জাপানে ক্রমেই আরো বেশি কমবয়সের ছেলেমেয়ে দারিদ্র্য সীমার নীচে নেমে যাচ্ছে৷ সরকারের এ বিষয়ে আরো সক্রিয় হওয়া উচিত, বলছেন এনজিও আর স্বেচ্ছাসেবীরা৷
বিজ্ঞাপন
মনে রাখতে হবে, জাপান বিশ্বের সবচেয়ে ধনি দেশগুলির মধ্যে পড়ে, এছাড়া জাপানি সমাজ সকলের দেখাশুনা করে বলে নাম আছে৷ জাপানের প্রসঙ্গ উঠলে দারিদ্র্য কথাটা না এসে পড়ারই কথা৷
কিন্তু ইউনিসেফ গত এপ্রিল মাসে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যে রিপোর্টে জাপানে শিশু দারিদ্র্যের এক নির্মম ছবি আঁকা হয়েছে৷ বিযয়টিকে তুলনামূলকভাবে দেখেছে ইউনিসেফ: দৃশ্যত জাপানের দরিদ্রতম পরিবারগুলির ছেলেমেয়েরা অধিকাংশ শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় বেশি অসুবিধা ভোগ করে অথবা কম সুযোগসুবিধা পায়৷
ইউনিসেফ-এর রিপোর্টে প্রধানত কম আয়ের ও মাঝারি আয়ের পরিবারবর্গের ছেলেমেয়েদের ব্যবধান বিশ্লেষণ করা হয়েছে৷ দেখা গেছে, অসাম্যের বিচারে জরিপের ৪১টি দেশের মধ্যে জাপানের স্থান অষ্টম৷ আপেক্ষিক দারিদ্র্যের হার বা যারা গড় আয়ের অর্ধেকের কম আয়ে জীবনধারণ করে, তাদের হিসেব নিলে জাপানে প্রতি ছ'টি শিশুর মধ্যে একটি শিশু দরিদ্র৷
এশিয়ার কোটিপতিরা কোন দেশের?
এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে জাপানেই কোটিপতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, বলছে একটি নতুন রিপোর্ট৷
ছবি: PHILIPPE LOPEZ/AFP/Getty Images
জাপান
নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েল্থ-এর নতুন রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার মধ্যে জাপানেই কোটিপতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি – প্রায় ১৩ লাখ৷ দেশটিতে একক ব্যক্তিদের মোট ধনসম্পত্তির পরিমাণ ১৫ দশমিক ২৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যা কিনা এ অঞ্চলে দ্বিতীয়৷ অপরদিকে জাপানে বিত্ত ও ধনসম্পদ অন্য অনেক দেশের চেয়ে সুষমভাবে বণ্টিত: এ দেশে মিলিওনেয়ার অনেক, কিন্তু মাল্টি-মিলিওনেয়ার ও বিলিওনেয়ারদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Nogi
চীন
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পাওয়া যাবে ৬ লাখ ৫৪ হাজার মিলিওনেয়ার – অর্থাৎ মিলিওনেয়ারের হিসেবে জাপানের পরেই চীনের স্থান৷ একক ব্যক্তিদের সম্পদের ক্ষেত্রে চীন সর্বপ্রথম: ১৭ দশমিক ২৫ ট্রিলিয়ন ডলার৷ অথচ চীনে মাথাপিছু সম্পদ হলো মাত্র ১২ হাজার ৮০০ ডলার, যা কিনা এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির মধ্যে সপ্তম৷
ছবি: imago/CTK Photo
অস্ট্রেলিয়া
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে মিলিওনেয়ারদের সংখ্যার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া হলো তৃতীয়: এখানে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার মিলিওনেয়ারের বাস৷ তবে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের মাথাপিছু সম্পদ হলো ২০৪,৪০০ ডলার, যা কিনা অঞ্চলের অন্য সব ধনি দেশের থেকে বেশি৷ রিপোর্ট বলছে, অস্ট্রেলিয়ায় জমিজমার দাম এর একটা কারণ হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/empics
ভারত
ভারতে মিলিওনেয়ারদের সংখ্যা ২ লাখ ৩৬ হাজার হওয়া সত্ত্বেও মাথাপিছু সম্পদের ক্ষেত্রে ভারতকে তালিকার নীচের দিকে পাওয়া যাবে৷ একমাত্র ভিয়েতনাম আর পাকিস্তানে মাথাপিছু সম্পদ ভারতের চেয়ে কম৷
ছবি: picture alliance/Robert Harding World Imagery
সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যা মাত্র ৫০ লাখ, কিন্তু মিলিওনেয়ারের সংখ্যা ২ লাখ ২৪ হাজার, অর্থাৎ ভারতের চেয়ে মাত্র ১২ হাজার কম৷ কাজেই মাথাপিছু সম্পদের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর যে অস্ট্রেলিয়ার পরেই দ্বিতীয়, তা-তে আশ্চর্য হবার কিছু নেই৷ সিঙ্গাপুরের মাথাপিছু সম্পদ হল ১,৫৮,৩০০ ডলার৷
ছবি: Fotolia/asab974
হংকং (চীনের বিশেষ প্রশাসন এলাকা)
এশিয়ার আর্থিক কেন্দ্রবিন্দু হংকংয়ে ২ লাখ ১৫ হাজার মিলিওনেয়ারের বাস, কিন্তু এখানে মাল্টি-মিলিওনেয়ারদের সংখ্যা ৯,৫৬০, যা কিনা চীন, জাপান ও ভারতের ঠিক পরেই৷ ২০১৫ সালে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বিলাসী পণ্যের বাজার এই হংকংয়েই ছিল সবচেয়ে বড়৷ এইটুকু একটা শহরে বছরে প্রায় দু’হাজার কোটি ডলারের পণ্য বিক্রয় সত্যিই চমকে দেবার মতো৷
ছবি: A.Ogle/AFP/Getty Images
দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ায় মিলিওনেয়ারদের সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজার, যা কিনা সিঙ্গাপুর বা হংকং-এর চেয়ে কম৷ আগামী দশ বছরে এই সংখ্যা ৫৫ শতাংশ বাড়বে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েল্থ-এর রিপোর্ট৷
ছবি: Fotolia/Chee-Onn Leong
তাইওয়ান
দ্বীপটিতে ৯৮,২০০ মিলিওনেয়ারের বাস৷ ২০০০ সাল যাবৎ এই সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৭৫ শতাংশ, যা কিনা অঞ্চলের অন্যান্য উত্থানশীল দেশের তুলনায় কিছুই নয়৷ এমনকি গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা দশ শতাংশ কমেছে! গত বছর তাইওয়ানে মিলিওনেয়ারদের সংখ্যা ছিল ১০৯,১০০৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডের জনসংখ্যা ৪৫ লাখ, কিন্তু মিলিওনেয়ারের সংখ্যা ৮৯ হাজার৷ মাথাপিছু সম্পদের ক্ষেত্রেও নিউজিল্যান্ডের স্থান অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের পর তৃতীয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bradley
ইন্দোনেশিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র দেশ, যা এই ধনপতিদের তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ ২০১৫ সালের শেষে ইন্দোনেশিয়ায় মিলিওনেয়ারদের সংখ্যা ছিল ৪৮,৫০০, যা কিনা ২০০০ সালের তুলনায় পাঁচগুণ৷ ভারত কিংবা চীনেও মিলিওনেয়ারদের সংখ্যা এত দ্রুত হারে বাড়ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Gacad
10 ছবি1 | 10
ওকিনাওয়া প্রিফেকচারের মতো অর্থনৈতিক বিচারে পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলিতে প্রায় ৩০ শতাংশ শিশু দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে, বলে জানা গেছে৷ এই সংখ্যা জাতীয় গড়ের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি৷ গত ২৫ বছর ধরে জাপানে দারিদ্র্যের হার বাড়তে দেখছেন ইয়াসুশি আওতো, যিনি জাপানের শিশু দারিদ্র্য ও শিক্ষা সাহায্য সংগঠন সমিতির সভাপতি৷
দারিদ্র্য থেকেই আসে দারিদ্র্য
১৭ বছরের কম বয়সের ৩৫ লাখ শিশু জাপানে দারিদ্র্যে জীবনযাপন করছে, বলে আওতোর সংস্থার অনুমান৷ অবশ্য দারিদ্র্য বলতে জাপানে বোঝায় যে পরিবারের আয় মাসে ২,০০০ ইউরোর কম৷ তা সত্ত্বেও মাত্র দু'লাখ শিশুর জন্য ওয়েলফেয়ার নেন তাদের পরিবারর্গ – তার কারণ, জাপানি সমাজে বেকারত্ব বা সরকারি ভাতা নেওয়ার ব্যাপারে দ্বিধা আছে৷
ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনো করার খরচ বেড়েই চলেছে, কাজেই অস্বচ্ছল পরিবারবর্গের ছেলেমেয়েদের পক্ষে ইউনিভার্সিটিতে সিট পাওয়া প্রায় অসম্ভব৷ বাড়ির অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দরুণ হাজার হাজার ছেলেমেয়ে তাদের হাইস্কুলের পড়াশুনো শেষ করতে পারে না৷ কাজেই ভবিষ্যতেও এই শিশুদের দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পাবার সম্ভাবনা কম, বলে মনে করেন আওতো৷
শিক্ষার কথা আসে অনেক পরে, কেননা তোশিমা কোদোমো ওয়াকুওয়াকু নেটওয়ার্কের মতো দাতব্য সংগঠন দেখেছে যে, জাপানে বহু শিশু অনেক সময় সারাদিন কিছু না খেয়ে থাকে৷ তাই তাদের জন্য ‘‘ছোটদের কাফে''-র ব্যবস্থা করেছে এই সংগঠন৷ এভাবে সারা জাপানে ৩০০টি চিলড্রেন্স কাফেটেরিয়া গড়ে উঠেছে৷
জুলিয়ান রায়াল (টোকিও)/এসি
পৃথিবীর লজ্জা: শত কোটি গরিবের সমান ৬২ জন বড়লোক!
বিশ্বে ধনীর সংখ্যা কমছে, কিন্তু বাড়ছে দরিদ্র আর দারিদ্র্য৷ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফাম-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ৬২ ব্যাক্তির মোট সম্পদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার সবচেয়ে দরিদ্র ৫০ শতাংশ মানুষের সমান!
ছবি: Colourbox/M. Shmeljov
পৃথিবীর লজ্জা
বিশ্বের মোট জনসংখ্যা এখন ৭৩০ কোটির মতো৷ এই ৭৩০ কোটির মধ্যে মাত্র ৬২ জনের টাকার জোরের কাছে বলতে গেলে সবাই-ই নত৷ সোমবার ‘এক শতাংশের অর্থনীতি’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে অক্সফাম জানিয়েছে, এ মুহূর্তে সবচেয়ে ধনী ৬২ ব্যাক্তির মোট সম্পদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার সবচেয়ে দরিদ্র ৫০ শতাংশ মানুষের সমান!
ছবি: picture-alliance/AP Images/B. Curtis
নিরন্নের আর্তনাদ, ধনকুবেরের আস্ফালন
বিশ্বে কোটি মানুষ এখনো অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে৷ সিরিয়ায় তিনটি মাস প্রায় না খেয়ে থেকেছে কত নারী, শিশু! ঠিক এই সময়েই অক্সফাম প্রকাশ করেছে এই প্রতিবেদন৷
ছবি: Aktivisten aus Madaja
ধনী কমছে, ধনীর ধন বাড়ছে
পাঁচ বছর আগে বিশেষ মাপকাঠিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের তালিকায় যেখানে ছিল মোট ৩৮৮জন, একই মাপকাঠিতে সেই তালিকায় এখন স্থান পাচ্ছেন মাত্র ৬২ জন৷ এই হিসেব অনুযায়ী, ধনীর সংখ্যা যদিও কমছে, কিন্তু দরিদ্র মানুষ বা তাঁদের দারিদ্র্য কমছে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Jebreili
গরিব আরো গরিব
এ সপ্তাহেই দাভোসে বসছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ)-এর শীর্ষ সম্মেলন৷ গত বছর এই সম্মেলনের আগেই অক্সফাম জানিয়েছিল, বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে দরিদ্র ৫০ শতাংশ মানুষের মোট সম্পদের পরিমাণকে ছাড়িয়ে যাবে বিশ্বের এক শতাংশ ধনী৷ এবার অক্সফাম বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের সঙ্গে অন্যদের ব্যবধান এক বছরে অনেক বেড়েছে৷সাড়ে তিনশ কোটি দরিদ্র মানুষের মোট সম্পদ আগে যা ছিল তার চেয়ে শতকরা ৪১ ভাগ কমেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ধনীর ধনসম্পদ বেড়েই চলেছে
আরেকটি বিষয়ও বেরিয়ে এসেছে অক্সফাম-এর এই গবেষণায়৷ ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় স্থান পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ৬২ জন বিলিয়নিয়ারের সম্পদের পরিমাণ ৪৪ শতাংশ বেড়েছে৷