1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশের রাজনীতিতে আলোচনায় বিদেশিরা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ জুন ২০২৩

বাংলাদেশের রাজনীতি এবং নির্বাচন নিয়ে এখন বিদেশিরা কী বলছেন এটা নিয়েই মানুষের আগ্রহ বেশি৷ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কী করছে সেটা নিয়ে আলোচনা তেমন নেই৷ বলা চলে রাজনীতির মাঠ বাংলাদেশের হলেও খেলোয়াড় বিদেশিরা৷

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় আছেন৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance

ক্ষমতাসীন এবং বিরোধীরা বিদেশিদের ভূমিকা নিয়ে কথা তো বলছেনই৷ দেশের সাধারণ মানুষেরও প্রশ্ন বিদেশিরা বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে কী করছেন? আর এই আলোচনায় শীর্ষে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ তারপর চীন ও ভারত৷ দূরবর্তী হলেও রাশিয়া নিয়েও কথা হচ্ছে৷ আর ইউরোপের দেশগুলোর অবস্থান সম্পর্কেও আরো তথ্য চান এখানকার লোকজন৷

বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালে প্রিন্স বলেন, ‘‘বাংলাদেশ বৃহৎ শক্তিগুলোর খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে৷ এটা ব্যাটেল গ্রাউন্ড হয়ে যেতে পারে৷ বাংলাদেশ ক্রসফায়ারে পড়ে যেতে পারে৷ এর জন্য দায়ী বর্তমান সরকার৷'' 

‘বাংলাদেশের গুরুত্বের কারণে বিদেশিরা কথা বলছে’

This browser does not support the audio element.

আর এর জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ সচেতন হয়েছেন তাই বিদেশিরা যা বলছেন তা নিয়ে কথা বলছেন৷ তথ্য বিশ্লেষণ করছেন৷ আর বাংলাদেশের গুরুত্বের কারণে বিদেশিরা বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলছে৷''

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘দেশের মানুষ মনে করছেন রাজনৈতিক দলগুলো দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে উদ্যোগী হবে না৷ যদি বিদেশি চাপে হয় তো হতে পারে৷ আর সরকার বা বিরোধী সব রাজনৈতিক দলই তাদের মতো করে বিদেশিদের সমর্থন নিতে চাইছে৷ রাজনীতির মাঠে যে যাই বলুক না কেন তার আসল উদ্দেশ্য চাপ কমানো এবং নিজেদের দিকে সমর্থন নেয়া৷''

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নতুন মার্কিন ভিসা নীতির পর রাজনীতিতে দেশীয় কেনো উপাদানের আর প্রধান্য দেখা যাচ্ছেনা৷ সরকার এবং বিরোধীরা ওই ভিসা নীতি নিয়েই আছে৷ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই আবার ভিসা নীতির পক্ষে কথা বলছে৷ কিন্তু নতুন ভিসা নীতির পর বিএনপির আন্দোলনের তেজও আর বাড়ছে না৷ আর সরকার তথা আওয়ামী লীগও কিছুটা সহনশীল৷

এর মধ্যে রাজনীতির মাঠে নতুন এসেছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ৷ রাশেদ খান মেনন সংসদে সেন্টমার্টিনের সঙ্গে সরাসরি অ্যামেরিকাকে যুক্ত করলেও প্রধানমন্ত্রী কোনো দেশের নাম যুক্ত না করেই বলেছেন সেন্টমার্টিন লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকতে অসুবিধা নেই৷ দেশের কোনো সম্পদ বিদেশিদের দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চান না তিনি৷ 

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞায় কে ভীত?

57:01

This browser does not support the video element.

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হকও মনে করেন এখন বাংলাদেশের রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে বিদেশি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েই কথা হচ্ছে বেশি৷ তিনি বলেন, ‘‘বাইডেন প্রশাসন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিয়ে তাদের অবস্থান বার বার স্পষ্ট করছে৷ বাংলাদেশে তারা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়৷ এজন্য তারা সক্রিয় আছে৷ কিন্তু এর ভিতরে তাদের কোনো হিডেন এজেন্ডা থাকতে পারে৷ তবে সেটা কী আমি জানিনা৷ কারণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে অনেক দেশেই সমস্যা আছে৷ যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশকে ব্যতিক্রম হিসেবে নিচ্ছে? নিলে সেটা কেন?''

তার কথা, ‘‘বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের ভূমিকা সবার জানা৷ আর চীন হচ্ছে তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান থেকে কথা বলে৷ ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যের কথায় মার্কিন নীতির প্রতিফলন আছে৷ তারাও বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চায়৷''

তিনি বলেন, ‘‘দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়৷ দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে৷ তাই স্বাভাবিক কারণেই মানুষ বিদেশিদের তৎপরতা নিয়ে আগ্রহী৷ আর রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিদেশিদের সঙ্গে সব সময়ই যোগাযোগ রাখে- যা লাজ্জার৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘‘এর নানা ধরনের লেন্স আছে৷ একটি হলো বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে৷ এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে৷ ফলে অনেক দেশেরই বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহ আছে৷ তাই তারা কথা বলেন৷ কথা বলেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে৷ আবার বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা দেশের জনগণকে গুরুত্ব দেননি৷ ফলে এখন সেটা হচ্ছে বিদেশিরা কথা বলছেন, দেশের মানুষ শুনছেন৷ রাজনৈতিক দলগুলোও বিদেশমুখী হচ্ছে৷ তাদের কাছে সাধারণ মানুষ গুরুত্ব না পাওয়ায় ও তাদের প্রত্যাশা পুরণ না হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷'' 

তার কথা, ‘‘দেশের সাধারণ মানুষেরও যতটা তৎপর বা প্রতিবাদী হওয়া প্রয়োজন ততটা হচ্ছেনা৷ তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই কথা বলছে কেউ কেউ৷ ফলে সব দিকেই একটা প্রবণতা বাইরে থেকে কেউ কিছু একটা করে দেবেন৷''

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ অনৈতিকভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং আবারো একটি সাজানো, পাতানো ও ষড়যন্ত্রের নির্বাচন করতে গিয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক খেলার মাঠে পরিণত করেছে৷ এটা ব্যাটেল ফিল্ডে পরিণত হয়ে যেতে পারে৷ আমাদের আশঙ্কা বাংলাদেশ এই ব্যাটেল ফিল্ডে না আবার ক্রসফায়ারে পড়ে যায়৷ বাংলাদেশ একটা অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে৷''

তার কথা, ‘‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার আর কোনো পথ নাই৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘গণতন্ত্র, নির্বাচন ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো বিশ্বব্যাপী এবং সার্বজনীন৷ বিদেশিরা এগুলো নিয়ে তো কথা বলবেই৷ অ্যামেরিকা তো বলছেই যে তারা এই বিষয়গুলো এখন ফোকাস করছে৷ তারা তো নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এই বিষয়গুলো নিয়েই কথা বলছে৷ এর বাইরে অন্য কোনো উদ্দেশ্য তো আমরা দেখছিনা৷ বরং প্রধানমন্ত্রী অযাচিতভাবে সেন্টমার্টিন ইস্যু টেনে এনে যে কথা বলছেন এর পক্ষে তো আমরা কোনো তথ্য প্রমাণ দেখছিনা৷ এটা একটা অপকৌশল৷'' 

‘বাংলাদেশ বৃহৎ শক্তিগুলোর খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে’

This browser does not support the audio element.

আর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন মনে করেন, ‘‘দেশের সাধারণ মানুষও যে বিদেশিদের কথা ও ভূমিকা নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে এটা ইতিবাচক৷ তারা বিদেশিদের কথা বুঝতে চায়, তথ্য চায়৷ জানতে চায় তারা যা বলছে তা সঠিক কী না৷ মানুষ সচেতন হচ্ছে৷ আর বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে একটি গুরত্বপূর্ণ দেশ৷ এই কারণে অনেকেই বাংলাদেশকে নিয়ে কথা বলছে, ভাবছে৷''

তার কথা, ‘‘যেসব রাজনৈতিক দল দেউলিয়া তারাই বিদেশিদের কাছে যায়, ধরনা দেয়৷ আওয়ামী লীগ যায়না৷ আমরা বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলি, ধরনা দিইনা৷''

তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানে কোনো গণতন্ত্র নাই, বাংলাদেশে তো কিছুটা হলেও আছে৷ সেই পাকিস্তানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো ভিসা নীতি নাই৷ বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি হয়েছে৷ কেন, এর কারণ কী? এর জবাব খুঁজলেই আসল কারণ বোঝা যাবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ