বৈশ্বিক উষ্ণায়নের রাশ টানতে ধনী দেশগুলোর প্রতি জনগণকে মাংস খাওয়া কমানো এবং কৃষকদের আরো পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা নিতে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান এসেছে৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-এফএও'র তথ্য মতে, মাংস ও দুধ তৈরির জন্য গরু, ছাগল, মহিষ, শূকরসহ এ ধরনের পশুই বৈশ্বিক গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের ১৪ দশমিক ৫ শতাংশের জন্য দায়ী৷
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সোচ্চার চেঞ্জিং ফাউন্ডেশনের ক্যাম্পেইন ডিরেক্টর নুসা উরবানসিস বলেন, ‘‘আমরা যদি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বিশেষত ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির নীচে রাখতে চাই তাহলে আমাদের এসব প্রাণিজ আমিষের ব্যবহার কমাতে হবে৷''
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির নীচে রাখতে বিশেষ পদক্ষপ না নিলে বিশ্ব তীব্র দাবদাহ, অতি বৃষ্টি ও ফসল তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে বলে গত সপ্তাহে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ৷
বাড়ির বাগানে মুরগি পোষা, কিংবা ছাদ কি বারান্দার টবে সবজি ফলানো, এ ধরণের শহুরে চাষ চলে আসছে বহুকাল ধরে৷ কিন্তু ‘আর্বান ফার্মিং’ আজ একটি বিশ্বব্যাপী প্রবণতা – হয়তো একটি বিশ্বব্যাপীসমাধান৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
আর্বান ফার্মিং কেন?
২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১,০০০ কোটি কিংবা তারও বেশি৷ এর দুই-তৃতীয়াংশ বাস করবে শহরে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে এই পরিমাণ মানুষের খাদ্য জোগাড় করা সহজ কথা নয়৷ সেক্ষেত্রে শহরের মধ্যে চাষবাস সাহায্য করতে পারে৷
ছবি: Imago/UIG
শহুরে চাষি
শহরে যাদের বাস, তাদের প্রকৃতির প্রতি টান কোনো অংশে কম নয়৷ তার খানিকটা মেটে বাগান করতে পেরে৷ কিন্তু আর্বান ফার্মিং মানুষ আর মানুষের মধ্যে হৃদ্যতা আনে, নতুন চাকরি সৃষ্টি করে, বাড়ায় নগরবাসীদের খাদ্য নিরাপত্তা৷
ছবি: Imago/AFLO/Yoshio Tsunoda
সবুজের স্নিগ্ধ প্রলেপ
ঊষ্ণায়নের ফলে যখন বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে, তখন গাছপালা শহরের তাপমাত্রা কমায়৷ হংকংয়ের ইয়াউ মা তেই একটি প্রাচীন এলাকা৷ ২০১২ সালের মার্চ মাসে সেখানকার নানা ছাদের বাগান মিলিয়ে ‘এইচকে ফার্ম’ সৃষ্টি করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
ছাদে চাষ
নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন গ্রেঞ্জ হল বিশ্বের বৃহত্তম ছাদের খামার৷ দু’টি ছাদ মিলিয়ে তৈরি এই খামারে বছরে ২২,০০০ কিলোগ্রাম অরগ্যানিক খাদ্য উৎপাদন করা হয়৷ এছাড়া খামারটি শহর জুড়ে বাড়ির ছাদে ৩০টি মৌমাছির দল ও মৌচাক পোষে৷ আর্বান ফার্মিংয়ের টেকসই মডেল হিসেবে ব্রুকলিন গ্রেঞ্জ গড়ে ওঠে ২০১০ সালে৷
ছবি: Imago/UIG
ময়লা ফেলার জায়গায় চাষ
নাম হলো ‘প্রিন্ৎসেসিনেনগ্যার্টেন’ বা রাজকুমারীর বাগান৷ বার্লিনের ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকার এই অংশটি অর্ধশতাব্দী ধরে ময়লা ফেলার জায়গা ছিল৷ পরে সেখান থেকে আবর্জনা সরিয়ে অরগ্যানিক সবজি চাষের পোর্টেবল, অর্থাৎ অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া যায় এমন প্লট তৈরি করা হয়৷ সংগঠনটি আজ শহরের ভিতরে অনেক পোড়োজমি বা কনস্ট্রাকশন সাইটেও আর্বান ফার্মিং করে থাকে৷
ছবি: Prinzessinnengärten/Marco Clausen
ছাদে ধান রোয়া
টোকিও-র রোপোঙ্গি হিলস আসলে একটি বিজনেস ও শপিং কমপ্লেক্স৷ তার ছাদে মাটি ফেলে ধানের ক্ষেত করা হয়েছে৷ শহরের অন্যত্র ‘সিটি ফার্ম’ নামের একটি সংগঠন তরমুজ, টমেটো, সয়াবিন ফলায়৷ এছাড়া ধানচাষও করে থাকে৷ সংগঠনের সদস্যরা ধান ঝাড়ার কাজে সাহায্য করতে পারেন, কিংবা জাপানের ‘সাকে’ সুরা বানানোর পদ্ধতি শিখতে পারেন৷
ছবি: Imago/AFLO/Yoshio Tsunoda
বিপদের সময়
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের উপকণ্ঠে এলিনিকো কমিউনিটি গার্ডেন আসলে একটি ‘গেরিলা গার্ডেন’৷ গেরিলা যুদ্ধের মতোই অভাব-অনটনের দিনে গ্রিসের সর্বত্র এ ধরণের বাগান বা খেতখামার গজিয়ে উঠেছে, কেননা মানুষের খাদ্য চাই৷ এলিনিকো বাগানটি যেখানে, ২০০১ সাল পর্যন্ত সেটা ছিল একটা বিমানবন্দর৷ পরে জমি পরিষ্কার করে স্বেচ্ছাসেবীরা এখানে সবজি ও ফলমূল ফলাতে শুরু করেন দুঃস্থ এথেন্সবাসীদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে৷
ছবি: Heidi Fuller-love
7 ছবি1 | 7
‘‘গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো এবং কার্বন সংরক্ষণে ভূমি ফাঁকা রাখার জন্য খাদ্য তালিকা থেকে প্রাণিজ আমিষ বাদ দেওয়াটা ‘তুলনামূলক সহজ ও সাশ্রয়ী পন্থা' হবে৷''
উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে একজন ব্যক্তি প্রতিদিন গড়ে সরকারি সুপারিশ ৭০ গ্রামের তিনগুণ লাল বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খান৷
এখন অনেকে, বিশেষত তরুণরা প্রাণিজ আমিষ ছেড়ে সবজি খাওয়ায় মনোযোগী হলেও সরকার মাংস তৈরি ও ডেইরি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে এবং তা জলবায়ু পরিবর্তন আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলেও পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে৷
জৈব কৃষিতে সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে উরবানসিস বলেন, ‘‘ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় প্রচুর সরকারি অর্থ কৃষি ভর্তুকিতে যায়, কিন্তু পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গ্রহণে যায় তার খুবই ক্ষুদ্র অংশ৷''
এসব দেশে জনগণকে মাংস খাওয়া কমাতে উদ্ধুব্ধ করাএবং কম কার্বন নিঃসরণকারী বিকল্প খাবারকে জনপ্রিয় করতে সরকারি নীতির ঘাটতিকে ‘দুঃখজনক' বলা হয়েছে প্রতিবেদনে৷
তারুণ্য ধরে রাখতে সবুজ খান, দেখুন, হাঁটুন...
তারুণ্যের প্রতীক সবুজ মানেই যেন কেমন কচি কচি গন্ধ! তারুণ্যের সাথে বিশেষ সম্পর্ক, কিন্তু কেন? চলুন বিভিন্ন সমীক্ষার ফলাফল থেকেই জানা যাক সেই সব তথ্য৷
ছবি: Colourbox
পুদিনা পাতার চা
জার্মানিতে ৫৬৩৪ টন পুদিনা পাতা বিক্রি হয়েছে, যা পূর্বের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে৷ অর্থাৎ আগে ছিল মৌরি ও ক্যামেলিয়া চা৷ এ তথ্য দিয়েছে জার্মানির ঔষধি ও বিভিন্ন চা বিক্রেতা সমিতি৷ পুদিনা পাতার চা এবং তেল সুস্থ ও তরতাজা রাখে এবং মাথাব্যথা কমায়৷
ছবি: Fotolia/Heike Rau
সবুজ শাক-পাতা খেয়ে স্লিম থাকুন
ওজন কমাতে চাইলে কম চর্বিযুক্ত মাংস ও সালাদই সবচেয়ে ভালো৷ জার্নাল অফ জিনারেল ইন্টারনাল মেডিসিন-এ প্রকাশিত ১৮ সপ্তাহ ধরে করা এক সমীক্ষা থেকে এ তথ্য থেকে জানা গেছে৷ অংশগ্রহণকারীর একদল কম চর্বিযুক্ত মাংস ও শাক-সবজি সালাদ খেয়েছেন এবং অন্যদল মাংস ছাড়া বাকি সবই খেয়েছেন৷ ফলাফলে দেখা গেছে যে, যাঁরা খাবার প্লেটে মাংশ নেননি, তাঁদের ওজন কমেছে অন্য অংশগ্রহণকারীদের তুলনায় আড়াই কেজি বেশি৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
সবুজে ব্যায়াম
যে মানুষ মজা করে গাছের গুঁড়ির ওপর দিয়ে হাঁটেন বা গাছে ওঠেন, তাঁর স্মরণশক্তি নাকি বাড়ে৷ এই তথ্যটি জানা গেছে অ্যামেরিকার নর্থ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক সমীক্ষা থেকে৷ এই সমীক্ষায় অংশ নেয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যারা খোলা আকাশের নীচে যোগব্যায়াম বা অন্য খেলাধুলা করেছে, তাদের চেয়ে যারা গাছের গুড়ির ওপর দিয়ে হেঁটেছে, অর্থাৎ ভারসাম্য রক্ষার পরীক্ষা দিয়েছে, তারা অঙ্কে ভালো ফল করেছে৷
ছবি: Colourbox
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেলের গুণের কথা অনেকেরই জানা৷ আমরা ছোটবেলায় দেখেছি শিশুদের গায়ে অলিভ অয়েল মেখে রোদে শুইয়ে রাখা হতো ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণের জন্য৷ বিভিন্ন গবেষণায়ও দেখা গেছে অলিভ অয়েল পরিপাকক্রিয়ার প্রদাহ নিরাময়েও ভূমিকা রাখে৷ এছাড়া অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল যেমন তারুণ্য ধরে রাখে, তেমনি সুন্দর নরম চুলের জন্যও বেশ উপকারী৷
ছবি: Fotolia/hiphoto39
পালংশাক ও সবুজ আপেলের জুস
পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম আর আপেলে রয়েছে জন্য শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আয়রন, মিনারেল এবং ভিটামিন৷ গবেষণায় দেখা গেছে যে, আপেল কোলেস্টোরল কমাতে ও ক্যানসার রোধেও সহায়তা করে৷ তাই প্রতিদিন একগ্লাস পালংশাক ও আপেল ও সামান্য সবুজ লেবুর রসের মিশ্রণের জুস খান, সবসময় সুস্থ থাকুন৷
চোখের জন্য সবুজ প্রকৃতি
অনেকক্ষণ টিভি দেখেছেন বা কম্পিউটারে কাজ করে আপনার চোখ দু’টো ভীষণ ক্লান্ত? চিন্তা নেই, খানিকক্ষণ বাইরে সবুজের দিকে তাকিয়ে থাকুন এবং মাঝে মাঝে কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ রাখুন৷ দেখবেন চোখের অনেক আরাম হচ্ছে৷ সময় সুযোগ পেলে কোনো পার্কে হেঁটে আসুন আর দু’চোখ ভরে সবুজ দৃশ্য উপভোগ করুন৷ শরীর, মন, চোখ – সবই ভালো লাগবে৷
ছবি: Colourbox
6 ছবি1 | 6
পরিবেশবান্ধব কৃষিকে উৎসাহিত করছে ওয়েলস৷ সেখানে পানি ব্যবস্থাপনা, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার পদক্ষেপের জন্য ফার্মগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেয় সরকার৷
এই প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপ্ত ওয়েলসের কৃষক টনি ডেডিস তাঁর ফার্মে পশুর সংখ্যা ২০০৫ সালের চেয়ে দুই তৃতীয়াংশ কমিয়ে ৬০০-তে এনেছেন, যাতে তাঁর খরচ কমে মুনাফা বেড়েছে৷