চল্লিশ বছর ধরে তিনি স্পেনের রাজা ছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হতেই দেশ ছাড়ছেন প্রাক্তন রাজা খুয়ান কার্লোস ওয়ান।
বিজ্ঞাপন
তাঁর দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে নিজের ছেলে ও বর্তমান রাজা ষষ্ঠ ফেলিপেকে একটি চিঠি লিখেছেন খুয়ান কার্লোস। তাতে বলেছেন, ''আমি সব সময় স্পেন ও রাজতন্ত্রের ভালো চেয়েছি। দেশের লোকের সেবা করেছি।'' ওই চিঠিতেই দেশ ছাড়ার সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন তিনি।
স্পেনের প্রাক্তন রাজা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন একটা সময়ে যখন তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ নয়ছয় ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে মাস দুয়েক আগে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ, তিনি সৌদি আরব থেকে আট কোটি ৫০ লাখ ইউরো নিয়েছিলেন।
প্যালেসের বর্তমান আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বর্তমান রাজা তাঁর বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তবে কবে তিনি দেশ ছাড়বেন এবং কোথায় যাবেন সে বিষয়ে কিছু জানাননি হুয়ান।
সবচেয়ে মিষ্টি রাজপুত্তুর বা রাজকন্যা কে?
প্রিন্স উইলিয়াম আর কেটের তৃতীয় সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখেছে – সেই সঙ্গে নিজের মুখও দেখিয়েছে! হাজার হোক রাজপরিবারের সন্তান৷ তবে সব রাজা-রাজড়া কিংবা রানিরাও তো এককালে কচিই ছিলেন...৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Lipinski
‘ইটস এ বয়!’
মা’র কোলে ক্লিনিক থেকে বেরিয়েই রাজকীয় খোকন দেখে না দেখবে কী করে, তার চোখই তো ভালোমতো খোলেনি৷ তবে বাবা উইলিয়াম পাশে দাঁড়িয়ে পাপারাৎসিদের দিকে হাত নাড়ছেন, মা’র মুখে গর্বের হাসি৷ ২৩শে এপ্রিল বেলা এগারোটা বেজে এক মিনিটে ইংল্যান্ডের রাজপরিবারে এই সর্বাধুনিক সংযোজন – সেন্ট জর্জের দিনে, যাঁর ক্রুশ চিহ্ন ইংল্যান্ডের পতাকায় আঁকা আছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/A. Chown
ঠিক বাবার মতো?
কার মতো দেখতে, সে পরের কথা, বেচারার নামই এখনও ঠিক হয়নি অথবা জানানো হয়নি৷ রাজপুত্তুর হওয়ার ফ্যাকড়াও তো কম নয়: কোনো হালফ্যাশনের নাম হলে চলবে না৷ বাজি ধরা হচ্ছে নতুন প্রিন্সের নাম হবে আর্থার, হেনরি কিংবা ফিলিপ৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Lipinski
পরম্পরা
দাদু প্রিন্স চার্লস আর বাবা প্রিন্স উইলিয়ামের পর যার রাজা হওয়ার কথা, তিনি হলেন জর্জ আলেক্সান্ডার লুইস ওরফে প্রিন্স জর্জ, কেট আর উইলিয়ামের প্রথম সন্তান৷ প্রিন্স জর্জের জন্ম ২০১৩ সালের ২২শে জুলাই৷ তার বছর দু’য়েক পরে, ২০১৫ সালের দোসরা মে জন্ম নেয় জর্জের ছোটবোন আর নবজাতকের বড় বোন রাজকন্যা শার্লট৷
ছবি: Reuters
চার নম্বর
প্রিন্স জর্জের পরেই সিংহাসনে চড়ার অধিকার রাজকন্যা শার্লটের৷ শার্লটের পুরো নাম আবার শার্লট এলিজাবেথ ডায়ানা – অর্থাৎ প্রপিতামহী রানি এলিজাবেথ আর পিতামহী প্রিন্সেস ডায়ানার নামও বহণ করছে শার্লট৷ ওপরের ছবিটি তার বছর খানেক বয়সের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Hrh The Duchess Of Cambridge/Han
মায়ের কোলে রানি এলিজাবেথ
তখনও তাঁর রানি হতে অনেক বাকি৷ মা তখন ডাচেস অফ ইয়র্ক, বাবা ভবিষ্যতের রাজা ষষ্ঠ জর্জ৷ এলিজাবেথের জন্ম সিজারিয়ান করে, ১৯২৬ সালের ২১শে এপ্রিল তারিখে৷ বড় হয়েছেন চার বছরের ছোট বোন মার্গারেটের সঙ্গে – যিনি ২০০২ সালে পরলোকগমন করেন৷ রানি এলিজাবেথের বয়স এখন ৯২৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কে, বলুন তো?
প্রিন্স ফিলিপ, রানি এলিজাবেথের সুযোগ্য প্রিন্স কনসর্ট৷ জন্ম ১৯২১ সালের ১০ই জুন তারিখে৷ পঁচিশ বছর পরে ডিউক অফ এডিনবরা হিসেবে প্রিন্স ফিলিপ রাজকন্যা এলিজাবেথের পানিগ্রহণ করেন৷ অবশ্য দু’জনের প্রথম দেখা ১৯৩৯ সালে, ফিলিপের বয়স যখন ১৮ আর এলিজাবেথের ১৩৷ ফিলিপ তখন নৌবাহিনীর অফিসার হবার মুখে৷ আজ তাঁর বয়স ৯৬৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কান নিয়ে কানাঘুষো?
দুর্মুখরা বলে, কান দেখলেই নাকি চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জকে চেনা যায়৷ প্রিন্স চার্লসের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৪ই নভেম্বর৷ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন সিংহাসনে আরোহণ করেন, তখন চার্লসের বয়স মাত্র চার বছর৷ রানি এলিজাবেথের পর তাঁরই রাজা হওয়ার কথা – কিন্তু কবে?
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রিন্সেস ডায়ানা
ইংল্যান্ডবাসীদের ‘হৃদয়ের রানি’ লেডি ডাই, ডায়ানা স্পেন্সারের জন্ম ১৯৬১ সালের পয়লা জুলাই তারিখে৷ ১৯৮১ সালে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিবাহের সময় ডায়ানার বয়স ছিল বিশ বছর; টেলিভিশনে বিশ্বের ৭৫ কোটি মানুষ দেখেছিলেন সেই বিবাহ অনুষ্ঠান – যদিও সে বিয়ে টেকেনি৷ ১৯৯৭ সালের ৩১শে আগস্ট প্যারিসে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান প্রিন্সেস ডায়ানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাসিটা যেন একই রয়ে গেছে
সে বয়সে প্রিন্স উইলিয়াম আর্থার ফিলিপ লুইস মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসরের মাথায় অবশ্য চুল কিছুটা বেশি ছিল৷ জন্ম লন্ডনে, ১৯৮২ সালের ২১শে জুন৷ বাবা-মা’র ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর উইলিয়াম ও তাঁর ভাই হ্যারি কিছুটা সময় লন্ডনের কেনসিংটন প্যালেসে মা’র কাছে কাটাতেন; বাকি সময়টা বাবা আর দাদী রানি এলিজাবেথের কাছে৷ দু’টি মাত্র দুধের দাঁতের সেই ছোট্ট খোকাটি আজ নিজেই তিন সন্তানের জনক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হ্যারিকেও যেন চেনা যায়...
১৯৮৪ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর তারিখে জন্ম নেন প্রিন্স হেনরি চার্লস অ্যালবার্ট ডেভিড মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর বা প্রিন্স হ্যারি৷ আগামীতে তিনি বিয়ের বর৷ এছাড়া যে সাবেক মার্কিন অভিনেত্রী ও মডেল মেঘান মার্কলেকে হ্যারি বিয়ে করছেন, তিনি একজন ডিভোর্সি ও তাঁর মা একজন অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান৷ কাজেই এই বিয়ে ব্রিটেনের রাজকীয় ঐতিহ্যে আরো অনেক পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
স্পেনের ডিক্টেটর ফ্রান্সিসকো ফ্রাংকো ১৯৭৫ সালে মারা যাওয়ার পর খুয়ান কার্লোস ওয়ান রাজা হন। স্পেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পিছনে তাঁর অবদান প্রচুর। এমনিতে তিনি ছিলেন জনপ্রিয় রাজা। কিন্তু ২০১২ সালে স্পেন যখন আর্থিক সংকটের ধাক্কায় বেসামাল, তখন তিনি বতসোয়ানায় বিলাসবহুল ছুটি কাটান। তা নিয়ে সে সময় প্রচুর বিতর্ক হয়।
দুই বছর পর ২০১৪ সালে ছেলেকে রাজা করেন খুয়ান কার্লোস। তখন তিনি বলেন, ভুল সংশোধন করে নিজেকে সংশোধন করে বাকি জীবন কাটাতে চান তিনি। সেই সময় তাঁর মেয়ে রাজকুমারী ক্রিস্টিনাকে নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে দেশে তোলপাড় হয়। আদালতে অবশ্য তাঁকে নির্দোষ বলে রায় দেয়। কিন্তু ২০১৫তে তাঁর ডাচেস উপাধি কেড়ে নেওয়া হয়।
এই বছরের গোড়ায় বর্তমান রাজা তাঁর বাবার প্যালেস ভাতা বন্ধ করে দেন। তাঁর বিরুদ্ধে সুইজারল্যান্ডে তদন্ত শুরুর পরই এই সিদ্ধান্ত নেন বর্তমান রাজা। তবে এ নিয়ে রাজপ্রাসাদেও মতবিরোধ ছিল। একাংশের মতে, বর্তমান রাজা তাঁর বাবার দুর্নীতির খবর আগে থেকেই জানতেন।
প্রাক্তন রাজার দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। উপ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এভাবে পালিয়ে যাওয়াটা রাজাসুলভ কাজ নয়। বরং তাঁর নিজের দেশের লোকের কাছে দায়বদ্ধ থাকা উচিত। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে গণতান্ত্রিক সরকার স্বাগত জানাতে পারে না।