যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল গড়ার নির্বাহী আদেশে সই করে ট্রাম্প বলেন, ‘‘শতভাগ টাকা মেক্সিকোকে দিতে হবে৷'' কিন্তু মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতো স্পষ্ট জানান, দেয়াল নির্মাণে তারা কোনো টাকা দেবে না৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল গড়ার নির্বাহী আদেশে সই করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘শতভাগ টাকা মেক্সিকোকেই দিতে হবে৷'' কিন্তু মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দেশ দেয়াল নির্মানে কোনো টাকা দেবে না৷
ট্রাম্প নির্বাচনের আগে বহুবার, বহু ভাষণেই বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির স্বার্থে মেক্সিকো সংলগ্ন সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করা হবে৷ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অবৈধ মেক্সিকানদের ফেরত পাঠানোর অঙ্গীকারও করেছিলেন তিনি৷ গত ২০ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ট্রাম্প৷ আর বুধবার, অর্থাৎ শপথ নেয়ার চারদিন পরই দেয়াল নির্মাণের জন্য নির্বাহী আদেশে সই করলেন রাজনীতিতে এসে বলতে গেলে রাতারাতিই প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়া এই ধনকুবের৷ বুধবার নির্বাহী আদেশে সই করেই থেমে থাকেননি৷ এবিসি নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রায় ৩২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়ালের নির্মাণব্যয়ের সম্ভাব্য উৎস সম্পর্কেও কথা বলেছেন৷ সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, দেয়াল নির্মাণের পুরো টাকাটাই মেক্সিকোকে দিতে হবে৷
দেয়াল নির্মাণে ১৫ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকো এই বিপুল পরিমান অর্থ দেবে কিনা, দিলে কীভাবে, কতদিনে দেবে – এই নিয়ে আলোচনাটা জমে ওঠার আগেই ট্রাম্পকে জবাব দিয়েছেন এনরিকে পেনা নিয়েতো৷ নিজের আগের বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়েই তিনি বলেছেন, ‘‘আগে বলেছি, এখনো বলছি, কোনো দেয়ালের জন্যই মেক্সিকো টাকা দেবে না৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘একটি পূর্ণ সার্বভৌম দেশ হিসেবে মেক্সিকো অন্য দেশকে সম্মান দেয় এবং (অন্য দেশের কাছ থেকেও) সেই সম্মান দাবি করে৷''
আগামী ৩১ ডিসেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য এনরিকে পেনা নিয়েতোর ওয়াশিংটন ডিসিতে যাওয়ার কথা৷ কিন্তু ট্রাম্প তড়িঘড়ি দেয়াল নির্মাণের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করায় নিয়েতোর এ সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে৷ মেক্সিকোর সংসদ সদস্যদের একাংশ মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে নিয়েতোর যুক্তরাষ্ট্রে না যাওয়াই ভালো৷
মার্কিন-মেক্সিকান সীমান্তে কংক্রিটের দেয়াল?
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তোলা হবে: মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নিয়েতোর সঙ্গে সাক্ষাতের স্বল্প আগে টুইট করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কিছুদূর ইস্পাতের বেড়া এখনই আছে৷ এবার কি কংক্রিটের দেয়াল তৈরি হবে?
ছবি: Reuters/J. L. Gonzalez
দেয়াল তৈরি ভালোই বোঝেন ট্রাম্প
‘‘আমি দেশের দক্ষিণ সীমান্তে একটি সুবিশাল দেয়াল তুলব; অন্য কেউ আমার মতো ভালো দেয়াল বানাতে পারে না৷ আর আমি মেক্সিকোকে দিয়ে এই দেয়াল তৈরির দাম দেওয়াব’’, নির্বাচনি প্রচার অভিযানে বলেছিলেন ট্রাম্প৷ এযাবৎ তিনি বিশেষ করে বহুতল ভবন আর হোটেল বানিয়েছেন৷ সীমান্তে প্রাকার তাঁর দশ-দফা অভিবাসন নীতির প্রথম দফা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Torres
মাঝপথে থেমে যায় সেই দেয়াল
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৩,২০০ কিলোমিটার, তার মধ্যে ১,১০০ কিলোমিটার পথ জুড়ে ইতিমধ্যেই বেড়া তৈরি হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের চারটি ও মেক্সিকোর ছয়টি প্রদেশ এই সীমান্ত বরাবর৷ মরুভূমি থেকে শুরু করে মহানগরীর মধ্যে দিয়ে গিয়েছে সেই সীমান্ত৷ এলাকাটি দুর্গম বলে মার্কিন নিউ মেক্সিকো রাজ্যে সীমান্তের একটি ক্ষুদ্র অংশ খোলা রাখা হয়েছে৷ অন্য অনেক জায়গায় সশস্ত্র সীমান্তরক্ষীরা টহল দিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M. Blake
অলঙ্ঘনীয়
মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে বছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন, বলে অনুমান করা হয়৷ এই অভিবাসীদের অধিকাংশই আসেন মেক্সিকো থেকে৷ বেআইনিভাবে মার্কিন মুলুকে বাস করা খুব সহজ কাজ নয়৷ কিছু কিছু মেক্সিকানকে থাকতে দেওয়া হয়, কিন্তু তাদের পরিবারবর্গকে মেক্সিকো থেকে নিয়ে আসতে দেওয়া হয় না, অর্থাৎ ভিসা দেওয়া হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Zepeda
শুধু একটু স্পর্শ...
সীমান্তের বেড়া পরিবারদের আলাদা করে রাখে, বুকে জড়িয়ে না ধরে শুধু হাত ছুঁয়ে যেটুকু সান্নিধ্য, যেটুকু সান্ত্বনা পাওয়া যায়৷ ট্রাম্প যদি তাঁর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করেন, তাহলে ইস্পাতের বেড়ার ফাঁকটুকুও নিরেট কংক্রিট হয়ে যাবে৷
ছবি: picture-alliance/ZumaPress/J. West
অন্যায় সন্দেহ
‘‘মেক্সিকো যখন এদেশে মানুষ পাঠায়, তখন তাদের সেরা মানুষগুলোকে পাঠায় না’’, নির্বাচনি প্রচার অভিযানে বলেছিলেন ট্রাম্প৷ ‘‘ওরা এমন সব লোক পাঠায়, যাদের অনেক সমস্যা আছে৷ তারা ড্রাগস, অপরাধ, ধর্ষণ, এই সব নিয়ে আসে৷ তবে কিছু ভালো মানুষও আছে বলে আমি ধরে নিচ্ছি৷’’ ট্রাম্প বেআইনি অভিবাসীদের, অন্তত অপরাধীদের বহিষ্কার করতে চান৷ তবে সব হুমকি সত্ত্বেও বহু মেক্সিকান যুক্তরাষ্ট্রে আসার স্বপ্ন পরিত্যাগ করতে রাজি নন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/G. Bull
মরুভূমি, সীমান্ত, মৃত্যু
কিছু মানুষের সমৃদ্ধির স্বপ্ন শেষ হয় সীমান্তে: কিছু যান কারাগারে, অন্যরা প্রাণ হারান রক্ষীদের গুলিতে৷ মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বেড়ার ভিতর দিয়ে গুলি চালিয়েছেন, মিডিয়ায় যার তুমুল সমালোচনা হয়েছে৷ মেক্সিকোর ছ’জন নাগরিক এভাবে মারা যাওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট রক্ষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ ২০১৫ সালে মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক সদস্যের বিরুদ্ধে এক ফেডারাল কৌঁসুলি মামলা করেন৷
ছবি: Reuters/D.A. Garcia
বন্দুক হাতে জমির পাহারায়
মার্কিন খামারচাষি জিম চিল্টন তাঁর জমি পাহারা দিচ্ছেন৷ তাঁর দু’লাখ বর্গমিটার পরিধির খামারটি অ্যারিজোনা রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, মেক্সিকোর সীমান্ত ঘেঁষে, মাঝে শুধু একটি কাঁটাতারের বেড়া৷ চিল্টন নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েছেন, এমনকি মাঝেমধ্যে বন্দুক কাঁধে করতেও দ্বিধা করেন না৷
ছবি: Getty Images/AFP/F.J. Brown
বেড়া শেষ হয় সমুদ্রে
সান ডিয়েগোর ওটি মিজা সীমান্ত পারাপার কেন্দ্র থেকে প্রশান্ত মহাসাগর অবধি বেড়ার শেষ সাড়ে ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের অংশটিকে স্থানীয় লোকজন ঠাট্টা করে বলেন ‘তর্তিয়া ওয়াল’৷ তর্তিয়া হলো ‘স্প্যানিশ ওমলেট’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Zepeda
8 ছবি1 | 8
এদিকে মেক্সিকো অর্থ না দিলে খুব শিগগির দেয়াল নির্মাণ করা সম্ভব হবে কিনা এই প্রশ্নটিও ইতিমধ্যে বড় হয়ে উঠেছে৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে সই করলেই এত বিপুল পরিমান অর্থ আদায় হয়ে যাবে এবং অর্থ আদায়ের পরই ২০০০ মাইল দীর্ঘ দেয়াল দ্রুত নির্মাণ করা হয়ে যাবে –লব্যাপারটি এত সহজ নয়৷ তাঁদের মতে, অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি কংগ্রেসের অনুমোদনসাপেক্ষ এবং সেখানে অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা প্রশ্নাতীত নয়৷
এসিবি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
বন্ধু, আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷
প্রেসিডেন্ট হয়েই যা যা বললেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম ভাষণে জনতার প্রশংসা করেন ট্রাম্প৷ বলেন, ‘‘আজ ওয়াশিংটন থেকে ক্ষমতা তুলে দেয়া হচ্ছে আপনাদের হাতে৷’’
ছবি: Reuters/C. Barria
জনগণের হাতেই ক্ষমতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই দিনটিকে স্মরণ করা হবে জনগণের জয় হিসেবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
বিক্ষোভ সত্ত্বেও ভিড়
ট্রাম্পের শপথগ্রহণের দিনেও যুক্তরাষ্ট্র শান্ত ছিল না৷ এমনকি ওয়াশিংটন ডিসিতেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে৷ তারপরও তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লাখো মানুষ৷ ট্রাম্প তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
সবার জন্য শিক্ষা, সুরক্ষা, চাকরি
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম ভাষণে সবার জন্য উন্নত শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
প্রেসিডেন্টের কাছে জনতাই সব
‘‘আপনার-আমার সবারই এক দেশ, আপনাদের সাফল্যই আমার সাফল্য, আপনাদের হৃদয়ই আমার হৃদয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
শুধু দেশের জন্য কাজ
ধনকুবের থেকে রাজনীতির ময়দানে এসেই রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে যাওয়া ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘এখন থেকে আমার লক্ষ্য শুধু দেশের ভবিষ্যৎ গড়া৷’’
ছবি: Reuters/L. Nicholson
‘ওবামা পরিবার ছিল চমৎকার’
ট্রাম্প ভাষণ শুরু করেছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ধন্যবাদ জানিয়ে৷ এ সময় ওবামা দম্পতির প্রশংসা করেছেন৷ ওবামা ও মিশেলের প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওবামা পরিবার ছিল চমৎকার৷’’
ছবি: Reuters/B. Snyder
অ্যামেরিকায় উগ্রবাদীদের জায়গা নেই
‘‘অ্যামেরিকার মানুষের আর ভয়ের কারণ নেই৷’’ এ কথা বলে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, উগ্রবাদী ইসলামপন্থিদের সমূলে উৎপাটন করা হবে৷
ছবি: Reuters/B. Snyder
দেখুন বড় স্বপ্ন
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমাদের এখন আগামীর পথে এগিয়ে যেতে হবে৷ বড় কাজের জন্য দেখতে হবে বড় স্বপ্ন৷’’
ছবি: Reuters/L. Nicholson
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক স্মরণীয় দিন
২০ জানুয়ারি, ২০১৭ – এই তারিখটিকে অ্যামেরিকা চিরকাল স্মরণ করবে বলেও মনে করেন ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/C. Barria
‘অ্যামেরিকা উইল বি গ্রেট এগেইন’
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আজ থেকে এ দেশ চলবে নতুন দৃষ্টভঙ্গি নিয়ে আর তা হবে ‘অ্যামেরিকা প্রথম’৷’’ পাশাপাশি নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় থেকে বলে আসা ‘আমরা আবার একসঙ্গে অ্যামেরিকাকে মহান জাতির উচ্চতায় নিয়ে যাবো’ অঙ্গিকারেরও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি৷