অবশেষে আদালতের সামনে হত্যার দায় স্বীকার করে নিলেন জর্জ ফ্লয়েড হত্যায় জড়িত পুলিশ অফিসার। শাস্তি এখনো ঘোষণা হয়নি।
বিজ্ঞাপন
এর আগে আদালতের সামনে নিজেকে নির্দোষ বলেছিলেন তিনি। বুধবার মত বদলালেন মিনেসোটায় জর্জ ফ্লয়েড হত্যার মূল অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার ডেরেক শওভিন। বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে নিজের দোষ কবুল করেছেন তিনি। এর ফলে তার জেল হেফাজতের সময় কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
চলতি বছরের গোড়াতেই দোষী প্রমাণিত হয়েছিলেন ওই বর্ণবাদী পুলিশ অফিসার। নিজেকে তিনি নির্দোষ বললেও আদালত তাকে সাড়ে ২২ বছর জেলজীবনের শাস্তি দিয়েছিল। বুধবার সেই নির্দোষ প্রমাণের শুনানি ছিল। কিন্তু আদালতকে অভিযুক্ত জানান, তিনি মত পরিবর্তন করেছেন। তিনি দোষ স্বীকার করতে চান। বিচারক এরপর ওই পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞাসা করেন, ফ্লয়েডের ঘাড়ের উপর তিনি নয় মিনিটেরও বেশি সময় পা তুলে রেখেছিলেন কি না! ফ্লয়েড অচৈতন্য হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি তা তুলে রেখেছিলেন কি না! তিনি জেনেবুঝেই ফ্লয়েডকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন কি না! শওভিন সবকটি অভিযোগই মেনে নেন। বুধবার বিচারক তার শাস্তি শোনাননি।
জর্জ ফ্লয়েড হত্যা: শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা দোষী
২০২০ সালে মিনেয়াপোলিসে আফ্রো-অ্যামেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শওভিন৷ কয়েক দশক জেল খাটতে হতে পারে তাকে৷
ছবি: via REUTERS
দোষী সাব্যস্ত
মিনেয়াপোলিসের রাস্তায় ২০২০ সালের ২৫ শে মে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শওভিনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে মার্কিন আদালত৷
ছবি: via REUTERS
হাঁটু গেড়ে বসা
এক ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল জর্জ ফ্লয়েডকে গ্রেফতারের সময় তার গলার উপর নয় মিনিটেরও বেশি সময় ধরে হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন ডেরেক শওভিন৷
ছবি: Imago Images/AFLO/K. Hiromi
তিনটি অভিযোগ
শওভিনকে তিনটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়: সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডার, থার্ড ডিগ্রি মার্ডার এবং নরহত্যা৷ রায়ে পৌঁছাতে ১২ সদস্যের বিচারকের প্যানেল পুরো একদিন সময় নেন৷ এর আগে তিন সপ্তাহ ধরে চলে বিচারকাজ৷
ছবি: REUTERS
৪০ বছরের কারাদণ্ড
ডেরেকের শাস্তি এখনো ঘোষণা হয়নি৷ তবে তার কয়েক দশকের জেল হতে পারে৷ শাস্তি ঘোষণার আগ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে থাকতে হবে তাকে৷ ফ্লয়েডকে হত্যার সময় উপস্থিত বাকি তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিচার শুরু হবে আগস্টে৷
ছবি: Jim Mone/AP/picture alliance
রায়ে উচ্ছ্বাস
রায় ঘোষণার পর আদালতের বাইরে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়৷ ফ্লয়েডের পরিবারের আইনজীবী এই রায়কে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মত একটি ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন৷
ছবি: Adrees Latif/REUTERS
অবশেষে ন্যায়বিচার
রায় ঘোষণার পরই ফ্লয়েড পরিবারকে টেলিফোন করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস৷ বাইডেন বলেন, ‘‘জানি, এই রায়ে আপনাদের পরিবারের তেমন কোন লাভ হয়ত হলো না, কিন্তু কিছুটা ন্যায়বিচার অন্তত হলো৷’’ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘‘পদ্ধতিগত বর্ণবাদ পুরো জাতির আত্মার উপর একটি কলঙ্ক৷’’
ছবি: Andrew Harnik/Getty Images
জর্জ ফ্লয়েড নামে বিল
কমলা হ্যারিস এরইমধ্যে আইন প্রণেতাদের জর্জ ফ্লয়েড নামে একটি বিল পাসের নির্দেশ দিয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ ব্যবস্থায় সংস্কার আনবে৷
ছবি: Senate Television/AP Photo/picture alliance
বারাক ওবামার বিবৃতি
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন৷ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্ণবাদ রুখতে এবং আনতে আরো অনেক কাজ করতে হবে৷ এখানে অনেক মানুষ আছেন, যারা প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে প্রাণ হারানোর ভয়ে থাকেন৷
ছবি: Reuters/S. Sibeko
এমন রায় খুব কম
এর আগে খুব কম সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নরহত্যার অভিযোগ এসেছে এবং এদের মধ্যে অল্প কয়কেজনকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Adrees Latif/REUTERS
ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং বর্ণবাদী বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল৷ বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিলো পুরো বিশ্বে৷
ছবি: Niall Carson/PA Wire/dpa/picture alliance
10 ছবি1 | 10
দোষ স্বীকার করায় ওই পুলিশ অফিসারের শাস্তির মেয়াদ কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।বিচারক যদি ২৫ বছরের সাজা দেন আর অপরাধী যদি জেলে ভালো ব্যবহার করেন, তাহলে সাড়ে ছয় বছরের মধ্যে তিনি মুক্তি পেতে পারেন। সেই হিসেব মাথায় রেখেই অপরাধী দোষ স্বীকার করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
জেলেসংকীর্ণ সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়েছে ওই পুলিশ অফিসারকে। এদিন কমলা রঙের জেলের পোশাকে আদালতে গিয়েছিলেন তিনি। আদালতের বাইরে তার হাতে হাতকড়া ছিল।
মুক্তি পেলেও আর কখনো পুলিশে ফিরে যেতে পারবেন না ওই অফিসার। তেমন একটি চুক্তিপত্রে তাকে সই করতে হয়েছে।
ফ্লয়েডের আইনজীবী জানিয়েছেন, অবশেষে সত্যের জয় হলো। অপরাধীর দোষ স্বীকার প্রমাণ করে দিল আন্দোলনের শক্তি আছে। বস্তুত, ফ্লয়েড হত্যার পরেই ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা অ্যামেরিকায়।