মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৬টি মুসলিম প্রধান দেশের মানুষের প্রবেশের উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে হাওয়াই রাজ্য৷ অন্য মহল থেকেও প্রতিরোধের আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি মুসলিমপ্রধান দেশের মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার জোরালো ধাক্কা খেয়েছিলেন৷ প্রবল প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পাশাপাশি আদালতের হস্তক্ষেপে সে যাত্রা পিছু হটতে হয়েছিল তাঁকে৷ কিন্তু দমে থাকার পাত্র নন ট্রাম্প৷ তাই তালিকা থেকে শুধু ইরাকের নাম বাদ দিয়ে আরও কিছু পরিবর্তন এনে দ্বিতীয় একটি তালিকা স্থির করেছেন তিনি৷ কিন্তু এবারও আইনি সংঘাত এড়াতে পারছেন না ট্রাম্প৷ প্রথম রাজ্য হিসেবে হাওয়াই প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে ফেডারেল আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে৷ এর আগে প্রথম নির্বাহী আদেশের পর ওয়াশিংটন রাজ্য এমন উদ্যোগ নিয়েছিল৷ তারাও দ্বিতীয় আদেশটি খতিয়ে দেখছে৷
ট্রাম্পের দ্বিতীয় নির্বাহী আদেশ প্রথমটির তুলনায় অনেক স্পষ্ট এবং শুধুমাত্র নতুন ভিসাপ্রার্থীদের ক্ষেত্রেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে৷ তা সত্ত্বেও সমালোচকদের মতে, সেটি প্রথমটির মতোই সংবিধান লঙ্ঘন করছে৷ তাই এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মার্কিন সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান পদক্ষেপের উদ্যোগ শুরু করছে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এবারও কি ট্রাম্পের পদক্ষেপ বানচাল করা আগের মতো সহজ হবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকগুলি কারণে চটজলদি সাফল্য পাওয়া কঠিন হবে৷
প্রথমত, ছ’টি মুসলিম প্রধান দেশের যেসব মানুষের হাতে মার্কিন ভিসা বা গ্রিন কার্ড আছে, তাঁরা নীতিগতভাবে বিনা বাধায় অ্যামেরিকায় প্রবেশ করতে পারবেন৷ তবে তাঁদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ তাছাড়া নির্বাহী আদেশটি ১৬ই মার্চ থেকে কার্যকর হবে৷ ফলে শরণার্থীসহ অন্যান্য মানুষ আচমকা সমস্যার মুখে পড়বেন না৷ তাই আগের বারের মতো বিমানবন্দরে অরাজকতার সম্ভাবনা অনেক কমে যাচ্ছে৷ আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজনও সেই অনুযায়ী কমে যাবার কথা৷ তবে মার্কিন কংগ্রেসের মুসলিম সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হচ্ছেন৷
অতএব পরোক্ষভাবে মুসলিমদের উপর নিষেধাজ্ঞার অভিযোগই এবার আপত্তির মূল কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ তাই একাধিক সংগঠন প্রতিরোধের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে৷
ট্রাম্পের প্রথম সাতদিনের নির্বাহী আদেশ ও নির্দেশ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের সাতদিনের মধ্যেই ডজন খানেক নির্বাহী পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার মধ্যে ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ ও ‘মেমোরান্ডাম’, দুই’ই আছে৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
অভিবাসন
শুক্রবারের একটি নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প সাতটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেন ও সিরীয় উদ্বাস্তু গ্রহণ অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখেন৷
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo/K. Willens
ওবামাকেয়ার
শপথগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প তাঁর প্রথম এক্সিকিউটিভ অর্ডারে স্বাক্ষর করেন৷ আদেশটির ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল ওবামার ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’-এর ‘‘অনাবশ্যক অর্থনৈতিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক বোঝা’’ হ্রাস করা৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাকার
বুধবার ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পরিদর্শন করার অবকাশে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি (মন্ত্রীকে) ‘‘অবিলম্বে দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর একটি প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা, নকশা ও নির্মাণকার্য শুরু করার’’ যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Torres
‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটিজ’
বুধবার ট্রাম্প আরো একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডার স্বাক্ষর করেন, যা অনুযায়ী যে সব ‘অভয়াশ্রমের’ শহর বেআইনি অভিবাসীদের নথিবদ্ধ বা বহিষ্কার করে না, তাদের ফেডারাল অনুদান বাতিল করা হবে৷
ছবি: AP
দু’টি তেলের পাইপলাইনের অনুমতি
তাঁর কর্মকালের দ্বিতীয় দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’টি আদেশের মাধ্যমে দু’টি বিতর্কিত পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে বলেছেন৷ কি-স্টোন এক্সএল পাইপলাইনটি যাবে ক্যানাডা থেকে গাল্ফ কোস্টে মার্কিন রিফাইনারিগুলি অবধি: প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১৫ সালে এই পাইপলাইন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখেন৷ ডাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইনটি ইন্ডিয়ান উপজাতিদের এলাকার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে ব্যাপক বিক্ষোভের অবতারণা ঘটে৷
ছবি: REUTERS/L. Jackson
গর্ভপাত সংক্রান্ত ‘গ্লোবাল গ্যাগ রুল’
‘বিশ্বের মুখ চেপে ধরার নীতি’ হিসেবে পরিচিত এই নীতি প্রথম বাস্তবায়িত হয় ১৯৮৪ সালে, প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের আমলে৷ মেক্সিকো সিটি পলিসি নামেও পরিচিত এই নীতি অনুযায়ী যে সব বিদেশি এনজিও গর্ভপাত সংক্রান্ত পরামর্শ বা সাহায্য দেয়, তাদের ফেডারাল সাহায্য না পাবার কথা৷ ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞা পুনরায় সক্রিয় করেছেন৷
ছবি: AP
টিটিপ থেকে পশ্চাদপসারণ
তাঁর কর্মকালের তৃতীয় দিনে (সোমবার) ট্রাম্প একটি মেমোরান্ডামের মাধ্যমে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বাণিজ্য চুক্তি থেকে স্থায়ীভাবে পশ্চাদপসারণ করার নির্দেশ দেন৷