সম্প্রতি ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় অন্তত ৮৯জন রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দেশের ভিতরে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নববর্ষের দিন ইউক্রেনে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। পাল্টা জবাবে মঙ্গলবার পূর্ব ইউক্রেনের দনেৎস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের জমি মাকিইভকায় আক্রমণ চালায় জেলেনস্কির সেনা। তাতে রাশিয়ার অন্তত ৮৯জন সেনা নিহত হয়েছে। দেশবাসীর চাপে ক্রেমলিন বাধ্য হয়েছে ওই মৃত্যুর খবর প্রকাশ করতে। প্রকাশ্যে ওই সেনাদের জন্য প্রার্থনাও হয়েছে রাশিয়ায়।
রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে?
৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার দুটি বিমানঘাঁটিতে প্রথমবারের মতো ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন৷ এই হামলা কি যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে?
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা
৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার এঙ্গেলস ও ডিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে৷ দূরবর্তী এলাকায় হামলা চালাতে এই দুটি বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে রাশিয়া৷
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
বিশ্লেষকরা বিস্মিত
দুটি বিমানঘাঁটিরই অবস্থান ক্রেমলিন থেকে দূরে৷ তাই সেখানে ইউক্রেনের হামলা চালানোর ক্ষমতা বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে৷ জার্মানির বুন্ডেসভেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাঙ্ক সাউয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিক্রিয়া না দেখানোর বিষয়টি বিস্ময়কর - এটা হতে পারে যে, রাশিয়ার এত ভেতরে এমন হামলা হতে পারে, সেটা রাশিয়া ভাবেনি৷’’
ছবি: MAXAR/REUTERS
হামলা সম্পর্কে রাশিয়ার বক্তব্য
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ইউক্রেনের ড্রোনগুলো ভূপতিত করা হয়েছে৷ এবং তাদের টুকরোর আঘাতে দুটি রুশ যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তবে অনলাইনে প্রকাশিত ব্যক্তিগত সার্ভিলেন্স ক্যামেরায় তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে, আকাশে কোনো বিস্ফোরণ হয়নি, বরং ভূমিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে৷
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
কোন ড্রোন?
রাশিয়া বলছে, হামলার কাজে ১৯৭০-এর দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি পর্যবেক্ষণকারী ড্রোন টিইউ-১৪১ (ছবিতে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে) ব্যবহার করা হয়েছে৷ তবে কিয়েভের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, পাবলিক-প্রাইভেট যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় ইউক্রেনের তৈরি নতুন ড্রোন দিয়ে ঐ হামলা করা হয়েছে৷
ছবি: Zeljko Hladika/PIXSELL/picture alliance
ইউক্রেনের বক্তব্য
ড্রোন তৈরির কর্মসূচি বিষয়ে ইউক্রেন নীরবতা অনুসরণ করছে৷ তবে ৮ ডিসেম্বর ফেসবুক পোস্টে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ জানান, ‘‘অতীতে আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য বছরে এক-দুটি ড্রোন টাইপের অনুমোদন দেয়া হত৷ তবে গত ৩০ দিনে সাতটি নতুন ড্রোন টাইপের অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
‘প্রতীকী গুরুত্বের চেয়েও বেশি’
রাশিয়ার এত ভেতরে ইউক্রেনের হামলা চালানোর সক্ষমতার বিষয়টি শুধু প্রতীকী অর্থে নয়, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ ইউক্রেনের সামরিক বিশেষজ্ঞ ওলেগ কাটকভ বলেন, ‘‘রাশিয়ার এখন তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় মোতায়েন করতে হবে, কিংবা তাদের যুদ্ধবিমানগুলো আরও দূরে নিয়ে যেতে হবে৷ সেক্ষেত্রে আরও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে হবে, যা খরচ বাড়াবে৷’’
ছবি: Sergei Savostyanov/ITAR/TASS/imago
পশ্চিমা বিশ্বের জন্য সংকেত?
ইউক্রেন অনেকদিন ধরে পশ্চিমের কাছে দূরে হামলা করার অস্ত্র চাইছে৷ যুক্তরাষ্ট্র দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম ‘হাইমার্স’ ব্যবস্থা দিলেও রাশিয়ার ভয়ে সেটির সীমা কমিয়ে দিয়েছে৷ ফলে শুধু রাশিয়া অধিৃকত এলাকায় সেটি ব্যবহার করা যাবে৷ ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেসন্সের উলরিকে ফ্রাঙ্কে মনে করছেন, রাশিয়ায় হামলা চালিয়ে ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্বকে এই সংকেত দিয়েছে যে, তাদের ছাড়াও তারা হামলা করতে সক্ষম৷
ছবি: Roman Koksarov/AP/picture alliance
7 ছবি1 | 7
ইউক্রেনযুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কতজন রাশিয়ার সেনার মৃত্যু হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি রাশিয়া। একেবারে গোড়ার দিকে দুইএকবার সংখ্যা বললেও, গত কয়েকমাসে এবিষয়ে কখনো কোনো মন্তব্য করেনি রাশিয়া। তবে মঙ্গলবার তারা সেনা-মৃত্যুর কথা বলতে বাধ্য হয়েছে।
অ্যামেরিকার দেওয়া হাইমার রকেট নিয়ে মাকিইভকায় আক্রমণ চালায় ইউক্রেন। সেখানে একটি ভোকেশনাল স্কুল বিল্ডিংয়ে ক্যাম্প তৈরি করে ছিলেন রাশিয়ার সেনা। বস্তুত, ওই অঞ্চলটি এখনো রাশিয়ার দখলে। এলাকায় একাধিক ক্যাম্প তৈরি করে রেখেছে রুশ সেনা। মঙ্গলবার সেখানেই রকেট হামলা চালায় ইউক্রেন। স্কুলবাড়িটি ভেঙে পড়ে। প্রাথমিকভাবে রাশিয়া জানিয়েছিল ৬৩জন সেনার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পরে জানানো হয় ৮৯জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার ভিতরেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। রুশ জাতীয়তাবাদীরা একের পর এক ব্লগ লিখছেন। যেখানে এই মৃত্যুর জন্য ক্রেমলিনকে দায়ী করা হচ্ছে। রাশিয়ার সেনা ইউক্রেন যুদ্ধ পর্যুদস্তু হচ্ছে বলে বার বার অভিযোগ করা হচ্ছে।
খেরসন ফিরে পেয়ে ইউক্রেনে আনন্দ, উল্লাস
ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে খেরসন ছাড়তে বাধ্য হয়েছে রুশ সৈন্যরা৷ স্বভূমের মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস নিতে পেরে ইউক্রেনের মানুষ উল্লাসে মেতেছে৷ সৈন্যদের বীরের মর্যাদায় বরণ করছেন তারা৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Lesko Kromplitz/REUTERS
মুখে ফিরেছে প্রাণখোলা হাসি
পরাধীন খেরসনে যেন হাসতে ভুলেই গিয়েছিল সবাই৷ পাল্টা আ্ক্রমণের মুখে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটি থেকে রুশ সৈন্যরা চলে যেতে বাধ্য হতেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে নামে উল্লসিত জনতার ঢল৷ সেখানেই গায়ে, হাতে ইউক্রেনের পতাকা নিয়ে দুই তরুণীর ভুবন ভোলানো হাসি৷
ছবি: Lesko Kromplitz/REUTERS
‘মুক্তাঙ্গন’ ফিরে পেয়েছে শিশুরা
যুদ্ধের কারণে খেরসনের সব মানুষই ছিল আতঙ্কে৷ বড়রা জরুরি কাজে অনেক সময় বাইরে যেতে বাধ্য হলেও, অনেক শিশু দীর্ঘদিন চার দেয়ালের বাইরে পা ফেলার সুযোগই পায়নি৷ রুশ সৈন্যরা চলে যাওয়ায় খেরসনের শিশুরা আবার মুক্ত৷ সেই আনন্দ উদযাপন করছে দুই শিশু৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
আনন্দমুখর ওডেসা
রাশিয়ার আক্রমণের মুখে খেরসনের অনেক মানুষ ইউক্রেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ওডেসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন৷ খেরসন ‘স্বাধীন’ হওয়ায় সেখানেও আনন্দে মেতেছেন সবাই৷
ছবি: Igor Tkachenko/REUTERS
সৈন্যরা এখন মহাতারকা
তাদের কারণেই খেরসন আবার ‘শত্রুমুক্ত’৷ খেরসনবাসীর কাছে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা তাই পরম শ্রদ্ধা, ভালোবাসার পাত্র৷ ওপরের ছবিতে গণদাবির মুখে একজনের পিঠে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন এক সেনাসদস্য৷
ছবি: Lesko Kromplitz/REUTERS
খেরসনে প্রেসিডেন্ট
রুশ সৈন্যমুক্ত খেরসন দেখতে গিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি৷ তার সঙ্গে সেল্ফি তুলছেন কয়েকজন নগরবাসী৷
ছবি: Ukrainian Presidential Press Service/REUTERS
বীরের সঙ্গে সেল্ফি
খেরসনের প্রাণকেন্দ্রে ইউক্রেনের এক সৈন্যের সঙ্গে সেল্ফি তোলার ধুম পড়েছে৷ নিজের সন্তানকে কাঁধে নিয়ে একের পর এক অনুরোধ রেখে চলেছেন সেই সৈন্য৷
ছবি: Lesko Kromplitz/REUTERS
বীরের সঙ্গে কোলাকুলি
মুক্ত খেরসনে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়েছে বীর সেনাদের৷ এক সৈন্যের সঙ্গে সগর্বে কোলাকুলি করছেন এক খেরসনবাসী৷
ছবি: Lesko Kromplitz/REUTERS
ব্যানার, পোস্টার, স্লোগানে খেরসন
ইউক্রেনীয়দের সবার মুখে মুখে এখন খেরসন৷ রুশ সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর ‘খেরসন, খেরসন’ বলতে বলতে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন অনেকে৷ ওপরের ছবির তরুণীর মতো অনেকের হাতেই ছিল খেরসন লেখা পোস্টার৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
স্বাধীনতা চত্বরে স্বাধীন মানুষদের ঢল
গত ১১ নভেম্বর রাতে খেরসন রুশ সৈন্যমুক্ত হওয়া মাত্রই শহরের ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কয়ারে নামে উল্লসিত জনতার ঢল৷ স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ৷
ছবি: Danylo Antoniuk/ZUMA/picture alliance
বীর নারীর আনন্দ
খেরসন থেকে রুশ সৈন্যদের তাড়াতে ছবির এই নারীও যুদ্ধ করেছেন৷ মুক্ত শহরে পা রেখেই খেরসন লেখা ফলকের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন তিনি৷
ছবি: Dagaz/AP/picture alliance
10 ছবি1 | 10
বস্তুত, কোনো কোনো ব্লগে নিহতের সংখ্যা শতাধিক বলে দাবি করা হচ্ছে। ইউক্রেনও তেমনই দাবি করেছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, অন্তত ৪০০ জন রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছে। আহত অন্তত ৩০০। যদিও এই তথ্য স্বাধীন সূত্র থেকে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
রাশিয়ার জাতীয়তাবাদীদের বক্তব্য, রুশ সেনার হাইকম্যান্ড যুদ্ধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বক্তব্য, রাশিয়ার সেনার সংখ্যা যথেষ্ট হলেও তাদের ঠিকমতো ব্যবহার করা যায়নি। এবং সে কারণেই ইউক্রেনের আক্রমণে রাশিয়ার সেনার এতটা ক্ষতি হচ্ছে। রাশিয়ার সেনারা মোবাইল ব্যবহার করছিলেন বলেও অভিযোগ। সেই মোবাইল ট্র্যাক করেই ইউক্রেন আক্রমণ চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন তারা মোবাইল ব্যবহার করছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
রাশিয়ারএকটি সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ওই স্কুল বাড়িতে প্রচুর গোলাবারুদ মজুত করা হয়েছিল। যার জেরে বিরাট বিস্ফোরণ হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আরো একবার প্রমাণ হলো, রাশিয়া ইউক্রেনে হেরে যাচ্ছে। তবে রুশ বাহিনী ইরানের তৈরি ড্রোন নিয়ে ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে বলে এদিন ফের অভিযোগ করেছেন জেলেনস্কি।