রশ্নের উত্তর আমরা দিতে পারিনি। বরং রাষ্ট্র কেন শহিদ পরিবারগুলোর প্রতি উদাসীন ছিল সে প্রশ্ন আমাদেরও।
স্বাধীন এই দেশের মাটির সঙ্গে মিশে আছে লাখো শহিদের রক্ত। তাদের কথা ভুলে গেলে, একাত্তরের রক্তঋণ কখনোই শোধ হবে না। শহিদদের তালিকা না হওয়া এবং শহিদ পরিবারগুলোর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশকে আজও দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
স্বাধীনতা লাভের পর বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ভাতাসহ সরকারের নানা সুবিধা বা সম্মান লাভ করলেও দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা শহিদের পরিবারের খোঁজ রাখেনি কেউই। ফলে পাকিস্তানের অন্যায়, অত্যাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে জীবন দিয়ে স্বাধীনতা আনলেও শহিদ পরিবারগুলোর প্রতি বৈষম্য ও অবহেলা থেকেই গেছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার হাত ধরেই এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন অন্তবর্তীকালীন সরকার।তাই শহিদ স্বজনদের অনেকে জানতে চান- একাত্তরের শহিদদের তালিকা ও শহিদ পরিবারগুলোকে স্বীকৃতি প্রদানে এ সরকার কি কোনো উদ্যোগ নেবে?
অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে উদযাপিত হবে এবারের বিজয় দিবস। কেমন হবে সেটি- তা নিয়েও চলছে বিস্তর আলোচনা। অনেকেই বলছেন বিবর্ণ বিজয় দিবস পালিত হবে এবার। যেরকম পঁচাত্তরের পরবর্তী সময়গুলোতে হয়েছিল।
কেন এমন সমালোচনা?
অন্তবর্তীকালীন সরকার বিজয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনে বরাদ্দ আগের চেয়ে বাড়িয়ে তিনগুণ করলেও (গত বছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল তিন কোটি ৮৭ লাখ টাকা, এ বছর বাড়িয়ে ৯ কোটি ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক
মন্ত্রণালয়) অনুষ্ঠানের পর্ব কমিয়ে দিয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে কুচকাওয়াজ ও শিশু-কিশোরদের ডিসপ্লের মতো আয়োজন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণামূলক আলোচনা পর্বটিও থাকছে না এবার। এ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘‘আগে যে প্রচলিত কুচকাওয়াজ হতো, এতে জনগণের
সম্পৃক্ততা থাকতো না, সেখানে স্কাউট ও স্বেচ্ছাসেবকরা থাকতো।তার সঙ্গে অন্যান্য বাহিনী থাকতো। এতে সরাসরি জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না। এবার শিশু, নারী, পুরুষ সব শ্রেণির জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে। তাই কুচকাওয়াজের পরিবর্তে প্রতি উপজেলায় আয়োজন করা হবে বিজয় মেলার।'' (সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, ১০ডিসেম্বর ২০২৪)।
আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোরের ফটোগ্রাফার হিসেবে শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবিরের প্রায় সাড়ে ৫০০ ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রী আবদুল হামিদ রায়হান৷ ছবিঘরে দেখুন তার কয়েকটি৷
২৫ মার্চ, কুষ্টিয়া
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের পর থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে কুষ্টিয়া৷ ২৩ মার্চ ইসলামিয়া কলেজ মাঠে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে শোডাউন করেন ছাত্র-মজুর-জনতা৷ ২৫ মার্চ ১৯৭১, কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে হয় আরেকটি সমাবেশ৷ ছবিটি সেই সময়ের৷
পতাকা উত্তোলন
কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠের সেদিনের সমাবেশে ছাত্র নেতারা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন গোলাম কিবরিয়া, আব্দুর রউফ চৌধুরী, নূরে আলম জিকো প্রমুখ৷ সেই আন্দোলনে হামিদ রায়হান নিজে শুধু যুক্তই থাকেননি ক্যামেরায় ছবিও তুলে রেখেছেন৷
ছবি: Abdul Hamid Raihan
তির-ধনুকে প্রস্তুতি
কয়েক হাজার মানুষ সেদিন জড়ো হয়েছিলেন কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে৷ পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রস্তুতি হিসেবে লাঠি, তির-ধনুক, দা ও নকল রাইফেল নিয়ে জড়ো হন তারা৷ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ অংশ নেন সেই সমাবেশে৷
ছবি: Abdul Hamid Raihan
শিকারপুর ট্রেনিং ক্যাম্প
প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তখন বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন শুরু করেছেন৷ পুরোদমে চলছে যুদ্ধ৷ বাংলাদেশ ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোর কাজ করছিল বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে৷ ১৫ সেপ্টেম্বর ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোরের ফটোগ্রাফার হিসেবে যোগ দেন আবদুল হামিদ রায়হান৷ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার শিকারপুর ট্রেনিং ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুশীলনের এই ছবিটি তিনি তুলেছেন ২০ নভেম্বরে৷
ছবি: Abdul Hamid Raihan
প্রশিক্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা
একই সময়ে শিকারপুর ট্রেনিং ক্যাম্পে অনুশীলনরত আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা৷ আবদুল হামিদ রায়হান ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্প, শরণার্থী ক্যাম্প ও মুক্তাঞ্চলগুলোতে৷ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হামলায় ধ্বংস হওয়া সেতু, কালভার্ট ও ভবনের ছবিও উঠে এসেছে তার ক্যামেরায়৷ সেসব ছবি স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছিল।
পাক সেনাদের রকেট বোমা
এই ছবিটি তোলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর৷ যশোরের পিকনিক কর্নারের পাক বাহিনীর ফেলে যাওয়া তাজা রকেট বোমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে দুই শিশু৷
রাজাকার আটক
চার রাজাকারকে আটক করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা৷ একজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে একটি পোস্টার দেখা যাচ্ছে যাতে লেখা, ‘‘রক্তের ঋণ রক্তে শুধবো, দেশকে এবার মুক্ত করবো৷’’ ছবিটি কুষ্টিয়া থেকে তুলেছিলেন আবদুল হামিদ রায়হান৷
এ এইচ এম কামরুজ্জামানের পরিদর্শন
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান৷ তার সঙ্গে ছিলেন মেজর জলিল, ব্যারিস্ট্রার আমীর-উল-ইসলাম, মেজর হায়দার প্রমুখ৷ আবদুল হামিদ রায়হান এই ছবিটি তুলেছেন ০২ ডিসেম্বর৷
স্বেচ্ছাসেবীদের দল
ভারতে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়োগ দিতো বাংলাদেশ ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোর৷ ক্যাম্পগুলোতে স্কুল চালানো, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা দিতেন তারা৷ ক্যাম্পের যুবক-যুবতীদের সংগঠিত করে বিভিন্ন কাজে যুক্ত রাখতেন স্বেচ্ছাসেবীরা৷ ছবিতে ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোরের সঙ্গে যুক্তদের একাংশকে দেখা যাচ্ছে৷
অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধা
এক মুক্তিযোদ্ধার বন্দুক তাক করা এই ছবিটি তোলা সাতক্ষীরার দেবহাটায়৷ কয়েকবছর আগে দৃক গ্যালারিতে ছবিটি প্রদর্শিত হয়৷ সেটি দেখে ছবির মুক্তিযোদ্ধাকে খবর দেন তার এক নিকটাত্মীয়৷ আবদুল হামিদ রায়হান জানান, ‘‘নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে একাত্তরে নিজের ছবি দেখে আমাকে কান্নায় জড়িয়ে ধরেন ওই মুক্তিযোদ্ধা৷ তখনই জানি তার নাম মোসলেহ উদ্দিন৷’’
স্বীকৃতি পাওয়ার উল্লাস
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত৷ সেদিন কলকাতায় মিছিল বের করেন বাংলাদেশিরা৷ একটি মিছিলে প্ল্যাকার্ড হাতে ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ৷
৫৪০টি ছবি
একাত্তর সালে আবদুল হামিদ রায়হান তার ক্যামেরা দিয়ে সংগ্রহ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক সচিত্র দলিল৷ শরণার্থী ক্যাম্প ও সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন অ্যাকশন ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে ৫০০ ছবি তোলেন তিনি৷ সেগুলো ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংস্থায় পাঠানো হতো৷ ছবি দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখেন এই আলোকচিত্রী মুক্তিযোদ্ধা৷
ছবি: Salek Khokon
12 ছবি1 | 12
বিজয় দিবস উদযাপন স্বাধীন দেশের একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। এটি কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়। বহুবছর ধরে এ জাতীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে এক মাস আগ থেকেই সারা দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লের অনুশীলন শুরু করে। ডিসপ্লে-তে চলে দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের নানা ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টাও। এসব আয়োজন শিশু-কিশোরদের মনোজগতে যেমন মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের স্বাধীনতার বিষয়ে জানার আগ্রহ সৃষ্টি করে, তেমনি তাদের মনে তৈরি হয় দেশাত্ববোধও।
বর্তমান সময়ে এমন আয়োজনে শিশু-কিশোরদের যুক্ত রাখাটাই বরং যুক্তিযুক্ত ছিল। আর এই কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই ব্যাপক সংখ্যক মানুষের সম্মীলন ঘটে প্রতিটি উপজেলায়।
তাই এটির বিকল্প কোনোভাবেই বিজয় মেলা নয়। বরং সরকার কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লের পাশাপাশি বিজয় মেলারও আয়োজন করলে একাত্তরের প্রতি তাদের বিশেষ শ্রদ্ধার জায়গাটিও মানুষের কাছে স্পষ্ট হওয়ার সুযোগ ঘটতো।
এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ দিবসে তাদের বীরত্বের ইতিহাস ও স্বপ্নের বাংলাদেশ নিয়ে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে থাকেন। সেখানে যেমন আবেগ থাকে, তেমনি থাকে স্বাধীন দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নেয়ার দৃপ্ত আহ্বান। তাই অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা যারা ছিনিয়ে আনলেন, তারা কোন বাংলাদেশ
প্রত্যাশা করছেন- সেটি শোনাও রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের অংশ হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশিষ্টজনের। তাই এ বছরে বিজয় দিবসের পরিবর্তিত আয়োজন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের মনোভাব নেতিবাচক রূপে স্পষ্ট হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
শুরু থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধপ্রশ্নে অন্তবর্তীকালীন সরকার নিজেদের অবস্থান সুষ্পষ্ট করতে পারেনি। অন্যদিকে নানা কারণে এ সরকার স্বাধীনতাবিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে বলেও মনে করেন কেউ কেউ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা তথ্য নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে। আবার শেখ হাসিনার সরকারের আমলের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও দমন-পীড়নের কারণ দেখিয়ে একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকাকেও অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। ফলে, সাধারণের মনেও নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
তবে দেরিতে হলেও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে নিরবতা ভাঙেন প্রধান উপদেষ্টা। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানের বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধারা বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণময় এবং মুক্ত বাতাসের যে স্বপ্ন নিয়ে রাষ্ট্রকে স্বাধীন করেছিলেন, আমি তাঁদের সেই স্বপ্ন পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা এখন থেকে বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই, যেখানে সত্যিকার অর্থে জনগণই হবেন সব ক্ষমতার মালিক।''
মুক্তিযুদ্ধকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের ফলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও পরিচিতি লাভ করেছে। দেশ স্বাধীন করার মহান ব্রত নিয়ে '৭১–এর ২৫ মার্চ কালরাত থেকে বাঙালি সেনারা সেনানিবাস ত্যাগ করে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একই সঙ্গে এই দেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, সাধারণ মানুষ—সবাই যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। পরবর্তী সময়ে যা একটি জনযুদ্ধে রূপ নেয়। আমাদের মা–বোনেরা মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণসহ বিভিন্নভাবে যুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন।' (সূত্র: প্রথমআলো, ২১ নভেম্বর ২০২৪) আমরাও চাই প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যটি সত্যি হোক।তার নেতৃত্বে
অন্তবর্তীকালীন সরকার একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকুক। তা না হলে একটি পক্ষ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের ইতিহাসকে ম্লান করবে, প্রশ্নবিদ্ধ করবে একাত্তরের সব অর্জন ও বিজয়গাথা। একাত্তরকে বাদ দিয়ে সত্যিই কি আমরা এগোতে পারবো? উত্তরটি অবশ্যই- না।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অস্তিত্বের ইতিহাস, আমাদের শেকড়। ব্যক্তি ও দলের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে।কিন্তু দেশের প্রশ্নে সকলের এক হওয়ার ভিত্তি হোক গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধ।