যুদ্ধ করে একটি স্বাধীন দেশ অর্জন করলেও, সামাজিক-সাংস্কৃতিক রুচিবোধে উত্তরণ ঘটাতে পারিনি৷ আমাদের সমাজ জীবনে ধর্মের প্রভাব খুব বড়ভাবেই ছিল৷
বিজ্ঞাপন
মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি তার প্রমাণ৷ যুক্তি দেওয়া যেতেই পারে যে, বাঙালি মননে ধর্ম অতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না বলেই মুসলিম লীগ বিলীন হয়ে গেছে৷ জামায়াতের রাজনীতির গুরুত্ব ও প্রভাব কমে গেছে৷ সাদা চোখে এ যুক্তি বেশ গ্রহণযোগ্য মনে হতে পারে৷ কিন্তু একটু চিন্তা দিয়ে পর্যবেক্ষণ বা সমাজ বিশ্লেষণ করলে ভিন্ন বাস্তবতা দৃশ্যমান হতে পারে৷ ‘হতে পারে’ বলছি একারণে যে,নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি আসলে কখনও বিশ্লেষণই করা হয়নি৷ অগ্রসর শিক্ষিত শ্রেণী, যারা শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-সমাজ চিন্তক লেখক তাদের থেকে সমাজ বিশ্লেষণ প্রত্যাশিত ছিল৷ তাদের থেকে বিশ্লেষণটা কখনও আসেনি৷ এর একটি কারণ হয়ত এই যে,যাদের থেকে এই বিশ্লেষণ আসতে পারত-তাদের আমরা ১৯৭১ সালে হারিয়েছে৷ পাকিস্তানিরা দেশীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সহায়তায় তালিকা করে তাদের হত্যা করেছে৷ এও খুব তাৎপর্যপূর্ণ যে, শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-সমাজ চিন্তক মানুষগুলোকে হত্যা করা হয়েছে স্বাধীনতার ঠিক আগে দিয়ে৷ যখন পাকিস্তানিরা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে,তখনই তাদের হত্যা করা হয়৷ বাংলাদেশ যাতে জ্ঞানভিত্তিক অগ্রসর চিন্তার দেশে পরিণত হতে না পারে, লক্ষ্য ছিল সেটাই৷ কোনো সন্দেহ নেই যে, তাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে৷ বাঙালি জাতি যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের পরাজিত করেছে৷ পরাজিত পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতির শীর্ষ জ্ঞানের দিশারিদের হত্যা করে চিন্তাজগতকে অন্ধকার করে দিয়ে গেছে৷ সেই অন্ধকারকে আলোকিত করা যাদের দায়িত্ব ছিল, তারা সেই অন্ধকার দূর করতে পারেনি৷ শিক্ষক-চিন্তক শুন্য স্থানে যারা দৃশ্যমান হয়েছেন, তাদের অধিকাংশের চিন্তাজগত বিস্তৃত ও দিকনির্দেশনা সমৃদ্ধ ছিল না৷ ছিল না তাদের চিন্তার গভীরতা৷ তাদের চিন্তাজগতের সংকীর্ণতার মূল্য স্বাধীন বাংলাদেশকে দিতে হয়েছে৷
ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে পৃথককরণ
তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের আমল থেকে ‘‘ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিচ্ছেদ’’ কথাটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চালু৷ বিভিন্ন দেশের সংবিধানে এই সমস্যার মূল্যায়ন ও সমাধান আজও আলাদা৷ তার কিছু নমুনা৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
অস্ট্রেলিয়া
কমনওয়েলথ দেশটির সংবিধানে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা বা সরকারি পদ গ্রহণের জন্য কোনো ধর্ম পরীক্ষা নিষেধ করা আছে৷ অপরদিকে যে কোনো ধর্ম মুক্তভাবে পালন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ (ছবিতে সিডনির সংসদ ভবনের উপর অস্ট্রেলিয়ার লোগো)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Coch
ব্রাজিল
ব্রাজিলের বর্তমান সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে; কোনো রাষ্ট্রীয় গির্জা প্রতিষ্ঠা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ‘‘জোট গঠন বা নির্ভরতা’’ নিষিদ্ধ৷ (ছবিতে ব্রাজিলের কনগ্রেসো নাসিওনাল বা জাতীয় কংগ্রেস, যার দুই কক্ষ হলো সেনেট এবং চেম্বার অফ ডেপুটিজ)৷
ছবি: Voishmel/AFP/Getty Images
চীন
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘‘কোনো সরকারি বিভাগ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নাগরিকদের কোনো ধর্মে বিশ্বাস করতে বা না করতে বাধ্য করতে পারবে না; এছাড়া যে সব নাগরিক কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন অথবা করেন না, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা চলবে না৷’’ (ছবিতে বেইজিং-এর গ্রেট হল অফ দ্য পিপল, যেখানে প্রতিবছর ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/How Hwee Young
ফ্রান্স
ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদকে ফরাসিতে বলা হয় ‘লাইসিতে’৷ ফ্রান্সে ধর্ম ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে পরস্পরের থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ একদিকে যেমন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, অপরদিকে সরকারি ক্ষমতাকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির প্রভাবমুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ (ছবিতে প্যারিসের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা জাতীয় সম্মেলন)৷
ছবি: picture-alliance/ZB/M. Tödt
জার্মানি
জার্মান সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, যদিও জার্মানিতে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে পুরোপুরি বিচ্ছেদ নেই৷ সরকারিভাবে স্বীকৃত গির্জাগুলিকে পাবলিক কর্পোরেশনের মর্যাদা দেওয়া হয়, তাদের প্রাপ্য কিছু কিছু কর সরকার আদায় করে দেন – তবে বিনামূল্যে নয়৷ ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক পাঠ্য বিষয় নয়৷ (ছবিতে বার্লিনের বুন্ডেসটাগ বা জার্মান সংসদ)৷
ছবি: imago/Schöning
জাপান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন দখলদারির সময় ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মার্কিন ধ্যানধারণা জাপানে আরোপিত হয়৷ জাপানের সংবিধানে ধর্মপালনের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করা হয়েছে, অপরদিকে সরকার ধর্মপালনের জন্য কোনোরকম চাপ দিতে পারবেন না, অথবা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে সরকারি অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না৷ (ছবিতে টোকিও-র সংসদভবন)৷
ছবি: Reuters
সুইজারল্যান্ড
সুইশ কনফেডারেশনের ফেডারাল সংবিধানে ‘‘ধর্ম ও বিবেকের স্বাধীনতা’’-র গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে৷ বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, ‘‘কোনো ব্যক্তিকে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ে যোগ দিতে বা অঙ্গ হতে, কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে বা ধর্মীয় নির্দেশ অনুসরণ করতে বাধ্য করা চলবে না’’৷ (ছবিতে বার্ন শহরের বুন্ডেসহাউস বা ফেডারাল প্যালেস, যেখানে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন বসে)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Klaunzer
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের প্রধান হলেন ব্রিটিশ নৃপতি স্বয়ং, তিনিই গির্জার উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের নিয়োগ করেন৷ হাউস অফ লর্ডস-এও ২৬ জন বিশপের আসন আছে৷ সব সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ সীমিত, যুক্তরাজ্যে সরকারি শাসনও অপেক্ষাকৃতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ৷ ব্রিটেনের অলিখিত সংবিধান অনুযায়ী অপরাপর ধর্মীয় গোষ্ঠীও ব্যাপক স্বাধীনতা উপভোগ করে৷ (ছবিতে প্যালেস অফ ওয়েস্টমিনস্টার)৷
ছবি: Mohammad Karimi
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গির্জা ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সম্পর্কে জেফারসনের প্রখ্যাত উক্তি মার্কিন সংবিধানে উল্লিখিত নেই৷ ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্টে বলা হয়েছে যে, ‘‘(মার্কিন) কংগ্রেস কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে, বা মুক্তভাবে ধর্মপালন নিষিদ্ধ করে কোনো আইন প্রণয়ন করবে না’’৷ (ছবিতে ক্যাপিটল হিল-এ মার্কিন কংগ্রেসের আসন)৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
মুক্তিযুদ্ধের পরের স্বাধীন বাংলাদেশে দাড়ি-টুপিকে রাজাকার-আল বদর-আল শামসের সিম্বল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ গল্প-উপন্যাস,নাটক-সিনেমা সর্বত্র ব্যবহার করা হয়েছে৷ একথা সত্যি যে,জামায়াতে ইসলামী ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করেই একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ করেছিল৷ জামায়াতের নেতা গোলাম আযম, নিজামীরা দাড়ি-টুপিধারী ছিল৷ রাজাকারদেরও অনেকের দাড়ি-টুপি ছিল৷ দাড়ি-টুপি ছাড়া রাজাকারও ছিল৷
দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় জামায়াত-রাজাকারের সংখ্যা ছিল অতি নগন্য৷ জামায়াত-রাজাকারদের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক দাড়ি-টুপি পরিহিত বা ধর্ম পালন করা মানুষ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন৷ অধিকাংশ তরুণ মুক্তিযোদ্ধার বাবা-চাচা-দাদা ছিলেন দাড়ি-টুপি পরিহিত ধর্ম পালনকারী৷ স্বাধীন দেশে রাজাকার ‘ঘৃণা’ শব্দে পরিণত হবে,সেটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু দাড়ি-টুপিকে ঘৃণ্য রাজাকারের সিম্বলে পরিণত করাটা ছিল চূড়ান্ত রকমের অদূরদর্শী কর্ম৷যা বাংলাদেশের নাটক সিনেমায় বছরের ধরে করা হয়েছে৷ এই জায়াগাটিতে কোনো দুরদর্শী দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বুদ্ধিজীবী চিন্তক শ্রেণী৷ তারাও এই স্রোতে গা ভাসিয়েছেন৷ তারা একদিকে প্রগতিশীলতার কথা বলে ইসলাম ধর্ম পালন বিষয়ে উন্নাসিকতা দেখিয়েছেন৷ আবার সংস্কৃতির কথা বলে অন্য ধর্ম পালনের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন৷ তাদের এই স্ববিরোধী আচরণ দেশের মানুষ দেখেছেন৷ ফলে জনমানুষ থেকে তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন৷ তারা কথা-লেখা-কাজ দিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করতে পারেনি৷
এরই পরিণতিতে ধর্মাশ্রয়ে রাজনীতির উর্বর ভূমি পেয়েছে সামরিক শাসকেরা৷ জিয়াউর রহমান ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ করে দিয়েছে৷ জামায়াতে ইসলামীকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে বিএনপি৷ ধর্মের ব্যবহারে রাজনীতিও করেছে৷
এরশাদ আরেক ধাপ এগিয়ে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করেছে৷ খালেদা জিয়া জামানায় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে৷
এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মুক্তচিন্তার প্রগতিশীল সমাজ-নির্মাণের রাজনীতি করেছে বামধারা ও আওয়ামী লীগ৷ বামধারা বইয়ের ভাষায় কথা বলে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে গেছে৷ বাম নেতাদের অনেকে ক্ষমতার মোহে আওয়ামী লীগে আশ্রয় খুঁজেছে৷ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে রাজনীতি করেছে আওয়ামী লীগ৷ যুদ্ধাপরাধের বিচারের মত প্রায় অবিশ্বাস্য কর্মটিও সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার৷
আবার বিষ্ময়কর হলেও সত্যি, আওয়ামী লীগ ক্রমান্বয়ে তার নিজের নীতি পরিত্যাগ করে সামরিক শাসকদের নীতির দিকে ঝুঁকে পড়েছে৷ হিজাব পড়েছে, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছে, মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালানোর বক্তৃতা করেছে৷ হেফজতের সঙ্গে আপোষ করেছে৷পাঠপুস্তক সাম্প্রদায়িকরণ করেছে৷ এখন সরকারের জনস্বাস্থ্য ইনসটিটিউট হিজাব ও টাকনুর উপর কাপড় পরিধানের নির্দেশ জারি করছে৷ শোকজ হচ্ছে,নির্দেশ প্রত্যাহারও হচ্ছে৷ কিন্তু নির্দেশ জারির যে মনোজগত, তা তো থেকেই যাচ্ছে৷ এই মনোজগতই নাটক-সিনেমায় কবুল বলা যাবে না,আইন করতে চাইছে৷
বলা হয়ে থাকে আওয়ামী লীগ বাধ্য হয়ে নীতি থেকে সরে এসেছে৷এই যুক্তি সঠিক হলে আওয়ামী লীগের সমর্থন বা ভোট বাড়ার কথা৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি৷ আওয়ামী লীগের যে কমবেশি ৩৮ শতাংশ ভোট, তা বাড়েনি৷
ভোটারবিহীন ও রাতের নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে হিসেব করছি না৷ নীতি ত্যাগের ফলশ্রুতিতে ভোট না বাড়লেও বা কমলেও, ক্ষমতায় থাকতে পারছে৷ বাহিনী-প্রশাসন ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়া-থাকা সামরিক শাসকদের নীতি৷ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিও সামরিক শাসকদের নীতি৷ সামরিক শাসকদের গড়া দলের মত, আওয়ামী লীগও তা করছে৷ ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিতে কে কতটা এগিয়ে সেই প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে অংশগ্রহণকারী সবাই, বামধারা বাদে৷ ফলে ক্রমান্বয়ে মুক্তচিন্তা-মুক্তবুদ্ধি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে৷ রাজনৈতিক বক্তৃতায় দেশে এগিয়ে গেলেও, অগ্রসরমান চিন্তাধারায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে৷
২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসার ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে উৎসাহ, উদ্বেগ দুই-ই আছে৷ আর সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দল ও ইসলামপন্থিদের উত্থানের বিষয়টিকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ৷ ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে আজকের প্রজন্ম?
ছবি: Reuters
পিয়ান মুগ্ধ নবীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়ান মুগ্ধ নবীর কাছে ধর্ম বিষয়টা পুরোপুরি ব্যক্তিগত হলেও রাজনীতি ব্যক্তিগত বিষয় নয়৷ তবে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে তিনি কখনোই সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
শিবরাজ চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী শিবরাজ চৌধুরী৷ তার মতে, ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ ধর্মের মূল বিষয় মনুষত্ব বা মানুষের মধ্যকার শুভবোধ৷ তবে ধর্মের নামে যদি কখনো মৌলবাদ কিংবা চরমপন্থা চলে আসে, সেটা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়৷
ছবি: DW
শিহাব সরকার
ঢাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শিহাব সরকার৷ তার মতে, ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়৷ বলা বাহুল্য, ধর্মের নামে রাজনীতি তিনিও সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
আসিফ হামিদী
আসিফ হামিদীও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন৷ তিনিও মনে করেন ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ঘোর বিরোধী তিনি৷
ছবি: DW
মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর
ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর৷ তাঁর মতেও রাজনীতি ধর্মভিত্তিক হতে পারে না৷ তবে আল্লাহ এবং রাসুলের কিংবা ইসলামের উপর কোনোরকম আঘাত আসলে তার বিরোধীতা করা সব মুসলমানের নৈতিক দ্বায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
সাদমান আহমেদ সুজাত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদমান আহমেদ সুজাত৷ তাঁরও ঐ এক কথা৷ ‘‘ধর্ম এবং রাজনীতি কখনো এক হতে পারে না৷’’ তিনি জানান, ‘‘ধর্ম আমরা সাধারণত জন্মগতভাবে পাই, কিন্তু রাজনীতিকে আমরা অনুসরণ করি৷’’
ছবি: DW
সাজ্জাদ হোসেন শিশির
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন শিশির৷ তাঁর মতে, রাজনীতি সবসময়ই ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া উচিত৷ তাঁর বিশ্বাস, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেললে তার ফল কখনো ভালো হয় না৷
ছবি: DW
দাউদুজ্জামান তারেক
ঢাকার আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাউদুজ্জামান তারেক মনে করেন, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের কখনো মিল হতে পারে না৷ কারণ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসরণও করতে পারেন৷