বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে এক ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টানকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস৷ অনলাইনে এক বিবৃতিতে এই দায় স্বীকার করে জঙ্গি গোষ্ঠীটি, জানিয়েছে অনলাইনে জিহাদিদের কার্যক্রম নজরদারী সংস্থা সাইট৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি জঙ্গিদের কার্যক্রম আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে৷ গতবছর বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পর মঙ্গলবার আবারো একজনকে জবাই করো হত্যা করা হলো৷ ৬৮ বছর বয়সি হোসেন আলী সরকার একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং ১৯৯৯ সালে ইসলাম ধর্ম বাদ দিয়ে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন৷ তবে তিনি কোন রকম ধর্ম প্রচারের কাজ করতেন না বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে, ‘অন্যদের শিক্ষা' দিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ইসলামি স্টেটের অনুসারীরা৷
এদিকে, কুড়িগ্রাম জেলার পুলিশ প্রধান তোবারক উল্লাহ জানিয়েছেন, তিনজন আক্রমণকারী মঙ্গলবার ভোরে সরকারকে কোপায়৷ সকালে সাধারণত তিনি হাঁটতে বের হতেন৷ ঘটনার সময় স্থানীয় লোকজন ভুক্তভোগীকে সহায়তায় এগিয়ে আসতে চাইলে আক্রমণকারীরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় বলেও জানিয়েছেন উল্লাহ৷
প্রসঙ্গত, গত কয়েকমাসে বাংলাদেশে বেশি কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট৷ তবে সেদেশের সরকার দেশটিতে জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতির কথা বারবার অস্বীকার করেছে৷ বরং সরকার মনে করে, জামাতুল মুজাহিদিন নামে স্থানীয় একটি জঙ্গি গোষ্ঠী সেসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে৷
গত নভেম্বরে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে' স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠীটির পাঁচ সদস্য নিহত হয়৷ তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সতর্কতার মধ্যেই মঙ্গলবারের হত্যাকাণ্ড আবারো আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷