একের পর এক ধর্মঘটের আর্থিক প্রভাব পড়েছে জার্মান বিমান সংস্থা লুফটহানসার ওপর, জানালেন সংস্থাটির অর্থনৈতিক প্রধান৷ এর আগে, ২০২৩ সালে বেশ ভালো লাভ করেছিল সংস্থাটি৷
জার্মানির বিমান সংস্থা লুফটহানসার মতে, কর্মী ধর্মঘটের ফলে সংস্থাটির মোট ২৫০ মিলিয়ন ইউরোর ক্ষতি হয়েছে, যা প্রায় ৩০০ কোটি বাংলাদেশি টাকার সমান৷ছবি: Florian Wiegan/Eibner-Pressefoto/picture alliance
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বিমান সংস্থা লুফটহানসার মতে, কর্মী ধর্মঘটের ফলে সংস্থাটির মোট ২৫০ মিলিয়ন ইউরোর ক্ষতি হয়েছে, যা প্রায় ৩০০ কোটি বাংলাদেশি টাকার সমান৷
লুফটহানসার অর্থনৈতিক প্রধান রেমকো স্টিনবের্গেন বুধবার সংস্থার কর্মীদের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ বিবৃতি দেন৷ সেখানে তিনি কর্মীদের জানান যে ধর্মঘটের চেয়ে এই ধর্মঘটগুলির প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী ছিল৷
মার্চ মাসে লুফটহানসার ব্যালেন্স শিটের হিসাব দেবার সময় ধর্মঘটের আর্থিক প্রভাব বিষয়ে যে ধারণা দিয়েছিলেন স্টিনবের্গেন, সেই অঙ্কের দ্বিগুণেরও বেশি বুধবারের ঘোষিত ২৫০ মিলিয়ন ইউরো সংখ্যাটি৷
ধর্মঘটেরদীর্ঘমেয়াদীপ্রভাব
অভ্যন্তরীণ বিবৃতিতে স্টিনবের্গেন তুলে ধরেন ক্রু-তালিকা, বিমানের শিডিউল ও ক্রেতা ব্যবস্থাপনার মতো কাজে বাধাগ্রস্ত হবার দিকটি৷
প্রতি সপ্তাহে স্যান ফ্রান্সিসকো ও ফ্রাংকফুর্টের মধ্যে বিমান সংযোগ সংস্থাটির অন্যতম লাভজনক রুট৷ ধর্মঘটের ফলে এই রুটের একাধিক বিমান বাতিল হয়েছে বলে জানান রেমকো স্টিনবের্গেন৷
তিনি আরো বলেন যে এই ধর্মঘটের ধারা ক্রেতাদের লুফটহানসার টিকিট কেনা থেকে বিরত করেছে৷ ফলে ফ্রাংকফুর্ট ও মিউনিখের মতো বড় বিমানবন্দরেও ভিড় কমেছে, যা ব্যবসায় লোকসান করে৷ বিরূপ প্রভাব পড়ে সংস্থাটির কার্গো ব্যবস্থাপনাতেও৷
স্টিনবের্গেন বলেন, ‘‘২৫০ মিলিয়নের ধাক্কা কেউই সামলাতে পারবে না৷'' কিন্তু তিনি আরো যোগ করেন যে ২০২৪ এখনও লাভজনক বছর হতে পারে যদি এপ্রিল মাস থেকে কর্মীদের সাথে ঐক্যমতে আসা যায় ও নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী বিমান চলাচল সম্ভব হয়৷
লুফটহানসার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কারস্টেন স্পোরের মতে, ২০২৩ সালে দুর্দান্ত লাভ করে সংস্থাটি, যা এর আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ ছিল৷ ২০২৩ সংস্থাটির সবচেয়ে ভালো পারফর্ম্যান্স থাকা তিনটি বছরের একটি৷
জার্মান অর্থনীতিতে তিন দিনের রেল ধর্মঘটের বহুমুখী প্রভাব
তিন দিনের রেল ধর্মঘট জার্মানির বাণিজ্য, পণ্য পরিবহণ, বন্দরের কর্মকাণ্ড, সেই সঙ্গে ভোক্তাদের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷ এখানেই শেষ নয়৷ আরো জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Jana Rodenbusch/REUTERS
বিকল্প নেই যাদের
জার্মানির রেল চালকদের ইউনিয়ন জিডিএল মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিনদিনের ধর্মঘট ডেকেছে৷ এতে শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেল অপারেটর ডয়চে বানই নয় রেল কার্গো ব্যবহারকারী অন্য কোম্পানিগুলোরও ক্ষতি হচ্ছে৷ জার্মানির পণ্য পরিবহণের দুই-তৃতীয়াংশই হয় সড়ক ব্যবহার করে৷ এক-পঞ্চমাংশ হয় রেলপথে৷ কিন্তু তার গুরুত্ব কম নয়৷ বিশেষ করে ইস্পাত, রাসায়নিক, কয়লাসহ এমন কিছু পণ্য রেলে পরিবহণ হয় যার আর কোনো বিকল্প নেই৷
ছবি: Bernd Thissen/dpa/picture alliance
অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত
রেলপথে পণ্য পরিবহণের অর্ধেক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেল কোম্পানি ডয়চে বানের দখলে৷ বাকি অর্ধেক পরিচালনা করে বেসরকারি কোম্পানিগুলো৷ তাদের চালকেরা এই ধর্মঘটে না থাকলেও এর নেতিবাচক প্রভাব আছে কোম্পানিগুলোর উপরে৷ কেননা ডয়চে বানের চালকেরা ছাড়াও ধর্মঘট আহ্বান জানানো হয়েছে রেল লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী এবং সুইচ টাওয়ারের দায়িত্বে থাকা কর্মীদেরও৷ তারা যোগ দিলে কোনো ট্রেনই চালানো যাবে না৷
ছবি: HRSchulz/IMAGO
বন্দরে কনটেইনার জট
ধর্মঘটে শুধু রেল না, বন্দরের ব্যবস্থাপনার উপরেও প্রভাব পড়ছে৷ কনটেইনার পরিবহণ না হওয়ায় বিভিন্ন বন্দরে জট তৈরি হচ্ছে৷ হামবুর্গ বন্দরের সব কনটেইনারই রেলপথে পরিবহণ হয়৷ এই মুহূর্তে স্থলপথে পরিবহণ সেখান থেকে সম্ভব নয়৷ সময়মত পণ্য পরিবহণ করা না গেলে ইউরোপের অন্য বন্দরগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Marcu Brandt/dpa/picture-alliance
ধাক্কা অর্থনীতিতে
ভারি শিল্পের উপর নির্ভরশীল জার্মানির অর্থনীতি৷ এই ধর্মঘটে শিল্প খাতেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগছে৷ পণ্য সরবরাহ চেইনে জট লাগার কারণে শিল্পের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে৷ এর অর্থনৈতিক প্রভাব কতটা তীব্র হবে তা এখনই অবশ্য ধারণা করা যাচ্ছে না৷ তবে অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অগ্রিম মজুদ রেখে প্রস্তুতি নিয়ে রাখে৷
ছবি: Jochen Tack/picture alliance
ক্ষতির পরিমাণ কত
তিনদিনের এই ধর্মঘটের ক্ষতি কত তা পরিমাপ করাটা সহজ নয়৷ এক হিসাব অনুযায়ী দৈনিক ক্ষতির অঙ্ক কম-বেশি ১১ কোটি ডলার৷ তার চেয়েও বড় বিষয় হলো জার্মানির রেল পরিবহণ ব্যবস্থার দুর্নাম এতে আরো পাকাপোক্ত হলো৷ ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার পণ্য পরিবহণে রেলের অবদান ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে চায়, যা বর্তমানে ১৯ শতাংশ৷ এমন পরিস্থিতি হলে সেই লক্ষ্য যে পূরণ হবে না তা বলা বাহুল্য৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
কেন ধর্মঘট
কর্মীদের ইউনিয়ন জিডিএল কর্তৃপক্ষের কাছে সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৩৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৫ ঘণ্টা করার দাবি জানিয়েছে৷ তাদের দাবি অনুযায়ী, এজন্য মজুরি কাটছাট করা চলবে না এবং মাসিক বেতন ৬০০ ডলারের বেশি বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে বোনাস দিতে হবে৷ কিন্তু কর্মী সংকট থাকায় কর্মঘণ্টা হ্রাসের দাবি মেনে নিতে রাজি নয় ডয়চে বান৷ তবে ৩২ মাসের জন্য মজুরি ১১ শতাংশ বাড়াতে রাজি তারা, যা প্রত্যাখ্যান করেছে জিডিএল৷
মার্চ মাস শেষ হবার আগেই এই সব দ্বিমতের সুরাহা করতে চায় লুফটহানসা৷
বিমানসেবিকা ও বিমান সেবকদের কর্মী সংগঠন ইউএফও'র চেয়ারম্যান ইওয়াখিম ভাসকেজ ব্যুরগার বুধবার আলোচনা পর্ব শেষ হলে বলেন, ‘‘চুক্তির মেয়াদ ও প্রাপ্য টাকা নিয়ে সমস্যা আছে৷ কিন্তু ইস্টারের ছুটির আগে এবিষয়ে দুই পক্ষ একমত হবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না৷''
ভেরদি ইউনিয়ন গ্রাউন্ড স্টাফ ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মী, দু'পক্ষেরই প্রতিনিধিত্ব করছে৷ মধ্যস্থতাকারীরা গড়্রাউন্ড স্টাফের বেতন বিষয়ক জটিলতায় জোর দিলেও, ভেরদি জানিয়েছে যে চলমান আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেবে তারা৷
বুধবার লুফটহানসার সাথে নিরাপত্তা কর্মীদের তরফে ষষ্ঠ দফার আলোচনায় যায় ভেরদি৷ ভেরদির তরফে মধ্যস্থতাকারী উলফগাং পিপার আলোচনায় বসার আগে বলেন, ‘‘আমরা চাই একমতে পৌঁছতে৷''
এসএস/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)
লুফটহানসা কথন
জার্মানির প্রধান এয়ারলাইন্স লুফটহানসার কেবিন ক্রুরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে দুইদিনব্যাপী ধর্মঘট শুরু করেছেন৷ ফলে প্রায় তেরোশত ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/B. Stanley
লুফটহানসা গ্রুপ
বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বড় এয়ারলাইন গ্রুপ হচ্ছে ‘লুফটহানসা গ্রুপ’৷ এই গ্রুপে জার্মানির লুফটহানসা ও ইউরোউইংস ছাড়াও আছে সুইস ও অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইন্স৷
ছবি: Reuters/M. Abd El Ghany
২৭১ গন্তব্যে
চলতি বছর জানুয়ারিতে লুফটহানসা গ্রুপ জানিয়েছিল, তাদের এয়ারলাইন্সগুলো ১০৫ দেশের ২৭১টি গন্তব্যে চলাচল করে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/B. Stanley
বিমান সংখ্যা
গ্রুপের সব এয়ারলাইন্স মিলিয়ে বিমানের সংখ্যা ৭২৮টি৷ ২০২৫ সালের মধ্যে ১৮০টি নতুন বিমান যোগ হবে বলে জানা গেছে৷
ছবি: DW/A. Spaeth
ইনফ্লাইট ইন্টারনেটে প্রথম
২০০৪ সালে প্রথম এয়ারলাইন হিসেবে লুফটহানসা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য ইনফ্লাইট ইন্টারনেট সেবা শুরু করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Hörhager
দ্বিতল প্লেনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা
ইউরোপীয় এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে লুফটহানসার কাছে সবচেয়ে বেশি এ-৩৮০ প্লেন রয়েছে৷ ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লুফটহানসার কাছে ১৪টি এ-৩৮০ প্লেন ছিল৷ এই বিমানের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এমিরেটস (১১২টি)৷
ছবি: picture alliance/dpa
সবচেয়ে দীর্ঘ ফ্লাইট
জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট থেকে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস পর্যন্ত যেতে সময় লাগে সাড়ে ১৩ ঘণ্টার বেশি৷
ছবি: Imago Images/R. Wölk
ক্যাভিয়ারের সবচেয়ে বড় ক্রেতা
প্রথম ও বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের ক্যাভিয়ার (সামুদ্রিক মাছের ডিম) পরিবেশন করে থাকে অনেক এয়ারলাইন্স৷ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে লুফটহানসা দাবি করেছিল যে, তারাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাভিয়ার ক্রেতা৷