জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মূলত দায়ী বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলো৷ কিন্তু তার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গরিব মানুষেরা৷
বিজ্ঞাপন
এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের পরিবারগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি পোষাতে কিংবা প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে যে অর্থ ব্যয় করে তার পরিমাণ বছরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা৷ এই অর্থ বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় জলবায়ু তহবিলের দ্বিগুন৷ আর আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ যা পায় তার ১২ গুন৷
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপি, ব্রিটেনের কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা আইআইইডির গবেষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে৷
ইউএনডিপির বাংলাদেশ কার্যালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মামুনুর রশিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য পরিবারগুলো অর্থ খরচ করতে বাধ্য হওয়ায় তাদের পক্ষে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয় না৷ অথচ তারা যে অর্থ ব্যয় করেন সেটা বিশ্বের ‘জলবায়ু অর্থায়ন' তালিকায় যোগ হয় না৷ এই গরিব লোকদের তিনি ‘অর্থের সবচেয়ে নিরব জোগানদাতা' বলে আখ্যায়িত করেছেন৷
বাংলাদেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১,৩২০টি পরিবারের উপর জরিপ চালিয়ে লন্ডনের আইআইইডি সংস্থা দেখেছে, বন্যা থেকে রক্ষা পেতে প্রায় এক তৃতীয়াংশ পরিবার নিজেদের টাকা দিয়ে তাদের বাড়ি একটু উঁচু করেছে৷ বাকিরা গবাদিপশুর নিরাপত্তা কিংবা অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে টাকা খরচ করেছে৷
এছাড়া জরিপে দেখা গেছে, পুরুষদের চেয়ে নারীরা পরিবার ও সম্পদ রক্ষার চেষ্টা বেশি করেন৷ সে কারণে পুরুষপ্রধান বাড়ির চেয়ে নারীপ্রধান বাড়িতে আয়ের একটা বড় অংশ ঐ খাতে খরচ হয়ে যায়৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স)
‘আমাদের দেশ এখন মরুভূমি হবার পথে’
একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে চরম অনাহার- এর মাঝে মরুভূমিতে পরিণত হবার মুখে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন৷
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
অর্থনীতির কোপ
১২ বছর বয়সি ভাগ্নেকে সাথে নিয়ে আলি কয়েক ঘণ্টা ধরে একটি বাবলা গাছ কাটার চেষ্টা চালাচ্ছে। এককালে এই আলির রোজগার চলতো চাষ ও ঘরামির কাজ করে। ইয়েমেনের পড়ন্ত অর্থনীতি বন্ধ করেছে সেই সুযোগ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
জ্বালানির অভাব
এক সময় ইয়েমেনের বেশির ভাগ চুলা জ্বলত গ্যাসে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে ধসে পড়া অর্থনীতির ফলে সেই জায়গা দখল করেছে কাঠ ও পাথর। ফলে বাজারে দামি পণ্য বলতে কাঠই, যা বিক্রি করছে আলির মতো অসংখ্য জীবিকা-হারানো মানুষ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
অনাহার
সাত সন্তানের পিতা আলি বলেন, ‘‘যদি বেশি করে কাঠ আমরা জোগাড় করতে পারি, তাহলে আমাদের দুমুঠো খাবার জোটে। কিন্তু আজকাল গাছের অভাব চোখে পড়ার মতো। কী হবে জানি না। হয় একসাথে বাঁচবো, বা একসাথে মরবো।’’
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
কেন এই অভাব
টানা ছয় বছর ধরে চলা সংঘর্ষের কারণে ইয়েমেনের আশি শতাংশ মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশের সম্পদ ও শস্য থেকে। গবেষণা বলছে, দেশটির বেশির ভাগ জনতার জীবন নির্ভর করছে বৈদেশিক সহায়তার ওপর। ইয়েমেনের মূল বন্দর হোদেইদাহ হুতিপন্থি গোষ্ঠীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশটির জ্বালানি খাত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
ঝুঁকিতে ইয়েমেন
রাজধানী সানাতেই প্রতি বছর প্রয়োজন হয় আট লাখ ৮৬হাজার গাছের কাঠ। গত তিন মাসেই কাটা হয়েছে ৫০ লাখের বেশি গাছ, জানাচ্ছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মী আবদুল্লাহ আবদুল-ফুতুহ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
মরুভূমি হবে ইয়েমেন
কাঠবিক্রেতা সুলাইমান বলেন, ‘‘কাঠের চাহিদা আরো বাড়ে যখন হোদেইদাহ বন্দরে জাহাজ আসে। কিন্তু আমরা ভয় পাচ্ছি যে, খুব শিগগিরই এই দেশটা মরুভূমি হয়ে যাবে। এখনই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আগে যে ঘন সবুজ দেখা যেতো পাহাড়ের গায়ে, তা আজ আর নেই।’’
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
কাঠের বাজার
গাছের মালিকের কাছ থেকে একশ মার্কিন ডলার সমান দামে একটি বাবলা গাছ কিনতে পারেন কাঠুরেরা। তারপর সেই গাছের কাঠ ট্রাকে ভরে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানী সানাসহ অন্যান্য শহরে। এক ট্রাক কাঠ থেকে আয় হয় তিনশ থেকে সাতশ মার্কিন ডলার।