1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশের মাটিতে টেস্টে ভারতের লজ্জাজনক হারের কারণ কী?

শময়িতা চক্রবর্তী
২৬ নভেম্বর ২০২৫

প্রথমে কলকাতা, তারপর গুয়াহাটিতে ভারতের পুরুষ ক্রিকেট দলকে অবহেলায় হারালো সাউথ আফ্রিকা। কেন এই হার?

এই জয়ের ফলে ২৫ বছর পর ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতলো দক্ষিণ আফ্রিকা দল।
ভারতের এই লজ্জাজনক পারফরম্যান্সে ক্ষুব্ধ দেশের ক্রিকেট মহল। ছবি: Biju Boro/AFP

সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে দ্বিতীয় টেস্টে ৪০৮ রানে বিপর্যস্ত ভারতের পুরুষ ক্রিকেট দল। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সের পর গৌহাটির এই ম্যাচে লজ্জাজনক হারের পরে সাউথ আফ্রিকা ২-০-তে হোয়াইট ওয়াশ করলো ভারতকে। তাও দেশের মাটিতে যা বরাবরই ভারতের শক্তিবলে মনে করা হতো। তবে এটা প্রথম বার নয়। এর আগে গত বছরেই নিউজিল্যান্ডও ৩-০ তে হারিয়েছে ভারতকে। ভারতের এই পারফর্ম্যান্সকে সর্বকালীন লজ্জাজনক বলে মনে করছেন ক্রিকেট মহলের একাংশ।

সাউথ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ৪৮৯ রান করে। সেই রান তাড়া করে ২০১ এ আটকে যায় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ২৬০ করে ভারতকে বিশাল রানের টার্গেট দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। পঞ্চম দিনে সেই লক্ষ্যপূরণ করে জয়ের স্বপ্ন না দেখলেও, ক্রিকেটপ্রেমীদের আশা ছিল অন্তত ড্র-য়ের চেষ্টা করবে ভারত। সেই আশায় জল ঢেলে ৯৫ রানে এক উইকেট খোয়ানোর পর ১২২ রানে সাতটি উইকেট হারায় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম ইনিংসের থেকেও কম রানে, মাত্র ১৪০-এ সব ইউকেট হারিয়ে ম্যাচটি হারে ভারত। স্পিনার সাইমন হারমার এবং অপর বোলার মার্কো জানসেনের বোলিংয়ের সাম নেই দাঁড়াতেই পারেননি ভারতীয় ব্যাটাররা। এই জয়ের ফলে ২৫ বছর পর ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতলো দক্ষিণ আফ্রিকা দল।

 

ভারতের এই লজ্জাজনক পারফরম্যান্সে ক্ষুব্ধ দেশের ক্রিকেট মহল। প্রাক্তন স্পিনার অনিল কুম্বলের মতে এই ম্যাচে 'বিশ্রী ভাবে আত্মসমর্পণ' করেছে ভারত। জিও হটস্টারে তিনি বলেন, "একটু লড়াকু মানসিকতা, একটু অ্যাডজাস্ট করে উইকেট ধরে রাখার প্রয়োজন ছিলো। খুব দুঃখজনক।"

স্পিন বোলিং-এ ধরাশায়ী ভারত

ভারতীয় ব্যাটারদের সমালোচনা করে ইরফান পাঠান সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, 'ধৈর্য এবং টেকনিকের দুঃখজনক প্রদর্শন হয়েছে এদিন'। তিনি লেখেন, 'স্পিন খেলতে পারে এমন ব্যাটারদের দলে নেওয়া প্রয়োজন।'

স্পিন বোলিং-এর সামনে ভারতের ব্যাটাররা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে এমনটা অনেকেরই কল্পনার বাইরে ছিলো। সাংবাদিক এবং জন সংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রনীল রায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "ভারতের শক্তি ছিলো দেশের মাটিতে খেলা এবং স্পিনারদের অবলীলায় ট্যাকল করতে পারা। যে দুটোকে আমরা শক্তি বলে মনে করতাম সেই দুই জায়গাতেই সাংঘাতিক খারাপ ফল দেখলাম। এই স্পিনারদের খেলতে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে শ্যেন ওয়ার্ন, মুরলীধরণ বা সাকলেইন মুস্তাকের সামনে পড়লে কী হতো? দুদিনেই ম্যাচ শেষ হেয়ে যেত। এই দলের একটা আপাদমস্তক পরিবর্তন দরকার।"

 

একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন ক্রিকেটপ্রেমী এবং অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "এমন নয় যে সাউথ আফ্রিকার স্পিনারদের থেকে ভালো স্পিনার হয় না। আমাদের দেশের ব্যাটাররা এরকম স্পিনারদের অবলীলায় খেলে এসেছেন। আমরা যা পারফর্ম্যান্স দেখলাম তার থেকে শচীন (টেন্ডুলকর) বাঁ হাতে বা দাদা (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) ডান হাতে খেললেও এর থেকে ভালো খেলতেন।"   

এদিনের ম্যাচের পরে গম্ভীর অবশ্য বলেন তাকে সরানো হব্যে কিনা সেই সিদ্ধান্ত বোর্ডের। তিনি আরও বলেন, "সকলেই এই হারের জন্য দায়ী। তবে দায়টা আমার থেকে শুরু হচ্ছে। আমাদের অনেক ভালো খেলতে হবে। ৯৫/১ থেকে ১২২/৭ হয়ে যাওয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।" 

'কোচ বদলানোর দায়'       

ভারতের এদিনের এই হারের পর কোচ গৌতম গম্ভীরকে দায়ী করেছেন অনেকেই। অঙ্কিত শর্মা লেখেন, 'ওরা (সাউথ আফ্রিকা) এলো, দেখলো, এবং ভারতীয় দলকে দুরমুশ করলো। এমন একটা সময় ছিলো যখন ভারত দেশের মাটিতে অপ্রতিরোধ্য ছিলো। এখন যে কোনো দল আমাদের হারাতে পারে। ভারতের এই পতনের জন্য কে দায়ী?"

 

প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি ডিডাব্লিউকে বলেন, "এই হার অবশ্যম্ভাবী ছিলো। আমার যেটুকু অভিজ্ঞতা আছে তা থেকে বুঝতে পারছিলাম ভারতের এই পরিণতি হবে। আমি বলেছিলাম একথা। আমাদের সিলেকশন প্রক্রিয়ায় স্থায়িত্ব নেই। টেস্ট ক্রিকেটের যোগ্য খেলোয়াড়রা নিয়মিত দলে থাকছেন না। সরফারাজ খান, অভিমন্যু ঈশ্বরণের মতো খেলোয়াড়দের ব্যবহার করা হচ্ছে না। এই দায় কে নেবে?"

দলে অভিজ্ঞতার অভাব আছে বলে মনে করেছেন মনোজ। তিনি বলেন, "অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প হয়না। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মতো প্লেয়ারদের অবসর নিতে এক প্রকার বাধ্য করা হলো। গম্ভীরের উচিত পদ ছেড়ে সরে দাঁড়ানো। আবার নিজেকে ডমেস্টিক ক্রিকেটে কোচ হিসেবে প্রমাণ করুন। তার পর বিসিসিআই যদি মনে করে তাহলে ভারতের কোচ হবেন।"  

অন্যদিকে, রাহুল বলেন, "কোনো ক্রিকেটারকে দলে নিলে তার উপর ভরসা করা দরকার। আজকে যিনি তিন নম্বরে নামছেন পরের ম্যাচে তিনি আট নম্বরে নামছেন। এভাবে হয় নাকি? বিশ্বাস না করলে সেই খেলোয়াড়েরও তো মনোবল ভাঙে।"    

'টেস্ট ক্রিকেটে মনোযোগ দরকার' 

তবে ভারতের খেলোয়াড়দের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেট খেলার চর্চাও কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন একাংশ। এই ম্যাচের পর জিও হটস্টারে কুম্বলে জানান, "কেবলমাত্র হেরে যাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়, যে ভাবে হারলো সেটাই চিন্তার। টেস্ট ক্রিকেটে একটা অন্য মানসিকতার প্রয়োজন হয়।"

প্রাক্তন ভারতীয় বোলার ঈশান পোরেল ডিডাব্লিউকে বলেন, "কেবলমাত্র একটা কারণেই তো কোনো দল ম্যাচ হারে না। একাধিক কারণ থাকে। আমার নিজের মনে হয়, দল বাছাইয়ের সময় রঞ্জি ট্রফির মতো ঘরোয়া ম্যাচগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেবলমাত্র আইপিএল বা টিটোয়েন্টির তারকা খেলোয়াড়রাই নন, রঞ্জিতে ভালো খেলেছেন এমন যারা আছেন তাদের বেশি সুযোগ দেওয়া দরকার। যেমন সারফারাজ এবং অভিমন্যু।" 

সামাজিক মাধ্যমে ভারতীয় টেস্ট দলের পারফরমেন্স এবং কোচ গৌতম গম্ভীরের কৌশলের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। এই হার মেনে নিতে না পারা ক্রিকেট ভক্তদের একটা বড় অংশ কোচ গম্ভীরের উপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন। বিসিসিআই অবশ্য এখনো কিছু বলেনি।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ