বিশ্বের অনেক নেতা, অভিনেতা, খেলোয়াড় ও ব্যবসায়ীর কর ফাঁকির তথ্য ফাঁস হয়েছে৷ ৪০ বছরের ই-মেল, আর্থিক লেনদেনের রেকর্ড এবং পাসপোর্টের তথ্য ঘেঁটে আর্থিক দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করেছে বিশ্বের একশ'টিরও বেশি মিডিয়া গ্রুপ৷
বিজ্ঞাপন
প্রায় এক বছর ১ কোটি ১৫ লাখ দলিল-দস্তাবেজ খুঁটিয়ে দেখে বিশ্বখ্যাতদের অর্থ কেলেঙ্কারির এই তথ্য ফাঁস করা হয়৷ জার্মানির ‘স্যুডডয়চে সাইটুং' পত্রিকাকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি পানামার আইনি সংস্থা মোসাক ফনসেকা-র বিশ্বখ্যাত ধনী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করেন৷ ১৯৭৭ সাল থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪০ বছরের তথ্য রয়েছে সেখানে৷ তথ্যগুলি পাওয়ার পরই শুরু হয় তদন্ত৷ বিশ্বের ৭৬টি দেশের একশ'রও বেশি মিডিয়া গ্রুপের সাড়ে তিনশ'রও বেশি সাংবাদিক এই তদন্তে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে৷
পানামার মোসাক ফনসেকা নামের আইনি সংস্থার কাগজপত্র থেকে গোপন তথ্যগুলো বেরিয়ে এসেছে বলে সংবাদমাধ্যম চাঞ্চল্যকর এই তথ্যসম্ভারের নাম দিয়েছে, ‘পানামা পেপার্স'৷ গোপন এই তথ্যসম্ভার থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার আর তা হলো, বিশ্বের খ্যাতিমান অনেকেই কর ফাঁকি দিতে বিদেশি আয়ের উৎস দেখান৷
‘স্যুডডয়চে সাইটুং' পত্রিকার হয়ে ‘পানামা পেপার্স' নিয়ে কাজ করেছেন জর্জ মাসকোলো৷ রবিবার জার্মানির এক টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেন, তথ্যানুসন্ধান থেকে যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা এক কথায় অভূতপূর্ব, কেননা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খ্যাতিমানদের আর্থিক কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত এত তথ্য আগে কখনো এভাবে বেরিয়ে আসেনি৷
তথ্যানুসন্ধানে অন্তত ১২ জন রাষ্ট্রনায়কের কর ফাঁকি দিতে বিদেশি আয়ের উৎস দেখানোর কৌশল অবলম্বন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ আর্জেন্টিনা, জর্জিয়া, আইসল্যান্ড, ইরাক, জর্ডান, কাতার, সৌদি আরব, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইউক্রেনসহ আরো কয়েকটি দেশের ১৪৩ জন রাজনীতিবিদ এবং তাদের আত্মীয়দের নাম এসেছে ঐ তালিকায়৷
রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, ইরাকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আয়াদ আলাওয়ি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো এবং আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ডুর ডেভিড৷ এছাড়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের এক বাল্যবন্ধু এবং মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের ছেলে আলা মুবারকের নামও আছে তালিকায়৷
রাজনীতির বাইরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামও বাদ যায়নি৷ বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি, ভারতের অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, তাঁর পুত্রবধু এবং অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের দিকেও সন্দেহের আঙুল তুলেছে ‘পানামা পেপার্স'৷
ধারণা করা হয়ে থাকে, বিশিষ্ট জনেরা কর ফাঁকি দেয়ার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক দেখিয়েছেন, সেসব প্রতিষ্ঠানের অর্থের বড় একটা অংশ গেছে মাদক চোরাচালান ও অবৈধ অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় খাতে৷
এসিবি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ)
সেরা দশ দুর্নীতির দেশ, সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ
এক সময়ের দুর্নীতির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ এবার হয়েছে ১৩তম৷ চলুন দেখা যাক ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)-র প্রতিবেদনে এবার কোন কোন দেশ আছে দুর্নীতির সেরা দশে আর কোন দশটি দেশে এখন দুর্নীতি সবচেয়ে কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Antonisse
৮ থেকে ১০ নম্বরে কঠিন লড়াই
টিআইবি-র এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমান ১৮ পয়েন্ট করে পাওয়ায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দশটি দেশের তালিকায় ৮ নাম্বার থেকে ১০ নাম্বার পর্যন্ত স্থানে রয়েছে উজবেকিস্তান, লিবিয়া এবং ইরিত্রিয়া৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
দুর্নীতির সপ্তম স্বর্গে তুর্কমেনিস্তান
উজবেকিস্তান, লিবিয়া এবং ইরিত্রিয়ার চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট কম হওয়ায় দুর্নীতিতে সেরা দশটি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে তুর্কমেনিস্তান৷
ছবি: DW
ইরাকের দুরবস্থা
যুদ্ধ, হানাহানির মাঝে ইরাকে দুর্নীতিও চলছে পুরোদমে৷ তাই ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন দুর্নীতিতে সেরা দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: Reuters
পঞ্চম স্থানে দক্ষিণ সুদান
ইরাকের পরেই রয়েছে সদ্য স্বাধীন দেশ দক্ষিণ সুদান৷ তারা পেয়েছে ১৫ পয়েন্ট৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Karumba
আফগানিস্তান দুর্নীতিরও স্থান
দুর্নীতিরও স্থান না হলে আফগানিস্তান কি আর ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বের চতুর্থ সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হতো?
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
দক্ষিণ সুদানের চেয়ে দুর্নীতিতে এগিয়ে সুদান
সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান শুধু মানচিত্রেই নয়, দুর্নীতিতেও কিছুটা ব্যবধান দেখাতে পেরেছে৷ দক্ষিণ সুদান যখন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে, সুদান তখন ১১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়৷ দুর্নীতিতে এগিয়ে থাকা তো আর ভালো কথা নয়!
ছবি: getty / C. Bouroncle
উত্তর কোরিয়া আর সোমালিয়া
সমাজতন্ত্র কায়েমের পথে হোঁচট খেয়ে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়লেও দুর্নীতিতে খুব এগিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ আফ্রিকার দারিদ্র্য জর্জরিত দেশ সোমালিয়াও কম যায় না৷ ৮ পয়েন্ট করে নিয়ে এই দুই দেশই আছে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture alliance/dpa/R. Sinmun
সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক
নারীর জন্য সবচেয়ে ভালো দেশ হওয়ার পর, এবার সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশও হয়েছে ডেনমার্ক৷ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশ পেয়েছে ৯২ পয়েন্ট৷
ছবি: Reuters/N. Ahlmann Olesen
দ্বিতীয় নিউজিল্যান্ড, তৃতীয় ফিনল্যান্ড
সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশগুলোর মাঝে নিউজিল্যান্ড ৯১ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে আর ৮৯ পয়েন্ট পেয়ে ফিনল্যান্ড দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture alliance / Robert Harding
চতুর্থ স্থানে সুইডেন
আরেক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনও কম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর মাঝে খুব ভালো অবস্থানে৷ তাদের পয়েন্ট ৮৭, অবস্থান চতুর্থ৷
ছবি: DW/T. Mehretu
নরওয়ে আর সুইজারল্যান্ডে সমতা
৮৬ পয়েন্ট করে পেয়েছে নরওয়ে আর সুইজারল্যান্ড৷ ফলে দেশ দু’টি আছে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: EBU
একের হেরফেরে সাত থেকে দশ
সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দশ দেশের তালিকায় সপ্তম থেকে দশম স্থানে আছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ এবং ক্যানাডা৷ সপ্তম থেকে দশম, অষ্টম, নবম ও দশমে মাত্র এক পয়েন্ট করে ব্যবধান৷ সিঙ্গাপুরের ৮৪, নেদারল্যান্ডসের ৮৩, লুক্সেমবুর্গের ৮২ এবং ক্যানাডার পয়েন্ট ৮১৷