1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্মযাজক এবং যৌন নিগ্রহ

২৪ মার্চ ২০১০

ক্যাথলিক গির্জার কিছু ধর্মযাজকের হাতে শিশুদের যৌননিগ্রহের শিকার হওয়ার ঘটনা নিয়ে ইউরোপের মানুষ এখন বেশ ক্ষুব্ধ৷ আয়ারল্যান্ডে এধরণের যৌন পীড়নের অসংখ্য ঘটনার কথা বেরিয়ে এসেছে৷

বাইরে সবকিছু ঝকেঝকে - কিন্তু ভেতরে ?ছবি: picture-alliance/dpa

বর্তমান পোপ, ষোড়শ বেনেডিক্ট একটি প্যাস্টোরাল চিঠিতে আয়ারল্যান্ডে এইসব যৌন নিগ্রহের ঘটনার নিন্দা করেছেন৷ জার্মানির ক্যাথলিক স্কুলেও অতীতে কিছু সংখ্যক পাদ্রির হাতে শিশু-কিশোরদের উপর যৌন নিগ্রহ ঘটার কথা ফাঁস হয়ে গেছে সম্প্রতি৷

এন্ড্রু ম্যাডেন জানায়, আমার ওপর বছরের পর বছর যৌন নিগ্রহ চালানো হয়েছে৷ শুরু হয়েছিল আমার বয়স যখন ১২ তখন থেকেই৷ আমি আমার স্কুলের একটি শিক্ষককে সব ঘটনা খুলে বলি৷ তখন পাদ্রী পেইনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তাঁকে কাজ দেয়া হয় ডাবলিনে, অন্য আরেকটি স্কুলে৷

কে নিষ্পাপ ?ছবি: picture alliance/dpa

ডাবলিনের একটি স্কুলে ঘটেছিল এই যৌননিগ্রহের ঘটনা৷ ক্যাথলিক গির্জার শীর্ষ ব্যক্তিরা এইসব ঘটনাকে আমল দেননি৷ সব সময়ই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ পাদ্রি, বিশপ বা আর্চবিশপ এ ধরণের ঘটনার কথা স্বীকার করেননি৷ ক্ষমা চাওয়াতো দূরের কথা, জনসম্মুখে এসব ঘটনা কখনো তুলেও ধরা হয়নি৷ কিন্তু এবার পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট নিজেই মুখ খুলেছেন৷

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পোপ নিজেই বললেন, ‘‘আপনারা সবাই জানেন, শিশু-কিশোরদের ওপর যৌন অত্যাচারের জন্য গত কয়েক মাস ধরেই আয়ারল্যান্ডের গির্জাগুলো তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে৷ আমি এ বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত৷ আমি আয়ারল্যান্ড্যের ক্যাথলিক নেতাদের উদ্দেশে একটি প্যাস্টোরাল চিঠি লিখেছি৷''

চিঠিতে পোপ এসব অপ্রীতিকর ঘটনার কথা স্বীকার করে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন৷ তিনি এসব ঘটনাকে ‘মারাত্মক ভুল' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন৷ ভুক্তভোগীদের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ‘‘তোমরা সবাই অমানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করেছো এবং এ জন্য আমি সত্যিই ভীষণ দুঃখিত৷ তোমাদের বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে, তোমাদের আত্মমর্যাদায় আঘাত হানা হয়েছে৷''

পোপের এই প্যাস্টোরাল চিঠির ব্যাপারে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে৷ ভুক্তভোগীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘ওয়ান ইন ফোর' এর নির্বাহী পরিচালক মেইভ লুইস পোপের চিঠি প্রসঙ্গে অসন্তোষ প্রকাশ করেন৷ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কল্ম ও গর্মান৷ গর্মান নিজেই এসব ঘটনার শিকার৷ চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘এখানে শিশুদের ওপর যৌন নিগ্রহের ঘটনা বেশ পরিকল্পিতভাবে ধামা-চাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ গির্জা, গির্জার ক্ষমতা এবং অর্থকে রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷''

চিঠিতে সন্তোষ নয় ভুক্তভোগীরাছবি: AP

যৌন নিগ্রহের শিকারদের নিয়ে তৈরি সংগঠনগুলো জানিয়েছে, পোপের চিঠিতে ভ্যাটিক্যানের কোন দায়-দায়িত্বের কথার উল্লেখ নেই৷ গির্জার সংস্কার নিয়েও স্পষ্ট কোন কথা বলা হয়নি৷

জার্মানিতেও এ ধরণের নিগ্রহের অসংখ্য ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে৷ জার্মানিতে ক্যাথলিক ধর্মীয় সংগঠনগুলোর অবস্থা এই মুহূর্তে, বলা যেতে পারে, বেশ নাজুক৷ পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট নিজেও এখন পর্যন্ত জার্মানিতে এসব অনভিপ্রেত ঘটনা সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি৷ চিঠিতেও জার্মানির প্রসঙ্গ স্থান পায়নি৷ জার্মানিতে গির্জার সংস্কারমুখী আন্দোলন, ‘‘ভিয়ার জিন্ড কির্শে '' - আমরাই গির্জা - অত্যন্ত উচ্চকণ্ঠে সমালোচনা করেছে নিগ্রহকারী পাদ্রীদের৷ সংস্থার মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান ভাইজনার ক্ষোভ প্রকাশ করে পাদ্রিদের উদ্দেশ বলেন, ‘‘ভ্যাটিক্যানের পোপ নিজেই জার্মান নাগরিক৷ একসময়ের আর্চবিশপ কার্ডিনাল জোসেফ রাৎসিঙ্গার৷ আমি বিশ্বাস করি, পোপের নিজেরই এখন সক্রিয় হয়ে কাজ করা উচিৎ৷ এসব ঘটনা এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি খুব ভাল ভাবেই অবহিত৷ জার্মানির ক্যাথলিক সমাজের উদ্দেশে তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠানো উচিৎ, একই সঙ্গে যারা এসব ঘটনার শিকার তাদের সঙ্গেও পোপের কথা বলা প্রয়োজন৷''

পোপের লেখা চিঠিছবি: picture alliance/dpa

আয়ারল্যান্ডের অনভিপ্রেত ঘটনা

আয়ারল্যান্ডে গত দশকে গির্জার পাদ্রিদের হাতে কয়েক হাজার শিশু যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিল৷ জার্মানিতেও এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে কিন্তু আয়ারল্যান্ডের এসব ঘটনা সবার জন্য ছিল কল্পনাতীত৷ যে পাদ্রিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল তাঁরা সবাই একবাক্যে ঘটানাগুলো অস্বীকার করেন৷ এসব বন্ধ করতে সরকার সক্রিয় হতে বাধ্য হয়৷ প্রকাশ করা হয় তিন হাজার পাতার একটি প্রতিবেদন৷ তদন্ত কমিশন প্রতিবেদনের নাম দিয়েছে ‘রায়ান রিপোর্ট'৷ প্রতিবেদনে জানানো হয় কয়েক হাজার শিশুর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে৷ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এসব পীড়ণ চালানো হত৷ বাচ্চাদের দিয়ে কঠিন সব কাজ করানো হত, ঠিকমত খেতে দেওয়া হত না, তার ওপর চলতো যৌন নিগ্রহ৷ এসব ঘটনা সম্পর্কে মেইভ লুইস জানান,

আয়ারল্যান্ডের আইন মন্ত্রী - এ লজ্জা কার ?ছবি: AP

‘‘এসব কষ্ট শিশুদের সহ্য করতে হয়েছে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য৷ এইসব ক্যাথলিক স্কুলে বাচ্চাদের ওপর এসব নিগ্রহ চালানো হয়েছে অন্যরা দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছে, কেউ-ই কিছু বলেনি৷ এসব শিশুর জীবন ধ্বংস হচ্ছে – দেখেও কেউ এগিয়ে আসেনি৷''

মেইভ লুইস যৌন নিগ্রহের শিকার যারা তাদের নিয়ে একটি সংস্থা চালাচ্ছেন৷ সংস্থার নাম ওয়ান ইন ফোর৷ আরো অসংখ্য সংস্থা রয়েছে এ ধরণের৷ সংগঠনগুলোর প্রায় কয়েক দশক লেগেছে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে যাতে করে এসব নিগ্রহ বন্ধ হয়৷ শেষ পর্যন্ত সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে এবং পুরো বিষয়টির উপর দৃষ্টিপাত করেছে৷ কমিশননিগ্রহের শিকার প্রতিটি শিশুকে ৬৫ হাজার ইউরো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কিন্তু তারপরেও বলা হচ্ছে সমাজে গির্জার স্থান অত্যন্ত উঁচুতে৷ যে বা যারা এসব নিগ্রহ চালিয়েছে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে৷ ডাবলিনের বিশপ জোসেফ ডাফি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ আমি বেশ খোলাখুলিভাবেই স্বীকার করবো যে এসব ঘটনায় গির্জার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে৷ আমরা একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি৷ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷''

প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদক: আবদুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ