দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন জার্মানরা বিদেশি জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দিলে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারবে জার্মান সরকার৷ বুধবার নতুন এই আইনের অনুমোদন দিয়েছে জার্মান মন্ত্রিসভা৷
বিজ্ঞাপন
‘‘যারা বিদেশে গেছে এবং সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠীর হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছে তারা জার্মানি এবং তার মূল্যবোধকেও বিসর্জন দিয়েছে৷ সন্ত্রাসী জঙ্গি কাঠামোয় তারা বিদেশি শক্তির সঙ্গে যুক্ত,'' বলে এক বিবৃতিতে এমন অভিমত দিয়েছে দেশটির সরকার৷
প্রাপ্তবয়স্ক ও আরো একটি নাগরিকত্ব রয়েছে এমন সন্ত্রাসী জঙ্গিদের ক্ষেত্রেই আইনটি প্রযোজ্য হবে৷ সংখ্যালঘুদের উপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না৷ অতীতের ঘটনার ক্ষেত্রেও এটি অকার্যকর হবে৷
জার্মানিতে আলোচিত যত ‘জঙ্গিবিরোধী’ মামলা
এ পর্যন্ত বেশ কিছু উগ্র ইসলামপন্থি বা জঙ্গিদের হামলা এবং হামলার চেষ্টা হয়েছে জার্মানিতে৷ কয়েকদিন আগে সর্বোচ্চ শাস্তিও হয়েছে এক ব্যক্তির৷ ছবিঘরে থাকছে জার্মানিতে আলোচিত কিছু ‘জঙ্গিবিরোধী’ মামলার কথা৷
ছবি: AP
বন শহরে বোমা বিস্ফোরণের ব্যর্থ চেষ্টা
২০১২ সালে বন শহরের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনে তোলা ছবি এটি৷ ছবির ওই নীল ব্যাগে বোমা ছিল৷ এক ডানপন্থি রাজনীতিবিদকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ বোমা রাখা হয়েছিল বলে পুলিশের সন্দেহ৷ হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি এক ব্যাক্তির আজীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে ড্যুসেলডর্ফের আদালত৷ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে আরো তিনজনের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের বাস স্টপে হামলা
জার্মানিতে প্রথম ‘উগ্র ইসলামপন্থির’ হামলাটি হয়েছিল ২০১১ সালের মার্চে৷ সেবার ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের বাস স্টপে দুই মার্কিনিকে গুলি করে হত্যা করেছিল আরিদ উকা নামের এক ব্যক্তি৷ নিহত দুই মার্কিন নাগরিকের কয়েক দিনের মধ্যেই আফগানিস্তানে যাওয়ার কথা৷ জানা যায়, আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে গুলি করে দু’জন নিরপরাধ মার্কিনিকে হত্যা করে আরিদ৷ কসভোতে জন্ম নেওয়া আরিদেরও আজীবন কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: AP
সাওয়ারল্যান্ড সেল
‘সাওয়ারল্যান্ড সেল’ হচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে গড়ে ওঠা ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ ইউনিয়ন বা আইপিইউ-এর জার্মান শাখা৷ ১০ বছর আগে এই সংগঠনের হয়েই যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল চার জার্মান এবং এক তুর্কি বংশোদ্ভূত তরুণ৷ ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১০ সালে প্রত্যেকের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: AP
নকল পুলিশ
২০১৪ সালে ভুপার্টাল শহরে কমলা রঙের সিকিউরিটি ভেস্ট পরা একদল লোক রাস্তায় নেমে আসে৷ তাদের পোশাকে লেখা ছিল ‘শরিয়া পুলিশ’৷ লোকগুলো বিভিন্ন মানুষকে বার এবং ক্লাব বর্জন করে ইসলামি আইন মেনে চলার পরামর্শ দিতে থাকে৷ ওই লোকগুলোর নেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন স্ভেন লাউ নামের এক সালাফিস্ট মুসলমান৷ পরে আইএস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ তার বিরুদ্ধে মামলা এখন বিচারাধীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bildfunk/M. Becker
বড় বড় কথা বলা সেই আইএস জঙ্গি
২০১৩ সালের অক্টোবরে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এ যোগ দিতে ডিন্সলাকেনের সালাফিস্ট মুসলমান নিলস ডি. সিরিয়ায় যায়৷ এক বছর পর আবার ফিরে আসে জার্মানিতে৷ ফিরে এসে সিরিয়ায় সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে জানায় সগর্বে৷ তারপর গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল
২০১৬ সালের জুলাই মাসে মামলার চূড়ান্ত শুনানির দিন হ্যারি এস. আদালতে বলে ‘‘সিরিয়ায় যাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল৷’’ ব্রেমেনে খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হওয়া তরুণটি তার এক বছর আগেই সিরিয়ায় গিয়ে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সঙ্গে তিন মাস কাটিয়ে এসেছে৷ সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেয়ার অপরাধে তিন বছরের জেল হয়েছে তার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Marks
6 ছবি1 | 6
বর্তমানে ইরাকে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট সিরীয় কুর্দি বাহিনী ও সরকারের হাতে আইএস-এ যোগ দেয়া অনেক জার্মান নাগরিক আটক রয়েছে৷ তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র সিরীয় কুর্দি বাহিনী আটককৃত কয়েক হাজার আইএস যোদ্ধাদের ফেরত নিতে বিভিন্ন দেশের উপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে৷ এসব বিদেশি যোদ্ধাদের বিষয়ে কী ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে, তা নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বিতর্ক রয়েছে৷
জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০০৩ সাল থেকে দেশটির প্রায় ১,০০০ নাগরিক সিরিয়া ও ইরাকের জিহাদি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দিয়েছে৷ তাদের এক তৃতীয়াংশ এরইমধ্যে জার্মানিতে ফিরে এসেছে৷ যাদের অনেককে বিচার অথবা পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়েছে৷ বিলটি শুধু আইএস এর জন্য নয়, সব সন্ত্রাসী জঙ্গিদের জন্যই প্রযোজ্য হবে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র৷
‘‘আইন অনুযায়ী একটি সন্ত্রাসী জঙ্গি সংগঠন আধা সামরিক সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হবে, যারা আন্তর্জাতিক আইনের বরখেলাপ ও নতুন রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি বিদেশি রাষ্ট্রের বিদ্যমান কাঠামো নির্মূল করার পরিকল্পনা করেছে,'' জানান এই মুখপাত্র৷ সে অনুযায়ী তুরস্কের সরকারের বিরুদ্ধে তিন যুগ ধরে লড়াইরত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগ দেয়া জার্মান দ্বৈত নাগরিকরাও তাদের নাগরিকত্ব হারাবে৷ বিশ্বের প্রবাসী কুর্দি জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় অংশটিই জার্মানিতে বসবাস করে আসছে, যাদের অনেকেই কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে যুক্ত৷
গত বছর জার্মানির ক্ষমতাসীন জোট সরকারের রাজনৈতিক দলগুলো নাগরিকত্ব আইন সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়৷ কিন্তু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রীর মতদ্বন্দের কারণে এর অনুমোদনের প্রক্রিয়া ধীরগতিতে এগোয়৷ এই দেরি নিয়ে সরকারের সমালোচনাও হয়৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশা নতুন আইন ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে৷