1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশ ছেড়ে জার্মানিতে অনিশ্চয়তার মুখে আফগানরা

২৪ অক্টোবর ২০২১

তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর হাজার হাজার আফগান দেশ ছেড়ে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়৷ দেশ ছেড়ে জার্মানিতে আসা আফগানরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে দিন যাপন করছেন৷

তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর হাজার হাজার আফগান দেশ ছেড়ে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়৷ দেশ ছেড়ে জার্মানিতে আসা আফগানরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে দিন যাপন করছেন। 
ছবি: Patrick Pleul/dpa-Zentralbild/dpa/picture alliance

তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগ করেন আব্দুল৷ দিনটি ছিল তার জীবনের ভয়াবহ কষ্টের৷ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করতে হয়েছিল তাকে৷ আফগানিস্তার ত্যাগের কয়েক সপ্তাহ পরেও কষ্টকর সেই স্মৃতি মনে আছে তার৷ ‘‘এখনো সেই ভয়াবহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি আমি৷ জানি না কিভাবে বেঁচে আসলাম,’’ বলেন তিনি৷

থাকার বৈধতা নিয়ে জটিলতা

বিমানে উঠার কিছুক্ষণ আগে এক জার্মান সেনা আব্দুলকে জানালেন যে, তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে৷

কিন্তু দেশ ছেড়ে এসেও জটিলতা খুব একটা কমেনি তার৷ আব্দুলসহ আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে আসা আরো অনেক আশ্রয়প্রার্থীই দেশটিতে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন৷ এমন কয়েকজনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ তারা আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে জার্মানির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবী হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷ অনেকেই ছিলেন সাব-কন্ট্রাকটর আবার কেউ কেউ ছিলেন সরাসরি জার্মান সরকারের চাকুরিতে নিযুক্ত৷

আফগানিস্তান থেকে আসা এসব আশ্রয়প্রার্থীরা নানা কারণেই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন৷ এর মধ্যে আছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তজনিত জটিলতা, কাদেরকে জার্মান সরকারের সাবেক চাকুরিজীবী বলা হবে তার জটিলতা আর সেই সাথে রয়েছে জার্মান সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা৷

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা বড় সমস্যা

জার্মান সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতার সমস্যাটি তালেবানদের ক্ষমতা দখলের আগেই দেখা গেছে৷ যেমন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কয়েকমাস ধরে আলাপ-আলোচনার পরেও কাদেরকে জার্মান সরকারের চাকুরিজীবী বলা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে নিতে পারেনি৷

প্রথমদিকের বলা হয় যে, যারা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য দুই বছর কাজ করেছে তাদেরকে জার্মান সরকারের চাকুরিজীবী হিসাবে সুবিধা দেওয়া হবে৷ এজন্য তাদেরকে নিজেদের উদ্যোগে জার্মানিতে আসতে হবে৷

গত জুন মাসে, দেশটির প্রতিরক্ষা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে৷ বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে যারা জার্মান সরকারের জন্য কাজ করেছেন তাদেরকে জার্মান সরকারের চাকুরিজীবী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে৷

কিন্তু এতে বাধ সাধে দেশটির বাকি দুই মন্ত্রণালয়৷ কেননা, এমন সিদ্ধান্তের ফলে আফগানিস্তানে থাকা জার্মান কূটনীতিকদের স্থানীয় সহযোগীরা দেশত্যাগ করতে পারে৷ যার ফলে দেশটিতে তাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে৷

এদিকে সরকারের পদক্ষেপ দেখে বোঝা যায় যে, তালেবানরা যে এতো দ্রুত ক্ষমতা দখল করে নিবে তা তারা আন্দাজ করতে পারেনি৷ যে কারণে আশ্রয়প্রার্থীদের সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷

এসব জটিলতার পর ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত জার্মানি পাঁচ হাজার চারশ আফগানকে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়৷  জার্মানিতে আসার পর বিমানবন্দরে তাদেরকে এন্ট্রি ভিসা দেয়া হয়৷ আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে আসাদেরও একই ধরনের ভিসা দিয়ে নিয়ে আসা হয়৷

জটিলতার শুরু

এন্ট্রি পারমিট নিয়ে জার্মানিতে প্রবেশের পর আশ্রয়প্রার্থীদের বৈধভাবে থাকার বিষয়ে জটিলতা বাড়তে থাকে৷ এন্ট্রি ভিসা নামের যে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এটি বিশেষ ধরনের অনুমতি যা সাময়িকভাবে দেশটিতে থাকার বৈধতা প্রদান করে। সাময়িক এ সময়ের মধ্যে আশ্রয়প্রার্থীরা দেশটিতে থাকার প্রয়োজনীয় ভিসা প্রদানের সব শর্ত পূরণ করছে কিনা তা দেখবে প্রশাসন৷ এরপর মানবিক বিবেচনায় তিন বছরের জন্য ভিসা প্রদানের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার কথা। 

এন্ট্রি ভিসায় আশ্রয়প্রার্থীদেরকে কাজের অনুমতিও দেওয়া হয়৷ তাছাড়া সব ধরনের সামাজিক সুবিধাও পেয়ে থাকেন তারা৷

তবে, এন্ট্রি ভিসায় আশ্রয়প্রার্থীরা কী ধরনের সুবিধা পাবেন সেটি তাদেরকে স্পষ্ট করে বলা হয়নি বলে ধারনা করা হচ্ছে। কারণ আফগানদের অনেকেই ধরে নিচ্ছেন যে তারা ইতোমধ্যে দেশটিতে দীর্ঘ মেয়াদে থাকার অনুমতি পেয়েছেন৷

আশ্রয়প্রার্থী আব্দুলও ভেবে তিনে যেহেতু জার্মান প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেছেন তাই তাকে জার্মানিতে দীর্ঘ মেয়াদে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।      

দেশটিতে আসার চার সপ্তাহ পর যখন তাকে ভিসা অফিসে ডাকা হলো তখন চমকে উঠেন। তিনি ভাবলেন, কোথাও একটা ভুল বোঝাবেুঝি হচ্ছে৷

ভিসা অফিসে যাওয়ার সময় তিনি সঙ্গে সব কাগজপত্র যেমন যে জার্মান প্রতিষ্ঠানের জন্য আফগানিস্তানে কাজ করতেন তাও নিয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু আব্দুল বুঝতে পারলেন যে জার্মান প্রতিষ্ঠানে তার কাজের বিষয়টি সেখানে তেমন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। বরং তাকে বলা হল যে, তিনি জার্মান সরকারের চাকুরিজীবী ছিলেন না। আর তাই তাকে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ‘‘কেউ আমার কথা শুনল না,'' বলেন তিনি।

শুধু আব্দুলই নন, জার্মান সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতেন আফগানিস্তান থেকে আসা এমন অনেককেই আশ্রয়ের আবেদন করতে বলা হয়েছে৷

জার্মান বাহিনীর দীর্ঘতম অভিযান: কী ভাবছেন জার্মানরা?

03:01

This browser does not support the video element.

‘শরণার্থী হিসেবে থাকতে চাইনি’

ডয়চে ভেলেকে আব্দুল জানান, ইমিগ্রেশন অফিসাররা শুধু তার কাগজপত্র বাতিলই করে দেননি বরং তাকে আশ্রয়ের আবেদনের জন্য বলতে লাগলেন৷  আশ্রয় আবেদন না করলে এখানকার শরণার্থীকেন্দ্রে থাকতে পারবেন না বলেও তাকে জানানো হয়।

এরপর তিনি আফগানিস্তানে জার্মানির যে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতেন সে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান৷ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা তদবিরের পর ভিসা অফিস থেকে আব্দুলকে বলা হলো যে, তাকে মানবিক বিবেচনায় থাকার অনুমতি দেওয়া হল৷

‘‘আমি আসলে এমনটা চাইনি,’’ জানালেন আবদুল।

বল প্রয়োগ?

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে আফগানিস্তান থেকে আসা অনেককে আশ্রয়ের আবেদনের জন্য বল প্রয়োগ করা হচ্ছে।  ডয়চে ভেলের হাতে আসা এমন এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বলছেন, ‘‘জার্মান সরকারের চাকুরিজীবী হিসেবে তোমাদেরকে গ্রহণ করা হবে না৷ তোমরা যদি বল যে, আমি আশ্রয়ের জন্য আবেদন করব না তাহলে... আমরা তোমাদের রাস্তায় নামিয়ে দেব৷''

তবে আফগানদের আশ্রয়ের আবেদন করতে জোর কারার এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সঠিক তথ্যের অভাবেও দুর্ভোগে পড়ছেন অনেক আফগান। ডয়চে ভেলেন অনুসন্ধানে দেখা যায়, আফগানিস্তান থেকে আসা ব্যক্তিদের প্রথমে আশ্রয়ের আবেদন করার জন্য বলা হচ্ছে। আর তারপর বলা হচ্ছে যে তারা মানবিক ভিসার জন্য উপযুক্ত নন।

যদিও আফগানিস্তার থেকে আসা অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন যে তাদের মানবিক কারণ বিবেচনায় ভিসা প্রদান করা হবে৷  এক্ষেত্রে সরকারের যে সংজ্ঞা রয়েছে তার সীমাবদ্ধতাও আছে৷ ডয়চে ভেলের সন্ধানে এমন অনেকককেই পাওয়া গেছে যারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের জন্য কাজ করতেন কিন্তু ভিসা পাওয়ার সব শর্ত পূরণ করতে পারছেন না৷ এমনই একজন মোহাম্মদ৷ জার্মান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড-এর জন্য আফগানিস্তানে কাজ করতেন তিনি৷ কিন্তু জার্মানিতে তার থাকার অনুমতি পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেল৷

নাওমি কোনরাড, নিনা ভেরকহয়জার, এসথার ফেলডেন/আরআর

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ