বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের অনেকে এই কারাগারে বন্দী জীবনযাপন করেছেন৷ দুই শতকেরও বেশি পুরনো ঢাকার এই কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যাও করা হয়েছে কয়েকজনকে৷ সেই কারাগারেই আজ প্রবেশ করতে পারেন যে কেউ৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো কারাগার পুরান ঢাকার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করে তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে৷ কারাগারটির সর্বশেষ কয়েদিদের জুলাই মাসে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়৷ এখন একশ টাকায় টিকিট কেটে যে কেউ ঘুরে দেখতে পারেন ৩৫ হেক্টর জমিতে গড়া এককালের আলোচিত এই কারাগারটি৷
গত দুই শতকের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই কারাগার৷ ১৮৬০-এর দশকে অনেক সিপাহীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার পর মরদেহ ফেলে রাখা হয়েছিল পচার জন্য৷ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহী অংশ নেয়ায় তাদের এই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল৷ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ত্যাগের পর নতুন শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোদের স্থান হয়েছিল এই কারাগারে৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান এই কারাগারে দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন৷ কারাগারে থাকাকালে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন চাঙ্গা করেছিলেন তিনি৷ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ ১৯৭৫ সালে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার কয়েকমাস পরে এই কারাগারেই সে সময়কার চার শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছিল সেনাসদস্যরা, যাতে সেদেশে সেনা শাসন দীর্ঘায়িত করা যায়৷
কারাগারের জীবন এমন ভয়ংকর!
ফিলিপাইন্সের কেসন শহরের কারাগার, যেটির অবস্থান রাজধানী ম্যানিলার খুব কাছে৷ সেখানকার বন্দিদের জীবনযাপনের ভয়াবহ চিত্র দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
খোলা জায়গায় থাকা
গারদে যাদের জায়গা হয় না, তাদের খোলা জায়গায় রাত কাটাতে হয়, যেখানে কোনো ছাদ নেই৷ এখন ফিলিপাইন্সে বর্ষাকাল৷ প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে, আর এ সময় এমন খোলা জায়গায় রাত কাটানো কতটা কষ্টকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
গারদে কয়েক ধাপ
একটি গারদে অনেকগুলো হ্যামক ঝোলানো আছে৷ একটি হ্যামকেও যদি জায়গা পাওয়া যায়, তাহলে তার ভাগ্য ভালো৷ ৬০ বছর আগে কারাগারটি নির্মিত হয়েছে, যেখানে থাকতে পারে ৮০০ বন্দি৷ অথচ বর্তমানে সেখানে আছে ৩,৮০০ বন্দি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
শান্তিতে শ্বাস নেয়ার জায়গার অভাব
কারাগারের প্রতিটি ইঞ্চি পরিপূর্ণ-এক ফোটাও জায়গা যে নেই ছবি দেখলেই তা বোঝা যায়৷ বন্দিদের বেশিরভাগই পাতলা কাপড়ের উপর বা কেবল খালি মেঝেতে ঘুমিয়ে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
স্বাস্থ্যের দিকে নজর
ব্যায়ামাগারে এক বন্দি শরীর চর্চা করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
কঠিন নিয়ম
পেছনের সাইনবোর্ডে বন্দিদের কিছু নির্দেশনা দেয়া আছে কারাগারের নিয়ম সম্পর্কে৷ এখানে কয়েকজন বন্দিকে দেখা যাচ্ছে হাতকড়া পড়া অবস্থায়, যারা বিচারের অপেক্ষায় আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
পরিচ্ছন্নতা কাজ
অন্যরা যখন এমনি বসে সময় নষ্ট করছে, তখন একজন বন্দি কারাগারের টয়লেট পরিষ্কার করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
কাপড় ধোয়া এবং গোসল
কখনো কখনো বন্দিরা নিজেদের পরিষ্কার করার এবং কাপড় ধোয়ার সুযোগ পায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
রাতের বন্দিশালা
সন্ধ্যায় কারাগারের বাইরে তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছে এক নিরাপত্তারক্ষী, যেখানে কয়েদিরা আর একটি দুঃসহ রাত পার করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
ভয়াবহ পরিস্থিতি
কারাগারের এই অমানবিক পরিস্থিতির জন্য নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডুতের্তেকে দায়ী করছেন অনেকে৷ মাদকের বিরুদ্ধে তার প্রচারণা এতটাই কড়া যে, কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হয় না৷ তিনি মাদকাসক্তদের মেরে ফেলার জন্য মানুষকে আহ্বান জানিয়েছিলেন, যা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল৷ এ পর্যন্ত ৬ লাখ মাদক পাচারকারী ও মাদকাসক্তের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷
ছবি: Imago/Kyodo News
9 ছবি1 | 9
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, কারাগারটিকে স্কুল, শপিং সেন্টার, পার্ক এবং জাদুঘরসহ একটি ঐতিহাসিক এবং বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে সরকার৷
জেল কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, মূলত অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে সরকার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি বুড়িগঙ্গার তীরে অন্য একটি জায়গায় স্থানান্তর করেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বেশি কয়েদি ছিল৷ ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন কারাগার তৈরি করে তাদের সেখানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷
ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন মনে করেন, পুরান ঢাকার আধুনালুপ্ত কারাগারটি ইতিহাসের অংশ৷ সেই ব্রিটিশ রাজ থেকে সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর অবধি অনেক ঘটনা ঘটেছে সেখানে৷ তাঁর কথায়, ‘‘এটা স্বাধীনতার সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক৷ অসংখ্য রাজবন্দীকে এখানে রাখা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েক হাজারকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল এই কারাগারে৷''
মিউজিয়ামে রূপ নেয়া কারাগারটির অভ্যন্তরে সর্বত্র অবশ্য এখনো যাওয়া যাচ্ছে না৷ সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধীদের যেখানে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল, সেই অংশে এখনো পাহারা রয়েছে এবং সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ৷ তবে চার নেতাকে যেখানে হত্যা করা হয়, সেই সেল এখন প্রদর্শণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে৷ সেখানের দেয়ালে এখনো বুলেটের চিহ্ন রয়েছে৷
মিউজিয়ামে রূপ নেয়ার পর কারাগারটির অনেক পুরনো কয়েদি তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে গেছেন৷ কেউ কেউ নিজের সন্তানদের কাছে কারাগারের বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন৷ ছোট ছোট কামরায় অনেক কয়েদি একসঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা যে কতটা ভয়াবহ, তা তাদের চেয়ে ভালো আর কেই বা জানেন?
আলোচিত কয়েকটি জেল পলায়নের কথা
জেলে থাকতে কে চায় বলুন? তাই সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে থাকেন অনেক কয়েদি৷ সবসময় যে সফল হন তা নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বিতীয়বার
২০১৫ সালের জুলাই মাসে আবার জেল থেকে পালিয়েছেন মেক্সিকোর মাদক সম্রাট গুসমান৷ গত ১৪ বছরে দ্বিতীয়বার এই কাণ্ড করলেন তিনি৷ এবার জেলখানায় নিজের সেলের গোসলখানার নীচে টানেল তৈরি করে পালিয়েছেন তিনি৷ তাকে কিন্তু মেক্সিকোর সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবিশিষ্ট আলতিপ্লানো কারাগারে রাখা হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/PGR/Attorney General's Office
ভাল চেষ্টা, কিন্তু..
ছবি দেখেই বুঝতে পারছেন তিনি কীভাবে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি৷ ব্যাগের মধ্যে থাকা মেক্সিকোর এই আসামির নাম হুয়ান রামিরেস তিহেরিনা৷ অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে তার সাজা হয়েছিল৷ ২০১১ সালে তার স্ত্রী কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় এই ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলেন৷ পরে স্বামীকে ব্যাগে করে বেরিয়ে আসার সময় ধরা পড়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Sspqr
বন্দুক আর ছুরি দিয়ে
ইউরোপের সবচেয়ে কড়া নিরাপত্তাবিশিষ্ট জেলখানাগুলোর মধ্যে একটি আয়ারল্যান্ডের দ্য মেজ৷ ১৯৮৩ সালে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের স্বপ্ন দেখা আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির ৩৮ সদস্য৷ গোপনে সংগ্রহ করা বন্দুক আর ছুরি দিয়ে তারা জেলের নিরাপত্তা কর্মীদের পরাস্ত করে পালিয়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Mcerlane
ব্যাংক ডাকাতের পালানো
১৯৬২ সালে সান ফ্রান্সিসকো বে-র জেল থেকে পালিয়েছিলেন তিন ব্যাংক ডাকাত৷ ধারালো চামচ আর ড্রিল দিয়ে তারা নিজেদের সেলে গর্ত খুঁড়ে পালিয়ে যান৷ নিরাপত্তা কর্মীদের বোকা বানাতে তারা তাদের বিছানায় নকল মাথা বসিয়ে রেখেছিলেন!
ছবি: imago/Kai Koehler
হেলিকপ্টারে করে পলায়ন
মনে হবে যেন কোনো হলিউড ব্লকবাস্টার মুভির কাহিনি৷ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি পাসকাল পায়ে ফ্রান্সের একটি গ্রামের কারাগার থেকে অপহরণ করা হেলিকপ্টারে করে একবার নয়, দুবার পালিয়ে যান৷ প্রথমবার ২০০১ সালে, পরের বার ২০০৭ সালে৷ শুধু তাই নয়, জেলখানায় নিজের সঙ্গে থাকা তিন কয়েদিকেও একবার হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Horvat
ওজন কমিয়ে পলায়ন!
১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক নারী খুন করে আলোড়ন তুলেছিলেন থিওডোর রবার্ট বান্ডি৷ প্রথমবার জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ার পর দ্বিতীয়বার কলোরাডোর একটি জেল থেকে পালানোর জন্য নিজের ওজন ১৩.৫ কেজি কমিয়েছিলেন তিনি! সেলের উপর দেয়ালে লাইট বসানোর জন্য তৈরি করা গর্তের মধ্যে নিজের দেহ ঢোকাতে এই পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি৷ সফলও হয়েছিলেন৷ পরে অবশ্য আবারও ধরা পড়ে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP
ইস্টারের ডিমের জন্য!
১৯৮১ সালে সুইজারল্যান্ডের কয়েদি ভাল্টার স্টুয়র্ম করাত দিয়ে নিজের সেলের জানালা কেটে নীচে নেমে তারপর মই দিয়ে কারাগারের সীমানা পেরিয়ে যান৷ পালানোর আগে তিনি তার সেলে একটি নোট লিখে যান৷ তাতে লিখা ছিল, ‘ইস্টারের ডিম নিতে যাচ্ছি!’
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
বন্ধু, আপনি কি মিউজিয়ামটি দেখতে যেতে চান? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷