পাবনায় খ্রিষ্টান ধর্মযাজক লুক সরকারকে হত্যার চেষ্টা পরিকল্পিত বলে মনে করছে পুলিশ৷ লুক জানান, ‘‘যারা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাদের আমি দেখলে চিনবো৷ যাকে আটক করা হয়েছে, তাকে আমি চিনি না৷''
ছবি: AP
বিজ্ঞাপন
‘‘ধর্মান্তরিত করা নয়, আমি শুধু যিশুর বাণী প্রচার করি''
This browser does not support the audio element.
গত ৫ই সেপ্টেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীর ভাড়া বাসায় লুক সরকারকে জবাই করে হত্যার চেষ্টা করে দুবৃত্তরা৷ তিনি নিজের সাহসিকতা এবং পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় প্রাণে বেঁচে যান৷ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিত্সা নেয়ার পর বাড়িতেই অবস্থান করছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করার কথা বলে এর আগেও দুর্বৃত্তরা তাঁর বাসায় একবার এসেছিল৷ তিনি তাদের জানিয়েছেন, ‘‘ধর্মান্তরিত করা আমার কাজ নয়, আমি শুধু যিশুর বাণী প্রচার করি৷''
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিমান কুমার দাশ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটা একটি পরিকল্পিত হত্যা প্রচেষ্টা৷ দুর্বৃত্তরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে অনুসরণ করেছে৷ হত্যাই ছিল উদ্দেশ্য৷ ধর্মবিশ্বাস ছাড়া আর কোনো মোটিভ আমরা এখনো খুঁজে পাইনি৷''
দেশি-বিদেশি পত্র-পত্রিকা এ নিয়ে সংবাদ করেছে ইতিমধ্যে ৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও উঠে এসেছে এ খবর৷
পুলিশ এরই মধ্যে এই ঘটনায় ওবায়দুল ইসলাম নামে এক ‘শিবির কর্মীকে' আটক করেছে৷ ওসি দাবি করেন, ‘‘ওবায়দুল শিবিরের একজন কর্মী৷ পাবনার আশুলিয়া ও ঈশ্বরদী থানায় নাশকতার একাধিক মামলার পলাতক আসামি সে৷ তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে৷''
তবে লুক সরকার জানান, ‘‘যাকে আটক করা হয়েছে, তার নাম আমি বলিনি এবং তাকে চিনিও না৷ যারা আমাকে হত্যা করতে এসেছিল, তাদেরও আমি দেখলে চিনবো৷''
ধর্মবিশ্বাস, ধর্মান্তর এবং ধর্মের স্বাধীনতা
ডেভিড স্ট্যাং খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হয়েছেন৷ তবে তিনি সালাফিস্টদের উগ্রতা এড়িয়ে চলেন৷ জার্মানিতে অনেকেই মনে করেন, মানবাধিকারগুলোর মধ্যে ধর্মের স্বাধীনতাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷এসব নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কৌতূহল
ডেভিড স্ট্যাংয়ের কৈশোর থেকেই ধর্মের প্রতি বেশ অনুরাগ৷ নিয়মিত গির্জায় যেতেন, বাইবেল পড়তেন৷ তখন সবকিছু বুঝতে পারতেন না৷ অনেক প্রশ্ন জাগতো৷ কিন্তু উত্তর জানা হতো না৷ এখনো মনে আছে, দম্পতিদের নিয়ে একটা প্রশ্ন জেগেছিল, কিন্তু গির্জার পাদ্রী সে প্রশ্নের উত্তর তাঁকে বলেননি৷
ছবি: DW/K. Dahmann
হতাশা এবং মুসলমান হওয়া
একসময় ক্যাথলিক চার্চ, অর্থাৎ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের গির্জা সম্পর্কে কেমন যেন হতাশ হয়ে পড়লেন ডেভিড স্ট্যাং৷ অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা শুরু করলেন৷ এক মুসলিম আইনজীবীর সঙ্গে পরিচয় হলো৷ তিনি বললেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো৷’’ তাঁর কথা মেনে একসময় সত্যিই মুসলমান হয়েছেন এবং সেই সুবাদে সবকিছুর নতুন মানেও খুঁজে পেয়েছেন স্ট্যাং৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্ম চর্চার দীর্ঘ প্রক্রিয়া
ডেভিড স্ট্যাং মনে করেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার মানে হলো, নতুন করে অনেক কিছু শেখা৷ তিনি জানতেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে মদ্যপান করা এবং শূকরের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ রাখতে হবে দাড়ি৷ যিনি তাঁকে মুসলমান হতে বলেছিলেন, তিনি এ-ও বলেছিলেন যে, মুসলিম হওয়ার অনুভূতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রক্রিয়াটাও অত্যন্ত দীর্ঘ৷
ছবি: DW/K. Dahmann
বিশ্বাসে আপোশ
কাজের সূত্রে ডেভিড স্ট্যাংকে প্রতিদিন হানোফার-বন যাওয়া-আসা করতে হতো৷ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সব সময় হয়ে উঠতো না৷ তাই সকাল আর সন্ধ্যার নামাজের সময়টা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন৷ তিনি মনে করেন, জীবনের সঙ্গে বিশ্বাসের মেলবন্ধন ঘটানোটাই আসল৷
ছবি: DW/K. Dahmann
উগ্রতা পরিহার
২০১২ সালে উগ্র সালাফিস্টদের সহিংসতা দেখেছেন ডেভিড৷ তারা যেভাবে সন্ত্রাসবাদের পক্ষে যুক্ত দেখায়, তা মানতে পারেননি তিনি৷ সন্ত্রাসবাদীদের মতো ভয় দেখাতে তারা গলার কাছে বোমাও ঠেকায়৷ সালাফিস্ট সম্পর্কে তাঁর একটাই কথা, ‘‘আমি এমন কিছুর সঙ্গে থাকতে চাইনা৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যাথলিক চার্চ ছাড়লেন উটে
উটে লাস-এর জন্ম ক্যাথলিক পরিবারে৷ ধর্মতত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী ছিলেন৷ কিন্তু ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে কিছু সমস্যাও যে হবে তা তিনি বুঝতেন৷ উটে বুঝতেন, ‘‘ক্যাথলিক থাকলে ধর্মতাত্ত্বিক হয়েও তেমন কিছু করতে পারবো না৷’’ এ সব ভেবে চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন উটে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
অন্তর্দ্বন্দ্ব...
উটের স্বামী প্রটেস্ট্যান্ট হলেন৷ ফলে এবার প্রটেস্ট্যান্টদের গির্জায় যাওয়ার সুযোগ পেলেন উটে৷ তাঁর ছেলেটা সমবয়সিদের সঙ্গে খেলতো৷ ওরও চার্চে যাওয়ার ইচ্ছা৷ কয়্যারে যোগ দিতে চায় সে৷ এ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পাঁচ বছর সময় নিয়েছিলেন উটে৷ নারী যাজক আনেগ্রেট কোহেন (বাঁ দিকে) এবং নিনা গুটমান (মাঝে) উটের এ সব অন্তর্দ্বন্দ্ব সমাধানে সহায়তা করেছিলেন৷
ছবি: DW/K. Dahmann
সহনশীলতা
ব্যাপারটিকে উটের বন্ধুরাও খুব ভালোভাবেই নিয়েছিলেন৷ বন্ধুদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে দীক্ষা নিয়ে চার্চে যাওয়া শুরু করলেন উটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গির্জায় ভিড় কমছে
কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে লোকজনের গির্জায় যাওয়ার প্রবণতা কমছে৷ গির্জার সদস্য বাড়াতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ৷ বন শহরের ক্যাথলিক তথ্যকেন্দ্র ফিডেস-এ ধর্মের বিষয়ে সবাইকে আগ্রহী করে তোলার কাজটি করেন যাজক টোমাস ব্যার্নার্ড (ডানে)৷
ছবি: DW/K. Dahmann
কারণ কেলেঙ্কারি?
গির্জায় আর আগের মতো বেশি মানুষ আসছে না কেন? অনেকে মনে করেন, সাম্প্রতিক কালে পাদ্রিদের যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর খবর এক্ষেত্রে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে৷ যাজক টোমাস ব্যার্নার্ডও এ সম্পর্কে কিছুটা একমত৷ তিনি মনে করেন, এসব খবর বেশি প্রচার করে মিডিয়া বেশ ক্ষতি করেছে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্মের স্বাধীনতা
ধর্মান্তরিত হয়েছেন, এমন অনেকেই মিউনিখ শহরের একটা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন৷ প্রদর্শনীতে মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের স্বাধীনতার কথাও প্রচার করা হয়৷
ছবি: Jüdisches Museum München 2013
11 ছবি1 | 11
তিনি জানান, ‘‘এ বিষয় নিয়ে পুলিশ আমাকে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলতে নিষেধ করেছে৷ আর যদি কথা বলতেই হয়, তাহলে পুলিশের সামনে বলতে হবে৷''
এই যাজক বলেন, ‘‘আমাকে ঘটনার পর পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে৷ তবে আমার এখন খুব খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, আমি কী এমন অপরাধ করেছি, যে আমাকে হত্যা করতে হবে৷ আমার জানা মতে আমার কোনো শত্রু ছিল না৷ কেন তাঁরা আমার শত্রু হলেন?''
জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক লুক সরকার বলেন, ‘‘আমার কোনো অভিযোগ নেই কারোর বিরুদ্ধে৷ আমি মামলাও করতে চাইনি৷ তবে দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল৷ তাই পুলিশের অনুরোধে অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি৷''
এদিকে লুক সরকারকে হত্যার চেষ্টায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতারা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি এবং নিজেদের নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন৷ সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন৷