‘পানামা পেপার্স’-এর কারণে ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন এক প্রধানমন্ত্রী৷ অন্যরা গা বাঁচানোর চেষ্টায়৷ মোসাক ফনসেকা কার্যালয়ে তল্লাসি চালিয়েছে পানামা পুলিশ৷ অন্যদিকে ব্রিটেনে প্রশ্ন উঠেছে – ধনী আর গরিবের জন্য আইন আলাদা কেন?
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি বিশ্বের অনেক ক্ষমতাবান ও ধনী ব্যক্তির অভিনব কায়দায় দুর্নীতিতে জড়ানোর তথ্য ফাঁস করেছে ‘পানামা পেপার্স'৷ পানামার আইনি সংস্থা ‘মোসাক ফনসেকা'-র সহায়তায় অনেক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, অভিনেতা, খেলোয়াড় এবং অন্যান্য পেশার বিশিষ্টজনই বিদেশে টাকা পাচার করে কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ৷
গত ৩ এপ্রিল এমন অভিযোগ সম্বলিত তথ্য ফাঁস করা হলে তোলপাড় শুরু হয় বিশ্বজুড়ে৷ ‘অভিযুক্তদের' বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ওঠে বিভিন্ন দেশে৷ ‘অভিযুক্ত' ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদদের পদত্যাগের দাবিও ওঠে কয়েকটি দেশে৷ এমন দাবির মুখে ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড গানলগসন৷
মঙ্গলবার পানামা সিটিতে মোসাক ফনসেকার প্রধান কার্যালয়ে তল্লাসি চালিয়েছে পানামা পুলিশ৷ আইনজীবীরা জানান, পানামা পেপার্স কেলেঙ্কাকারির কারণে বিতর্কিত হওয়া আইনি প্রতিষ্ঠানটি কোনো রকমের বেআইনি কাজে জড়িত কিনা তা দেখতেই এ তল্লাশি চালানো হয়েছে৷ মোসাক ফনসেকা কর্তৃপক্ষ অবশ্য শুরু থেকেই বেআইনি কোনো কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে৷
এদিকে ব্রিটেনের লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন সংসদে পানামা কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে মৌলিক প্রশ্নই তুলেছেন৷ ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বিরুদ্ধেও পরোক্ষভাবে কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ এ নিযে সংসদেও বিতর্ক চলছে৷ সেই বিতর্কের এক পর্যায়েই জেরেমি করবিন বলেছেন, পানামা পেপার্স দেখিয়ে দিয়েছে, সারা বিশ্বে ধনী আর গরিবের জন্য আইন আসলে আলাদা৷ নইলে অল্প দুর্নীতির জন্য গরিবের শাস্তি হবে আর কোটি কোটি টাকা পাচার করেও ধনীরা আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাবেন – এমন কেন?
‘পানামা পেপার্স’ সম্পর্কে আপনার যা জানা প্রয়োজন
কে, কী, কোথায় এবং কখন: তথাকথিত ‘পানামা পেপার্স’ ফাঁসের পর এ সব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে৷ আর বিপদে আছেন অনেক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ক্রীড়াবিদ যাদের এতকাল সৎ ভাবা হতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warmuth
‘পানামা পেপার্স’ আসলে কী?
পানামা পেপার্স হচ্ছে এগারো দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডকুমেন্ট এবং দুই দশমিক ছয় টেরাবাইট তথ্য যা ই-মেল, আর্থিক বিবরণী, পাসপোর্ট এবং কর্পোরেট নথি আকারে আছে৷ আইন বিষয়ক সংস্থা মোসাক ফনসেকার কাছে এ সব তথ্য ছিল৷ রবিবার প্রকাশিত এই তথ্যে অনেক কাগুজে প্রতিষ্ঠানের খদ্দেরদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেছে, যারা ১৯৭৭ থেকে ২০১৬ অবধি নিজেদের আয়ের সঠিক তথ্য গোপন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/maxppp/J. Pelaez
মোসাক ফনসেকা কী?
দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকা ২০১২ সালে মোসাক ফনসেকাকে ‘অফসোর ফাইনান্সের’ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল, যারা নিজেদের সম্পর্কে কোনো তথ্যই প্রকাশ করতো না৷ শেল কোম্পানিদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান পানামাভিত্তিক এই আইন বিষয়ক সংস্থাটি৷ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের মতো ‘ট্যাক্স হেভেন’ বলে পরিচিত প্রায় সব জায়গাতেই তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজ আছে৷
ছবি: Reuters/B. Yip
আইসিআইজে কে?
ওয়াশিংটনভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম আইসিআইজে ফাঁস হওয়া দলিলদস্তাবেজ পরীক্ষা করে দেখেছে৷ বিশ্বের ৬৫টি দেশের ১৯০ জনের মতো সাংবাদিক এই কনসোর্টিয়ামের সদস্য, যা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৭৭ সালে৷
ছবি: ICIJ
জড়িত কারা?
ট্যাক্স ফাঁকি দিতে মোসাক ফনসেকার সহায়তা নেয়াদের মধ্যে বিশ্বের অনেক নামি-দামি রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, তারকা এবং ক্রীড়াবিদরা রয়েছেন৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের ঘনিষ্ঠদের অর্থের হদিশ পাওয়া গেছে ‘ফাঁস’ হওয়া তালিকায়৷ রয়েছে ভারতের অমিতাভ বচ্চন এবং আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসির নামও৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/India Today
‘শেল কোম্পানি’ কী?
‘শেল কোম্পানি’ আইনগতভাবে বৈধ এমন এক ধরনের প্রতিষ্ঠান যাদের নিজস্ব কোনো ব্যবসা নেই৷ তারা শুধু অন্যকে নানান নামে অর্থ খাটানোর সুযোগ করে দেয়৷ এসব প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে কার অর্থ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়েছে তা যাতে কোনোভাবে বের করা না যায়৷
ছবি: Fotolia/Trueffelpix
‘অফশোর ট্যাক্স হেভেন’ ব্যবহার কি অবৈধ?
যেসব দেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ খুব কম এবং আয়ের উপর কর প্রদানের পরিমান দফারফার মাধ্যমে অনেক কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে, সেসব দেশকে ‘অফশোর ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ সেসব দেশে অর্থ লগ্নি অপরাধ নয়, কিন্তু লগ্নিকারী ব্যক্তিটি যে দেশের সেদেশের কর কর্তৃপক্ষের কাছে সেটা অবৈধ হতে পারে, যদি তিনি সেই বিনিয়োগের কথা না জানিয়ে থাকেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে এটা অবৈধ৷