1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশের মানুষকে খাওয়ানোর ক্ষমতা ভারতের আছে

গৌতম হোড়
গৌতম হোড়
২৮ অক্টোবর ২০২২

ব্যতিক্রম শুধু ভোজ্য তেল৷ বাকি সব খাদ্যশস্য, দুধ, ডিম, মাংস উৎপাদনে ভারত স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ তাকে বাইরের দিকে তাকাতে হয় না৷

ভোজ্য তেল ছাড়া বাকি সব খাদ্যশস্য, দুধ, ডিম, মাংস উৎপাদনে ভারত স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ ছবি: Getty Images/AFP/S. Kanojia

যদি বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে অ্যামেরিকা মন্দার মধ্যে প্রায় ঢুকে বসে আছে৷ ইউরোপ ঢুকলো বলে৷ এই যদি ২০২৩ সালের সম্ভাব্য ছবি হয়, তাহলে এর আঁচ কমবেশি সব দেশের গায়েই লাগবে৷ তখন ভারতও বাদ থাকবে না৷

তবে ভারতের ক্ষেত্রে এমন একটি সুবিধা আছে, যা অনেক দেশের নেই৷ বিপুল জনসংখ্যা সত্ত্বেও ভারত খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ অর্থাৎ, দেশের চাহিদার থেকে বেশি উৎপাদন হয়৷ ধান, গম, ডাল, জোয়ার-বাজরা-সহ অন্য দানাশস্য, ফল, সবজি, দুধ ও দুধজাত জিনিস, ডিম ও মুরগি এবং মাংসের ক্ষেত্রে ভারতে চাহিদার থেকে বেশি উৎপাদন হয়৷ একমাত্র চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদন হয় তৈলবীজ৷ ফলে ভোজ্য তেলের প্রায় ৪০ ভাগ বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়৷ তাছাড়া অশোধিত তেলের সিংহভাগই বিদেশ থেকে আনতে হয়৷ ভোজ্যতেল বাদ দিলে খাবার-সংক্রান্ত বাকি সব জিনিস ভারত তার প্রয়োজন মিটিয়ে বিদেশে পাঠাতে পারে৷ বিশেষ করে ধান, গম এবং অন্য খাদ্যশস্য, দুধ ও দুধজাত জিনিস দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বিদেশে রফতানি করতেই পারে ভারত৷ অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে বাম্পার ফসল হওয়ার পর তা সমুদ্রে ফেলে দেয়ার ভাবনাচিন্তা করা হয়েছিল৷ প্রবল বিরোধিতার পর সেই পথে হাঁটেনি সরকার৷

এই তথ্য একটা কথা বলে দিচ্ছে, যদি ভারতের গায়ে আর্থিক মন্দার আঁচ ভালোভাবেও লাগে, দেশের মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে না৷ দেশের মানুষকে খাওয়ানোর সাধ্য সরকারের থাকবে৷ এই সাধ্য না থাকলে গত প্রায় তিন বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে দেশের সব গরিব মানুষকে বিনা পয়সায় চাল, গম, ডাল, চিনি এবং তেল দেয়া সম্ভব হত না৷ গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তরপ্রদেশে ভোট কভার করতে গিয়ে দেখেছিলাম, গরিব, নিম্নবিত্তদের কাছে সেই রেশন নিয়মিত পৌঁছেছে৷ চাল, ডাল-সহ মোট সাতটি জিনিস তারা পেয়েছেন বিনা পয়সায়৷ এখনো তারা সেই রেশন পাচ্ছেন৷ উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র জয়ের ক্ষেত্রে এই ফ্রি-রেশনের ভূমিকা ছিল বিশাল৷

এছাড়াও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিরও নানা ধরনের পরিকল্পনা আছে৷ ইউপিএ-র আমলে সংসদে খাদ্য সুরক্ষা আইন পাস হয়েছে৷ যার ফলে দেশের ৬৭ শতাংশ মানুষের দুই টাকা কেজি দরে গম ও তিন টাকা কেজিতে চাল পাওয়ার আইনি অধিকার আছে৷ তাছাড়া কৃষকরা বছরে ছয় হাজার টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পান৷ আছে একশ দিনের কাজের গ্যারান্টি,  বয়স্ক পেনশন৷ পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু আছে, যাতে মেয়েরা মাসে পাঁচশ টাকা করে পান৷ রাজ্যের মানুষ বছরে পাঁচ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবিমাও পান৷

মন্দা আসলেও তারা এই খাদ্যশস্য পেতে থাকবেন৷ ফলে মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, জিনিসের দাম বাড়ার ঘটনা ঘটলেও তারা খুব বিপাকে পড়বেন না৷ ঝড়-ঝাপটা যা আসার আসবে মধ্যবিত্তদের উপরে৷ রাশিয়ার কল্যাণে ভারত কম দামে অশোধিত তেল পাচ্ছে বলে, অর্থনীতি অতটা বেহাল হয়নি৷ কিন্তু ইতিমধ্যেই অর্থনীতির উপর চাপ এসে পড়ছে৷ শিল্পে বৃদ্ধির হার গত জুনে ১২ শতাংশ কমেছে৷ ডলারের তুলনায় টাকার দাম পড়েছে৷ তার প্রভাব পড়েছে রফতানিতেও৷ গত আর্থিক বছরে ৪২ হাজার দুইশ কোটি টাকার রফতানি হয়েছিল৷ কিন্তু ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে রফতানির অবস্থা খারাপ  হয়েছে৷ ভবিষ্যতে আরো হতে পারে৷

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লিছবি: privat

ওই বিশেষজ্ঞদের কথায় আবার ফেরা যাক৷ তারা মোটামুটি একটা বিষয়ে একমত যে, অ্যামেরিকা, ইউরোপে যদি মন্দা দেখা দিলে তার একটা প্রভাব ভারতে পড়বে৷ কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতিও যে মন্দায় চলে যাবে, এরকম ভাবাটা ঠিক হবে না৷ তবে এর ফলে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি যে কমবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷

কিন্তু মন্দা আসবে, দেশের মানুষ খেতে পারবে না, প্রায় দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা হবে, এরকম ভাবারও কোনো জায়গা নেই৷ জনসংখ্যা ১৩০ কোটি ছাড়ালেও ভারত খাদ্যশষ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পরিমাণ পাঁচ শতাংশের কমে চলে যেতে পারে, আরো চাপ আসতে পারে, রফতানি কমতে পারে, উৎপাদন ক্ষেত্রে তার প্রভাব দেখা দিতে পারে, এ সবই সত্য৷ সেই সঙ্গে এটাও সত্য এত কান্ডের পরেও দেশের মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়ার ক্ষমতা ভারতের আছে৷ করোনা তার প্রমাণ৷ দীর্ঘ লকডাউনের ফলে অর্থনীতিতে প্রবল চাপ এসেছিল৷ কিন্তু তখনো মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছে সরকার৷ লকডাউনের পর সেই চাপ কাটিয়ে উঠে, অর্থনীতি আবার তেজি হয়েছে৷ আর্থিক বৃদ্ধির পথে ফিরেছে ভারত৷

ফলে মন্দা নিয়ে আশঙ্কা থাকলেও আতঙ্ক নেই

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ