খুব ছোট্টবেলায় একটা বই আমার মনে খুব দাগ কেটেছিল৷ বইটাতে পড়েছিলাম বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর কথা৷ বাংলাদেশের এই ক্ষণজন্মা বিজ্ঞানীটি এখানে বসেই কীভাবে বেতার আবিষ্কারের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছিলেন আজ থেকে শতবর্ষ আগে?
বিজ্ঞাপন
কেবল জগদীশ চন্দ্র বসুই নন, আরো অনেক বিজ্ঞানী বিংশ শতকের শুরুর দিকে বিশ্বসেরা কাজ করেছেন বাংলাদেশে বসেই৷ কিন্তু আজ এই একবিংশ শতকে এসে সেই হারটা অনেকখানি কমে এসেছে৷ আমাদের দেশের মানুষরা বিজ্ঞানী হিসাবে কিন্তু খারাপ নন৷ তাঁরা বিশ্বের নানা জায়গার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা গবেষণাগারে ঠিকই অনেক অসাধারণ কাজ করছেন৷ কিন্তু বাংলাদেশে বসে কেবল কৃষিবিজ্ঞান, পাবলিক হেলথ, বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রায়োগিক গবেষণা ছাড়া অন্যান্য গবেষণার হারটা ঠিক একশ' বছর আগের মতো নয়৷ এর কারণটা কী?
গবেষণার রাজ্যে আমার পদার্পন আজ থেকে প্রায় ১৯ বছর আগে৷ আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ডেকে পাঠালেন উনার বাসায়৷ উনি তখন বুয়েটের আমার বিভাগ কম্পিউটারকৌশলের প্রধান৷ ডাক পেয়ে ভড়কে গেলেও হাজির হয়েছিলাম স্যারের বাসায়, উপরি পাওনা ছিল নাস্তা৷ স্যার আমাদের গবেষণার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়ে কিছু গবেষণাপত্রের প্রিন্টআউট ধরিয়ে দিলেন, বললেন এগুলো পড়ে কিছু করা যায় কিনা দেখতে৷ সময়টা ১৯৯৮ সাল, দেশে ইন্টারনেট তখনো সেভাবে সবখানে আসেনি আর এলেও খরচ ব্যাপক৷ সেই অবস্থায় ইন্টারনেট সার্চ করে নতুন গবেষণাপত্র বের করা, পড়া, এবং গবেষণার জগৎ সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পাওয়া বেশ কঠিন ছিল৷ বিকল্প ছিল একটাই – বুয়েটের মাস্টার্স পর্যায়ের ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত লাইব্রেরিতে গিয়ে নানা জার্নাল খুঁজে বের করে পড়া৷ এই কাজটা বেশ সময়সাপেক্ষ৷ একেকটা পেপার পড়ার পর তার রেফারেন্সে উল্লেখ করা অন্যান্য পেপারগুলো খুঁজে বের করতে অন্তত সপ্তাহখানেক সময় লাগতো৷ তাছাড়া যে কোনো বিষয়ে উচ্চতর জ্ঞান পেতে হলে সেই সংক্রান্ত সর্বাধুনিক টেক্সটবুকগুলো লাগতো, যা দেশে বসে পাওয়াটা রীতিমতো কঠিন কাজ ছিল৷ এমতাবস্থায় গবেষণা যে হতো না তা অবশ্য না৷ অবশ্যই হতো, তবে সেই গবেষণাটুকু কম্পিউটার বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক দিকেই ছিল সীমাবদ্ধ৷
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
বিজ্ঞানে বাংলাদেশিদের অবদান কখনোই কম ছিল না৷ ঐতিহ্যগতভাবেই বাঙালি বিজ্ঞানীরা অসামান্য অবদান রেখে গেছেন৷ সেখান থেকে কয়েকজনের আবিষ্কার তুলে ধরা হলো৷ এর বাইরেও আরো অনেকেই অসাধারণ সব কাজ করে সমৃদ্ধ করেছেন বিজ্ঞানকে৷
ছবি: Bibliothèque nationale de France
আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু
সবর্প্রথম উদ্ভিদে প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু৷ বিভিন্ন উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে তার মনে হলো, বিদ্যুৎ প্রবাহে উদ্ভিদও উত্তেজনা অনুভব করে এবং সাড়া দিতে পারে৷ এর অর্থ, উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে৷ ১৯১০ সালের দিকে বিজ্ঞানী বসু তাঁর গবেষণার পূর্ণাঙ্গ ফলাফল বই আকারে প্রকাশ করেন৷
ছবি: Bibliothèque nationale de France
ড.কুদরাত-এ-খুদা
গবেষণা জীবনের এক পর্যায়ে, তিনি বনৌষধি, গাছগাছড়ার গুণাগুণ, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অনান্য খনিজ পদার্থ নিয়ে কাজ করেন৷ বিজ্ঞানী হিসাবে তিনি ও তাঁর সহকর্মীদের ১৮টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ন’টি পাটসংক্রান্ত৷ এর মধ্যে পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন, পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য৷ দেশে বিদেশে তাঁর ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: hybridknowledge.info
সত্যেন্দ্রনাথ বসু
১৯২২ সালে পার্টিকেল স্ট্যাটিস্টিক্স নিয়ে সত্যেন বোসের গবেষণাটি, যেটি আইনস্টাইন নিজে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন, অনেকের ভাষায় ২০ শতকের সেরা দশ কাজের একটি৷ যদিও তিনি নোবেল পুরস্কার পাননি, কোয়ান্টাম থিওরির অনেক গবেষণার পথ খুলে দেয় তাঁর গবেষণা৷ কোয়ান্টাম ফিজিক্সের অনন্য আবিষ্কার ‘গডস পার্টিকেলস’ বা ‘ঈশ্বর কণা’-র নামকরণ করা হয়েছে, তাঁর ও আরেক পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগসের নামে – হিগস-বোসন পার্টিকেল৷
ছবি: public domain
পি সি রায়
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ ১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে৷ এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার৷ তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২ টি যৌগিক লবণ এবং পাঁচটি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন৷
মেঘনাদ সাহা
মেঘনাদ সাহা পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা নিয়ে গবেষণা করেন৷ তাপীয় আয়নবাদ সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন৷
আব্দুস সাত্তার খান
নাসা ইউনাইটেড টেকনোলজিস এবং অ্যালস্টমে কাজ করার সময়ে ৪০টিরও বেশি সংকর ধাতু উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানী খান৷ এই সংকর ধাতুগুলো ইঞ্জিনকে আরো হালকা করেছে, যার ফলে উড়োজাহাজের পক্ষে আরো দ্রুত উড্ডয়ন সম্ভব হয়েছে এবং ট্রেনকে আরো গতিশীল করেছে৷ তার উদ্ভাবিত সংকর ধাতুগুলো এফ-১৬ ও এফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷
ছবি: AP/NASA
ডাক্তার শাহ এম ফারুক
কলেরা রোগের কারণ আবিষ্কার করেছেন ডা. ফারুক৷ কলেরার ঘটক ‘ভিবরিও’ নামে এক ধরনের শক্তিশালী ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়া এসে কীভাবে একে আরো কার্যকরী বা শক্তিশালী করে তোলে সেটিই ছিল তাঁর গবেষণা৷ আন্তর্জাতিক কলেরা রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি-তে তিনি ও তাঁর গবেষণা দল এ আবিষ্কার করেন৷
ছবি: picture-alliance/Dr.Gary Gaugler/OKAPIA
ড. মাকসুদুল আলম
পাটের জিনের আবিষ্কারক ড. মাকসুদুল আলম৷ এই বাংলাদেশি জিনতত্ত্ববিদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটাসফটের একদল উদ্যমী গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উন্মোচিত হয় পাটের জিন নকশা৷
ছবি: Bdnews24.com
ড. জামালউদ্দিন
বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর সৌর বিদ্যুৎ কোষ উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ম্যারিল্যান্ডের কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গবেষক বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. জামালউদ্দিন ইতিহাস গড়েছেন৷ ড. জামাল উদ্দিন এবং তার গ্রুপ সোলার সেল থেকে শতকরা ৪৩.৪ পুনঃব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে যা বিশ্বে এই উৎপাদনের সর্বোচ্চ মাত্রা৷
শুভ রায়
বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী শুভ রায়৷ এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে অসামান্য কীর্তি৷ ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার সহযোগী অধ্যাপক শুভ রায় তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে কৃত্রিম কিডনি তৈরির কাজ শুরু করেন৷ চলতি দশকের গোড়ার দিকে দলটি ঘোষণা দেয় যে, তাঁরা কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে তা অন্য প্রাণীর দেহে প্রতিস্থাপন করে সফল হয়েছে৷
ছবি: hybridknowledge.info
হরিপদ কাপালী
হরিপদ কাপালী ছিলেন এক প্রান্তিক কৃষক৷ কিন্তু তাঁর আবিষ্কার হরিধান কৃষিবিজ্ঞানের এক অনন্য সাফল্য৷ প্রকৃতির কাছ থেকেই শিক্ষা৷ প্রকৃতিতেই তাঁর গবেষণা৷ তাঁর নামে নামকরণ করা এই ধানটি অন্য যে কোনো ধানের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল৷ এতে সার ও ওষুধও লাগে অনেক কম৷ সব মিলিয়ে সোনার বাংলার সোনালি আবিষ্কার হরিপদ কাপালীর হরিধান৷
ছবি: Bdnews24.com
11 ছবি1 | 11
বুয়েট থেকে পাস করে কিছুদিন শিক্ষকতার পরে আমি কম্পিউটার বিজ্ঞানে বিশ্বসেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা শ্যাম্পেইনে যাই পিএইচডি করতে৷ গবেষণা করার সুবিধার দিক থেকে দেশের বাইরে আসার পরে অবস্থাটা অনেকটা রাত আর দিনের মতো হয়ে গেল৷ দেশে থাকার সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মন্থরগতিতে যেভাবে নানা গবেষণাপত্র ডাউনলোড করতে পারতাম, বিদেশে এসে রাতারাতি গিগাবিট স্পিডের ইন্টারনেট হাতে পেলাম, পেলাম দরকার মতো বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দ্রুতগতির সুপারকম্পিউটারে কাজ করার সুযোগ৷ ভালো করে চিন্তা করে যে পার্থক্যগুলো দেখতে পেলাম, তা অনেকটা এরকম– বিদেশে নানা তথ্যভাণ্ডারে খুব সহজেই তথ্য অনুসন্ধান চালাতে পারছি, যা দেশে ইন্টারনেটের ধীর গতির কারণে পারিনি৷ আবার প্রথমসারির বিশ্ববিদ্যালয় হবার সুবাদে নানা জার্নাল বা আইইইই/এসিএম-এর ডিজিটাল লাইব্রেরির সাবস্ক্রিপশন থাকায় অনায়াসে ল্যাবের ডেস্কে বসেই সব পেপার ডাউনলোড করে নিতে পারতাম, দেশে যেটা করতে হলে প্রবাসী কারো দ্বারস্থ হতে হতো৷ আবার নানা বইপত্রের সর্বাধুনিক সংস্করণও লাইব্রেরিতে সহজলভ্য৷ তদুপরি হাতে কলমে শেখার উপরে ব্যাপক জোর দেয়া হয় সর্বত্র৷
আজ বহু বছর পরে আমি নিজে ছাত্রত্ব শেষ করে শিক্ষক ও গবেষকের পেশা বেছে নিয়েছি৷ এখন আমার অধীনে অন্তত ১০ জন ছাত্রকে হাতে ধরে গবেষণা করতে শিখিয়েছি৷ গবেষণার উপরে বাংলায় একটি বইও লিখেছি৷ দেশে ইন্টারনেটের গতি বেড়েছে, নানা রিসোর্স/বইপত্র মুহূর্তের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জোগাড় করাটা অনেক সহজ হয়েছে৷ কিন্তু এখনো বাংলাদেশ গবেষণার ক্ষেত্রে অন্য অনেক দেশের চাইতে পিছিয়ে আছে৷ কিন্তু কেন? বোঝা যাচ্ছে, ইন্টারনেটের গতিটা এখানে মূল সমস্যা ছিল না, যেমনটা আগে ভেবেছিলাম৷ এই নিবন্ধটা লেখার সময়ে বেশ খানিকটা সময় ভাবলাম, আসলেই, কি পার্থক্য দেশের একজন গবেষক আর বিদেশের একজন গবেষকের মধ্যে? আসুন দেখা যাক...
২০১৬ সালে বিজ্ঞানের কিছু অভিনব ও বিস্ময়কর উদ্ভাবন
চলতি বছর বিজ্ঞানীরা এমন কিছু আবিষ্কার করেছেন, যা দীর্ঘদিন মানুষের উপকারে আসবে, মানুষকে দীর্ঘজীবন লাভে সহায়তা করবে৷ আবিষ্কারগুলো সম্পর্কে জেনে নিন ছবিঘর থেকে৷
ছবি: imago/Science Photo Library
মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গের খোঁজ
জুন ২০১৬-তে মানুষ প্রথমবারের মত মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ রেকর্ড করতে পেরেছে৷ বিজ্ঞানীরা ১৯৯২ সাল থেকে এই তরঙ্গের খোঁজ করছিলেন৷ তাঁদের ধারণা, এই তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা করার ফলে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি ও বিস্তার সম্পর্কিত অনেক রহস্যের সমাধান করা যাবে৷
ছবি: imago/Science Photo Library
তিন বাবা-মায়ের সন্তান
২০১৬ সালের মে মাসে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এমন এক সন্তান জন্ম নেয়, যে দুই নারীর ডিম্বাণু এবং এক পুরুষের শুক্রাণু নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে৷ মেক্সিকোতে জন্ম নেয়া এই সন্তান একদম সুস্থভাবে ভূমিষ্ঠ হয়৷ বিজ্ঞানীরা জানান, মায়ের শরীরে যদি জিনগত কোনো রোগ থাকে, তবে এই উপায়ে শিশুটি সেই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Carl Court
ডিএনএ কাটাছেঁড়া
এ বছর মার্কিন বিজ্ঞানীরা শুকরের শরীরে মানুষের অঙ্গের বিকাশে সফল হন৷ ‘জিন এডিটিং’ বা ডিএনএ কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা শুকরের ভ্রুণে মানুষের স্টেমসেল প্রতিস্থাপিত করেন, এর ২৮ দিন পরে মানুষের সেই স্টেমসেল শুকরের দেহে বিকশিত হতে শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/Chromorange/Bilderbox
কার্বন ডাই-অক্সাইডকে পাথরে রূপান্তর
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্ব যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তা থেকে বাঁচতে উত্তর মেরুর কাছে আইসল্যান্ডে বিজ্ঞানীরা কার্বন ডাই-অক্সাইডকে চুনাপাথরে রূপান্তর করতে সফল হন৷
ছবি: imago/blickwinkel
হিলিয়ামের সম্ভার
তানজানিয়ায় হিলিয়াম গ্যাসের বিশাল সম্ভারের খোঁজ পাওয়ায় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন৷ বিমানের টায়ারে ব্যবহৃত এই গ্যাসের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এমআরআই এবং স্ক্যানিং মেশিনে৷
ছবি: CHROMORANGE
এইচআইভি-র ভ্যাকসিন
এইডস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ২০১৬ সালে বিজ্ঞানীরা সফলতা দেখিয়েছেন৷ প্রথমবারের মত বিজ্ঞানীরা এইচআইভি ভাইরাস নির্মূল করতে পারে এমন ভ্যাকসিন বানিয়েছেন৷ ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই মুহূর্তে এই ভ্যাকসিনের ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ চলছে৷
ছবি: AP
অন্তহীন তথ্য ভাণ্ডার
ন্যানো স্ট্রাকচার ব্যবহার করে মার্কিন বিজ্ঞানীরা একটি ছোট গ্লাস ডিস্ক বানিয়েছেন৷ ভীষণ ছোট একটি ডিস্কে ৩৬০ টেরাবাইট ডাটা বা তথ্য সংরক্ষণ করা যায়৷ ১,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপামাত্রায় ডিস্কটি গলে না বা নষ্ট হয় না৷ আর বড় ডিস্কে অসংখ্য তথ্য জমা রাখা যায়৷
ছবি: Getty Images
রকেটের পুনর্ব্যবহার
যুক্তরাষ্ট্রের রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স প্রথমবারের মতো আবারও ব্যবহারযোগ্য রকেট এনেছে৷ সমুদ্রে ‘ফ্যালকন ৯’ লঞ্চ প্যাড থেকে উৎক্ষেপিত এই রকেট আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পৌঁছে আবার সফলভাবে ফিরে আসে৷
ছবি: SpaceX
সুপারসনিক গতি
মার্কিন স্টার্টআপ কোম্পানি ‘হাইপারলুপ’ এ বছর এক অভিনব প্রযুক্তি বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেছে৷ এর ফলে ভবিষ্যতে মানুষের পক্ষে ভ্যাকুয়াম টিউবের মধ্য দিয়ে ঘণ্টায় এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে ছোটা সম্ভব হবে৷
ছবি: Hyperloop Technologies
চালকবিহীন গাড়ি
মানুষের কল্পনায় ছিলো এমন গাড়ি, যা নিজে থেকেই চলবে৷ সেই কল্পনাকে বিজ্ঞানীরা বাস্তব রূপ দেন এই বছর৷ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে চালকবিহীন গাড়ি পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে৷
ছবি: APTN
10 ছবি1 | 10
(১) রিসোর্স: ইন্টারনেটের গতি বাড়লেও গবেষণার সরঞ্জাম ও অন্যান্য অনেক কিছুর ক্ষেত্রে দেশের গবেষকেরা অনেক পিছিয়ে আছেন বিদেশের গবেষকদের চাইতে৷ কম্পিউটার বিজ্ঞানে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের সুবিধা আছে কাজটা অনেক ক্ষেত্রেই কম্পিউটারভিত্তিক বলে৷ কিন্তু নানা ভৌত বিষয় যেমন পদার্থ, রসায়ন, কিংবা জীববিজ্ঞানের গবেষকদের গবেষণা কর্মের জন্য যন্ত্রপাতি, গবেষণাগার এসব প্রতিষ্ঠা করতে অনেক খরচ হয়, দেশের অধিকাংশ জায়গাতেই সেই সুযোগটা কম৷
(২) গবেষণার অর্থায়ন: গবেষণার ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি, গবেষণা সহকারী – এ সবের জন্য বেশ অনেকটা অর্থের প্রয়োজন হয়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন অধ্যাপকের ক্ষেত্রে উদাহরণ দিই৷ গবেষণার জন্য আমাকে প্রতি বছর বেশ অনেকগুলো প্রপোজাল বা প্রস্তাবনা লিখতে হয়, যা জমা দিই নানা গবেষণা এজেন্সির কাছে৷ ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের বার্ষিক বাজেট হলো ২০১৭ সালের হিসাবে ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার৷
নানা প্রতিযোগিতামূলক পথ পেরিয়ে গবেষণার জন্য বরাদ্দ আসে, যা থেকে গবেষণা সহকারী হিসাবে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাভাতা এবং টিউশন ফি এবং গবেষণার যন্ত্রপাতি কেনার টাকা মেলে৷ পক্ষান্তরে বাংলাদেশে গবেষণাখাতে বরাদ্দ খুবই কম৷ সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক কালে কিছু বরাদ্দ এলেও তা দরকারের চাইতে অনেক কম৷ ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একজন গবেষক তাঁর গবেষণা সহকারিদের বেতন দিতে পারেন না৷ অধিকাংশ গবেষণাই একা একজনের পক্ষে কারো সাহায্য ছাড়া বা কেবল স্বেচ্ছাসেবী সহকারিদের নিয়ে করাটা দুরূহ৷
(৩) গবেষণার সময় ও প্রণোদনা: আমি গবেষণা করি কেন? জ্ঞানের জন্য তো বটেই, সেটা মূখ্য কারণ৷ কিন্তু সেটা ছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গবেষণার জন্য বেশ কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা আছে৷ শিক্ষক হিসাবে চাকুরি পাকা করা, পদোন্নতি হওয়া সবকিছুই নির্ভর করছে গবেষণার ক্ষেত্রে সাফল্যের উপরে৷ কিন্তু বাংলাদেশে অনেক সময়ই পদোন্নতি কিংবা চাকুরি পাকা করার ক্ষেত্রে গবেষণার ভূমিকাকে সেরকম গুরুত্ব দেয়া হয় না৷ মোটামুটি সাধারণ মানের জার্নালে প্রকাশনা থাকলেই পদোন্নতির গবেষণা সংক্রান্ত শর্তটি যদি মিটে যায়, তাহলে কি আর কেউ বিশ্বসেরা জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের অতিরিক্ত পরিশ্রমটি করবেন? তদুপরি অধ্যাপকদের বেতন কাঠামোর কারণে অনেক সময়েই কনসাল্টেন্সি অথবা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করে সংসার চালাতে হয়৷ এর ফলে তাঁরা গবেষণার দিকে সেরকম সময় দিতে পারেন না৷ এই ব্যাপারটাতে ভারতের অধ্যাপকদের বেতনের উদাহরণ দিতে পারি৷ ভারতের আইআইটির একজন পূর্ণ অধ্যাপকের বেতন মাসে ৩ লাখ রুপির কাছাকাছি (বাংলাদেশি টাকার হিসাবে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা), বাড়িভাড়া বাদেই৷ সেই তুলনায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন অনেকখানিই কম৷ ২০১৫ সালের অষ্টম পে স্কেল অনুসারে সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত প্রফেসরদের বেসিক বেতন মাসে ৭৮ হাজার টাকা মাত্র, যা আইআইটির প্রফেসরদের বেতনের মাত্র ২১ শতাংশ৷
একই কথা ছাত্রদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য৷ সারা বিশ্বে গবেষণার কাজের একটা বড় অংশ হয় স্নাতকোত্তর পর্যায়, মানে মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে৷ বিশেষ করে পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা কয়েক বছর কোনো একটি বিষয়ে ভালো করে গবেষণা করেন, তাঁদের তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষকের অধীনে৷ নিজের পিএইচডি অভিসন্দর্ভ শেষ করার তাগিদেই গবেষণার কাজটা এসব শিক্ষার্থী করেন৷ কিন্তু বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই পিএইচডি পর্যায়ের গবেষণাকর্ম অপ্রতুল৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণার কাজটা অনেক সময় শখের বশে, অথবা স্নাতক পর্যায়ের থিসিস লেখার জন্য অল্প সময় নিয়ে করেন, যার ফলে ভালো কিছু করার সময় পান না তাঁরা৷ পিএইচডি পর্যায়ে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে সম্মানজনক বৃত্তির সংখ্যা নগন্য৷ অথচ এমন কিন্তু নয় যে এসব সুবিধা কেবল পশ্চিমা দেশেই আছে৷ প্রতিবেশী দেশ ভারতেও কিন্তু স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পিএইচডি করা শিক্ষার্থীরা ভালো অংকের সম্মানী পান, যার ফলে অনেকেই চাকুরিতে না ঢুকে অথবা বিদেশে না গিয়ে দেশেই পিএইচডি করেন৷ ভারতের আইআইটি-র পিএইচডি শিক্ষার্থীরা মাসে ২৫ থেকে ৬০ হাজার রুপির ভাতা পান, উপরি হিসাবে বাড়ি ভাড়াও পান৷ এর ফলে তাঁরা চাকুরি বা অন্যভাবে অর্থ উপার্জনের চিন্তা বাদ দিয়ে গবেষণায় সময় দিতে পারেন৷
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের ১১ উদ্ভাবন
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) মূলত সায়েন্স ল্যাবরেটরি নামে পরিচিত৷ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত কয়েকটি পণ্য ও প্রযুক্তি দেখে নেই চলুন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
উদ্ভাবিত পণ্য ও প্রযুক্তির প্রদর্শন
ঢাকার এলিফেন্ট রোডের সায়েন্স ল্যাবরেটরি বা বিসিএসআইআর ক্যাম্পাসে ভেতরে দোতলা একটি ভবনে সম্প্রতি চালু হয়েছে বিসিএসআইআর ইনোভেশন গ্যালারি৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ইনোভেশন গ্যালারি
ভবনের দোতলায় বিশাল একটি ঘরজুড়ে ১৩টি তাকে প্রদর্শিত হচ্ছে বিসিএসআইআর-এর দুই শতাধিক উদ্ভাবিত বৈজ্ঞানিক পণ্য ও প্রযুক্তি৷ বিসিএসআইআর-এর দেশজুড়ে ১১টি শাখা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন এই সব৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ন্যাচারাল প্রিজারভেটিভ
বাংলাদেশে এখন এক আতঙ্কের নাম ফরমালিন৷ খাদ্যপণ্য বেশি সময় ভালো রাখার জন্য ব্যবহার করা হয় এই ফরমালিন৷ কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এ খাবারই রূপ নেয় বিষে৷ সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এমনই এক প্রিজারভেটিভ যা একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত৷ আর প্রিজারভেটিভ তৈরি করেছেন চা পাতার উচ্ছ্বিষ্ট, সবজি ও বিভিন্ন ফলের খোসা থেকে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ফরমালিন ডিটেক্টর
বাংলাদেশে মাছসহ বিভিন্ন খাদ্যপন্যে মাত্রারিক্ত ফরমালিন ব্যবহারের ফলে সবসময়ই আতঙ্কে থাকেন ক্রেতারা৷ তবে বিসিএসআইআর উদ্ভাবিত ফরমালিন শনাক্তকরণ কিট ব্যবহার করে ঘরে বসেই যে কেউ পরিমাপ করতে পারবেন মাছ ও দুধে ফরমালিনের পরিমাণ৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
পলিমার মডিফাইড বিটুমিন
বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের সড়কগুলোতে পিচ উঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে৷ ফলে বর্ষা মৌসুমের আগে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কার করা হলেও সে টাকা জলেই যায়৷ আর এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সড়ক নির্মাণের জন্য বিসিএসআইআর উদ্ভাবন করেছে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
আর্সেনিক রিমুভাল ফিল্টার
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার নলকূপের পানিতে মাত্রারিক্ত আর্সেনিক রয়েছে৷ আর আর্সেনিকযুক্ত এ পানি ফুটিয়েও বিশুদ্ধ করা সম্ভব নয়৷ ঐ সব এলাকার মানুষের জন্য আশার আলো দেখিয়েছেন বিসিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা৷ তাঁরা এমন এক ফিল্টার উদ্ভাবন করেছেন, যা পানি থেকে আর্সেনিক দূর করবে৷ আর খরচও খুবই কম৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
সোলার ফার্ম হ্যাট
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এটি পরিচিত মাথাল হিসেব৷ কাঠফাটা রোদ্দুর থেকে বাঁচতে গ্রামের কৃষকরা ব্যবহার করেন এটি৷ তবে সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এ মাথাল কৃষকদের মাথায় কোমল বাতাসও দিবে৷ এই মাথালের ভেতরের এলইডি বাতিগুলো রাতের বেলা ঘরেও আলো দিবে৷ আর এ সব যুক্ত আছে মাথালের উপরের ছোট ছোট সোলার প্যানেলের সঙ্গে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
সোলার চার্জিং ব্যাকপ্যাক
স্মার্টফোনের এই যুগে সবাই কম বেশি ভোগেন চার্জ নিয়ে৷ সেক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা ব্যাকপ্যাকটিই যদি চার্জার হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাতে সুবিধাটাই বেশি৷ সায়েন্স ল্যাবের বিজ্ঞানীরা এমনই এক ব্যাকপ্যাক আবিষ্কার করেছেন যার মাধ্যমে চার্জ করা যাবে সেলফোন৷ ব্যাকপ্যাকে থাকা সোলার প্যানেল থেকেই চার্জ হবে সেলফোন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
সোলার ওভেন
এই ওভেন ব্যবহারের জ্বালানি খরচ নেই একেবারেই৷ রোদের তাপেই এ ওভেন দিয়ে রান্নাবান্নাসহ খাবার গরমও করা যাবে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
স্পিরুলিনা
স্পিরুলিনা হলো অতিক্ষুদ্র নীলাভ সবুজ সামুদ্রিক শৈবাল যা সূর্যালোকের মাধ্যমে দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে৷ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, লৌহ ও একাধিক খনিজ পদার্থ৷ সাধারণ খাদ্য হিসেবে তো বটেই নানা রোগ নিরাময়ে মূল্যবান ভেষজ হিসেবে দেশে-বিদেশে স্পিরুলিনার প্রচুর চাহিদা রয়েছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
নানা হারবাল পণ্য
বিসিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন নানারকম হারবাল পণ্য৷ এ সবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিম ও অ্যালোভেরার তৈরি হারবাল হ্যান্ডওয়াশ, ত্বক উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় করার জন্য অ্যালোভেরা জেল ইত্যাদি৷ এছাড়াও আছে অ্যালোভেরা ভ্যানিশিং ক্রিম, অ্যালোভেরা বডি লোশন, অ্যালোভেরা লেমন ড্রিংক, হারবাল তুলসি চা, অ্যালোভেরা টুথপেস্ট, অ্যালোভেরা শ্যাম্পু, লেবুর পাতার তৈরি শেভিং লোশন ইত্যাদি৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
বায়োগ্যাস প্লান্ট
দু’ধরনের বায়োগ্যাস প্লান্ট উদ্ভাবন করেছেন সায়েন্স ল্যাবের বিজ্ঞানীরা৷ একটি ফিক্সড ডোম বায়োগ্যাস প্লান্ট এবং অন্যটি ফাইবার গ্লাস বায়োগ্যাস প্লান্ট৷ জ্বালানি সংকটের এই যুগে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এসব বায়োগ্যাস প্লান্ট বেশ জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
অ্যালুমিনিয়াম ব্লক
বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়ামের জন্য বাংলাদেশ পুরোটাই আমদানি নির্ভর৷ সায়েন্স ল্যাবের বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন রকম ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য থেকে উদ্ভাবন করেছেন অ্যালুমিনিয়াম ব্লক, যা আমদানি নির্ভরতাকে কমাতে পারে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
বিশেষ আটা
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) উদ্ভাবন করেছে ‘হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ আটা’৷ বাজারের যে কোনো আটা হতে এ আটা দ্বিগুণ প্রোটিন সমৃদ্ধ৷ এতে আছে ফাইটো-ক্যামিক্যালস, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, আইসোফ্লাভন, ক্যালসিয়াম এবং সব অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো-অ্যাসিড, যা মানব শরীরের প্রোটিন গঠনে এবং ক্যানসার, কোলেস্টোরল, অস্টিওপোরোসিস এবং ম্যাল-নিউট্রেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাসহ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
14 ছবি1 | 14
(৪) গবেষণার ফল প্রকাশ: গবেষণার ফল প্রকাশ করতে হলে কনফারেন্সে উপস্থাপনা করতে হবে কিংবা পাঠাতে হবে জার্নালে৷ এর খরচ ব্যাপক৷ অধিকাংশ বিশ্বসেরা কনফারেন্স ইউরোপ বা অ্যামেরিকায় হয়, যার রেজিস্ট্রেশন ফি কিংবা যাতায়াতের খরচ যোগ করলে কয়েক লাখ টাকা খরচ পড়ে যায়৷ প্রতি বছর এভাবে পেপার প্রতি এত টাকা খরচ করা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সম্ভব না৷ আবার অনেক জার্নালেও প্রকাশনা ফি আছে৷ এই খাতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাদ্দ নাই বললেই চলে৷
উত্তরণের উপায়
আচ্ছা, গবেষণায় পিছিয়ে থাকার কারণটা না হয় বোঝা গেল, কিন্তু এ থেকে উত্তরণের উপায় কী? রিসোর্স সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দুভাবে করা যেতে পারে৷ বর্তমানে অনেক বিষয়ের গবেষণাই কম্পিউটার নির্ভর হয়ে গেছে, ফলে মূল যন্ত্রাংশ না থাকলেও সিমুলেশনের মাধ্যমে কাজ করা সম্ভব৷ গবেষকেরা এই দিকে মন দিতে পারেন, অল্প খরচের কম্পিউটার দিয়ে অথবা ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কিন্তু অনেক ভালো মানের এক্সপেরিমেন্ট বা সিমুলেশন করা সম্ভব৷ তবে যেসব ক্ষেত্রে আসল যন্ত্রপাতিমূলক গবেষণাগার প্রয়োজন, সেসব ক্ষেত্রে আসলে সরকারি অর্থ বরাদ্দের বিকল্প নাই৷ এর পাশাপাশি দেশে স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির সাথে সহযোগিতামূলক কাজ করা যেতে পারে৷ উন্নত বিশ্বে প্রচুর কোম্পানি এরকম কোলাবরেশন করে থাকে গবেষকদের সাথে৷
তবে আমার মতে গবেষণার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার হলো গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলা৷ এর মানে হলো গবেষণার গুরুত্বটা সরকারি পর্যায়ে বুঝতে হবে, চিন্তা করতে হবে দীর্ঘমেয়াদে এবং এই খাতে বিনিয়োগ করতে হবে দেশের স্বার্থে৷ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার খাতে বরাদ্দ বেশ কম৷ তার ফলে গবেষণা প্রকল্পে শিক্ষার্থী বা গবেষণা সহকারী পাওয়া মুশকিল৷ সরকারি পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলকভাবে গবেষণা অনুদানের ব্যবস্থা করলে দেশের গবেষকেরা নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা করে ভালো ভালো সব কাজ করবেন৷ তার সাথে সাথে ভালো গবেষকদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে হবে যাতে করে গবেষণায় তাঁরা উদ্বুদ্ধ হন৷ শিক্ষকদের বেতন কাঠামো, পিএইচডি গবেষকদের ভাতা বাড়ানোসহ নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য অর্থায়ন বাড়াতে হবে৷
এই প্রসঙ্গে কয়েকটি সংখ্যা উল্লেখ করতে চাই৷ ২০১৭-১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার খাতে বরাদ্দ হলো ১২ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের মাত্র ২ শতাংশ৷ তুলনা করার জন্য ভারতের আইআইটি মুম্বইয়ের ২০১৫-১৬ সালের বাজেট বের করলাম৷ সেখানে বরাদ্দ ছিল ২৫৫ কোটি রুপি, অর্থাৎ প্রায় ৩২০ কোটি টাকা৷ ২০১৫-১৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৭ কোটি টাকা৷ বাংলাদেশ আর ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে বরাদ্দের এই সংখ্যাগুলোর তুলনাই দেখিয়ে দেয়, বাংলাদেশের গবেষকেরা গবেষণার ক্ষেত্রে কতটা অবহেলিত৷ ছোট্ট দেশ ইসরায়েল প্রতি বছর গবেষণা খাতে জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ বরাদ্দ করে, বাংলাদেশের বাজেটের কত অংশ এই খাতে বরাদ্দ করা হয়?
শেষ করছি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু প্রফেসর কায়কোবাদ ও তাঁর মতো নিবেদিতপ্রাণ আরো কিছু শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে৷ এত প্রতিকূলতার মাঝেও তাঁরা শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণার বীজটা বপন করার চেষ্টা করেছেন৷ তাঁদের এই চেষ্টার ফলেই ২০ বছর আগে গবেষণার রাজ্যে আমার পদার্পণ শুরু হয়৷ বছর বছর ধরে অনেক গবেষকের যাত্রা শুরু এভাবেই৷ গবেষণার খাতে একটু মনোযোগ দিলে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গবেষণার ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ালে পরিণামে লাভটা হবে অনেক সুদূরপ্রসারী৷ গবেষণায় এগিয়ে যাবার সম্ভাবনা আমাদের আছে৷ দরকার কেবল দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ৷ জ্ঞানভিত্তিক ভবিষ্যতের পৃথিবীতে কায়িক শ্রমের চাইতে মেধাভিত্তিক গবেষণার গুরুত্বটাই হবে অনেক অনেক বেশি, সেটা দ্রুত নীতি-নির্ধারকেরা বুঝতে পারবেন, সেটাই কামনা করি৷