ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টির অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় বাংলাদেশের দৈনিক ‘প্রথম আলোর' সম্পাদক মতিউর রহমান ও এক ফটোসাংবাদিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে জেলা শহর ঝালকাঠির আদালত৷
বিজ্ঞাপন
ঝালকাঠির চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুজ্জামান ইসলাম বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আগামী ১৮ই ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন৷ এই সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত৷
ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট বনি আমিন বাদী হয়ে গত বছরের ৯ই অক্টোবর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টির অভিযোগে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও ফটোসাংবাদিক মজিদ আলীর বিরুদ্ধে এ মামলা করেন৷ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ওই বছরের ১৬ই নভেম্বর আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার সমন জারি করেন৷
১৬ই নভেম্বর হাজির না হওয়ায় পরে দুই দফায় ১১ই ডিসেম্বর ও ১৮ই জানুয়ারি হাজির হতে বললেও আসামিরা তখনও গরহাজির থাকেন৷
তিন দফা তলবেও আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় বিচারক বুধবার আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানান মামলার আইনজীবী এপিপি এম আলম খান কামাল৷
তিনি জানান, ‘‘২০০৭ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর আলপিনে মহানবীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ, ২০১৩ সালের ১১ই মার্চ বর্তমান সরকারকে আল্লাহর সঙ্গে তুলনা করা ও সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী ভোটারদের ছবিতে ফটোশপের মাধ্যমে সিঁদুর পরিয়ে প্রকাশ করে প্রথম আলো৷ এ অভিযোগে গত বছরের ৯ই অক্টোবর এ মামলাটি দায়ের করা হয়৷''
মামলার বাদী অ্যাডভোকেট বনি আমিন বলেন, ‘‘প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদ, কার্টুন ও ছবি কেবল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতই করেনি; বরং এতে ধর্মীয় উন্মাদনাও সৃষ্টি হয়েছে৷ তাই একজন মুসলমান হিসেবে আমি এ মামলাটি দায়ের করেছি৷'''
তিনি বলেন, ‘‘আদালত তিন দফা সমন দেয়ার পরও আসামিরা আদালতে হাজির না হয়ে আদালতকে অবজ্ঞা করেছেন৷ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশে আমি সন্তুষ্ট৷''
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট স. ম রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনো মামলায় সমন জারি করা হলে তা আসামিকে জানাতে হবে৷ আসামি যদি আদালতের আদেশ যথাযথভাবে পান তাহলে তো পেলেনই৷ আর যদি সংবাদ মাধ্যমের সহায়তায় জানতে পারেন তাহলেও ধরে নেয়া হবে তিনি সমন পেয়েছেন৷ আর তখন আসামির দায়িত্ব হল নিজ উদ্যোগে আদালতে যোগাযোগ করে পরবর্তী আদেশ বা পদক্ষেপের ব্যাপারে জানা এবং তা অনুসরণ করা৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আদালতের সমনের পরও কোন আসামি যদি আদালতে হাজির না হন তাহলে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন৷ আর এটাই আইন৷ আদালতের নির্দেশ না মানা হল, আদালতকে অবজ্ঞা বা অবমাননা করা৷ এটা কেউ করলে আদালত ব্যবস্থা নেয়৷ আর এই আইনি ব্যবস্থা সবার জন্যই প্রযোজ্য৷''
মামলার বাদি অ্যাডভোকেট বনি আমিন জানান, মামলা এবং সমনের খবর তখন প্রথম আলোসহ একাধিক দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৮ ধারায় দায়ের হওয়া এ মামলায় অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ দুই বছর সাজার বিধান রয়েছে৷ তবে মামলাটি জামিনযোগ্য ধারার৷
এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোন বক্তব্য জানা যায়নি৷
সাংবাদিকদের জন্য দুঃসময়
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গত দশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি এতো খারাপ দেখা যায়নি৷ বিশ্ব জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করেন যে সব দেশে, সে সব দেশে সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি
ফ্রিডম হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৭টি দেশের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যার ফলাফলে দেখা গেছে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম৷ অন্যদিকে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং নরওয়েতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
তুরস্কে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ সাংবাদিক গ্যোকহান বিচিচি-কে প্রেপ্তার করা হয় গেজি পার্কে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থরক্ষা কমিটির মতে গত ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্কে ৪০জন সাংবাদিকদের আটক করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
অপ্রিয় রিপোর্ট
ইউক্রেনেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়৷ বিশেষ করে কিয়েভের ময়দান স্কোয়ারে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়৷ সরকারের সমালোচক সাংবাদিক টেটিয়ানা চর্নোভোল ঐ হামলার শিকার হন৷ তিনি পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিলাসী জীবনযাত্রার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন৷ হাজারো মানুষ এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন!
চীন এবং রাশিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমালোচনার মুখে৷ দুই দেশের সরকারই মিডিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এবং সরকারের মতামত মিডিয়াকে জানানোর জন্য একটি আইনও প্রণয়ন করে৷ এমনকি রাশিয়ায় সংবাদ সংস্থা ‘রিয়া নভোস্তি’ বন্ধ করে সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করা হয়৷ অনেক রুশ নাগরিকের তা পছন্দ না হওয়ায় তারা ‘মিথ্যা বলা বন্ধ করুন’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন সরকারের আড়িপাতা
অ্যামেরিকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন তথ্যনীতি ক্রমঃশই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, সরকার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, এমনকি সরকার সাংবাদিকদের কাছে তথ্য সূত্রও জানতে চায়৷ এছাড়া, মার্কিন সরকার সংবাদ সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের টেলিফোনেও আড়ি পেতেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মুবারক জমানায় প্রত্যাবর্তন
মিশরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ প্রেসিডেন্ট মুরসির পতনের পর সেখানকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস-এর মতে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সামরিক অভ্যুথ্যানের পর থেকে বেশ কিছু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় হয় এবং পাঁচজন মারা যান৷
ছবি: AFP/Getty Images
মালিতে পরিস্থিতির উন্নতি
মালিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইসলামি বিদ্রোহীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়নের পর মালির আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়৷ ২০১২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ সেগুলো এখন আবার কাজ করছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কিরগিজিস্তান ও নেপালে ইতিবাচক প্রবণতা
যে সব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিরগিজিস্তান৷ সেখানকার সাংবাদিকরা ২০১৩ সালে খুব কম আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ নেপালেও মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমেছে, যদিও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া বন্ধ হয় নি৷ সমীক্ষা অনুযায়ী ইসরায়েলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উন্নতি হয়েছে এবং এখন তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন৷