জার্মান অর্থনীতিবিদদের ধারণা, নির্ধারিত সময় ধরে কাজ করার প্রচলিত পদ্ধতি ‘সেকেলে এবং কঠোর’৷ অন্যদিকে, সংশোধন করা হলে শ্রমিক আইনের অধীনে কর্মজীবীরা হারাতে পারেন প্রয়োজনীয় সুরক্ষা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান কাউন্সিল অফ ইকোনমিক এক্সপার্টস-এর মতে, নির্ধারিত সময় ধরে কাজ করার আইনটি এখন আর সময়োপযোগী নয়, বরং প্রয়োজন ‘শিথিল কর্মঘণ্টা’৷ কাউন্সিল চেয়ারম্যান ক্রিস্টফ স্মিট বলেন, ‘‘আপনি সকালে অফিসে আসার পর কাজ শুরু করবেন আর অফিস থেকে বের হলেই আপনার কাজ শেষ, এখন এ ধারণা অচল৷ জার্মানিতে কর্মী সুরক্ষা আইন কার্যকর আছে, কিন্তু এর একটা অংশ এখনকার ডিজিটাল কর্মপরিবেশের সাথে মানানসই নয়৷’’
জার্মানিতে একজন কর্মজীবী দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারেন না এবং সপ্তাহান্তে তাঁর অন্তত ১১ ঘন্টার বিরতি থাকতে হবে, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম ঘটে৷ কাউন্সিলের বাৎসরিক রিপোর্টে বলা হয়, প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারিত না করে পুরো সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ রাখা উচিৎ৷ এছাড়াও কর্মঘণ্টা কমানোর বিরোধিতা করে রিপোর্টে বলা হয়, দক্ষ শ্রমিক সংকট বিবেচনায় কাজের সময় কমানোর সিদ্ধান্ত ঠিক হবে না৷
জার্মানদের ১০টি আচরণ, যা আপনাকে বিস্মিত করবে
স্বল্প মধ্যাহ্ন বিরতি, বুদবুদসহ ওয়াইন, লিফটে শুভেচ্ছা বিনিময় – জার্মানদের এমন বেশ কিছু আচরণ বিদেশিদের বিস্মিত করে৷ ছবিঘরে থাকছে এমন ১০টি আচরণের কথা৷
ছবি: picture alliance/Sputnik/dpa/A. Kudenko
সময় মেনে চলা খুব গুরুত্বপূর্ণ
জার্মানিতে কর্মক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের ৫ মিনিট আগে পৌঁছে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে৷ তবে ১০ মিনিট আগে পৌঁছে গেলে সেটাকে বাড়াবাড়ি হিসেবে দেখা হয়, বিশেষ করে যদি আপনার কাছে অফিস ঘরের চাবি না থাকে৷
ছবি: Stauke - Fotolia.com
লিফটে শুভেচ্ছা বিনিময়
যাঁরা বহুতল ভবনে কাজ করেন, তাঁরা এই ব্যাপারটার সাথে ভীষণভাবে পরিচিত৷ এলিভেটর বা লিফটে ঢোকার সময় শুভেচ্ছা বিনিময় এবং লিফট থেকে বের হওয়ার সময় বিদায় সম্ভাষণ খুব সাধারণ একটা ব্যাপার৷
ছবি: Imago/Westend61
কফি খেতে বিপত্তি
অফিসে প্রথমদিনে আপনার সহকর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর অফিস ঘুরে দেখানো হয়৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কফি মেশিন৷ যদি আপনি নিয়মিত কফি খেতে চান, তাহলে কয়েকটা জিনিস আপনার জানা জরুরি, কোন মেশিনে কফি পাওয়া যায়, কীভাবে দাম দিতে হয় অথবা মেশিন পরিষ্কার করতে হয় কিনা ইত্যাদি৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Klose
পদ বুঝে সম্বোধন
কে কোন পদে আছেন, তা বুঝে আপনার সম্বোধন জানানো উচিত৷ বাংলার মতো জার্মান ভাষাতেও ‘আপনি’ ‘তুমি’ সম্বোধন আছে৷ তাই শুরুতে সবাইকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করাই নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/Denkou Images
লিখিত ছাড়া মূল্য নেই
বছরে এক একজন জার্মানের কাছে গড়ে ২৫৯ কেজি কাগজ পাবেন আপনি৷ জার্মানির প্রত্যেকটি অফিসে এখনও লিখিত নথিপত্র ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ৷ লিখিত তথ্যই মুখ্য, আর বাকি সবকিছুই গৌন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Eisenhuth
স্বল্প সময়ের মধ্যাহ্ন বিরতি
ভূমধ্যসাগরের দেশগুলোতে মধ্যাহ্নে দুই ঘণ্টা বিরতি থাকে, অথচ জার্মান চাকুরিজীবীদের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৩০ মিনিট৷ যদিও জার্মানিতে মধ্যাহ্নভোজ দিনের প্রধান খাবার হিসেবে গণ্য৷
ছবি: Picture alliance/dpa/C. Seidel
কেক ভীষণ দরকারি
জার্মানির অফিসগুলোতে অনেক ধরনের উদযাপন হয়৷ যাঁরা অফিসে নতুন, তাঁরা প্রথমদিন কেক নিয়ে আসে৷ এছাড়া যখন কেউ চাকরি ছেড়ে দেয় বা দীর্ঘ বিরতিতে যায়, তখনও একটা উদযাপন হয়৷ নিজেদের জন্মদিনেও কেউ কেউ কেক নিয়ে আসে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange/B. Jürgens
বুদবুদসহ ওয়াইন
জার্মানির অফিসগুলোতে এসব আয়োজনে কেকের সাথে যদি বুদবুদসহ ওয়াইন থাকে, তাহলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই৷ কেবল সেসব দিনেই নয়, যে কোনো দিনই এই পানীয় পান করা হতে পারে৷
ছবি: Fotolia
ঘরে ঢোকার আগে একটু টোকা
কোনো সহকর্মীর কক্ষে যদি কোনো মিটিং থাকে এবং দরজা বন্ধ করে মিটিং করতে থাকেন, যেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জার্মান অফিসগুলোতে হয়ে থাকে, তাহলে আপনি কেবল দরজায় একটু টোকা দিন এবং কারো অনুমতির অপেক্ষা না করেই ভেতরে প্রবেশ করুন৷
ছবি: imago/Westend61
প্রমোদ ভ্রমণ যখন কর্পোরেট সংস্কৃতির অংশ
বেশিরভাগ জার্মান ব্যক্তিগত জীবন এবং কর্মজীবন আলাদা রাখতে পছন্দ করেন৷ তারপরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সহকর্মীদের মধ্যে পরিচিতি ও সামাজিকতা বাড়াতে প্রমোদ ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture alliance/Sputnik/dpa/A. Kudenko
10 ছবি1 | 10
অনেক সমালোচক বলছেন, শ্রমিক আইন শিথিল না করা সত্ত্বেও ডিজিটাইলাজেশনের কারণে জার্মান কর্মীরা নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করে থাকেন৷ অন্যদিকে, ২০১৬ সালে ‘অর্গানেইজেশন ফর ইকোনোমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট (ওইসিডি) এক হিসেব মতে, অন্য সদস্য দেশগুলোর তুলনায় জার্মান কর্মজীবীরা কম সময় কাজ করে থাকেন৷ অবশ্য বেশিরভাগ মানুষ স্বীকার করেন, এখনকার ডিজিটাল যোগাযোগ নিয়োগকর্তা ও কর্মজীবীদের কাজের সময় ঠিক করার স্বাধীনতা দিয়েছে৷
ফেডারেল অফিস অফ স্ট্যাটিকটিসের তথ্য মতে, গত বছর জার্মান কর্মীরা আর্থিক মূল্যে ৭৭২ মিলিয়ন ঘণ্টা কাজ করেছেন যেখানে প্রায় ৯৪৭ মিলিয়ন ঘণ্টার বাড়তি কাজের মূল্যায়ন করা হয়নি৷ অন্যদিকে এমপ্লয়ারস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দক্ষ কর্মীর অভাবের কারণেই অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সের পরেও অনেক জার্মান কাজ করে থাকেন৷
গত জুনে জার্মান ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (ডিজিবি) কর্মঘন্টা শিথিলের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে৷ অন্যদিকে, মেটাল ওয়ার্কারস ইউনিয়ন আইজি মেটাল সপ্তাহে ২৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের জন্য আবেদন জানাবে বলে জানিয়েছে৷
রক্ষণশীল ইউনিয়ন শিবির, সবুজ দল ও ব্যবসাবান্ধব এফডিপি-র তথাকথিত ‘জামাইকা কোয়ালিশন’ গঠনের অন্যতম আলোচ্য বিষয় এ ‘কর্মঘণ্টা নির্ধারণী আইন’৷ সিডিইউ-সিএসইউ এবং এফডিপি নিয়োগকর্তাদের সুবিধা দিতে আইন শিথিলের পক্ষে, অন্যদিকে সবুজ দল চায় কর্মজীবিদের জীবনমান উন্নয়ন৷ আগামী বুধবার এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে৷