আগামী দশকের মধ্যে ট্রিলিয়নেয়ারের দেখা মিলবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে অক্সফাম, কারণ, সবচেয়ে ধনী এক শতাংশের কাছে বিশ্বের ৪৫ শতাংশ সম্পদ রয়েছে৷ অন্যদিকে, ৪৪ শতাংশ মানুষের জনপ্রতি দৈনিক গড় আয় সাত ডলারের মতো৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের ধনকুবেরদের সম্পদ অতীতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত বাড়ায় বর্তমান বিশ্বে বৈষম্য আরো বিস্তৃত হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে উন্নয়ন সংস্থা অক্সফাম৷
ডাভোসে বিশ্ব অর্থনীতি ফোরাম (ডাব্লিউইইএফ)-এর প্রাক্কালে প্রকাশিত ‘টেকার্স নট মেকার্স' শীর্ষক প্রতিবেদনে অক্সফাম জানিয়েছে, গত বছর ধনকুবেরদের সম্পদ দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো বেড়েছে৷ আগের বছরের তুলনায় এই বৃদ্ধি তিনগুণ বেশি৷
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘‘যেখানে এক শতাংশ ধনীর কাছে বিশ্বের ৪৫% সম্পদ রয়েছে, সেখানে ৪৪ শতাংশ মানুষের জনপ্রতি দৈনিক গড় আয় সাত মার্কিন ডলারের কম এবং ১৯৯০ সালের পর থেকে এখন অবধি দারিদ্র্যের হারে খুব সামান্যই পরিবর্তন এসেছে৷''
অক্সফামের নির্বাহী পরিচালক অমিতাভ বিহার বলেন, ‘‘আমরা এক সতর্কবার্তা হিসেবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করছি যে, অল্প কিছু মানুষের বিপুল সম্পদের চাপে নিষ্পেষিত হচ্ছেন পৃথিবীর সাধারণ মানুষ৷''
গত দশবছর ধরে পৃথিবীর শীর্ষ দশ বিলিয়নেয়ারের সম্পদ প্রতিদিন গড়ে একশ মিলিয়ন করে বাড়ায় আগামী এক দশকের মধ্যে বিশ্ব ট্রিলিয়নেয়ারের দেখা পাবে বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে৷
গতবছর নতুন ২০৪ জন বিলিয়নেয়ারের দেখা পেয়েছে বিশ্ব৷ সবমিলিয়ে বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ বেড়েছে দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
অমিতাভ বিহার সতর্ক করে জানিয়েছেন যে, এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বিলিয়নেয়াররা এখন অর্থনৈতিক নীতি, সামাজিক নীতি গড়তে পারছেন, যা তাদের মুনাফা আরো বাড়াচ্ছে৷
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশ্বে প্রতি দশজন নারীর মধ্যে একজন চরম দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছেন৷ তাদের জনপ্রতি দৈনিক গড় আয় সোয়া দুই মার্কিন ডলারেরও কম৷ নারীরা প্রতিদিন সব মিলিয়ে ১২.৫ বিলিয়ন ঘন্টা বিনামূল্যে কাজ করছেন৷
ট্রাম্পেরনীতিঅসমতাবাড়াতেপারে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে অক্সফামের প্রতিবেদনে৷ তার কর কমানোর এবং নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ নীতির সমালোচনা করে বলা হয়েছে, এর ফলে অসমতা বাড়তে পারে এবং ইলন মাস্কসহ বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ আরো বাড়তে পারে৷ ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার প্রচারণায় বড় সমর্থন জুগিয়েছিলেন ইলন মাস্ক৷
অক্সফামের নির্বাহী পরিচালক অমিতাভ বিহার বলেন, ‘‘বর্তমান অভিজাততন্ত্রের মুকুট হচ্ছেন একজন বিলিয়নেয়ার প্রেসিডেন্ট, যাকে সমর্থন দিয়েছেন এবং তুলে এনেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনী ইলন মাস্ক, যিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি চালাচ্ছেন৷''
ডাভোস সম্মেলনের প্রাক্কালে প্রতিবাদকারীদের হাতে দেখা গেছে ‘ধনীদের ওপর কর আরোপ করো', ‘সিস্টেম জ্বালিয়ে দাও' সহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড৷ চলতি বছরের সম্মেলনে অর্থনৈতিক কৌশল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বৈশ্বিক সংঘাতের মতো বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে৷
সম্মেলনে অংশ নেয়া তিন হাজার ব্যক্তির মধ্যে বিশ্ব নেতারা এবং ব্যবসায়ীরা রয়েছেন৷
ফোর্বসের বিলিয়নেয়ার তালিকায় বাংলাদেশের আজিজ খান
২০২৪ সালের বার্ষিক বিলিয়নেয়ারের তালিকা প্রকাশ করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন। শীর্ষ ১০-এ কিছুটা রদবদল হলেও ঘুরেফিরে একই ব্যক্তিদের নামই এসেছে। তবে এই তালিকায় কিছু চমকও রয়েছে।
ছবি: Kelvin Chng/Sphol/AP/picture alliance
বাংলাদেশের বিলিয়নেয়ার
সম্পদের হিসাবে বিশ্বের তালিকায় অনেক পেছনে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান। কিন্তু বিলিয়নেয়ারের তালিকায় স্থান পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশি তিনি। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১১০ কোটি মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। জ্বালানি, বন্দর, ফাইবার অপটিকস এবং রিয়েল এস্টেটের নানা ব্যবসা করে সামিট গ্রুপ। আজিজ খান বাস করেন সিঙ্গাপুরে। সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় আছে তার নাম।
ছবি: Kelvin Chng/Sphol/AP/picture alliance
বিলিয়নেয়ার হলেন টেইলর সুইফট
মার্কিন সংগীতশিল্পি টেইলর সুইফট প্রথমবারের মতো বিলিয়নেয়ারের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। এক ট্যুরেই তিনি মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাস ভেঙে কামিয়েছেন প্রায় একশ কোটি ডলার। পোলস্টারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে চলা এরাস ট্যুরের প্রথম ৬০টি শো থেকেই আয় হয়েছে ১০৪ কোটি ডলার। এই ট্যুরের ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকা মহাদেশের শো এখনও বাকি আছে।
ছবি: Danish Ravi/Zuma Press/dpa/picture alliance
ল্যারি পেইজ
গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্কিন ব্যবসায়ী ল্যারি পেইজ আছেন শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ১০ নাম্বারে। প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক কর্মকাণ্ড থেকে ল্যারি ও আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিনকে চার বছর আগে সরিয়ে দেয়া হলেও তারা এখনও প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার। তার সম্পদের পরিমাণ ১১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। ১১ হাজার কোটি ডলার সম্পদ নিয়ে তার ঠিক পেছনেই তালিকার ১১ নাম্বারে রয়েছেন সের্গেই ব্রিন।
ছবি: picture alliance/dpa/A.Lohr-Jones
মুকেশ আম্বানি
এশিয়ার প্রথম ব্যবসায়ী হিসাবে ১০ হাজার কোটি ডলারের ক্লাবে নাম লেখালেন ভারতের মুকেশ আম্বানি। রিলায়েন্স গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আওতায় নানা ধরনের ব্যবসা থেকে এই অর্থ উপার্জিত হয়েছে। তার সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১১ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার। মার্চে নিজের ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির বিয়ে পূর্ববর্তী আয়োজনে মার্ক সাকারবার্গ, বিল গেটসসহ বিশ্বের অনেক শীর্ষ ধনীই উপস্থিত হয়েছিলেন।
ছবি: PUNIT PARANJPE/AFP/Getty Images
স্টিভ বালমার
মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী সুইস-মার্কিন ব্যবসায়ী স্টিভ বালমার রয়েছেন তালিকার অষ্টম স্থানে। এক বছরেই তার সম্পদের পরিমাণ চার হাজার কোটি ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১০০ কোটি ডলারে। এনবিইএ-র দল লস এঞ্জেলেস ক্লিপার্সের মালিক বালমার।
ছবি: Sean M. Haffey/Getty Images
বিল গেটস
১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরের মধ্যে ১৮ বছরই বিশ্বের শীর্ষ ধনী ছিলেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। ১৯৯২ সালের পর এবারের সপ্তম স্থানই তার তালিকায় সর্বনিম্ন স্থান। ২০২১ সালে স্ত্রী মেলিন্ডা গেটসের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তার সম্পদের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। এরপর তিনি নানা দাতব্য কাজে দান করেছেন প্রায় ছয় হাজার কোটি ডলার। এখন তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।
ছবি: Bennett Raglin/Getty Images/The New York Times
ওয়ারেন বাফেট
তালিকার ছয় নাম্বারে রয়েছেন মার্কিন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট। তার সম্পদের মূল উৎস বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে। ফোর্বস জানিয়েছে, বাফেটের মোট সম্পদের পরিমাণ এখন ১৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।
ছবি: Rick Wilking/REUTERS
ল্যারি এলিসন
সফটওয়্যার কোম্পানি ওরাকলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক প্রধান নির্বাহী ল্যারি এলিসন রয়েছেন তালিকার পাঁচ নাম্বারে। এখনও তিনি ওরাকলের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রতিষ্ঠানটির ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক। তার সম্পদের পরিমাণ ১৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার।
ছবি: AP
মার্ক সাকারবার্গ
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা এর প্রধান নির্বাহী মার্ক সাকারবার্গ আছেন চার নাম্বারে। গত বছর মেটার শেয়ারের দাম প্রায় তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় সাকারবার্গের সম্পদের পরিমাণও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। এখন তার সম্পদের পরিমাণ ১৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
ছবি: JOSH EDELSON/AFP/Getty Images
জেফ বেজোস
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা গত এক বছরে সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়েছেন আট হাজার কোটি ডলার। সিয়াটল থেকে অ্যামেরিকার তুলনামূলক কর-বান্ধব রাজ্য টেক্সাসে একটি দ্বীপ কিনে সেখানে বাস করছেন তিনি। এখন তার সম্পদের পরিমাণ ১৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
ছবি: picture alliance/zz/Dennis Van Tine/STAR MAX/IPx
ইলন মাস্ক
২০২১ সালের নভেম্বরে ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসাবে ৩০ হাজার কোটি ডলারের মালিক ছিলেন। কিন্তু এরপর তার সম্পদের পরিমাণ নানা কারণেই কমতে থাকে। তারপরও তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন তিনি। টেসলা এবং স্পেস এক্সের প্রতিষ্ঠাতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) এর মালিক মাস্কের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
ছবি: Gonzalo Fuentes/REUTERS
বার্নার্ড আর্নল্ট
টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের শীর্ষ ধনী ফরাসি ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারী বার্নার্ড আর্নল্ট। তার গ্রুপ এলভিএমএইচ এর অধীনে রয়েছে লুই ভুটন, ডিওর এবং সেফোরার মতো বিলাসী পণ্য প্রস্তুতকারক নানা ব্র্যান্ড। আর্নল্টের সম্পদের পরিমাণ ২৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।