জার্মানি যে অভিবাসীদের দেশ হয়ে উঠতে চলেছে, জার্মান রাজনীতিকরাও সে কথা মানেন৷ কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্ব? সেখানে আইনের যে বাধা আছে, তা দূর করতে চায় সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে জন্ম, এমন অভিবাসী সন্তানদের ২৩ বছর বয়স পর্যন্ত দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকতে পারে৷ কিন্তু ২৩ বছর হবার মধ্যে তাঁদের জার্মান অথবা বাবা-মায়ের সাবেক দেশের নাগরিকত্ব, এই দু'টোর মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হবে৷ এ না করলে তাঁদের জার্মান পাসপোর্ট তলব করে ‘‘নাগরিকত্ব খারিজের নোটিশ'' জারি করা যেতে পারে – এবং হয়েও থাকে!
কোনো একটি দেশের নাগরিকত্ব বেছে নেওয়ার এই ‘‘অপশান মডেল''-টি ২০০০ সালে চালু করা হয়৷ সে যাবৎ জার্মানিতে জন্ম, এমন অভিবাসী সন্তানদের ঐ দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে – তবে ২৩ বছর বয়স অবধি৷ ২৩তম জন্মদিনের মধ্যে নিজের পছন্দ-অপছন্দ না জানালে সংশ্লিষ্টের অজান্তেই তাঁর জার্মান নাগরিকত্ব খারিজ হয়ে যায়৷
জার্মানিতে বাড়ি সমস্যায় অভিবাসীরা
অভিবাসীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ তবে বাড়ির সমস্যাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷এ সমস্যা জার্মানিতে বসবসারত তুর্কিদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়৷ কারণ জার্মানিতে প্রায় ৪০ লাখ তুর্কি আছেন৷
ছবি: Suzheh.sub.ir
অভিবাসী তুর্কিদের সমস্যা বেশি
জার্মানিতে অভিবাসীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ এগুলোর মধ্যে বাড়ির সমস্যাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷ জার্মানিতে অভিবাসীদের মধ্যে তুর্কিদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪০ লাখ৷ কাজেই সমস্যাটাও ওদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শীতকালে ঠান্ডায় কষ্ট পায়
তুর্কিদের সাধারণত বাসা ভাড়া দেওয়া হয় পুরনো এলাকায় বহু বছরের পুরনো বাড়িগুলোয়৷ সেই সব বাড়িতে হয়ত দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয় না বা জানালা দিয়ে বাতাস ঢোকে বা খানিকটা খোলা থাকে৷ অথবা শীতকালে হিটার কাজ করে না, অর্থাৎ ঠান্ডায় কাটাতে হয়৷ বাড়ির মালিককে কয়েকবার বলেও ঠিক করানো যায়নি৷ এভাবেই জানান তিন দশক আগে তুরস্ক থেকে জার্মানিতে আসা আহমেদ খালিফি৷
ছবি: DW/C. Ruta
বাড়ির অবস্থা অস্বাস্থ্যকর
আহমেদ খালিফির ছেলে আদেলের বাড়িতেও প্রায় একই সমস্যা৷ বাড়িটি ৪০ বছরের পুরনো হওয়ায় খুবই স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার এবং অস্বাস্থ্যকর৷ এ ব্যাপারে অবশ্য বাড়িওয়ালার মাথা ব্যথা নেই, কয়েকবার বলেও কোনো কাজ হয়নি৷
ছবি: DW/C. Ruta
অবশেষে নিজেই দায়িত্ব নেন
আবদাল ১৫ বছর এ বাড়িতে আছেন, কিন্তু একবারও রঙ করা হয়নি৷ আর সেকথা বাড়ির মালিককে কয়েকবার বলায় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, প্রয়োজনে তিনি যেন নিজেই এ কাজ করে নেন৷ তাই আবদাল এ কাজ ভালো না জানা সত্ত্বেও নিজেই করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
শীতের কথা ভেবে ভীত
একটি মাত্র ঘর আর সেখানেই বাচ্চাদের নিয়ে থাকেন আলিয়া৷ ঘরে যেসব জিনিসের জায়গা হয় না, সেসব জিনিস স্থান পেয়েছে বাড়ির বারান্দায়৷ কিন্তু শীতের সময় এসব প্রয়োজনীয় জিনিসের কি হবে – তা ভেবে অস্থির আলিয়া৷ এই অবস্থা অবশ্য শুধু আলিয়ার একার নয়৷
ছবি: DW/C. Stefanescu
অভিবাসীদের বেশি সন্তান
অভিবাসীদের বাড়ির বড় সমস্যা৷ তার কারণ, তাঁরা বড় শহরগুলোর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করতে পছন্দ করেন৷ তাছাড়া জার্মানদের তুলনায় অভিবাসীরা কম রোজগার করেন এবং তাঁদের সন্তান সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাড়ি পেতেও অসুবিধা হয়৷ এছাড়া একই ধরণের বাড়ির জন্য জার্মানদের তুলনায় তাঁদের কাছে বেশি ভাড়াও চাওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
বাড়ির অবস্থা করুণ
অভিবাসীদের বাসস্থান সমস্যা অবশ্য নতুন সমস্যা নয়৷ অভিবাসীরা যেসব এলাকায় থাকেন সেই পুরনো বাড়িগুলোকে ঠিকঠাক না করানোয়, দিনদিন সেগুলি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে৷ এই অবস্থা নিদিষ্ট কোনো শহরে নয়, প্রায় শহরেই এই একই অবস্থা৷
ছবি: Fars
আগুনে পরিবারের আট জনের মৃত্যু
প্রায় চার মাস আগে বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গের বাকনাং শহরে একটি বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইন ছিল বিপজ্জনক এবং একথা বারবার মালিককে বলার পরও তা ঠিক করা হয়নি৷ যার ফল হয় মর্মান্তিক৷ ঘর গরম বা পানি গরমের জন্য ব্যবহার করা হতো কাঠের চুল্লি৷ ঐ বাড়িতেই আগুন লেগে একজন তুর্কি মা তাঁর সাত সন্তানসহ মারা যান৷ ছবিতে বাকনাং শহরের কিশোর-কিশোরীরা মৃত পরিবারের প্রতি ফুল আর মোমবাতি দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাড়ি মালিকদের মত
বাড়িওয়ালাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, তুর্কি পরিবারগুলো অনেক বড়, সবসময় হৈচৈ লেগে থাকে এবং তেমন পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন নয়৷ আর সেজন্যই তাঁদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে কিছুটা আপত্তি থাকে বাড়িওয়ালাদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তরুণদের ভিন্নমত
বয়স্ক অভিবাসীরা বাসস্থানের ব্যাপারে যতটা বৈষম্যের শিকার হন বলে মনে করেন, এই প্রজন্মের তুর্কিরা তেমনটা মনে করে না৷ সম্ভবত এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা জার্মান ভাষা ভালো জানার কারণেই এমনটা ঘটছে৷
ছবি: Suzheh.sub.ir
10 ছবি1 | 10
দ্বৈত নাগরিকত্ব
অপরদিকে এই ‘‘অপশান মডেল'' বাস্তবিক দ্বৈত নাগরিকত্বের বিকল্প হতে পারে না৷ বলতে কি, আইনের নানা ফাঁকফোকর দিয়ে জার্মানিতে ইতিমধ্যেই দ্বৈত নাগরিকত্ব ঢুকে পড়েছে: যেমন মরোক্কান, ইরানি, আলজিরীয়, সিরীয় এবং ল্যাটিন অ্যামেরিকা থেকে আসা অধিকাংশ বহিরাগতদের ক্ষেত্রে ‘‘অপশান মডেল''-টি চলে না, কেননা তাদের সাবেক দেশগুলি ‘‘এক্সপ্যাট্রিয়েশন'' বা নাগরিকত্ব বাতিল মেনে নেয় না৷ ফলে জার্মান-সিরীয় বা জার্মান-আলজিরীয় নাগরিকত্বের মানুষরা জার্মানিতে দু'ধরনের পাসপোর্ট রাখতে পারে৷
তবে দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রশ্নটি যে বহিরাগত গোষ্ঠীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাঁরা হলেন জার্মানিতে বসবাসকারী তুর্কিরা, যাঁদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ৷ এঁদের মধ্যে প্রায় দশ লক্ষের জন্ম আবার এই জার্মানিতেই৷ জার্মানির তুর্কি সম্প্রদায় নামধারী সমিতির ফেডারাল সভাপতি কেনান কোলাৎ ‘‘অপশান মডেলের'' অবসান দাবি করেছেন৷ তিনি চান, জার্মান নাগরিকত্ব আহরণের সহজ এবং সরলতর প্রক্রিয়া৷ এছাড়া দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখার সুবিধাও তাঁর কাম্য৷ কোলাতের বক্তব্য: ‘‘যুগপৎ দু'জন প্রভুর সেবা করা যে সম্ভব নয়, এই আদর্শগত বিতর্কের অবসান ঘটা প্রয়োজন৷'' দ্বৈত নাগরিকত্বের অর্থ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ‘‘সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দেওয়া''৷
কার কোথায় অবস্থান
সংসদীয় নির্বাচনের পর জোট সরকার গঠন নিয়ে যে আলাপ-আলোচনা চলেছে, তা-তেও দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রশ্নটি মাথা চাড়া দিয়েছে৷ এসপিডি দল ‘‘অপশান মডেল'' তুলে দিতে চায় এবং নীতিগতভাবে দ্বৈত নাগরিকত্ব চালু করতে চায়৷ অপরদিকে খ্রিষ্টীয় সামাজিক সিএসইউ দল তার বিরোধী: জার্মানির সিএসইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স-পেটার ফ্রিডরিশ যেমন বলেছেন, ‘‘টক বিয়ারের মতো করে জার্মান নাগরিকত্ব অফার করার কোনো প্রয়োজন নেই''৷
অপরদিকে ফ্রিডরিশ অপশান মডেলের সময়সীমা ২৩ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করতে রাজি৷ এছাড়া ফ্রিডরিশের সিএসইউ দলের নেতা হর্স্ট জেহোফার স্বয়ং একটি ‘‘সুপ্ত নাগরিকত্ব'' মডেলের প্রস্তাব দিয়েছেন, যার জন্য একক দেশগুলির সম্মতির প্রয়োজন পড়বে৷ তা সত্ত্বেও জেহোফারের এই প্রস্তাবকে দ্বৈত নাগরিকত্ব মেনে নেওয়া পথে সিডিইউ-সিএসইউ দলের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে৷