২০১৪ সালে জার্মানিতে চরম ডানপন্থিদের দ্বারা বিদেশিদের উপর সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছিল ৩১৬টি৷ ২০১৫ সালের প্রাথমিক হিসাবে সংখ্যাটি বেড়ে ৬১২টিতে দাঁড়িয়েছে৷ জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে জানা গেছে এই তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বাম দলের রাজনীতিবিদ পেট্রা পাও সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করেছেন৷ প্রতিমাসে তিনি সরকারের কাছে ডানপন্থিদের বিভিন্ন হামলা সম্পর্কিত তথ্য জানার আবেদন করেন৷ সরকারই তাঁকে এই তথ্য সরবরাহ করে৷
সাধারণত প্রতিবছর মে মাসে সরকারিভাবে এ সব তথ্য প্রকাশ করা হয়৷ ২০১৬ সালের মে মাসে যখন সরকার ২০১৫ সালের তথ্য প্রকাশ করবে তখন বিদেশিদের উপর সহিংসতার সংখ্যাটি ৬১২ থেকে আরও বেড়ে যেতে পারে৷ কারণ পুলিশ এখনও বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছে৷ এর মধ্যে কিছু ঘটনা অবশেষে বিদেশিদের লক্ষ্য করে হামলা বলে বিবেচিত হতে পারে৷
রাজনীতিবিদ পেট্রা পাও-এর ধারণা এমনই৷ তিনি মনে করেন, প্রাথমিক যে হিসাব দেয়া হয়েছে, মে মাসে যখন পুরো পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে তখন সংখ্যাটি প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে৷ প্রাথমিক ঐ হিসাবে বিদেশিদের উপর হামলা ছাড়াও সমকামী, গৃহহীন মানুষ, এমনকি সাংবাদিকদের উপর জার্মানির চরম ডানপন্থিদের হামলার ঘটনাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালে সব মিলিয়ে সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে ৯২১টি৷ আর সহিংস ও অসহিংস মিলে অপরাধের সংখ্যা ১৩,৮৪৬৷
২০১৬ সালে চরম ডানপন্থিদের দ্বারা অপরাধ সংঘটনের সংখ্যা না কমে আরও বাড়বে বলে মনে করেন টিমো রাইনফ্রাংক৷ তিনি চরমপন্থা-বিরোধী সংস্থা ‘আমাদেউ-আন্টোনিও-ফাউন্ডেশন'-এ কাজ করেন৷ পরিসংখ্যানও সেরকমই আভাষ দিচ্ছে৷ জানুয়ারি মাসেই শরণার্থী ও তাদের যারা সহায়তা করছে তাদের উপর ২৬টি সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ এছাড়া শরণার্থীদের আবাস লক্ষ্য করে ২১ বার আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে৷
পেট্রা পাও ডয়চে ভেলেকে বলেন, ইসলামবিরোধী পেগিডা আর ডানপন্থি রাজনৈতিক দল ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি' বা এএফডির কার্যক্রম যেভাবে বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে এ ধরণের হামলার কমার কোনো সম্ভাবনা নেই৷
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য হয়ে এ সবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানান৷
আপনার কী মনে হয়? জার্মানিতে বিদেশিবিদ্বেষ বাড়ার কারণ কী? জানান নীচের ঘরে৷
জার্মানিতে এত শরণার্থী চায় না তারা
শরণার্থীরা তাদের গন্তব্য হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিচ্ছে৷ জার্মানিও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে৷ কিন্তু জার্মানিতে এত শরণার্থী চান না অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিশ্বাসঘাতক’ ম্যার্কেল
জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী গোষ্ঠী পেগিডার হাজার হাজার সমর্থক সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে৷ শরণার্থীদের প্রতি নরম মনোভাবের কারণ তারা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘জার্মানির মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর অভিযোগ আনেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
শরণার্থীদের নিয়ে কটূক্তি
পেগিডার (প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান অ্যাগেনস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ দ্য অক্সিডেন্ট) প্রতিষ্ঠাতা লুটৎস বাখমান সম্প্রতি শরণার্থীদের ‘পশু’, ‘আবর্জনা’ ও ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন৷ এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
সমাজে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়
সোমবার বিক্ষোভের সময় বাখমান বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা দেড় কিংবা দুই মিলিয়নেই থেমে থাকবে না৷ এরপর আসবে তাদের স্ত্রী; আসবে এক, দুই কিংবা তিন সন্তান৷ ফলে এতগুলো লোকের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
জার্মান সরকারের অস্বীকার
জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ সরকারের গোপন ডকুমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছর জার্মানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন শরণার্থী আসবে বলে মনে করছে সরকার৷ যদিও প্রকাশ্যে সরকার বলছে সংখ্যাটা এক মিলিয়ন হতে পারে৷ তবে জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র এ ধরনের কোনো গোপন ডকুমেন্টের কথা তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thalia Engel
শরণার্থীর মৃত্যু
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের এক শরণার্থীদের বাসস্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছরের এক শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ এদিকে, জার্মান সরকারের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর শরণার্থী ও তাদের বাসস্থানের উপর হামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই এরকম ২০২টি ঘটনা ঘটেছে বলে সরকার জানিয়েছে, যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১৯৮৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপদে ম্যার্কেল
শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে নিজ দল সহ অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েছেন ম্যার্কেল৷ তাঁরা জার্মানির শরণার্থী নীতি ও শরণার্থীদের আগমনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চ্যান্সেলরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷