জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস-এর জিহাদিরা আরো একজন মার্কিন সাংবাদিকের শিরশ্ছেদ করার দৃশ্য একটি পাঁচ মিনিটের ভিডিও-তে পোস্ট করেছে৷ এবারও মুখোশ পরা আততায়ী ব্রিটিশ ‘অ্যাক্সেন্টে' কথা বলেছে৷ চলছে মার্কিন বিমান হানাও৷
বিজ্ঞাপন
সর্বাধুনিক ফুটেজে ৩১-বছর-বয়সি রিপোর্টার স্টিভেন সটলফ ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলাতেই বলছেন যে, তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ইরাকে জিহাদিদের উপর বিমান হানা চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্তের শিকার হচ্ছেন৷ ভিডিও-টির খবর দেয় ‘সাইট' ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ, যারা যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে সন্ত্রাসবাদের উপর নজর রাখে৷
স্টিভেন সটলফ-এর আদিবাস মায়ামিতে; তিনি টাইম ম্যাগাজিন এবং ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের হয়ে ফ্রিল্যান্সিং করেছেন; সিরিয়া, মিশর ও লিবিয়া থেকে বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নানা ধরনের প্রবন্ধ লিখেছেন৷ যে আইএস যোদ্ধা সটলফ-এর মুণ্ডচ্ছেদ করে, সে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে লক্ষ্য করে বলেছে: ‘‘আমি ফিরেছি, ওবামা, এবং আমি ফিরেছি ইসলামিক স্টেট-এর প্রতি তোমার উদ্ধত বিদেশনীতির কারণে... আমাদের আন্তরিক সাবধানবাণী সত্ত্বেও৷''
আততায়ী আরো বলেছে: ‘‘তোমার রকেট যেমন আমাদের মানুষজনের উপর এসে পড়ছে, তেমন আমাদের ছুরিও তোমার মানুষজনের গলা কাটবে৷’’ আততায়ী ইরাকের মোসুল বাঁধ ও আমির্লি শহরের আশেপাশে মার্কিন বিমান হানার কথা উল্লেখ করে – যা ঘটেছে গতমাসে জেমস ফলির হত্যাকাণ্ডের অনেক পরে৷ জেমস ফলির মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিও-তে সটলফকে দেখানো হয়েছিল এবং হুমকিও দেওয়া হয়েছিল, তবে দৃশ্যত সে সময় তাঁকে হত্যা করা হয়নি৷
সাংবাদিকদের জন্য দুঃসময়
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গত দশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি এতো খারাপ দেখা যায়নি৷ বিশ্ব জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করেন যে সব দেশে, সে সব দেশে সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি
ফ্রিডম হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৭টি দেশের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যার ফলাফলে দেখা গেছে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম৷ অন্যদিকে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং নরওয়েতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
তুরস্কে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ সাংবাদিক গ্যোকহান বিচিচি-কে প্রেপ্তার করা হয় গেজি পার্কে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থরক্ষা কমিটির মতে গত ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্কে ৪০জন সাংবাদিকদের আটক করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
অপ্রিয় রিপোর্ট
ইউক্রেনেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়৷ বিশেষ করে কিয়েভের ময়দান স্কোয়ারে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়৷ সরকারের সমালোচক সাংবাদিক টেটিয়ানা চর্নোভোল ঐ হামলার শিকার হন৷ তিনি পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিলাসী জীবনযাত্রার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন৷ হাজারো মানুষ এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন!
চীন এবং রাশিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমালোচনার মুখে৷ দুই দেশের সরকারই মিডিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এবং সরকারের মতামত মিডিয়াকে জানানোর জন্য একটি আইনও প্রণয়ন করে৷ এমনকি রাশিয়ায় সংবাদ সংস্থা ‘রিয়া নভোস্তি’ বন্ধ করে সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করা হয়৷ অনেক রুশ নাগরিকের তা পছন্দ না হওয়ায় তারা ‘মিথ্যা বলা বন্ধ করুন’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন সরকারের আড়িপাতা
অ্যামেরিকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন তথ্যনীতি ক্রমঃশই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, সরকার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, এমনকি সরকার সাংবাদিকদের কাছে তথ্য সূত্রও জানতে চায়৷ এছাড়া, মার্কিন সরকার সংবাদ সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের টেলিফোনেও আড়ি পেতেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মুবারক জমানায় প্রত্যাবর্তন
মিশরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ প্রেসিডেন্ট মুরসির পতনের পর সেখানকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস-এর মতে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সামরিক অভ্যুথ্যানের পর থেকে বেশ কিছু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় হয় এবং পাঁচজন মারা যান৷
ছবি: AFP/Getty Images
মালিতে পরিস্থিতির উন্নতি
মালিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইসলামি বিদ্রোহীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়নের পর মালির আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়৷ ২০১২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ সেগুলো এখন আবার কাজ করছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কিরগিজিস্তান ও নেপালে ইতিবাচক প্রবণতা
যে সব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিরগিজিস্তান৷ সেখানকার সাংবাদিকরা ২০১৩ সালে খুব কম আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ নেপালেও মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমেছে, যদিও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া বন্ধ হয় নি৷ সমীক্ষা অনুযায়ী ইসরায়েলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উন্নতি হয়েছে এবং এখন তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
ফলির হত্যাকাণ্ডের পর মার্কিন বিমান হানা অব্যাহত থাকে এবং মঙ্গলবার সটলফ-এর হত্যাকাণ্ডের ভিডিও প্রকাশিত হবার পরেও বিমান হানা চলেছে৷ তবে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাস ও আরো কিছু ভবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হচ্ছে অতিরিক্ত সাড়ে তিন'শো মার্কিন সেনা নিয়োগ করে৷ অপরদিকে আইএস জিহাদিরা তাদের সর্বাধুনিক ভিডিও-য় ডেভিড কথর্ন হেইন্স নামের এক অজ্ঞাত ব্রিটিশ নাগরিককে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে৷ যুগপৎ ব্রিটেনকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে; সটলফ-এর আততায়ী ভিডিও-তে ঘোষণা করেছে: ‘‘আমরা এই সুযোগে যে সব রাষ্ট্র আইএস-এর বিরুদ্ধে অশুভ মৈত্রীতে অ্যামেরিকার সঙ্গে যোগদান করেছে, তাদের সাবধান করে দিচ্ছি৷''
‘‘এ সেকেন্ড মেসেজ টু অ্যামেরিকা'', যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি দ্বিতীয় সাবধানবাণী নামধারী ভিডিও-টি দৃশ্যত নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পোস্ট করা হয় – যা আইএস যোদ্ধাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা, এমনকি বিরোধের নিদর্শন হতে পারে৷ যে গোষ্ঠী ভিডিও-টি আগেভাগে প্রকাশ করেছিল, তারা পরে একটি টুইটার মেসেজে বাদবাকি জিহাদিদের কাছ থেকে ক্ষমাপ্রার্থনা করে৷
ব্রিটেন ও ফ্রান্স আইএস-এর এই নতুন হত্যাকাণ্ডকে ‘‘বর্বর'' বলে অভিহিত করেছে৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পুনরায় তাঁর মন্ত্রীসভার একটি জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন৷ ওদিকে ওয়াশিংটন জানিয়েছে যে, ভিডিও-টির প্রামাণ্যতা যাচাইয়ের জন্য যথাসাধ্য করা হচ্ছে৷ তবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জেন সাকি এ-ও জানিয়েছেন যে, ইসলামিক স্টেট-এর হাতে এখনও কয়েকজন মার্কিন নাগরিক আটক রয়েছে৷ সাকি এর বেশি কোনো খুঁটিনাটি দেননি৷