হজ নিয়ে মন্তব্যের পর মন্ত্রিত্ব ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ হারানো আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বাংলাদেশে ফিরবেন কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না৷ যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্কিত মন্তব্যের পর এখন কলকাতায় অবস্থান করছেন তিনি৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
প্রবীণ এই রাজনীতিক সোমবার টেলিফোনে ডয়চে ভেলের ‘কনটেন্ট পার্টনার' বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভারত প্রতিনিধিকে বলেছেন, তিনি দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন, এখনই ফিরে আরো বিব্রতকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিতে চান না৷ ইউরোপ অ্যামেরিকায় থাকতে পারবেন না বলেই কলকাতায় এসেছেন বলে জানান তিনি৷
লতিফ সিদ্দিকীর এ সাক্ষাৎকার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তোলপাড়৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে আহমেদ রশীদ লিখেছেন, ‘‘উনি তসলিমা নাসরিনের পাশাপাশি থাকতে চান কি?'' তিনি লিখেছেন, ‘‘নিজ দল আওয়ামী লীগ এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, ভারত থেকে ‘প্রথম সুযোগেই' তিনি বাংলাদেশে ‘ঢুকে পড়তে' চান৷ এ জন্য তিনি সরকার ও দলের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত দেশে ফেরা না হলে তিনি ভারতের আশ্রয়ে থাকতে চান৷ কলকাতায় অবস্থানরত লতিফ সিদ্দিকী আজ সোমবার সন্ধ্যায় বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে এ কথা বলেন৷''
২০১৩ সালের আলোচিত দশ মন্তব্য
২০১৩ সালে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে বাংলাদেশে আলোচনায় ছিলেন অনেকে৷ কোনো কোনো মন্তব্য সাধারণ মানুষের হাসির খোরাকও হয়েছে৷ বাংলাদেশে আলোচিত দশটি মন্তব্য প্রকাশ করা হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
‘হরতাল সমর্থকদের নাড়াচাড়ায় ভবন ধস’
সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ২৪ এপ্রিল বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে জানতে পেরেছি৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷’’ রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ৷
ছবি: Reuters
‘আমার কাছে তথ্য আছে’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অত্যন্ত সক্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘‘আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আগামীবার আবার ক্ষমতায় আসবে৷’’ ২৩ জুলাই ঢাকায় এক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি৷
ছবি: Sajeeb Ahmed Wazed
‘লোডশেডিং দিতে বলেছিলাম’
বিদ্যুতের প্রয়োজনীয় উৎপাদন নিশ্চিত হওয়ার পরও লোডশেডিং প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমি নিজেই প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিতে বলেছিলাম৷ তা না হলে মানুষ ভুলে যাবে দেশে লোডশেডিং ছিল৷’’ ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট ঢাকায় কুড়িল উড়ালসেতু উদ্বোধনকালে একথা বলেন শেখ হাসিনা৷
ছবি: dapd
‘...তারা বাঙালি নয়’ (প্রতীকী ছবি)
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হকের একটি মন্তব্য আলোচনার ঝড় তোলে৷ ‘‘যারা ঘোমটা পরে, তারা বাঙালি নয়’’ – এ কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও, মিতা জানান, তিনি চোখ পর্যন্ত ঢেকে রাখার যে রীতি দেখা যাচ্ছে, তার সমালোচনা করেছিলেন৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
‘২০ জন উপদেষ্টা’
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকা উপদেষ্টাদের নিয়ে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন৷ ২১ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘‘ওই দুই সরকারের ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমান সরকারি দল পাঁচজন এবং বিরোধী দল পাঁচজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করবেন৷’’ কিন্তু গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপদেষ্টাদের মধ্যে মাত্র ১৪ জন এখন জীবিত আছেন৷ তাদের কয়েকজন আর উপদেষ্টা হতে রাজি নন৷
ছবি: Getty Images
‘...তেঁতুল বলি নাই’
হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমেদ শফী এক ওয়াজ মাহফিলে ‘নারীদের তেঁতুল’ বলেন৷ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ পরবর্তীতে ২ নভেম্বর চট্টগ্রামে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি মহিলাদের তেঁতুলের মতো বলেছি, তেঁতুল বলি নাই৷’’
ছবি: Mustafiz Mamun
‘ধ্বংস এখন অবধারিত’
সরকার গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের পর ব্যাংকটির ভবিষ্যত সম্পর্কে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের ধ্বংস অবধারিত হলো৷’’ ৬ নভেম্বর এক বিবৃতিতে একথা বলেন ইউনূস৷ গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
‘মানুষ থুতু দেবে’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১১ নভেম্বর বলেন, ‘‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ আমাকে থুতু দেবে না? এর চেয়ে জেলেই মরে যাওয়া ভালো৷’’ এই মন্তব্যের কয়েকদিন পর তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারকে সরাতে হলে নির্বাচন দরকার৷ নির্বাচনে না গেলে মানুষ থুতু দেবে৷’’ শেষ অবধি অবশ্য নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
‘আমরা আপনাদের তৈরি করেছি’
অবরোধের আগুনে পোড়া গীতা সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সব রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আমরা আপনাদের তৈরি করছি, আপনারা আমাদের তৈরি করেন নাই৷ আমাদের স্বামীরটা আমরা খাই৷ আপনারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন৷’’ প্রধানমন্ত্রী ১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট পরিদর্শনে গেলে তাঁকে এসব কথা বলেন গীতা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
‘দিস ইজ বেয়াদবি’
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে যান নি ঢাকায় অবস্থানরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতরা৷ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ইইউ রাষ্ট্রদূতদের এই আচরণ প্রসঙ্গে ১৯ ডিসেম্বর বলেন, ‘‘ইইউ রাষ্ট্রদূত স্মৃতিসৌধে গেলেন না, দিস ইজ বেয়াদবি, এক্কেবারে বেয়াদবি৷’’ এরকম বিভিন্ন মন্তব্য করে গত পাঁচ বছর ধরেই আলোচনায় আছেন মুহিত৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
10 ছবি1 | 10
বিবিসি থেকে প্রশ্ন করা হয় তসলিমা নাসরিন, দাউদ হায়দার – এঁদের সম্পর্কে একই ধরনের অভিযোগ ওঠার পর তাঁরা আর দেশেই ফিরতে পারছেন না দশকের পর দশক৷ আপনার কি সেই ভয়টা হচ্ছে যে, আপনারও সেই পরিস্থিতি হতে পারে?
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘‘না, না, তাঁরা লেখনীর মাধ্যমে বলেছেন৷ তাঁরা এক কথা বলেছেন আর আমি তো এখনো বলছি যে আমার অবস্থান....আমার কথাগুলোকে বিকৃত করা হয়েছে, খণ্ডিত করা হয়েছে৷''
তিনি বলেছেন, ‘‘আমার জীবনে এ রকম ঝড় বহুবার এসেছে৷ পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলাম৷ তারপর বিতাড়িত হয়েছিলাম৷ কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আমার দ্বিমত হয়েছে বলে আমি সরে এসেছিলাম৷ এখনো কাদের সিদ্দিকী ক্ষমা চাচ্ছে৷''
লতিফ সিদ্দিকীর কথায়, ‘‘আমি একেবারেই মাটির সাথে থাকতে চাই৷ ভারত সেটা না দিলে....সেটা এখনই....সে ব্যাপারে এখনই কিছু বলব না৷ সময়ই সময়ের সিদ্ধান্ত নেবে৷''
সাখাওয়াত হোসেন অবশ্য ভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘লতিফ সিদ্দিকী যা বলেছে তার দায় ওনার৷ সেটা নিয়ে রাজনীতি করার কোন প্রয়োজন নাই৷'' তাঁর মতে, যে বক্তব্য উনি দিয়েছেন সেটা ওনাকেই বুঝতে দিন, একসময় নিজে থেকেই তিনি নিজের বক্তব্য পরিহার করবেন৷ অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ৷ ঠিক মতো নামাজ পরি না, জাকাত দেই না৷ গরিবের হক আদায় করি না৷ সুযোগ পাইলে এতিমের হক ও ছাড়ি না৷ কিন্তু তবুও কে কাকে কী বলল, সেইটা নিয়া ফালা ফালির কমতি নাই৷ ইসলাম এত সস্তা না যে, কেউ ধরে নাড়াচাড়া দিলেই ধ্বংস হয়ে যাবে৷
তিনি লিখেছেন, ‘‘চারটা বিয়ে করলে কোনো দোষ হয় না৷ কিন্তু চারটি বিয়ে করতে নিষেধ করলেই সমস্যা! কোনো মানুষের পক্ষে চারজন নারীর প্রতি সমান হক আদায় করা সম্ভব কিনা, এটা কি একবার ভেবে দেখেছেন? ইসলাম এত সস্তা না৷ মূর্তি দেখলেই যাদের ভাঙতে ইচ্ছে জাগে তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, মূর্তি দেখলেই যদি ইমান চলে যাবার ভয় দেখা দেয়, তা হলে ঈমানের মধ্যে সমস্যা রয়েছে৷''
একই ব্লগে আল-শাহ্রিয়ার লিখেছেন,‘‘পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে কটূক্তি পরিণতিতে মন্ত্রিত্ব হারানো বা আওয়ামী লীগের প্রেসিয়াম সদস্যপদ থেকে অপসারিত হয়েও আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কোনো রকম অনুশোচনা বা আফসোস নেই৷ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কলকাতা থেকে বাংলাদেশের দৈনিক সমকালকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, তিনি তাঁর বক্তব্যে অটল রয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘আমার রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নেই৷ তবে সক্রেটিস হওয়ার সুযোগ আছে৷''
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমি ইহজগতে অসাম্প্রদায়িক মানুষ৷ আমার নেতা ও দল আমার বিরুদ্ধে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন৷''
লতিফ সিদ্দিকীর ভারতে থাকতে চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে টুইটারে অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছেন৷ আনোয়ার হোসেন বাবলু লিখেছেন কেন ভারত সবসময়ং এমন ব্যাক্তিদের আশ্রয় দেয়৷
এর উত্তরে সুরেশ লিখেছেন দেশের জনগণ তাকে চাচ্ছে না এবং নিজ দল থেকেও তাকে বের করে দেয়া হয়েছে, তিনি আর কোথায় যাবেন?
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এরই মধ্যে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী থেকে সদস্যপদ হারিয়েছেন৷ এদিকে, মঙ্গলবার তাঁকে চূড়ান্তভাবে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে৷ কেন দল থেকে তাঁকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে নোটিসে৷