বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী দৌলতদিয়ায় যৌনকর্মীরা টিকা পেতে শুরু করেছেন৷ সেখানে একটি আলাদা টিকাদান কেন্দ্র খোলারও পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি করোনার টিকা নিয়েছেন দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীর বাসিন্দা বিউটি৷ যদিও শুরুতে তেমন একটা আগ্রহ ছিল না তার৷ টিকা নিলে মানুষ মারা যায় এমন কথাও শুনেছিলেন তিনি৷ পরে জেনেছেন সেটি গুজব৷ ‘‘স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন৷ যেহেতু প্রতিদিন অনেক মানুষের কাছাকাছি আসি আমরা সে কারণে টিকা নেয়ার গুরুত্বটা বুঝতে পেরেছি,’’ বলেন বিউটি৷ দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীতে টিকা নেয়া শতাধিক বাসিন্দার একজন তিনি৷
গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷ এরিমধ্যে ত্রিশ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন৷ সাধারণত চল্লিশোর্ধ্বরা অনুমতি পেলেও দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীদের ক্ষেতে বয়সসীমাও শিথিল করেছে কর্তৃপক্ষ৷ সেখানকার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসিফ মাহমুদ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘যৌনকর্মীদের টিকাদান জরুরি হয়ে পড়েছে, কেননা প্রতিদিন হাজারো মানুষ যৌনপল্লীতে আসেন৷ এখানকার যৌনকর্মীরা ভাইরাসের অন্যতম ঝুঁকিতে রয়েছেন৷’’
প্রথমবারের মতো এক যৌনকর্মীর জানাজা হলো
02:13
বর্তমানে দৌলতদিয়া থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের একটি ক্লিনিকে গিয়ে টিকা নিতে হচ্ছে তাদের৷ তবে যৌনপল্লীতেই একটি টিকাদান কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান মাহমুদ৷
সবাই যাতে টিকা নিতে আগ্রহী হয় সেজন্য পল্লীতে বিভিন্নভাবে প্রচারও চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ, জানিয়েছেন দৌলতদিয়ার প্রধান চিকিৎসক মোহাম্মদ ইব্রাহিম৷
গত মার্চে লকডাউন আরোপের সময় দৌলতদিয়ায় বাইরের কারো প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়৷ এর ফলে আর্থিক সংকটে পড়েন যৌনকর্মীরা৷ তবে টিকা কার্যক্রমের কারণে পরিস্থিতি বদলাবে বলে আশা তাদের৷ সেখানকার একটি নেতৃস্থানীয় সংগঠনের প্রধান ঝুমুর বেগম বলেন, ‘‘দৌলতদিয়ায় কেউ আসলে করোনা আক্রান্ত হতে পারেন এমন ভয় এখন দূর হবে৷’’
সেখানে এখন প্রায় এক হাজার ৯০০ যৌনকর্মী বসবাস করেন৷ দৌলতদিয়াসহ বাংলাদেশে অন্তত এগারোটি যৌনপল্লী চালু রয়েছে৷
এফএস/এআই (এএফপি)
যেভাবে চলছে করোনার টিকা দেয়ার কার্যক্রম
বাংলাদেশে প্রথম পর্যায়ে ৩৫ লাখ মানুষকে করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে গত ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় কার্যক্রম। সারাদেশে এক হাজার পাঁচটি কেন্দ্রে চলছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা দেয়া। দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা
প্রাথমিক পর্যায়ে করোনা ভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ সরকারি কর্মচারি, চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তি এবং সম্মুখসারির যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিবন্ধনের সুযোগ দিচ্ছে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভয় কেটে যাচ্ছে
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের করোনা টিকাদান কেন্দ্রের ইনচার্জ হামিদা বেগম বলেন, “শুরুতে মানুষের মাঝে অনেক শঙ্কা এবং ভয় ছিল। কিন্তু গত ১০ তারিখ থেকে প্রচুর মানুষ কেন্দ্রে আসছে। গড়ে আমরা দৈনিক ১৫০০-র চেয়েও বেশি মানুষকে টিকা দিচ্ছি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই
একাধিক টিকাদান কেন্দ্রে ঘুরে কোথাও টিকা দিতে আসা মানুষদের মাঝে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে দেখা যায়নি। একটি কেন্দ্রের কর্তব্যরত একজন নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন “সীমিত পরিসরে শুরু করায় এখন সব ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তাছাড়া সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবও রয়েছে৷”
ছবি: Mortuza Rashed/DW
চলছে কাউন্সেলিং
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভ্যাকসিন গ্রহণের পর পর্যবেক্ষন কক্ষে বিশ্রাম করছেন মিরপুর থেকে আসা এম শামসুল হক। টিকার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কর্তব্যরত সেবিকা। টিকা নেওয়ার পর কেমন লাগছে- জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন. ‘‘আলাদা কোনো শারীরিক অনুভূতি নেই৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ক্ষোভ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনা টিকা নিতে সস্ত্রীক এসেছিলেন মীর কবির হোসেন। পাঁচ তলায় লিফট ছাড়া উঠে তিনি ক্ষুব্ধ৷ জানালেন, তারা দু’জনই হৃদরোগ এবং শ্বাসকষ্টের রোগী। বয়স্ক রোগীদের কথা ভেবে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বন্ধ অন স্পট নিবন্ধন
করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমে গত ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি নিবন্ধন হওয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এক ঘোষণার মাধ্যমে অন স্পট নিবন্ধন স্থগিত করা হয় এবং শুধু অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়। কবে আবার এ সুযোগ চালু করা হবে, সে সুম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
নেই আলাদা পর্যবেক্ষণ কক্ষ
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল একটি ছোট কনফারেন্স কক্ষে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। নেই পৃথক কোনো টিকা পরবর্তী পর্যবেক্ষণ কক্ষ। এ কারণে অনেককে ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায়।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
এসেছেন সপরিবারে
পরিবারের পাঁচজন সদস্যসহ টিকা কেন্দ্রে এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা খান মো. ইসহাক। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর পর্যবেক্ষণ কক্ষে বিশ্রাম নিতে নিতে জানালেন, টিকা নিতে পেরে তিনি সন্তুষ্ট এবং সকলের প্রতি তার আবেদন, সবাই যেন কোনো শঙ্কা ছাড়াই টিকা নেন।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দ্বিতীয় ডোজ আট সপ্তাহ পর
প্রথম ডোজ নেওয়ার পরই আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার তারিখও নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। এর মাঝে কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যায় নির্ধারিত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধও জানিয়ে রাখছেন টিকা দেয়ার কাজে সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অনলাইন নিবন্ধনে জটিলতা
করোনার টিকে নিতে নিবন্ধন করতে হচ্ছে ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইটে। কিন্তু অনেকেই জানেন না OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) কী। খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মকর্ত একজনও নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, নিবন্ধনে তিনি নিজেও ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং আরেকজনের মাধ্যমে করিয়ে নিয়েছেন। প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা সাধারণ মানুষকেও এ সমস্যায় পড়তে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভিআইপি বুথ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-তে গিয়ে ভিআইপি বুথ খোলা হয়েছে। কারা এর আওতায় পড়বেন জানতে চাইলে কর্তব্যরত ব্যক্তি জানান, মন্ত্রীপরিষদ, বিচারবিভাগ, সচিবালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরতরা এই বিশেষ বুথে টিকা নিতে পারবেন।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
স্বেচ্ছাসেবক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক করোনা টিকা কেন্দ্রে গিয়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকদের কর্মসূচিতে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। টিম লিডার নাফিজ কালাম নিবিড় জানান, তাদের ২০ জনের একটি দল বিএসএমএমইউতে আসা টিকাগ্রহীতাদের রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত পুরোটা সময় সেবা দিচ্ছেন।