সরকার দেশের ২৩ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছে৷ এরমধ্যে ছয়জনকে বদলি করে অন্য জেলায় পাঠানো হয়েছে আর অন্যদের নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ বুধবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বদলির এই আদেশ হয়৷
বিজ্ঞাপন
ঢাকা ও চট্টগ্রামের ডিসিও বদলে গেছে৷ চট্টগ্রামের ডিসি মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে ঢাকায়, কিশোরগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ শামীম আলমকে কুমিল্লায়, জয়পুরহাটের ডিসি মো. শরিফুল ইসলামকে পটুয়াখালীতে, বরিশালের ডিসি জসীম উদ্দীন হায়দারকে টাঙ্গাইলে, সুনামগঞ্জের ডিসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে বরিশালে এবং নীলফামারীর ডিসি খন্দকার ইয়াসির আরেফীনকে খুলনায় বদলি করা হয়েছে৷
ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীকে সুনামগঞ্জ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব কাজী মাহবুবুল আলমকে গোপালগঞ্জ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানকে চট্টগ্রাম, অর্থ বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ সাইদুল আরিফকে কুড়িগ্রাম, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক চিত্রলেখা নাজনীনকে রংপুরের ডিসি করা হয়েছে৷
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানকে সিরাজগঞ্জ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত উপ-সচিব ফারাহ্ গুল নিঝুমকে ঝালকাঠি, পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) কামরুল আহসান তালুকদারকে ফরিদপুর, খাদ্য মন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) সহিদুজ্জামানকে খাগড়াছড়ি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোস্তাফিজার রহমানকে ময়মনসিংহ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) সাইফুল ইসলামকে বগুড়ার ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷
এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে কিশোরগঞ্জ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব পঙ্কজ ঘোষকে নীলফামারী, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সচিবকে মোহাম্মদ উল্যাহকে লালমনিরহাট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক কক্সবাজার, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক সালেহীন তানভীর গাজীকে জয়পুরহাট এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ আবু নাসের বেগকে মাগুরার ডিসি করা হয়েছে৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
আমলাকথন
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানের বক্তব্য শুনে সব জেলার ডিসি ও এসপিরা হইচই শুরু করেছিলেন৷ আমলাদের প্রভাব ও আচরণ নিয়ে রাজনীতিবিদ, পেশাজীবীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: bdnews24.com
নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে ডিসি-এসপিদের হইচই
গত ৮ অক্টোবর ঢাকায় সব জেলার ডিসি ও এসপির সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন৷ সেখানে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান (ছবিতে বামে) নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে জনমনে আস্থাহীনতার জন্য ডিসি-এসপিদের ওপর দায় চাপান৷ ডিসিদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷ মাঠ প্রশাসনের কর্তাদের ‘নখদন্তহীন’ ও তারা ‘মন্ত্রী-এমপিদের ছাড়া চলতে পারেন না’ বলে মন্তব্য করেন৷ তার বক্তব্যের এই পর্যায়ে একযোগে ডিসি-এসপিরা হইচই শুরু করেন৷
ছবি: PID
আমলাতন্ত্র নিয়ে পেশাজীবীদের ক্ষোভ
গত জুনে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, আইইবির সভাপতি মো. নূরুল হুদা অভিযোগ করেন, পেশাজীবীদের দূরে ঠেলে দিয়ে আমলাদের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে৷ আইইবির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘‘আমলাতন্ত্র আমাদের নিষ্পেষিত করছে, শোষণ করছে৷’’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘‘আমরা আমলাতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷’’ (সূত্র: প্রথম আলো)
ছবি: bdnews24.com
স্থানীয় সরকারের প্রাণভোমরা এখন আমলাদের কাছে: পরিকল্পনামন্ত্রী
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গত জুনে বলেন, আমলারা স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের গলায় রশি বেঁধে ঘোরান৷ ইউনিয়ন পরিষদের একজন চেয়ারম্যানকে সচিবালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিবের সঙ্গে দেখা করতে হলেও দিনের পর দিন ঘুরতে হয়৷ স্থানীয় সরকারের প্রাণভোমরা এখন আমলাদের কাছে৷ এর ফল কী হবে, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে৷ (সূত্র: প্রথম আলো)
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
সাংসদেরা সচিবদের ওপরে: তোফায়েল আহমেদ
গতবছর এপ্রিলে করোনা মহামারি মোকাবিলায় ৬৪ জেলায় ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে আদেশ জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়৷ জুনে এ নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, ‘‘ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স অনুযায়ী সাংসদেরা সচিবদের ওপরে৷ এটা খেয়াল রাখতে হবে৷’’
ছবি: bdnews24.com
‘প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সাথে কথা বলেন, এমপিরা পাশে বসে থাকেন’
তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের পর কথা বলেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ৷ তিনি বলেন, ‘‘আজকে দেশে কোনো রাজনীতি নেই৷ তোফায়েল আহমেদ যথার্থ বলেছেন৷ দেশে কোনো রাজনীতি নেই৷ প্রত্যেকটা জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সাথে কথা বলেন৷ আর এমপি সাহেবরা পাশাপাশি বসে থাকেন, দূরে৷ তারপর বলে ডিসি সাব, আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সাথে৷ এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা৷’’
ছবি: picture-alliance/Dinodia Photo
সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিসির ডিজিটাল মামলা
২০২০ সালে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর করা ডিজিটাল মামলায় সাংবাদিক আকিব হৃদয়কে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল৷ ওই সাংবাদিক ফেসবুক লাইভে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল৷ আকিব বলেছিলেন, ‘‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেটকে ‘স্যার’ না বলে ‘ভাই’ বলায় তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়৷’’ এই অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছিলেন ডিসি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আলোচিত ডিসির শাস্তি মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি
২০২০ সালে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে (ছবি) সাজা দেয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে দুই বছর বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করে লঘুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয়েছিল৷ এই শাস্তি দেয়ার সাড়ে তিন মাসের মাথায় শাস্তি বাতিল করে তাকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেন রাষ্ট্রপতি৷ এবছর জুনে তিনি যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন৷ পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন বলে রিপোর্ট করেছিলেন আরিফ৷
ছবি: privat
ইউএনও-র ‘মাস্তানদের চেয়েও খারাপ ভাষা’
গত ২১ জুলাই টেকনাফে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরু৷ এর একটি অডিও প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ হলে ইউএনওকে ওএসডি করা হয়৷ বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এলে সাংবাদিকের সঙ্গে ইউএনও’র ভাষা ব্যবহারকে ‘মাস্তানদের চেয়েও খারাপ ভাষা’ বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট৷
ছবি: bdnews24.com
বান্দরবানে ট্রফি ভেঙে আলোচনায় ইউএনও
২৩ সেপ্টেম্বর বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ইউএনও মেহরুবা ইসলাম ফুটবল খেলার ট্রফি আছাড় দিয়ে ভেঙে আলোচনায় এসেছিলেন৷ সেদিন উপজেলার চৈক্ষ্যং আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এই ঘটনা ঘটে৷ ফাইনাল খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণের আগে তিনি দুই দলের বিতর্ককে কেন্দ্র করে দুইটি ট্রফি আছড়ে ভেঙে ফেলেন৷ এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলে মেহরুবা ইসলামকে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বদলি করা হয়৷