1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুই দিনে দুই লেখক গ্রেপ্তার

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ মে ২০১৯

শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার পরের দিন চার্চে আনন্দ আয়োজনের সমালোচনা করেছিলেন কবি এবং সাংবাদিক হেনরী স্বপন৷ এক খ্রীষ্টান ধর্মযাজক মামলা করায় মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷

Symbolbild Kindesmissbrauch katholische Kirche (Imago/blickwinkel)
ছবি: Imago Images/blickwinkel

বুধবার আরেক মামলায় গ্রেপ্তার হলেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ৷ হেনরী স্বপনকে তাঁর বরিশালের নবগ্রাম রোডের খ্রীষ্টান কলোনির বাসা থেকে মঙ্গলার দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে৷ এরপর তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়৷ তাঁর বিরুদ্ধে বরিশালের খ্রীষ্টান ধর্মযাজক ফাদার লাকাবা লিএল গোমেজ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন৷ বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও আইনজীবী মানবেন্দ্র বটব্যাল ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘শ্রীলঙ্কার চার্চ ও হোটেলে বোমা হামলার পরদিন বরিশাল চার্চে পূর্ব নির্ধারিত একটি আনন্দ অনুষ্ঠান হয়৷ হেনরী স্বপন তাঁর এক ফেসবুক পোস্টে ওই অনুষ্ঠানের সমালোচনা করেন৷ আর সে কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷''

বরিশালের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী সৈয়দ দুলাল বলেন, ‘‘ওটা ছিল ইস্টার সানডের অনুষ্ঠান৷ ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার দিনও অনুষ্ঠান হয়৷ পরদিনও ওই অনুষ্ঠান চলে রাত পর্যন্ত৷ সেখানে গান ও খাওয়া-দাওয়াসহ নানা আয়োজন ছিল৷ হেনরী স্বপন বোমা হামলার পরদিন ২২ তারিখের অনুষ্ঠানের সমালোচনা করেন৷  সমালোচনার পর হেনরীকে হুমকিও দেয়া হয়৷ তিনি নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করতে গেলেও থানা তাঁর জিডি গ্রহণ করেনি৷ এমনকি তাঁকে নিরাপত্তাও দেয়নি৷ উল্টো তাঁকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল আইনের মামলায় আটক করা হলো৷''

সামান্য সমালোচনা করায়ও প্রতিশোধ নিতে ডিজিটাল আইনের অপব্যবহার করা হলো: মানবেন্দ্র বটব্যাল

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘হেনরী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কোনো কাজ করেনি৷ সে একটি অপ্রত্যাশিত কাজের সমালোচনা করেছে মাত্র৷ কোনো অগ্রহণযোগ্য কাজের সমালোচনাও করা যাবে না? আর এর পিছনে আমার ধারণা পুলিশের ইন্ধন আছে৷ তা না হলে হেনরীর জিডি না নিয়ে, তাঁকে নিরাপত্তা না দিয়ে এতদিন পর উল্টো তাঁকে গ্রেপ্তার করে তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা কেন নেয়া হলো?'' 

মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন,‘‘আমরা সাংবাদিকরা শুরু থেকেই এই ডিজিটাল আইনের বিরোধিতা করে আসছি৷ এই আইনটি বাক-স্বাধীনতা ও কন্ঠরোধের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এখন দেখলাম সামান্য সমালোচনা করায়ও প্রতিশোধ নিতে এই আইনটির অপব্যবহার করা হলো৷''

হেনরী স্বপন তাঁর ফেসবুকে পোস্টটি দেন ২৩ এপ্রিল৷ শিরোনাম ছিল, ‘‘রোম যখন পুড়ছে, বিশপ সুব্রত তখন বাঁশি বাজাচ্ছে৷'' তিনি লিখেছেন,‘‘রোম যখন পুড়ছিল, তখন সম্রাট নিরো নাকি বাঁশি বাজাচ্ছিল৷ শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর গির্জায় আত্মঘাতী হামলায় শত শত মানুষ নিহতের অকস্মিকতায় যখন শোকস্তব্ধ বিশ্ববাসী, তখন বরিশাল ক্যাথলিক ডাইওসিসের বিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার চার্চ চত্বরে করছেন সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠান৷... শ্রীলঙ্কার খ্রীষ্ট সমাজের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে বরিশাল ক্যাথলিক ডাইওসিসের এ রকম আয়োজনকে রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ এবং জামে কসাই মসজিদের ইমাম ও বরিশালের সকল নেতৃবৃন্দ দুঃখজনক ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেছেন৷'' ওই অনুষ্ঠান নিয়ে সমালোচনার খবর বরিশালের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশিত হয়৷

দুপুর পুলিশের লোকজন ‘কাজ আছে' বলে তাঁকে বাসা থেকে নিয়ে যায়: লাকী সরকার

This browser does not support the audio element.

এরপর ১১ মে গভীর রাতে অজ্ঞাত পরিচয় দুই ব্যক্তি হেনরী স্বপনকে তাঁর নবগ্রাম রোডের বাসায় গিয়ে বরিশাল ত্যাগ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়৷  তিনি চিৎকার করলে তারা পালিয়ে যায়৷ এই ঘটনার পর হেনরী থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ নেয়নি৷ তাঁর নিরাপত্তাও দেয়নি৷

হেনরী স্বপনের স্ত্রী লাকী সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশের লোকজন ‘কাজ আছে' বলে তাঁকে বাসা থেকে নিয়ে যায়৷ তখন কোনো মামলার কথা বলেনি৷ তাঁকে আদালতে না তোলার কারণে আমরা জামিনের আবেদনও করতে পারিনি৷ তাঁকে বিকেলে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়৷ পুলিশ তাঁর মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ নিয়ে গেছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘যারা অবৈধভাবে চার্চের খেয়ে বড় হচ্ছে, তাদের সমালোচনা করায়, তারা তাঁর উপর ক্ষুব্ধ৷ আর কোনো বিষয় নিয়ে তাঁর সাথে কোনো শত্রুতা নেই৷''

তবে মামলার বাদী চার্চের ফাদার লাকাবা লিএল গোমেজ ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘হেনরী স্বপন বিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদারসহ আমাদের পুরো খ্রীষ্টান সম্প্রদায়কে অবমাননা করে৷ সে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়ে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে৷ এমনকি তার পোস্টে ইসলাম ধর্মকেও অবমাননা করা হয়েছে৷'' তিনি শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার পরদিন আনন্দ অনুষ্ঠানের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘‘পহেলা বৈশাখ ও ইস্টার সানডে'র অনুষ্ঠান ছিল৷ কোনো আনন্দ অনুষ্ঠান হয়নি৷ ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়েছে৷ আমরা শোক প্রকাশ করেছি৷ দুই মিনিট নীরবতা পালন করেছি৷'' এতদিন পর মামলা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ঢাকায় আমাদের আলোচনা করতে হয়েছে৷ সবার সাথে কথা বলে মামলার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে৷''

কবি হেনরী স্বপনের বিরুদ্ধে জিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘তিনি একজন কবি এবং সাংবাদিক৷ শ্রীলঙ্কার দুঃখজন ঘটনার পর স্থানীয় চার্চের  ব্যাপারে কোনো কথা বলে বা সমালোচনা করা যাবে না, এটা হয় না৷ধর্মীয় অনুভূতি, কটূক্তি বা উসকানি এই বিষয়গুলো সতর্কতার সাথে দেখা উচিত৷ তা না হলে যে কেউ তার অনুভূতির কথা বলে অন্যের বিরুদ্ধে মামলা করে দেবে৷ তাহলে তো নাগরিকদের বাক-স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে না৷''

ঢাকায় আলোচনা করে সবার সাথে কথা বলে মামলার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে:লাকাবা গোমেজ

This browser does not support the audio element.

বরিশাল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম অবশ্য দাবি করেন, ‘‘অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েই হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ বাদী মোট ৩০টি ফেসবুক পোস্ট জমা দিয়েছেন৷ তাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয় আছে৷'' তিনি আরো দাবি করেন, ‘‘আটকের  পরে মামলা করা হয়নি, আগেই মামলা করা হয়েছে৷ মামলা হয়েছে সকাল ১০টায় আর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুপুর ২টার দিকে৷''

এদিকে হেনরী স্বপনের ফেসবুকে ঢুকে শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার পরদিন বরিশাল চার্চের অনুষ্ঠান নিয়ে  তাঁর একটিই সমালোচনামূলক পোস্টই পাওয়া যায়৷ ৩০টি পোস্টের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি৷ এজাহারে আরো যেসব কটূক্তি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কথা বলা হয়েছে তা-ও তার পোস্টে পাওয়া যায়নি৷ তবে তাঁর ফেসবুকে তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়া সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরের একাধিক লিংক শেয়ার করা হয়েছে৷

হেনরী স্বপনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধরায় মামলা করা হয়েছে৷ মামলায় আরো দু'জনকে আসামি করা হয়েছে৷ তাঁরা হলেন আলফ্রেড সরকার ও তাঁর ভাই জুয়েল সরকার৷

কবি হেনরী স্বপন দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি ও সাংবাদিকতা করছেন৷ একটি লিটলম্যাগও সম্পাদনা করেন তিনি৷ ২০১৫ সালে বরিশালের মুক্তমনা ৬ জনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি দেয়ারর পর তিনি তাঁদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন৷ তিনি ওই ৬ জনের পক্ষে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন৷ তিনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত৷ তাঁকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বরিশালে সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷ তাঁরা তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন৷

তবে কী কারণে গ্রেপ্তার করা হলো তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়:পারভেজ মাহমুদ

This browser does not support the audio element.

তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় ইমতিয়াজ মাহমুদ গ্রেপ্তার:

এদিকে বুধবার সকালে মুক্তমনা লেখক ও আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মাহমুদকে পুলিশ তাঁর বনানীর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে৷  তাঁকে ২০১৭ সালে খাগড়াছড়িতে তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা  একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে৷

ঢাকার বনানী থানার ওসি বিএম ফরমান আলী বলেন, ‘‘তার নামে একটি ওয়ারেন্ট এসেছে৷ আমরা শুধু ওয়ারেন্ট তামিল করেছি৷ওয়ারেন্টে শুধু মামলার ধারা ও ঠিকানা থাকে, কোনো কারণের উল্লেখ থাকে না৷ আমরা জানিও না৷''

ইমতিয়াজ মাহমুদের ভাই পারভেজ মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই মামলায় তিনি জামিনে ছিলেন৷ তবে কী কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়৷ ধারণা করছি, কোনো কারণে তাঁর জামিন বাতিল হয়ে থাকতে পারে৷ সকাল ১০টার দিকে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে৷ জামিনের আবেদন করেছি৷ আমরা গ্রেপ্তারের কারণও জানতে চেয়েছি৷ আর এজন্য ৭ দিন সময় চেয়েছি৷ পুলিশ শুধু ওয়ারেন্টের কথাই বলছে৷ আর কিছু বলছে না৷

তিনি নিয়মিত হাজিরা দিতেন কিনা জানতে চাইলে পারভেজ বলেন, ‘‘সেটা আমার জানা নেই৷ জানার চেষ্টা করছি৷''

জানা গেছে, যদি তাঁর জামিন না হয় তাহলে যেখানে মামলা হয়েছে সেই খাগড়াছড়িতে পাঠানো হবে তাঁকে৷

ওয়ারেন্ট অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই ফেসবুকে ‘সাম্প্রদায়িক উসকানি' দেয়ার অভিযোগে শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ইমতিয়াজ মাহমুদের নামে খাগড়াছড়ি সদর খানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭/২ ধারায় মামলাটি করেন্৷ আর ওয়ারেন্টটি সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয় গত জানুয়ারি মাসে৷

ইমতিয়াজ মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়িদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন, লেখালেখি করছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ