যে জীবাণু থেকে ‘এইডস’ মানুষের শরীরে দেখা দেয়, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের (বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন) ফলে তা বাদ দেয়া সম্ভব, এমনটাই জানাচ্ছে সাম্প্রতিক এক গবেষণা৷ এই নিয়ে দু’বার এই চিকিৎসা পদ্ধতি সফল প্রমাণিত হলো৷
বিজ্ঞাপন
চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, কোনো ব্যক্তি ‘এইচআইভি' পজিটিভ হওয়া মানে তিনি ‘এইডস' রোগে ভুগতে পারেন৷
১৯৮০ সাল থেকে পৃথিবীর সাড়ে তিন কোটি মানুষ এই রোগে প্রাণ হারিয়েছেন৷
একটা সময় ছিল যখন এইডস রোগের নাম শুনলেই মানুষ ভয় পেত৷ এখন সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে৷ বাংলাদেশে এইডস প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলো কাজ করছে৷
ছবি: AP
প্রথম রোগী
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়৷ এইচআইভি-র কারণে সৃষ্ট এই রোগটি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়৷ ফলে একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে-কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন – যা শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু ঘটাতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাজার পেরিয়ে গেছে
বর্তমানে বাংলাদেশে এইডস রোগীর সংখ্যা ১,২৯৯৷ পরিসংখ্যানটা অবশ্য ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নিজেই চলতি বছরের জুনে সংসদকে এই তথ্য জানিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা
এইডস রোগীর সংখ্যা ১,২৯৯৷ কিন্তু এইচআইভি বা ‘হিউম্যান ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস’-এ আক্রান্তের সংখ্যা ৩,২৪১৷ ২০১৩ সালের ১লা ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবসের এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিহতের সংখ্যা
ঐ একই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসচিব জানান এইডসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ৪৭২ জন মারা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিকিৎসা সেবা
আশার আলো সোসাইটি, মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ কনফিডেনশিয়াল অ্যাপ্রোচ টু এইডস প্রিভেনশন (ক্যাপ) নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান এইডস আক্রান্তদের ‘অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল’ বা এআরভি ওষুধ সহ অন্যান্য সেবা দিচ্ছে৷ সরকার ও ‘দ্য গ্লোবাল ফান্ড’-এর কাছ থেকে ওষুধ কেনার অর্থ পায় এই তিন সংস্থা৷
ছবি: AP
সরকারি সেবা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জুন মাসে জানান আটটি সরকারি হাসপাতালে ‘সিডি-৪’ সেন্টারের মাধ্যমে এইডস রোগীদের শারীরিক অবস্থা নির্ণয় করাসহ এ সব প্রতিষ্ঠানসমূহে রোগীদের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও ‘কাউন্সেলিং’ সেবা দেয়া হচ্ছে৷ অবশ্য সেটা ঠিক নয় বলে ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন ‘মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ’-এর নির্বাহী পরিচালক এম এস মুক্তি৷
ছবি: AP
6 ছবি1 | 6
কিন্তু এমনটা সম্ভব বলে জানাচ্ছে রবীন্দ্র গুপ্ত ও তাঁর গবেষকদল৷ বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘নেচার'-এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে জানা গেছে এই তথ্য৷
কীভাবে হলো এই আবিষ্কার?
২০০৭ সালে বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের পর এক রোগীর শরীরে আর ‘এইচআইভি' পজিটিভের পেছনে থাকা ভাইরাসকে খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু তখন গবেষকরা ভেবেছিলেন যে এমন আবিষ্কার নেহাতই কাকতালীয়৷
কিন্তু দ্বিতীয়বার, অন্য আরেক রোগীর ক্ষেত্রেও যখন একই ফলাফল আসে, তখন রবীন্দ্র গুপ্ত তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি বিষয়ে নিশ্চিত হন৷
তবে কি এইচআইভি-মুক্ত হওয়া সত্যিই সম্ভব?
রবীন্দ্র গুপ্ত বলছেন, ‘‘এখনও রোগীর শরীরে আমরা কোনো ভাইরাস খুঁজে পাচ্ছি না৷ কিন্তু তার মানে সে সম্পূর্ণভাবে এইডস-মুক্ত, তা ঠিক নয়৷ বরং আমরা বলতে পারি, যে রোগী তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে পেয়েছেন৷''
শুধু তাই নয়, তিনি আরো জানান যে বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন একটি ব্যয়বহুল, বিপজ্জনক ও যন্ত্রণাদায়ক প্রক্রিয়া৷ ফলে, সেটি কোনোদিনই এইচআইভি-কে রুখতে শ্রেষ্ঠ উপায় হতে পারে না৷