ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবের পরেই মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে অ্যামেরিকার ঘটনার তুলনা শুরু হয়েছে। এটা ঠিক নয়। লিখছেন আয়া ইব্রাহিম।
বিজ্ঞাপন
ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটলে তাণ্ডব চালাবার পরের সকাল। সারা বিশ্বের মানুষের সামনে তখন ক্যাপিটলের ঘটনার ছবি এসে গেছে। কিছু মার্কিন পর্যবেক্ষক এই ঘটনার তুলনা টানছেন তৃতীয় বিশ্বের দেশের সঙ্গে। এবিসি টিভির রিপোর্টারের মনে হয়েছে, তিনি যেন বাগদাদে আছেন। সিএনএনের এক বক্তার মতে, ''মনে হচ্ছে, অ্যামেরিকা এখন সিরিয়ার পথে চলেছে।''
এই ধরনের তুলনা করার লোভ সামলানো কঠিন, তা আমি বুঝি। আমরা সরকারি ভবন অবরোধ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জরুরি অবস্থা ঘোষণার ঘটনা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু অ্যামেরিকায় যা হচ্ছে, তা আরব দুনিয়ার গত এক দশক ধরে যে সব ঘটনা ঘটছে, তার অ্যান্টিথিসিস বলতে পারি। বলতে পারি, এই ধরনের তুলনা মানে আরব বিশ্বকে অপমান করা।
ছবিতে ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষোভ
বুধবার ট্রাম্প সমর্থকরা নজিরবিহীন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ক্যাপিটল ভবনে। পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। ছবিতে ঘটনার কিছু মুহূর্ত।
ছবি: Spencer Platt/Getty Images
ক্যাপিটলের দিকে মার্চ
ক্যাপিটল ভবনের দিকে মার্চ করছেন বিক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থকরা। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করছে।
ছবি: Roberto Schmidt/AFP/Getty Images
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
বুধবার ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল ভবনে বিক্ষোভ দেখান ট্রাম্প সমর্থকরা। পার্লামেন্টের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ট্রাম্প সমর্থনকারীরা। পুলিশ ব্যারিকেড লাগিয়ে তাঁদের থামানোর চেষ্টা করছে।
ছবি: Stephanie Keith/REUTERS
ক্যাপিটলে ঢুকছেন বিক্ষোভকারীরা
জোর করে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ছেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ কোনোভাবেই তাঁদের আটকাতে পারেনি। ভিতরে তখন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলছে।
ছবি: Win McNamee/Getty Images
বন্দুকের মুখে
বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটলের ভিতরে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। তাদের আটকাতে পুলিশ বন্দুক বের করতে বাধ্য হয়।
ছবি: J. Scott Applewhite/AP Photo/picture alliance
সেনেটের হলঘরে ধুন্ধুমার
বিক্ষোভকারীরা পৌঁছে যায় সেনেটের হলঘরে। অধিবেশন কক্ষের দরজা আটকে তখন নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন সেনেটররা। পুলিশ হলঘর থেকে বিক্ষোভকারীদের বের করার চেষ্টা করছে।
ছবি: Manuel Balce Ceneta/AP Photo/picture alliance
সেনেট দখলের চেষ্টা
পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে এই বিক্ষোভকারী ঢুকে পড়েছে সেনেটের হলঘরে। 'ফ্রিডম' বলে চিৎকার করতে করতে তিনি অধিবেশন কক্ষে ঢোকার চেষ্টা করেন।
বিক্ষোভকারীরা এভাবেই পৌঁছে যান ক্যাপিটল ভবনের রোটান্ডায়। স্পিকারের বক্তৃতা করার পোডিয়াম পর্যন্ত তাঁরা তুলে ফেলেন।
ছবি: Win McNamee/Getty Images
কাঁদানে গ্যাস
শেষপর্যন্ত সেনেট হলেই কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। তাতেও বিক্ষোভকারীদের বাইরে পাঠানো যায়নি।
ছবি: Andrew Caballero-Reynolds/AFP/Getty Images
ক্যাপিটলের বাইরের ছবি
সন্ধে থেকে এমনই ছিল ক্যাপিটলের পরিস্থিতি। উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ওয়াশিংটনে। কারফিউ ঘোষণা করা হয়।
ছবি: Leah Millis/REUTERS
পুলিশের ঢাল
শেষ পর্যন্ত রায়ট পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীদের বের করা সম্ভব হয়। ততক্ষণে গুলিও চালিয়েছে পুলিশ। মৃত্যু হয়েছে এ বিক্ষোভকারীর।
ছবি: Spencer Platt/Getty Images
13 ছবি1 | 13
স্বাধীনতা রক্ষা এবং ভোট দেয়ার অধিকার
২০১১ সালে মিশরের মানুষ যখন পথে নেমেছিলেন, তখন তাঁরা কয়েকটি সরকারি ভবনে ঢুকে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা আইনসঙ্গত নির্বাচনের ফল বদলাবার জন্য এই কাজ করেননি। বরং তাঁরা ওই কাজ করেছিলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও ভোট দেয়ার অধিকারের দাবিতে। তাঁরা নির্বাচনে জিতে আসা প্রেসিডেন্টকে সরাতে সহিংস হননি। তাঁরা হোসনি মুবারকের মতো স্বেচ্ছাচারীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় ছিলেন।
ইরাকের ক্ষেত্রেও একই কথা সত্য। গত এক বছর ধরে তরুণরা নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে রাস্তায় নেমেছে। ২০০৩ সালের মার্কিন আগ্রাসণের পর থেকে যে সহিংসতা চলছে, তার প্রতিবাদে। সিরিয়ার সঙ্গে তুলনাও একেবারেই অন্যায্য। মানবাধিকার কর্মী ওমর অ্যালসগ্রে দেখিয়েছেন, তাঁর দেশের মানুষ যখন প্রতিবাদ করতে শুরু করেন, তখন তা স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়। ডিডাব্লিউর হয়ে রিপোর্ট করার সময় আমিও সুদান ও লেবাননে আমার প্রজন্মের অনেক প্রতিবাদকারীকে দেখেছি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু ট্রাম্প সমর্থকরা গত কয়েকদিন ধরে যা বলছেন, তার সঙ্গে ওই প্রতিবাদকারীদের কথা মেলে না।
অ্যামেরিকা নিজের দিকে তাকাক
এই ধরনের তুলনা দেখে মনে হয়, সহিংসতা যেন মধ্যপ্রাচ্যেরই ঘটনা। সেখানে শুধুই গোলমাল হয়, মানুষ গোলমাল করে। কিন্তু বাস্তব হলো, অস্থিরতা এখন অ্যামেরিকার অঙ্গ এবং তা দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এই দেশে এখনো প্রবল বর্ণবাদ আছে, অতিমারি আছে, অসাম্য ও ভোটদাতাদের দমন আছে। এই দেশে গত চার বছর ধরে সর্বোচ্চ স্তর থেকে ঘৃণাপূর্ণ কথা বলা হয়েছে। তাই মধ্য প্রাচ্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না। করলে তা অন্যায় হবে।