1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ধর্মগ্রন্থ নিয়ে প্রশ্ন করা সাম্প্রদায়িকতার বহিঃপ্রকাশ'

আসমা মিতা
২৭ অক্টোবর ২০১৭

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব সংক্রান্ত প্রশ্ন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন শিক্ষক সমাজ৷ তাঁরা বলছেন, সাম্প্রদায়িক মানসিকতা থেকেই এমন প্রশ্ন করা হয়েছে৷

ছবি: DW/A. Khanom

তবে সেই বিভাগের ডিনের দাবি, শিল্পচর্চার সাথে ধর্মের যোগাযোগ আছে বলেই এমন প্রশ্ন হয়েছে৷

গত বুধবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আই' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় দুই নম্বর সেট কোডের একটি প্রশ্নে ছিল, ‘‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম কি?'' এর চারটি বিকল্প উত্তর হিসেবে লেখা রয়েছে পবিত্র কোরআন শরিফ, পবিত্র বাইবেল, পবিত্র ইঞ্জিল ও গীতা৷ গীতার আগে ‘পবিত্র'ও লেখা হয়নি৷ শুধু তাই নয়, ‘‘মুসলমান রোহিঙ্গাদের উপর মায়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা সশস্ত্র হামলা চালায় কত তারিখে?'' আরেকটি প্রশ্ন ছিল এমন৷

এ ধরনের প্রশ্ন কী হতে পারে?

জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শাতিল সিরাজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ ধরনের প্রশ্ন কোনোভাবেই হতে পারে না৷ যখন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করা হয়, তখন ছাপায় কোনো ধরনের ভুল হতে পারে৷ কিন্তু কোন ধর্ম সর্বশ্রেষ্ঠ, সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক মানসিকতা লালন করেন এমন কোনো ব্যক্তি সজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় এ ধরনের প্রশ্ন করেছেন৷এটাকে আমি কোনোভাবেই ভুল বলবো না৷ এটি স্বেচ্ছাকৃত অপরাধ৷ আমরা কোনো ধর্মকে সর্বশ্রেষ্ঠ, কোনো ধর্মকে কম শ্রেষ্ঠ, কোনো ধর্ম নিকৃষ্ট এভাবে অভিহিত করতে পারি না৷ এই অধিকার একজন শিক্ষকের নেই৷ '' 

শাতিল সিরাজ

This browser does not support the audio element.

তীব্র সমালোচনার মুখে অবশ্য সব ছাত্রকে সমান নম্বর দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ৷ এ সিদ্ধান্ত নিয়েও ক্ষোভ জানান শাতিল সিরাজ৷ বলেন, ‘‘সবাইকে সমান নম্বর দেয়া হবে, এটি সাময়িক সমাধান মাত্র৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি এ ব্যাপারে কী আছে আমি সঠিক জানি না, কিন্তু আমি মনে করি, এই ধরনের প্রশ্ন যাঁরা করেন, তাঁদেরকেও অবশ্যই প্রশ্নের মুখোমুখী করতে হবে৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এটা জানতে হবে যে, কেন তাঁরা এটা করলেন, কোন চেতনা তাঁদের উদ্বুদ্ধ করেছে বা এটা তাঁরা আদৌ করতে পারেন কিনা৷'' 

‘‘এটাকে যদি অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে ধরে নেয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এর পরিণতি হবে মারাত্মক,'' যোগ করেন তিনি৷

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রশ্ন এগুলো৷''

‘‘সমস্যাটা হচ্ছে, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নামেই৷ কিন্তু কোনো বিদ্যাপীঠেই এখন আর বিদ্যার চর্চা হচ্ছে না৷ কারণ, যোগ্য শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব, শিক্ষকসুলভ মানসিকতা ও ব্যক্তিত্বের অভাব৷ যার ফলে এ ধরনের প্রশ্ন হচ্ছে৷ প্রশ্ন  করেন একজন বা দুইজন৷ কিন্তু প্রশ্ন প্রণয়নের একটি কমিটি থাকে, তাঁরা এটি চূড়ান্ত করেন৷ এমনকি সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিনও এর দায় এড়াতে পারেন না৷ কারণ, সব দায়দায়িত্ব ডিনের'' বলেন সৈয়দ আনোয়ার৷

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন

This browser does not support the audio element.

জানতে চাওয়া হয়েছিল ঐ কমিটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন কিনা৷ জবাবে এই শিক্ষক বলেন, ‘‘অবশ্যই৷ কারণ, বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে অসাম্প্রদায়িক দেশ৷ সেই দেশে সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন কেন হয়৷ এটি গর্হিত অপরাধ৷ এর সমীচীন শাস্তি বিধান করা দরকার৷ এই মানসিকতার শিক্ষক আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে৷ এই মানসিকতা থেকেই তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যার চর্চা করেন৷ আমি পত্রিকায় দেখেছি, অনেক শিক্ষার্থী এই প্রশ্নের কোনো উত্তরই দেননি৷ আমি মনে করি, আমাদের এসব শিক্ষকের চেয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে অনেক উন্নত৷''

তাঁর মতে, ‘‘এটি অত্যন্ত মন্দ প্রভাব সৃষ্টি করবে৷ মনে হবে, বাংলাদেশ কি ক্রমেই সাম্প্রদায়িক দেশ হয়ে উঠছে?''

ব্যাপক সমালোচনা এবং আশঙ্কার জন্ম দেয়া বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গেও কথা হয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘শিল্পকলার সৃষ্টি হয়েছে ধর্মীয় এবং জাদু বিশ্বাসের ওপর বেইস করে৷ সভ্যতার ইতিহাস অধ্যায়ে এরকম প্রশ্ন আমাদের থাকে৷ এগুলো পড়ানো হয় তো, সেকারণে৷ এটাকে জেনারালাইজ করা হয়নি৷''

তাঁর দাবি, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের যেন ক্ষতি না হয় সেজন্য আমরা বিষয়টা আগেই নজরে এনে সবাইকে সমান নম্বর দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷''

মুস্তাফিজুর রহমান

This browser does not support the audio element.

সাধারণত প্রশ্নপত্রে ভুল থাকলেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে৷ তাহলে কর্তৃপক্ষ কি ওই দুটো প্রশ্নকেই ভুল মনে করছে? চারুকলা অনুষদের শিক্ষকের জবাব, ‘‘না, সম্পূর্ণ ভুল নয়৷ উপস্থাপনটা সবার জন্য ঠিক গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না, এটা বুঝেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ প্রশ্নটির উপস্থাপনের ভঙ্গিতে হয়ত একটু পরিবর্তন আনা যেতো৷''

এমন প্রশ্ন করার পক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছেন তিনি৷ মুস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, ‘‘সব জাতির ধর্ম আছে৷ সবাই তাঁর ধর্মের ওপর ভিত্তি করে কৃষ্টি-কালচার করে৷ সভ্যতার ইতিহাসের ঐ অধ্যায়টা সবার কাছে তেমন পরিচিত নয়৷ সেকারণেই হয়ত এমনটা মনে হচ্ছে৷ প্রশ্নটি অমূলক নয়, আবার সাম্প্রদায়িক চেতনা থেকেও করা হয়নি৷ আমাদের ক্ষেত্রে সেই সুযোগটি নেই৷ সাম্প্রদায়িক হলে তো শিল্পী হওয়া যায় না৷''

তবে সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকেই করা হয়েছে - এমন ধারণা জন্ম দেয়া প্রশ্নগুলো করার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে৷ এরকম কীভাবে হলো?''

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ