ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেকুলার আদর্শে বিশ্বাসী বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বাস্তবে কতটা অসাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দিচ্ছে? চলুন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজি বাস্তবতার আলোকে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে যে রাজনৈতিক দলটির অবদান সবচেয়ে বেশি, সেটি আওয়ামী লীগ৷ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় সবক্ষেত্রে বিভক্ত একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন, যার ফলে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ স্থান করে নেয় ন'মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর৷
একাত্তরে দেশ স্বাধীনে অবদান রাখা বঙ্গবন্ধুর সেই আওয়ামী লীগের আদর্শগত অবস্থানের সঙ্গে বর্তমানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মিল খুঁজে পান না অনেকে৷ বিশেষ করে আদর্শগত দিক থেকে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী দলটি ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করছে রাজনীতিতে, এই অভিযোগ অনেকের৷ যাঁরা এমন অভিযোগ করেন, তাঁরা গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে সুনির্দিষ্ট কিছু দিক তুলে ধরছেন৷ চলুন দেখে নেই সেগুলো:
ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে পৃথককরণ
তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের আমল থেকে ‘‘ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিচ্ছেদ’’ কথাটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চালু৷ বিভিন্ন দেশের সংবিধানে এই সমস্যার মূল্যায়ন ও সমাধান আজও আলাদা৷ তার কিছু নমুনা৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
অস্ট্রেলিয়া
কমনওয়েলথ দেশটির সংবিধানে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা বা সরকারি পদ গ্রহণের জন্য কোনো ধর্ম পরীক্ষা নিষেধ করা আছে৷ অপরদিকে যে কোনো ধর্ম মুক্তভাবে পালন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ (ছবিতে সিডনির সংসদ ভবনের উপর অস্ট্রেলিয়ার লোগো)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Coch
ব্রাজিল
ব্রাজিলের বর্তমান সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে; কোনো রাষ্ট্রীয় গির্জা প্রতিষ্ঠা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ‘‘জোট গঠন বা নির্ভরতা’’ নিষিদ্ধ৷ (ছবিতে ব্রাজিলের কনগ্রেসো নাসিওনাল বা জাতীয় কংগ্রেস, যার দুই কক্ষ হলো সেনেট এবং চেম্বার অফ ডেপুটিজ)৷
ছবি: Voishmel/AFP/Getty Images
চীন
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘‘কোনো সরকারি বিভাগ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নাগরিকদের কোনো ধর্মে বিশ্বাস করতে বা না করতে বাধ্য করতে পারবে না; এছাড়া যে সব নাগরিক কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন অথবা করেন না, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা চলবে না৷’’ (ছবিতে বেইজিং-এর গ্রেট হল অফ দ্য পিপল, যেখানে প্রতিবছর ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/How Hwee Young
ফ্রান্স
ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদকে ফরাসিতে বলা হয় ‘লাইসিতে’৷ ফ্রান্সে ধর্ম ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে পরস্পরের থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ একদিকে যেমন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, অপরদিকে সরকারি ক্ষমতাকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির প্রভাবমুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ (ছবিতে প্যারিসের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা জাতীয় সম্মেলন)৷
ছবি: picture-alliance/ZB/M. Tödt
জার্মানি
জার্মান সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, যদিও জার্মানিতে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে পুরোপুরি বিচ্ছেদ নেই৷ সরকারিভাবে স্বীকৃত গির্জাগুলিকে পাবলিক কর্পোরেশনের মর্যাদা দেওয়া হয়, তাদের প্রাপ্য কিছু কিছু কর সরকার আদায় করে দেন – তবে বিনামূল্যে নয়৷ ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক পাঠ্য বিষয় নয়৷ (ছবিতে বার্লিনের বুন্ডেসটাগ বা জার্মান সংসদ)৷
ছবি: imago/Schöning
জাপান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন দখলদারির সময় ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মার্কিন ধ্যানধারণা জাপানে আরোপিত হয়৷ জাপানের সংবিধানে ধর্মপালনের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করা হয়েছে, অপরদিকে সরকার ধর্মপালনের জন্য কোনোরকম চাপ দিতে পারবেন না, অথবা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে সরকারি অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না৷ (ছবিতে টোকিও-র সংসদভবন)৷
ছবি: Reuters
সুইজারল্যান্ড
সুইশ কনফেডারেশনের ফেডারাল সংবিধানে ‘‘ধর্ম ও বিবেকের স্বাধীনতা’’-র গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে৷ বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, ‘‘কোনো ব্যক্তিকে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ে যোগ দিতে বা অঙ্গ হতে, কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে বা ধর্মীয় নির্দেশ অনুসরণ করতে বাধ্য করা চলবে না’’৷ (ছবিতে বার্ন শহরের বুন্ডেসহাউস বা ফেডারাল প্যালেস, যেখানে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন বসে)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Klaunzer
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের প্রধান হলেন ব্রিটিশ নৃপতি স্বয়ং, তিনিই গির্জার উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের নিয়োগ করেন৷ হাউস অফ লর্ডস-এও ২৬ জন বিশপের আসন আছে৷ সব সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ সীমিত, যুক্তরাজ্যে সরকারি শাসনও অপেক্ষাকৃতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ৷ ব্রিটেনের অলিখিত সংবিধান অনুযায়ী অপরাপর ধর্মীয় গোষ্ঠীও ব্যাপক স্বাধীনতা উপভোগ করে৷ (ছবিতে প্যালেস অফ ওয়েস্টমিনস্টার)৷
ছবি: Mohammad Karimi
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গির্জা ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সম্পর্কে জেফারসনের প্রখ্যাত উক্তি মার্কিন সংবিধানে উল্লিখিত নেই৷ ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্টে বলা হয়েছে যে, ‘‘(মার্কিন) কংগ্রেস কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে, বা মুক্তভাবে ধর্মপালন নিষিদ্ধ করে কোনো আইন প্রণয়ন করবে না’’৷ (ছবিতে ক্যাপিটল হিল-এ মার্কিন কংগ্রেসের আসন)৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
সব সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ‘রাষ্ট্রধর্ম' বাতিল নয়
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল, তাতে রাষ্ট্রধর্ম নামে কোনো ধর্ম ছিল না৷ কিন্তু ১৯৮৮ সালে এরশাদের শাসনামলে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম যোগ করা হয়৷ সংবিধানের এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছিল সেসসময় থেকেই৷ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকের আশা ছিল, দলটি সংবিধান পরিবর্তন করে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দেবে৷ তবে আওয়ামী লীগ সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনলেও রাষ্ট্রধর্ম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের উদ্যোগই নেয়নি৷ যদিও সেই পরিবর্তন এনে বাংলাদেশেকে সেক্যুলার রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে ভালো সুযোগ দলটির এই মুহূর্তে রয়েছে৷ এর আগে ১৯৯৬ সালের ক্ষমতায় আসার পরও তাদের এই নিয়ে কোনো উদ্যোগ ছিল না৷ প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগ এই পরিবর্তন আনতে আগ্রহী নয় কেন?
ব্লগার হত্যার সমর্থকদের ‘সমর্থন'
বাংলাদেশে গত তিন বছরে একজন প্রকাশকসহ বেশ কয়েকজন ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্টকে হত্যা করেছে মৌলবাদীরা৷ এ সব হত্যাকাণ্ডের শিকারদের কয়েকজন আওয়ামী লীগের মতোই অসাম্প্রদায়িক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন৷ যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সোচ্চার এ সব ব্লগার একের পর এক খুন হলেও অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের রক্ষায় বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷ বরং ইসলাম ধর্মের সমালোচক, নাস্তিক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ব্লগারদের থেকে দলটিকে অনেক দূরে সরিয়ে নেয়ার সক্রিয় চেষ্টা রয়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের৷ গত ফেব্রুয়ারিতে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে কুপিয়ে হত্যা করে উগ্রপন্থিরা৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই হত্যাকাণ্ডের কোনো নিন্দা জানাননি৷
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসার ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে উৎসাহ, উদ্বেগ দুই-ই আছে৷ আর সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দল ও ইসলামপন্থিদের উত্থানের বিষয়টিকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ৷ ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে আজকের প্রজন্ম?
ছবি: Reuters
পিয়ান মুগ্ধ নবীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়ান মুগ্ধ নবীর কাছে ধর্ম বিষয়টা পুরোপুরি ব্যক্তিগত হলেও রাজনীতি ব্যক্তিগত বিষয় নয়৷ তবে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে তিনি কখনোই সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
শিবরাজ চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী শিবরাজ চৌধুরী৷ তার মতে, ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ ধর্মের মূল বিষয় মনুষত্ব বা মানুষের মধ্যকার শুভবোধ৷ তবে ধর্মের নামে যদি কখনো মৌলবাদ কিংবা চরমপন্থা চলে আসে, সেটা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়৷
ছবি: DW
শিহাব সরকার
ঢাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শিহাব সরকার৷ তার মতে, ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়৷ বলা বাহুল্য, ধর্মের নামে রাজনীতি তিনিও সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
আসিফ হামিদী
আসিফ হামিদীও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন৷ তিনিও মনে করেন ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ঘোর বিরোধী তিনি৷
ছবি: DW
মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর
ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর৷ তাঁর মতেও রাজনীতি ধর্মভিত্তিক হতে পারে না৷ তবে আল্লাহ এবং রাসুলের কিংবা ইসলামের উপর কোনোরকম আঘাত আসলে তার বিরোধীতা করা সব মুসলমানের নৈতিক দ্বায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
সাদমান আহমেদ সুজাত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদমান আহমেদ সুজাত৷ তাঁরও ঐ এক কথা৷ ‘‘ধর্ম এবং রাজনীতি কখনো এক হতে পারে না৷’’ তিনি জানান, ‘‘ধর্ম আমরা সাধারণত জন্মগতভাবে পাই, কিন্তু রাজনীতিকে আমরা অনুসরণ করি৷’’
ছবি: DW
সাজ্জাদ হোসেন শিশির
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন শিশির৷ তাঁর মতে, রাজনীতি সবসময়ই ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া উচিত৷ তাঁর বিশ্বাস, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেললে তার ফল কখনো ভালো হয় না৷
ছবি: DW
দাউদুজ্জামান তারেক
ঢাকার আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাউদুজ্জামান তারেক মনে করেন, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের কখনো মিল হতে পারে না৷ কারণ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসরণও করতে পারেন৷
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে শাহবাগে আন্দোলন শুরুর কিছুদিন পরই ব্লগারদের নাস্তিক হিসেবে আখ্যা দিতে শুরু করে একটি পক্ষ৷ হেফাজতে ইসলাম নামক একটি উগ্রপন্থি সংগঠন তখন নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবিতে রাজপথ গরম করে৷ ব্লগারদের তালিকা প্রস্তুত হয়, যা সরকারের কাছে জমা দিয়েছে উগ্রপন্থি একটি গোষ্ঠী৷
সেই তালিকা থেকে কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে৷ সেসব হত্যাকাণ্ডের পর অনেকেই হেফাজতে ইসলামের দিকে আঙুল তুলেছেন৷ কিন্তু সরকার সযত্নে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক রক্ষা করে গেছেন৷ তাদের রেলের জমি বরাদ্দ দেয়াসহ, আর্থিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে৷ তাদের হাতে রাখা হয়েছে৷ মোটের উপর, অসাম্প্রদায়িক আদর্শে বিশ্বাসী দলের প্রধান ‘মদিনা সনদের' আলোকে দেশ চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন৷ উগ্র-ইসলামপন্থিদের সন্তুষ্ট রাখতে আওয়ামী লীগের এত চেষ্টা কেন?
কট্টরপন্থি আওয়ামী ওলামা লীগ
আওয়ামী লীগের সঙ্গে কট্টরপন্থি আওয়ামী ওলামা লীগের সম্পর্ক কী সেটা কখনোই পরিষ্কার করেনি দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব৷ ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্কে নেই দাবি করলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে নিজেদের নামের সঙ্গে আওয়ামী যোগ করে তারা দিব্যি কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে৷ এই দল বাংলা নববর্ষ উদযাপন বাতিল থেকে শুরু করে পাঠ্যপুস্তক থেকে হিন্দু লেখকদের লেখা বাতিলসহ নানা সময় নানা ধরনের সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়েছে৷ লক্ষ্যণীয় হচ্ছে, বাংলাদেশের বিরোধ দলগুলো যখন রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচির সুযোগ পায় না, তখনও আওয়ামী ওলামা লীগ তাদের সাম্প্রদায়িক দাবি দাওয়া নিয়ে রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে পারে যা সরকারে সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ইঙ্গিতই দেয়৷
জামায়াত নিষিদ্ধের চেয়ে রাজনীতিতেই আগ্রহ বেশি
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর একাধিক শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে ইতোমধ্যে৷ জামায়াতের এ সব নেতাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ে বিভিন্নভাবে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর মানবতাবিরোধী অপরাধে অংশ নেয়ার বিভিন্ন প্রমাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ ফলে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে৷ এমনকি এ সংক্রান্ত একটি মামলাও বিচারাধীন রয়েছে৷
সরকার চাইলে একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে পারে৷ কিন্তু সেপথে না গিয়ে বিএনপি থেকে জামায়াতকে বিচ্ছিন্ন করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ, যারা কিনা ১৯৯৬ সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল৷ প্রশ্ন হচ্ছে, জামায়াতকে নিষিদ্ধের বদলে বিএনপি ছাড়া করতে এত চেষ্টা কেন?
‘সংখ্যালঘুদের রক্ষা করে' আওয়ামী লীগ
বাংলাদেশে একটি প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে, সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের রক্ষা করে আওয়ামী লীগ৷ যে কারণে সংখ্যালঘুদের ভোটের একটি বড় অংশ পায় দলটি৷ এটা সত্য, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অন্যতম বড় হামলার ঘটনাটি ঘটে ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর৷ সেসময় আওয়ামী লীগ ছিল বিরোধী দলে৷ ফলে তখন হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় অনায়াসেই চাপানো যায় সেই জোট সরকারের উপর৷ কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ৷ তাসত্ত্বেও গত কয়েকবছর ধরে সংখ্যালঘুদের উপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে৷ ক্ষমতায় থেকেও আওয়ামী লীগ সেসব হামলা কেন রুখতে পারছে না সেটা এক বিস্ময়৷ সাম্প্রতিক সময়ে বরং হিন্দুদের উপর একাধিক হামলার, তাদের সম্পদ দখলের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷