তেহরান বলছে যে তারা পরমাণু চুক্তিতে বেধে দেয়া ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সীমা আবারো অতিক্রম করছে৷ এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার চুক্তিভঙ্গের ঘোষণা দিল ইরান৷
বিজ্ঞাপন
রোববার ইরান সরকারের মুখপাত্র আলি রাবিয়েই তেহরানে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চুক্তিতে বেধে দেয়া সীমা ‘আজ আমরা অতিক্রম করব'৷ এর বেশি কোনো তথ্য তিনি দেননি৷ চুক্তিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের এই সীমা ৩.৬৭%৷
তেহরান চায় তাদের ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হোক৷ সেজন্য তারা ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ অন্য যেসব দেশ পরমাণু চু্ক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, তাদের ওপর চাপ দিচ্ছে৷ তারা এখন হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যতদিন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা না উঠবে ততদিন তারা চুক্তির সীমা অতিক্রমের হার বাড়াতে থাকবে৷ প্রতি ৬০ দিন পরপর তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার হার বাড়াবে৷
জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ইরানকে তিন দশমিক ৬৭ মাত্রার তিন'শ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল৷ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য রাষ্ট্র ও জার্মানিসহ মোট ছয়টি দেশের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়৷
গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন৷ তার দাবি, চুক্তিতে ত্রুটি আছে৷ ইরানের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র৷ এতে ইরানের অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে পড়ে৷
মার্কিন অবরোধের বিষয়ে ফয়সালা করতে চুক্তিতে অংশগ্রহনকারী বাকি দেশগুলোকে সর্বমেষ ৬০ দিন সময় দিয়েছিল ইরান৷ সেই সময় শেষ হয়েছে রোববার৷
এদিকে, সম্প্রতি ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে বৈরিতা সম্প্রতি আরো বেড়েছে৷ কয়েকটি ঘটনায় দু'দেশের মাঝে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে৷ গত মাসে একটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করলে ইরানের ওপর আবারো কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প৷ এমনকি বিমান হামলার প্রস্তুতি নিয়েও শেষ মুহূর্তে সরে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷