জার্মানির মিউনিখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেলা একটি বোমা বিস্ফোরিত হওয়ায় চারজন আহত হয়েছেন৷ নতুন রেললাইন স্থাপনের জন্য ড্রিল করার সময় ২৫০ কেজি ওজনের ঐ বোমাটি বিস্ফোরিত হয়৷
বিজ্ঞাপন
আহতদের মধ্যে একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তিনি এখন স্থিতিশীল আছেন৷ আরেকজনের পা উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল৷ চার ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর সেটি ঠিক করা গেছে৷
জার্মানিতে এখনও নিয়মিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেলা বোমা পাওয়া যায়৷ বিশেষজ্ঞ দল সেগুলো নিস্ক্রিয় করে থাকে৷
শহরের কোথাও বোমা লুকিয়ে আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখে মিউনিখ শহর কর্তৃপক্ষ৷ তারপরও কেন ঐ বোমাটির সন্ধান পাওয়া যায়নি তা স্পষ্ট নয়৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে ছবি বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডের ওয়ারশতে দুই বোন জমিতে আলু তুলছিলো৷ হঠাৎ জার্মান যুদ্ধবিমান গোলাবর্ষণ শুরু করে৷ এক বোন সেখানেই মারা যায়৷ মার্কিন এক ফটো সাংবাদিকের সেই ছবি আজও বিশ্ববাসীকে নাড়া দেয়৷
ছবি: Julien Bryan Archive
ভয়ের চেয়ে ক্ষুধার তাড়না
১৯৩৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আন্দজিয়া কস্তেভিচের বাড়ির উপর জার্মান যুদ্ধবিমান থেকে বোমা পড়তে শুরু করে৷ ভয়ে পরিবারের সবাই বাড়ি ছেড়ে জমিতে পালিয়ে যায়৷ কিন্তু দুই বোনের এত খিদে পেয়েছিল যে তারা জমি থেকে আলু তুলতে শুরু করে৷ বিমানগুলো অনেক নীচ দিয়ে উড়ছিল৷ তারা দেখতে পেয়েছিল জমিতে নারী ও শিশুরা আছে, তারপরও তারা গুলি ছোড়া বন্ধ করেনি৷
ছবি: United States Holocaust Memorial Photo Archives/Julien Bryan Archive
আন্দজিয়ার মৃত্যু
একটি বুলেট আন্দজিয়ার ঘাড়ে আঘাত করে এবং সাথে সাথে তার মৃত্যু হয়৷ ১২ বছরের কাজিয়া মৃত বোনের কাছে হাঁটু গেড়ে আহাজারি করতে থাকে৷ মৃত্যুর সাথে এটাই তার প্রথম পরিচয়৷ সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলনা কিছুক্ষণ আগে যে মানুষটা বেঁচে ছিল সে আর নেই৷ এই ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন ফটোগ্রাফার জুলিয়ান ব্রায়ান৷
ছবি: Julien Bryan Archive
ফটোগ্রাফার ব্রায়ান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য পোল্যান্ডে অবস্থান করছিলেন মার্কিন ফটোগ্রাফার জুলিয়ান ব্রায়ান৷ যুদ্ধজাহাজগুলো চলে গেলে তিনি এই দৃশ্য দেখেন৷ তিনি দেখেন যে কাজিয়া তার মৃত বোনের সঙ্গে কথা বলছে৷ তিনি ওই মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করেন৷
ছবি: United States Holocaust Memorial Museum Collection, Gift of the Julien Bryan Archive
কে কাকে দেবে সান্ত্বনা
ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করা হলে ব্রায়ান কাজিয়াকে বুকে টেনে নেন৷ দু’জনেই কেঁদে ওঠেন৷ সেখানে দাঁড়ানো পোলিশ কর্মকর্তারাও কাঁদতে থাকেন৷ ‘সিজ’ নামের তথ্যচিত্রে ব্রায়ান এই ঘটনাকে ওয়ারশতে থাকাকালীন তার সবচেয়ে কষ্টকর অভিজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷
ছবি: United States Holocaust Memorial Museum Collection, Gift of the Julien Bryan Archive
‘সিজ’ এর মুক্তি
১৯৪০ সালে মুক্তি পায় তথ্যচিত্রটি৷ নাৎসিবাহিনীর ধারণা হয়েছিল, পোলিশদের সাহায্য করতে ব্রায়ান পোল্যান্ডে অবস্থান করছেন৷ পরে অবশ্য তিনি পোলিশদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছিলেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টকে অনুরোধ করেছিলেন পোলিশদের সাহায্য করার জন্য৷ যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পর প্রেসিডেন্টকে এই ছবিটি দেখিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: United States Holocaust Memorial Museum Collection, Gift of the Julien Bryan Archive
অস্কার মনোনয়ন
এই তথ্যচিত্রটি অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিল৷ দেশের বিভিন্ন সিনেমাহলে লাখো মানুষ দেখেছিল ‘সিজ’৷ ১৯৫৮ সালে ওয়ারশতে ফিরে আবারো কাজিয়ার সঙ্গে দেখা করেন ব্রায়ান৷ তখন কাজিয়ার বয়স ৩১৷ এর ১৬ বছর পর আবারো তাদের দেখা হয়৷ সেবার ব্রায়ান তার ছেলে স্যামকে সাথে নিয়ে পোল্যান্ড গিয়েছিলেন৷
ছবি: United States Holocaust Memorial Photo Archives/Julien Bryan Archive
কাজিয়ার মৃত্যু
২০২০ সালের ২৮ আগস্ট মারা যান কাজিয়া মিকা৷ ওয়ারশর পোয়াজকি সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয় তাঁকে৷ ৮১ বছর আগে ঠিক এই জায়গাটিতেই তোলা হয়েছিল সেই ছবিটি৷
ছবি: United States Holocaust Memorial Museum Collection, Gift of the Julien Bryan Archive
7 ছবি1 | 7
বুধবারের দুর্ঘটনাটি মিউনিখের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনের কাছে ঘটেছে৷ এই জায়গাটি ইউরোপের রেল চলাচলের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা৷ তবে বিস্ফোরণের কারণে কোনো রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি৷ অবশ্য কয়েক ঘণ্টার জন্য রেল চলাচল স্থগিত রাখতে হয়েছিল৷
১৯৯৪ সালে বার্লিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেলা এক বোমা বিস্ফোরণে তিন নির্মাণ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন৷
২০১৭ সালে ফ্রাঙ্কফুর্টে ১.৪ টন বোমার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল৷ সে কারণে আশেপাশের এলাকা থেকে ৬৫ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল৷ ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এটিই ছিল স্থানান্তরের সবচেয়ে বড় ঘটনা৷
২০২০ সালে বার্লিনের বাইরে যেখানে টেসলার প্রথম ইউরোপীয় কারখানা নির্মিত হয়েছে সেখানে সাতটি বোমাপাওয়া গিয়েছিল৷