মার্কিন সংসদের উচ্চ কক্ষে ইমপিচমেন্ট তদন্তের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করছে বিরোধী ডেমোক্র্যাট দল৷ নতুন সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করার বিষয়ে আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷
নিম্ন কক্ষে ডেমোক্র্যাট দলের ইমপিচমেন্ট ম্যানেজারদের দল বৃহস্পতিবারও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সেই কঠিন সিদ্ধান্ত নেবার পক্ষে সওয়াল করলেন৷ প্রধান ইমপিচমেন্ট ম্যানেজার অ্যাডাম শিফ বলেন, দেশের ভালোর জন্য এই প্রেসিডেন্ট কোনো পদক্ষেপ নেবেন, এমন আস্থা রাখা সম্ভব নয়৷ তিনি শুধু ডনাল্ড ট্রাম্পের স্বার্থে কাজ করেন৷
ডেমোক্র্যাটরা ইউক্রেন-কেলেঙ্কারির প্রেক্ষাপটে প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্পর্কে অপবাদ দূর করতেও যুক্তি পেশ করেন৷ তাদের মতে, দুর্নীতি সম্পর্কে দুশ্চিন্তার ভিত্তিতে বাইডেন মার্কিন জাতীয় স্বার্থে ইউক্রেনের প্রধান কৌঁসুলি ভিক্টর শোকিন-কে অপসারণের জন্য সে দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন৷ নিজের ছেলের স্বার্থ রক্ষা করতে তিনি কিছু করেন নি৷
রিপাবলিকান সেনেটাররা এখনো পর্যন্ত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার যথেষ্ট কারণ দেখছেন না৷ তাঁদের মতে, কোনো নির্দিষ্ট অপরাধ প্রমাণিত না হলে এমন কড়া পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়৷ আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিরোধী দল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইমপিচমেন্টের জন্য জোর খাটাচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করছে৷ রিপাবলিকান সেনেটর বিল ক্যাসিডি বলেন, আর মাত্র নয় মাস পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তখন মার্কিন জনগণ সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিচার করতে পারবেন৷
নিম্ন কক্ষের ইমপিচমেন্ট ম্যানেজার জেরি ন্যাডলার সংবিধান উদ্ধৃত করে বলেছেন, কোনো প্রেসিডেন্ট নিজেকে আইনের উর্দ্ধে মনে করলেও তাঁকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করার বিধান রয়েছে৷ তাঁর মতে, অ্যামেরিকার গণতন্ত্রের স্বার্থে এমনটা করা উচিত৷ ইমপিচমেন্ট ম্যানেজাররা সম্ভবত শুক্রবারের মধ্যে ইমপিচমেন্টের পক্ষে যাবতীয় যুক্তি পেশ করবেন৷ রিপাবলিকান দল এই তদন্ত প্রক্রিয়ায় নতুন সাক্ষ্যপ্রমাণের বিরোধিতা করে আসছে৷ আগামী সপ্তাহে নতুন সাক্ষীদের বক্তব্য শোনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ এই প্রশ্নে রিপাবলিকান দলে ঐক্য নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে৷ কমপক্ষে চার জন রিপাবলিকান সেনেটর মত বদল করলে নতুন সাক্ষী তলব করা সম্ভব হবে৷ ডেমোক্র্যাটরা সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে হাজির করতে পারলে তদন্ত প্রক্রিয়ার গতি বদলে যাবে বলে তাদের বিশ্বাস৷
কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট
চলতি বছরই অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ ডেমোক্রেটরা এরই মধ্যে নিজ দলের প্রার্থীতা পেতে লড়াই শুরু করেছেন৷
ছবি: Getty Images/S. Olson
মাইকেল বেনেট
৫৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ বর্তমানে কলোরাডোর সিনেটর৷ প্রগতিশীল ডেমোক্রেট হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে৷ ২০১৩ সালের অভিবাসী আইন প্রণয়নের পেছনে যারা ভূমিকা রেখেছেন তিনি তাদের একজন৷ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে গলা চড়ানোটাই নম্রভাষী এই রাজনীতিবিদের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bennett
জো বাইডেন
জো বাইডেন বা জোসেফ আর বাইডেন জুনিয়র৷ ওবামার শাসনামলের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ পর্যন্ত দুইবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন৷ শেষবারের মত এই দৌড়ে নামার সুযোগ পাচ্ছেন ৭৭ বছর বয়সী ডেমোক্রেট৷
ছবি: picture-alliance/newscom/K. Dietsch
মাইকেল ব্লুমবার্গ
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতায় এরইমধ্যে আলোচিত হয়েছেন নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ৷ ট্রাম্পকে হারাতে ১০০ কোটি ডলার খরচে প্রস্তুত আছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন এই বিলিওনেয়ার৷ গত অক্টোবরে রিপাবলিকান দলত্যাগ করে দুই যুগ পর আবারও ডেমোক্রেট শিবিরে ভিড়েছেন তিনি৷ তার বয়স ৭৭ বছর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
করি বুকার
ডেমোক্রেটদের মনোনয়নের দৌড়ে আছেন নিউ জার্সির সিনেটর ও নুয়ার্কের সাবেক মেয়র করি বুকারও৷ বৈষম্য দূরীকরণের ইস্যুকে তিনি সামনে নিয়ে এসেছেন৷ ভালবাসা, ঐক্য আর সাম্যের প্রচারও চালাচ্ছেন পঞ্চাশ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ৷
ছবি: Reuters/L. Millis
পিট বুডিজেজ
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে সর্বকনিষ্ঠ পিট বুডিজেজ৷ ইন্ডিয়ানার সাউথ বেন্ডের এই মেয়র সাবেক সামরিক কর্মকর্তা৷ বয়স মাত্র ৩৭ বছর৷ কিন্তু নির্বাচনের জন্য অর্থ সংগ্রহে এগিয়ে আছেন সবার চেয়ে৷ অর্থনীতি আর জলবায়ু তার প্রচারের মূল বিষয়৷
ছবি: Reuters/R. Mummey
জন ডেলানি
সাবেক কংগ্রেসম্যান ও ব্যবসায়ী জন ডেলানি৷ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য মরিয়া তিনি৷ ২০১৭ সাল থেকেই এজন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন৷ আইওয়ার প্রতিটি কাউন্টি এরইমধ্যে ভ্রমণ করেছেন তিনি৷ কিন্ত শেষ পর্যন্ত টিকিট পান কীনা সেটি দেখার বিষয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bennett
তোলসি গ্যাবার্ড
২০১৬ সালের নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থন দিয়েছিলেন তোলসি গ্যাবার্ড৷ ৩৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ এবার নিজেই প্রার্থী হতে চাইছেন৷ পূর্বের সমকামী বিরোধী অবস্থানের জন্য এরই মধ্যে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন৷ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের সঙ্গে বৈঠক করেও সমালোচিত হয়েছে৷ বিদেশে মার্কিন সামরিক আগ্রাসণের বিরুদ্ধে অবস্থান রয়েছে তার৷
ছবি: AFP
এমি ক্লোবুসার
৫৯ বছর বয়সী এমি ক্লোবুসার মিনেসোটার সিনেটর৷ মাদক, ঔষধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অবস্থান নিয়ে আলোচিত হয়েছেন তিনি৷ জো বাইডেনের পর উদারপন্থী ডেমোক্রেটদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Souffle
ডেভাল পেট্রিক
মেসাচুসেটস এর সাবেক গভর্নরও লড়ছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হতে৷ অ্যামেরিকার ইতিহাসের দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর নির্বাচিত হন তিনি ২০০৬ সালে৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বন্ধু হিসেবে ডেভাল পেট্রিকের পরিচিতি রয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images/S. Maturen
বার্নি স্যান্ডার্স
৭৮ বয়সী স্যান্ডার্স ২০১৬ সালেও লড়েছেন নির্বাচনের টিকেট পেতে৷ সেবার পিছিয়ে পড়েন হিলারির কাছে৷ তিনি নিজেকে ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেন৷ সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, বিনা পয়সায় পড়াশোনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনে লড়তে চান এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ৷
ছবি: AFP/F. J. Brown
টম স্টেয়ার
৬২ বছর বয়সী এই বিলিওনেয়ার জলবায়ু কর্মী হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন৷ ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের পক্ষে তিনি কয়েক কোটি ডলার ব্যয় করে টিভি বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
এলিজাবেথ ওয়ারেন
ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন৷ হার্বার্ডের সাবেক অধ্যাপক তিনি৷ ৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদও আছেন ডেমোক্রেটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দৌড়ে৷
ছবি: AFP/F. J. Brown
ডনাল্ড ট্রাম্প
রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যে আবারও নির্বাচনে লড়ছেন সেটি নিশ্চিত৷ তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে কে আসছেন ডেমোক্রেট শিবির থেকে সেটিই এখন দেখার বিষয়৷