সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, জার্মানিতে আসা বেআইনি শরণার্থীদের দেশে ফেরাতে পারছে না জার্মান অভিবাসন দফতর৷ কারণ, পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় কাগজপত্র৷
ছবি: picture alliance/dpa/R.Hirschberger
বিজ্ঞাপন
গত কয়েকবছরে জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শরণার্থীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে৷ সিরিয়া সমস্যা শুরু হওয়ার পর শরণার্থীর সংখ্যা আরো বেড়েছে৷ এই শরণার্থীদের অনেকেই জার্মানিতে ঢুকেছেন বেআইনিভাবে৷ অনেকেই আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন৷ কেউ পেয়েছেন, কেউ পাননি৷ যাঁরা পাননি, তাঁদের দেশে ফেরানোর চেষ্টা করেছে জার্মানি৷ কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট বলছে, অধিকাংশ শরণার্থীকেই দেশে ফেরাতে পারছে না জার্মানি৷ ২০১৭ সালে যে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭১ শতাংশে৷ অর্থাৎ, ৭১ শতাংশ শরণার্থীকে ডিপোর্ট বা দেশে ফেরানোর চেষ্টা করেও পারেনি জার্মানি৷ সংখ্যার হিসেবে তা প্রায় ৬৫ হাজার৷ ২০১৬ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৩৮ হাজার৷
শরণার্থী শিশুরা ঠিকমতো শিক্ষা পাচ্ছে তো?
জার্মান স্কুলগুলিতে শরণার্থীরা কি ঠিকমতো পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে? শরণার্থীদের সমস্যাগুলো ধরতে পারছেন তো শিক্ষকেরা? সম্প্রতি এক সমীক্ষা এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে৷ শরণার্থীদের শিক্ষা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AA/M. Abdullah
সমস্যার মূল
এই মুহূর্তে জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুলে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার শরণার্থী শিশু পড়াশোনা করে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তাদের ঠিক মতো শেখাতে পারছেন তো শিক্ষকেরা? তাদের সমস্যাগুলো ধরা যাচ্ছে তো?
ছবি: picture alliance/dpa/M. Skolimowska
হিংসা, ভয়, গরিবি
জার্মানির আর পাঁচজন ছাত্রের মতো শরণার্থীরা নয়৷ নিজের দেশ থেকে তাদের পালিয়ে আসতে হয়েছে৷ তারা হিংসা, ভয়, গরিবির শিকার৷ তাদেরকে মূলস্রোতে আনতে গেলে শিক্ষার অন্য মডেল তৈরি করা দরকার৷
ছবি: picture alliance/dpa/Sputnik/I. Zarembo
ড্রপ আউট
সমীক্ষা বলছে, স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে বহু শরণার্থী শিশুই মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে দিচ্ছে৷
স্পেশাল স্কুল
শরণার্থীদের জন্য বিভিন্ন অঞ্চলে স্পেশাল স্কুল তৈরি করা হয়েছে৷ কোনো কোনো সংগঠন কলেজ পড়ুয়াদের দিয়ে সেখানে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ওই শিক্ষকেরা শরণার্থীদের সমস্যা ধরতে পারছেন তো?
ছবি: picture alliance/dpa/AA/M. Abdullah
শরণার্থী শিক্ষক
কোনো কোনো স্কুলে অবশ্য শরণার্থী শিক্ষকদেরই পড়ানোর কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে৷ অনেকেই বিষয়টিকে ভালো মডেল বলে মনে করছেন৷ শরণার্থী শিক্ষকেরা শিশুদের সমস্যা অনেক সহজে বুঝতে পারেন৷ সব স্কুলেই এ ধরনের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Macdougall
মূলস্রোতে ফেরানো
শরণার্থী শিশুদের জার্মানির মূলস্রোতের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করা দরকার৷ কিন্তু তার জন্য অনেক সময় দেওয়া দরকার৷ শরণার্থী শিশুদের মন বোঝা দরকার প্রথমে৷ সেখানেই ঘাটতি থাকছে বলে অনেকের ধারণা৷
ছবি: S.Ponsford
সরাসরি কথাবার্তা
শরণার্থী ছাত্রদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলা দরকার বলে মনে করছেন অনেকে৷ প্রত্যেকের সমস্যাগুলো আলাদা আলাদা করে বোঝা দরকার৷ তাদের বোঝাতে হবে, আর ভয়ের কোনো কারণ নেই৷ তারা নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
7 ছবি1 | 7
প্রশ্ন হলো, কেন বেআইনি শরণার্থীদের দেশে ফেরানো যাচ্ছে না? জার্মান প্রশাসনের দাবি, দেশে ফেরানোর জন্য শরণার্থীদের কাছে যেসব কাগজপত্র থাকা দরকার, অধিকাংশই তা দেখাতে পারেন না৷ অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্ত কাগজপত্র নষ্ট করে দেন, যাতে কোনোভাবেই তাঁদের দেশে ফেরানো না যায়৷ প্রশাসনের বক্তব্য, বহু সময়েই উক্ত দেশের কাছে কাগজপত্র চেয়ে পাঠালেও তা সময়মতো পাঠানো হয় না৷ ফলে শরণার্থীদেরও দেশে ফেরানো যায় না৷
রিপোর্টের দাবি, সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ভারতের বেআইনি শরণার্থীদের নিয়ে৷ ভারতীয় প্রশাসনের কাছে ওই সমস্ত ব্যক্তির বদলি পাসপোর্ট চাওয়া হলেও তা পাঠাতে বহু সময় ব্যয় করে ভারতীয় প্রশাসন৷ অনেক ক্ষেত্রে তা পাঠানোই হয় না৷ পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা৷ সেখানেও পাক অভিবাসন দফতর পাসপোর্ট পাঠাতে বহু সময় নেয়৷ বহু ক্ষেত্রে বদলি পাসপোর্টের আবেদনের কোনো উত্তরই দেওয়া হয় না৷
তবে সবচেয়ে সমস্যা তুর্কিদের নিয়ে৷ জার্মানিতে বেআইনি তুর্কি শরণার্থীর সংখ্যা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি৷ কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হয়েছে৷ সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক জার্মানির সঙ্গে৷ ফলে তুরস্কের কাছে এ ধরনের আবেদন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না৷ তুরস্কের দফতর জার্মানির আবেদনের কার্যত কোনো উত্তরই দিচ্ছে না৷ আফগানিস্তান এবং রাশিয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা হচ্ছে৷
অন্যদিকে ৩৮০০ মানুষের পরিচয়ই জার্মান অভিবাসন দফতরের কাছে স্পষ্ট নয়৷ তাঁরা যে ঠিক কোন দেশ থেকে এসেছেন, সেটাই বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি৷
সব মিলিয়ে বেআইনি শরণার্থী নিয়ে প্রবল সমস্যায় জার্মান প্রশাসন৷ অন্যদিকে, শরণার্থীদের নিয়ে জনমনেও এক ধরনের বিতস্পৃহা তৈরি হয়েছে৷ যার সুযোগ নিচ্ছে উগ্র দক্ষিণপন্থি দলগুলি৷ দ্রুত জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের৷ বেআইনি শরণার্থীদের নিয়ে সরকার নির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ না করলে দক্ষিণপন্থিদের দাপট আরো বাড়বে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ অন্যদিকে শরণার্থীদের প্রবেশ নিয়েও নির্দিষ্ট নীতি তৈরি হওয়া দরকার বলে মনে করছেন অনেকে৷
এসজি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
২৮ জানুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন..
জার্মানি থেকে আফগানিস্তানে বিতাড়ন
২০১৬ সালের মাঝমাঝি সময়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া ৩৪ আফগান শরণার্থীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷ সেটা শুরু৷ এরপর মাঝখানে কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবারো বিমানে করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাঁদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
বিমানে করে ফেরত পাঠানো
গত ১২ সেপ্টেম্বর ১৫ জন শরণার্থীকে ডুসেলডর্ফ বিমানবন্দর থেকে আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা বিমানে তুলে দেয়া হয়৷ প্রত্যেকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হয়ে গেছে৷ গত মে মাসে কাবুলে জার্মান দূতাবাসের সামনে প্রাণঘাতি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের পর আফগান শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল৷ এখন আবার শুরু হয়েছে৷ জার্মানির সবুজ দল এবং বামদল এর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
একটা সুযোগের আশায় লড়াই
গত মার্চে কটবুসের একদল শিক্ষার্থী গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়৷ তিন আফগান সহপাঠীকে যাতে ফেরত পাঠানো না হয়, সেজন্য প্রচারণা চালিয়েছিল তারা৷ এজন্য তারা বিক্ষোভ করে, স্বাক্ষর সংগ্রহ করে৷ এমনকি আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া সেই তিন আফগান শিক্ষার্থীর পক্ষে লড়তে একজন আইনজীবী নিয়োগের অর্থও সংগ্রহ করা হয়৷ যে তিন শিক্ষার্থীর জন্য এত আয়োজন, তাদের একজনকে দেখা যাচ্ছে ওপরের ছবিতে৷
ছবি: DW/S.Petersmann
‘কাবুল নিরাপদ নয়’
‘প্রাণঘাতি বিপদের দিকে যাত্রা’, গত ফেব্রুয়ারি মাসে মিউনিখ বিমানবন্দরে প্রতিবাদস্বরুপ দেখানো এক পোস্টারে একথা লেখা ছিল৷ যেসব বিমানবন্দর থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো হয়, সেসব বিমানবন্দরে মাঝেমাঝেই হাজির হন এমন প্রতিবাদকারীরা৷ গত ডিসেম্বর থেকে মে মাস অবধি অনেক আফগান শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ চলতি বছর এখন অবধি আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে ২৬১ জনকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
ভ্যুর্ৎসবুর্গ থেকে কাবুল
মধ্য ত্রিরিশে পা দেয়া বাদাম হায়দারিকে সাত বছর জার্মানিতে কাটানোর পর গত জানুয়ারিতে দেশে ফেরত যেতে বাধ্য করা হয়৷ তিনি অতীতে ইউএসএইডে কাজ করেছেন এবং তালেবানের কাছ থেকে বাঁচতে জার্মানিতে এসেছিলেন৷ তালেবানের ভয় এখনো তাড়া করছে হায়দারিকে৷ তিনি আশা করছেন, শীঘ্রই হয়ত আবারো জার্মানিতে ফিরতে পারবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C.F. Röhrs
নিগৃহীত সংখ্যালঘু
গত জানুয়ারি মাসে আফগান হিন্দু সমীর নারাংকে কাবুলে ফেরত পাঠানো হয়৷ ফেরত পাঠানোর আগ অবধি তিনি জার্মানির হামবুর্গে পরিবরাসহ ছিলেন৷ জার্মান পাবলিক রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আফগানিস্তান নিরাপদ নয়৷’’ যেসব সংখ্যালঘু রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়ায় আফগানিস্তানে ফেরত যাচ্ছেন, তারা মুসলিমপ্রধান দেশটিতে সংখ্যালঘু হওয়ায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Wiedl
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফিরে যাওয়া
পকেটে মাত্র বিশ ইউরো নিয়ে জার্মানি থেকে আফগানিস্তানে ফেরত যান রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে ব্যর্থরা৷ তাঁরা চাইলে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংগঠন আইওএম’এর সহায়তা নিতে পারেন৷ তাছাড়া সে দেশে জার্মান অর্থায়নে তাদের মানসিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা রয়েছে৷