ক্ষমতায় ফিরে এসেই ব্রেক্সিটের প্রস্তুতি শুরু করলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ জানিয়ে দিলেন জানুয়ারির মধ্যে ব্রেক্সিট সম্পূর্ণ হবে৷ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্যিক চুক্তির সময়সীমাও বেঁধে দিলেন৷
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনী প্রচারেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, ব্রিটিশ সংসদে বরিস জনসনের নেতৃত্বে কনজারভেটিভ দল যদি ক্ষমতায় ফেরে, ব্রেক্সিট আসন্ন৷ বিপুল আসনে জিতেছেন বরিস৷ সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়েই তিনি স্পষ্ট করে দিলেন জানুয়ারির মধ্যেই ব্রেক্সিটের যাবতীয় ব্যবস্থা করে ফেলবে তাঁর সরকার৷
মঙ্গলবার সংসদের অধিবশনে বরিসজানিয়েছেন, ''ব্রেক্সিটের আগে ইউরোপের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে চুক্তিগুলি হয়ে আছে তা দ্রুত বাতিল করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷'' তিনি জানিয়েছেন, ''বাণিজ্যিক চুক্তিগুলির ক্ষেত্রে ১১ মাস সময় দেওয়া হচ্ছে৷'' অর্থাৎ, ২০২০ সালের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বাণিজ্যিক চুক্তিগুলি বাতিল হয়ে যাবে৷ যা নিয়ে যুক্তরাজ্যের ভিতরে এবং বাইরে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ অনেকেরই বক্তব্য, এ ধরনের চুক্তি শেষ করার জন্য ১১ মাস অত্যন্ত কম সময়৷
কনজারভেটিভ দলের যুক্তি হল, ব্রেক্সিট নিয়ে দেশের মানুষকে বহু দিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল৷ আর সময় নষ্ট করবে না সরকার৷ ফলে দ্রুত ব্রেক্সিটের ব্যবস্থা করা হবে৷ সে জন্যই বিভিন্ন চুক্তির ক্ষেত্রেও এ ধরনের জরুরি পদক্ষেপ করা হচ্ছে৷ তবে ব্রেক্সিটের পরে ফের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নতুন নতুন চুক্তি হবে বলেই মনে করছে তারা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশেষজ্ঞদেরও বক্তব্য, ব্রেক্সিট হলেও ইউরোপের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছেদ করবে না যুক্তরাজ্য৷ ভারসাম্য বজায় রেখেই নতুন নতুন চুক্তি হবে৷
গত সপ্তাহেই নির্বাচন হয়েছে যুক্তরাজ্যে৷ বরিস জনসনের নেতৃত্বে কনজারভেটিভ দল প্রচারে ব্রেক্সিটের পক্ষে সওয়াল করেছিল৷ অন্য দিকে, জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লেবার দল বলেছিল, তারা ক্ষমতায় এলে ব্রেক্সিট নিয়ে নতুন করে গণভোট হবে৷ যুক্তরাজ্যের মানুষ বরিসকে ফিরিয়ে এনে প্রমাণ করে দিয়েছেন, তাঁরা ব্রেক্সিটের পক্ষে৷
মীমাংসা ছাড়াই ব্রেক্সিট হতে চলেছে?
২০১৯ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করছে৷ অথচ তার আগে দুই পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার আশা কমেই চলেছে৷ শেষ পর্যন্ত কোনো রফা ছাড়াই এই বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হবে – এমন আশঙ্কা আরও দানা বাঁধছে৷
ছবি: Getty Images/L Neal
আগে বিচ্ছেদ, তারপর ভবিষ্যৎ সম্পর্ক
ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুরু থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, যে সবার আগে ‘ব্রেক্সিট’ বা বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়গুলির ক্ষেত্রে দুই পক্ষকে বোঝাপড়ায় আসতে হবে৷ যথেষ্ট অগ্রগতি হলে তবেই ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে৷ কিন্তু ব্রিটেন দু’টি বিষয় নিয়ে একসঙ্গে দর কষাকষি করতে আগ্রহী, যা ইইউ-র কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷
ছবি: Reuters/File Photo/Y. Herman
একই আলোচনা, ভিন্ন মূল্যায়ন
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে তৃতীয় দফার আলোচনার শেষে ইইউ-র শীর্ষ প্রতিনিধি মিশেল বার্নিয়ে বলেন, বিচ্ছেদ সংক্রান্ত আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেনি৷ ফলে আপাতত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে না৷ অন্যদিকে ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্ট অগ্রগতির উল্লেখ করেন৷
তৃতীয় দফার আলোচনার আগে ভবিষ্যৎ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে ব্রিটেন যে অবস্থান প্রকাশ করেছে, তাকে ‘অসম্ভব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইইউ-র মিশেল বার্নিয়ে৷ বিচ্ছেদের পরেও একক বাজারে প্রভাব, ইউরোপীয় আদালতের এক্তিয়ার নিয়ে ‘অবাস্তব’ প্রস্তাব নিয়ে বিরক্ত ইইউ প্রতিনিধিরা৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
আয়ারল্যান্ডে ইইউ-র বহির্সীমানা
ব্রেক্সিটের পর আইরিশ প্রজাতন্ত্র ও ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত ইইউ-র বহির্সীমানা হয়ে উঠবে৷ তার ফলে দুই অংশের মধ্যে নিবিড় অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য যা বড় এক হুমকি৷ দুই পক্ষই একটা সমাধানসূত্র চাইলেও এখনো এই প্রশ্নে যথেষ্ট অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Faith
নাগরিকদের অধিকার
ব্রিটেনে বসবাসরত ইইউ নাগরিকরা ব্রেক্সিটের কারণে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন৷ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁদের সুবিচারের আশ্বাস দিলেও তাঁদের অধিকারের প্রশ্নে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না৷ ইইউ দেশগুলিতে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে৷ জটিল এই প্রশ্নের স্থায়ী সমাধানসূত্র চাইছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’?
ব্রাসেলসে আলোচনায় অগ্রগতির অভাবে ব্রিটেন সরাসরি ফ্রান্স ও জার্মানির মতো ইইউ সদস্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে ব্রিটেনের ‘দ্য ডেলি টেলিগ্রাফ সংবাদপত্রের ইঙ্গিত পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ তাঁর স্পষ্ট অবস্থান: ইইউ-র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আলোচনার একমাত্র সহযোগী৷