তথ্যচিত্র নয়, এ যেন কর্মজীবী নারীদের বাস্তব জীবনেরই গল্প৷ নারীরা অর্থ উপার্জন না করলে অনেক পরিবারেই লেগে থাকে অভাব, আবার ঘরের বাইরে কাজ করতে চাইলে পরিবারই দাঁড়ায় বিরুদ্ধে৷
৯৪ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে হাইতিতে জাতি সংঘের শান্তি মিশনে যাওয়া ১৬০ জনের দলের মধ্যে মাত্র ৩ জনের বাস্তবতা সরাসরি তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে৷ বাংলাদেশে সাধারণ ঘরের মেয়েরা আগের তুলনায় অনেক বেশি হারে চাকরি-বাকরি করছেন৷ পোশাক শিল্প ছাড়া অন্য সব জায়গায় পুরুষের তুলনায় সংখ্যা হয়ত কম, তবে সব পেশাতেই বলতে গেলে মেয়েরা আছে৷
কিন্তু মেয়েদের জন্য দেশের বাইরে চাকরি করা এখনো খুব সহজ নয়৷ নারী পুলিশরা সেই অসম্ভবের দেয়াল ভেঙেছেন হাইতির জাতিসংঘ মিশনে যোগ দিয়ে৷ তথ্যচিত্রের ট্রেলার দেখলেও কর্মজীবী মেয়েদের বিদেশে কাজ করতে গেলে কত রকমের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে৷ বিদেশে চাকরির সুযোগ এমনিতেই বিরল৷ মেয়েরা সেই বিরল সুযোগ পেলেও পরিবার এবং সমাজের বাধার মুখে অনেক সময় সেই সুযোগ নিতে পারেন না৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মা-বাবা-সন্তান-স্বামী সবাই দাঁড়িয়ে যায় পথ আগলে৷ মেয়ের বিয়ের আগে বাবা-মা বিরোধিতা করেন ‘লোকলজ্জা'র ভয়ে৷ বিয়ে থা হলে, বা মা হয়ে গেলেও নিস্তার নেই, তখন সন্তানকে বাড়িতে রেখে যেতেই শত রকমের দুশ্চিন্তা৷ তখন দেশেই চাকরি করা কঠিন, বিদেশে তো অনেক পরের কথা৷ স্বামী অভাব-দারিদ্র্য, টাকার প্রয়োজন বোঝেন, কিন্তু ‘পাছে লোকে কিছু বলে'-র ভয়টা তুড়ি মেরে উড়িয়ে স্ত্রী-র বিদেশে যাওয়া মেনে নিতে পারেননা৷ তথ্যচিত্রে এসবের কিছুই বাদ যায়নি৷ একে তো পুলিশের চাকরি তার ওপর বিদেশে বাড়তি দায়িত্ব৷ চাইলেও সন্তানকে দেখতে যখন খুশি বাড়ি যাওয়া যায়না৷ মা-এর জন্য কেঁদে কেঁদে সন্তান বলে, ‘পিছনের গেট দিয়ে পালিয়ে আসো, আম্মু৷' কাজ ছেড়ে দেশে ফেরার প্রশ্নই ওঠেনা৷ মা তাই আকাশে বিমান দেখলেই ভাবেন, ‘‘কবে যে আবার বিমানে উঠবো, কবে বাড়ি ফিরে ছেলেটাকে বুকে টেনে নেবো৷'' ‘আ জার্নি অফ আ থাউজেন্ড মাইলস : পিসকিপার্স'-এ নারী পুলিশের চাকরি ও পারিবারিক দায়িত্বের এই সংঘাতের দিকটিও সারা বিশ্বের চলচ্চিত্রামোদীদের দেখিয়েছেন নির্মাতা শারমিন ওবায়েদ চিনয় এবং গীতা গান্দভির৷
বাঙালি নারীর দশ গুণ
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ নারীর গুণ সম্পর্কে জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের পাঠকরা৷ তাঁদের মতামত এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বাঙালি নারীর দশগুণ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
আবেগী, স্বাধীনচেতা
গরবিনি, আবেগী এবং স্বাধীনচেতা – বাঙালি নারীর সঙ্গে এই তিনটি বিশেষণই মানানসই৷ আবেগ যেমন তাঁদের দ্রুত স্পর্শ করে, তেমনি স্বাধীনতার প্রশ্নে কিন্তু তাঁরা সত্যিকার অর্থে অনড়৷ নিজের সত্ত্বা নিয়ে অহংকার তাঁদের আছে বটে, তবে তার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মধ্যে রয়েছে অসীম ধৈর্য্য৷
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
শাড়িতে সবচেয়ে সুন্দর
বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে শাড়ি৷ সেই শাড়ি বাঙালি নারীর সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলে চমৎকারভাবে৷ বিভিন্নভাবে শাড়ি পরতে জানেনও তাঁরা৷ আর ‘উপহার হিসেবে শাড়ি’? – কোন বাঙালি মেয়ে না চায় বলুন?
ছবি: DW/A. Islam
উৎসব প্রেমী
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন৷ নববর্ষ, ঈদ কিংবা দুর্গা পূজা – সব উৎসবই যেন বাঙালি নারীর জন্য তৈরি৷ প্রতিটি উৎসবের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরতে এবং সেই উৎসবের উপযুক্ত রান্নায় পারদর্শী তাঁরা৷ ডয়চে ভেলের পাঠক সুজন খানের কথায়, ‘‘বঙ্গের নারী লাজুক প্রকৃতির, কিন্তু যে কোনো উপলক্ষ্যেই প্রাণ খোলা হাসি উপচে পড়ে তাঁদের৷’’
ছবি: Zaman/AFP/GettyImages
‘নো ডায়েট’
বাঙালি নারী ‘ডায়েট’ করছেন, এমনটা বেশ বিরল৷ তাই খাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা বেশ উদার৷ কথায় বলে না, মাছে-ভাতে বাঙালি? অবশ্য মাছ-ভাতের পাশাপাশি ফুসকা কিংবা চটপটি পেলে তো আর কথাই নেই৷ আসলে টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি, এমনকি তেতোও পছন্দ এই নারীদের৷
ছবি: Debarati Mukherji
রান্নার শখ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই ধরুন৷ দেশ সামলানোর কঠিন দায়িত্ব পালনের মাঝেও রান্না ঘরে যেতে ভোলেন না তিনি৷ গত বছর ছেলের জন্য রান্না করার সময় তোলা তাঁর এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছিল৷ বাঙালি মেয়েরা রাঁধতে যে ভীষণ ভালোবাসেন!
ছবি: Sajeeb Wazed
অল্পতেই সন্তুষ্ট
বাঙালি মেয়েদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা কি খুব কঠিন? না৷ সকলেই জানেন যে, কাজটা সহজই৷ একটি লাল গোলাপ পেলে কিংবা প্রিয় রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলেই তাঁরা সন্তুষ্ট৷ ডয়চে ভেলের পাঠক রন্জু খালেদের মতে, বাঙালি নারীর মধ্যে ‘একইসাথে দৃঢ়তা ও নমনীয়তা এবং প্রজাপতির চপলতা’ রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
কাজল কালো চোখ
জীবনানন্দ দাসের ‘বনলতা সেন’ কিংবা রবি ঠাকুরের ‘কৃষ্ণকলি’ – বাঙালি নারীর কাজল কালো চোখের প্রশংসা পাবেন অনেক কবির কবিতাতেই৷ সত্যি বলতে কি, বাঙালি নারীর চোখ পুরুষকে টানে সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: N.Seelam/AFP/GettyImages
বাকপটু
বাংলাদেশের কিংবা ভারতের মেয়েরা চুপ করে বসে আছেন – এমন দৃশ্য কল্পনা করাও কঠিন৷ তাঁরা কথা বলতে ভালোবাসেন৷ রান্না থেকে রাজনীতি – সব বিষয়েই একটা মতামত আছে তাঁদের৷ ডয়চে ভেলের পাঠক জিএনএস নয়নের কথায়, ‘‘নারী পুরুষের যে কোনো কষ্ট অতি সহজে ভুলিয়ে দিতে পারে৷ এই গুণই আমাকে মুগ্ধ করে, আবার সাথে অবাকও করে৷’’
ছবি: DW/A. Islam
নারীবাদী
বাঙালি মেয়েরা নারীবাদী৷ বিতর্কিত বাঙালি লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁদের অনেকেরই প্রিয়৷ নাসরিনের ‘আমার মেয়েবেলা’ পড়েনি এমন নারী পাওয়া মুশকিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
ভ্রমণপ্রিয়
বাংলাদেশি কিংবা ভারতীয় বাঙালি নারীর গুণ কি আর অল্পতে জানানো যায়, বলুন? কিছু গুণ না হয় অজানাই থাক৷ তবে একটির কথা বলে শেষ করি, বাঙালি মেয়েরা কিন্তু ঘুরতে খুব ভালোবাসেন৷ তথ্য সহায়তা: ডয়চে ভেলে ফেসবুক পাতা, ইন্ডিয়াওপাইন্স, স্কুপহুপ
ছবি: DW/A. Islam
10 ছবি1 | 10
ভারত-পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন দুই নারীর কারণে বাংলাদেশের নারী পুলিশরাও এখন সেলুলয়েডে চড়ে ‘জয়' করছেন নতুন নতুন ভূখণ্ড৷
নারীর ক্ষমতায়নের পথে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল নেপাল৷ এই প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি৷ বিদ্যা ভান্ডারি’র রাষ্ট্রপতি হওয়াকে উপলক্ষ্য করে সারা বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নের খণ্ডচিত্রটাও একটু দেখে নেয়া যাক৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
বিশ্বের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট আর্জেন্টিনার ইসাবেল পেরন৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরনের তৃতীয় স্ত্রী ইসাবেল প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান৷ পরে ১৯৭৪ সালের ১লা জুলাই থেকে ১৯৭৬ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টও ছিলেন৷ বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে৷ তিন দফা (১৯৬০-৬৫, ১৯৭০-৭৭, ১৯৯৪-২০০০) দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ ওপরে তাঁরই ছবি৷
ছবি: picture alliance/Sven Simon
হিমালয় কন্যা বিদ্যা ভান্ডারি
অবশেষে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেলো নেপাল৷ সাংসদ এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সিপিএন-ইউএমএল) -এর ভাইস চেয়ারপারসন বিদ্যা ভাণ্ডারিকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করেছে সে দেশের সংসদ৷ নেপালের রাষ্ট্রপতি এখন রাম বরণ যাদব৷ ২৪০ বছর রাজতন্ত্রের অধীনে থাকা দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনি৷ তাঁর কাছ থেকেই দেশের প্রথম নারী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ৫৪ বছর বয়সি বিদ্যা ভান্ডারি৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Mathema
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে নারীকে প্রেসিডেন্ট করেছে ভারত৷ ২০০৭ সালে সে দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হন প্রতিভা পাতিল৷ ভারতের দ্বাদশ প্রেসিডেন্ট প্রতিভা ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন৷ তাঁর কাছ থেকেই দায়িত্ব নিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি৷ ছবিতে প্রতিভা পাতিলের কাছ থেকে প্রণব মুখার্জির দায়িত্ব নেয়ার মুহূর্ত৷
ছবি: Reuters
১৪টি দেশে নারী প্রেসিডেন্ট
এ মুহূর্তে ১৪ দেশের প্রেসিডেন্ট নারী৷ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, চিলি, ক্রোয়েশিয়া, কসোভো, লাইবেরিয়া, লিথুয়ানিয়া, মাল্টা, মরিশাস, স্যান মারিনো, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বুধবার যোগ হলো নেপাল৷ ওপরের ছবিতে মরিশাসের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমিনা ফিরদাউস গারিব ফাকিম৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশ এখনো অপেক্ষায়
প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিচারপতিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ পদেই নারী পেয়েছে বাংলাদেশ৷ তবে এ পর্যন্ত ২০ জন রাষ্ট্রপতি পেলেও এ দায়িত্বে এখনো কোনো নারীকে দেখা যায়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অনন্য সুইডেন ও ফিনল্যান্ড
নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য এক নজির রেখেছে সুইডেন৷ ১৯৯৯ সালে সে দেশের মন্ত্রীপরিষদে পুরুষের চেয়ে নারী সদস্যই ছিল বেশি৷ ১১ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ ছিলেন ৯ জন৷ এমনটি আগে কোনো দেশেই দেখা যায়নি৷ পরে ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীপরিষদেও নারীর আধিক্য দেখা গেছে৷ ২০০৭ সালে ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীপরষদের শতকরা ৬০ ভাগ সদস্যই ছিলেন নারী৷ ছবিতে সুইডেন ও ডেনমার্কের দুই নারী নেত্রী৷
ছবি: AP
যারা অনেক পিছিয়ে
বিশ্বের সব দেশ নারীর ক্ষমতায়নে কম-বেশি উদ্যোগী হলেও ব্রুনাই এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি পিছিয়ে৷ মুসলিমপ্রধান দেশটিতে নারীকে এখনো উপমন্ত্রীর চেয়ে বড় দায়িত্ব দেয়া হয়নি৷ তবে এ মুহূর্তে অ্যাঙ্গোলা, ভুটান, কোমোরো আইল্যান্ড, কুক আইল্যান্ড, লেবানন, মঁসেরাত এবং সলোমন আইল্যান্ডই সবচেয়ে বেশি নারীবিমুখ৷ এই দেশগুলোর মন্ত্রীপরিষদ, এমনকি সংসদেও এই মুহূর্তে কোনো নারী নেই৷ছবিতে ব্রুনাইয়ের কয়েকজন নারী৷
ছবি: AP
মালালা ও তাঁর প্রজন্ম
সাম্প্রতিক সময়ে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ অনেক দেশেই মাথা চাড়া দিয়েছে৷ তবে শান্তির পথে, মানবতার পথে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নারীর দৃপ্ত পদচারণাও দেখা যাচ্ছে৷ গত বছর (২০১৪) সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল জয় করেছেন মালালা ইউসুফজাই৷ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন রাজ্য তাঁর জন্মস্থান৷ সেখানে হত্যার উদ্দেশ্যে তালেবান তাঁর ওপর হামলাও চালিয়েছিল৷ মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে মালালা এখন প্রজন্মের মুক্তচিন্তার মুক্তির প্রতীক৷