মহামারি বা দুর্যোগে আধ্যাত্মিক শক্তির কাছে সান্ত্বনা খোঁজার প্রচলন আছে আলবেনীয়দের মাঝে৷ করোনায় দেখা গেল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারা জড়ো হচ্ছেন গির্জায়৷
বিজ্ঞাপন
আলবেনিয়ার উত্তর-পশ্চিমের লাক শহরের সেন্ট এন্থনি গির্জা এটি৷ করোনা মহামারির সময়ে মুসলিম, খ্রিস্টান কিংবা ধর্মে বিশ্বাসী নয় এমন অনেকেই ভিড় করেছেন এখানে৷ করোনসহ নানা বিষয়ের প্রতিকার চেয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে আবেদন তাদের৷
নানা ঢংয়ে ঈশ্বরের কাছে সান্ত্বনা চাইছেন পূণ্যার্থীরা৷ কেউ জ্বালাচ্ছেন মোমবাতির আলো আর কেউ রেখে যাচ্ছেন রোগাক্রান্ত সন্তানের জামা কিংবা প্রিয়জনের ছবি৷ উদ্দেশ্যে, জাগতিক সব শোক, জরা কাটিয়ে ফিরে আসুক শান্তি আর ভালোবাসা৷
তবে বিভিন্ন ধর্মের, বিশ্বাসের কিংবা বর্ণের আলবেনিয়ানদের এভাবে জড়ো হওয়াকে একটু আলাদা চোখে দেখছেন দেশটির টিরানা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী আফেরদিতা ওনুজি৷ তার মতে, এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সবার ঈশ্বর এক৷ অর্থাৎ ভেদাভেদ না রেখে সবাই একটি জায়গায় এক হয়েছেন৷ করোনায় অজানা আর অক্ষমতার ভয় থেকে মুক্তি পেতেই এখানে এসেছেন তারা৷
এমন মানুষের সংখ্যা ইদানিং এখানে বেড়েছে জানিয়ে এ নৃবিজ্ঞানী বলেন, ঐশ্বরিক শক্তিতে মানুষের বিশ্বাসের ছবি এটি৷
শুধু রোগমুক্তি নয়, দৈনন্দিন জীবনের বিশেষ করে দুর্যোগের সময়ের মানসিক চাপ লাঘবে জড়ো হচ্ছেন কেউ কেউ৷ আদা দ্রাভা নামে ২০ বছরের এক তরুণী প্রথমবারের মতো এখানে এসছেন৷ ‘‘মানসিক চাপ লাঘবের জন্য এখানে এসেছি৷ সেই সাথে পরিবারের সদস্যদের জন্য শান্তি কামনা আমার৷''
শুধু রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরাই নয়, রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষদেরও দেখা যায় এখানে৷ করোনা থেকে সেরে উঠা অনেকেই প্রার্থনা করতে আসেন এ চার্চে, জানালেন পাদ্রী মিরাশ ইভানজা৷
বলকান রাষ্ট্র আলবেনিয়া প্রায় ৫০ বছর কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে ছিল৷ সে সময় ধর্মকর্মে অনেকটা নিষেধাজ্ঞা ছিল৷ তবে গত ৩০ বছরে অর্থাৎ কমিউনিস্ট শাসনের পতনের পর ধীরে ধীরে দেশটিতে ধর্ম চর্চার প্রচলন বাড়ছে৷
আরআর/এসিবি (এএফপি)
প্রাণের শহর জেরুসালেম
মুসলমান, ইহুদি আর খ্রিস্টান; তিন ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র এক নগরী জেরুসালেম৷ যা দখল করে নিজেদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে ইসরায়েল৷ অন্যদিকে মুসলমানদের স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নও এই জেরুসালেমকে ঘিরেই৷
ছবি: Reuters/A. Awad
হারাম আল শরীফ
মুসলিমদের কাছে হারাম আল শরীফ আর ইহুদিদের কাছে পরিচিত টেম্পল মাউন্ট হিসেবে৷ এখানেই রয়েছে আল আকসা মসজিদ, কুব্বাত আস সাখরা, কুব্বাত আস সিলসিলা, কুব্বাত আন নবীর মত মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনাগুলো৷ অন্যদিকে ইহুদিরা মনে করে তাদের বাইবেলে বর্ণিত সবচেয়ে পবিত্র দুইটি গির্জার ঠিকানা এটি৷
ছবি: picture alliance/CPA Media
আল-আকসা মসজিদ
রূপালি রঙের গম্বুজ এবং বিশাল হলঘর বিশিষ্ট আল-আকসা মসজিদ৷ সুন্নি মুসলমানদের কাছে যা মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান৷ ইসলামের বর্ণনা অনুযায়ী মেরাজে যাওয়ার সময় হযরত মুহাম্মদ (সা.) মসজিদুল হারাম থেকে আল-আকসায় এসে নামাজ আদায় করেন৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
কুব্বাত আস সাখরা
কুব্বাত আস সাখরা বা ডোম অব দ্যা রক৷ টেম্পল মাউন্টেনের উপর অবস্থিত গম্বুজটিতে সাখরা নামের একটি পাথর রয়েছে৷ ইসলাম ধর্মমতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) মেরাজে যাওয়ার পূর্বে এই পাথরটি সেখানে স্থাপন করেন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Cupolo
জলপাই পাহাড়
দৃশ্যটি পুরাতন নগরের পূর্ব পাশে পাহাড়ের নীচের৷ এই পাহাড়ের পশ্চিম ও দক্ষিণ ঢালুতে আছে প্রাচীন ইহুদি সমাধি৷ এক সময় এলাকাটি ছিল জলপাই বাগানে ঘেরা৷ তাই নামও হয় জলপাই পাহাড়৷ এটি ইহুদিদের সবচেয়ে প্রাচীন সমাধি৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
পশ্চিম দেয়াল
জেরুসালেমের পুরাতন শহরে অবস্থিত চুনাপাথরের এই প্রাচীন দেয়ালটি টেম্পল মাউন্টেন বা পশ্চিমের দেয়াল৷ ইহুদিদের নিকট এটি সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান৷ তারা এখানে প্রার্থনা করতে আসেন৷ এখানে পুরুষ-নারীর জন্য পৃথক বিভাগ রয়েছে, যা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে৷ অবশ্য প্রবেশের পূর্বে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা তল্লাশী পার হতে হয়৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
যেখানে যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন
জেরুসালেমের ওল্ড সিটি বা পুরান নগরী গুরুত্বপূর্ণ খ্রিস্টানদের কাছেও৷ বেশিরভাগের ধারণা যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ ও সমাধিস্থ করা হয় এখানেই৷ সেই স্থানটিতে রয়েছে তাদের পবিত্র একটি গির্জাও৷ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টানরা মনে করেন বাইবেলের বার্তা অনুযায়ী ইসরায়েলে ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা খ্রিস্টানদের ধর্মীয় দায়িত্ব৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
জেরুসালেম কার?
ইসরায়েলের দাবি তিন হাজার বছর আগে জেরুসালেমই ছিল ইহুদিদের রাজধানী৷ অন্যদিকে ফিলিস্তিনি আরবরাও এই ভূমিকে তাদের ঐতিহাসিক, পবিত্র নগরী হিসেবে বিবেচনা করে৷ ভবিষ্যৎ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নও জেরুসালেমকে কেন্দ্র করে৷
ছবি: Reuters/A. Awad
ইসরায়েলের দখলদারিত্ব
১৯৬৭ সালে ৬ দিনের যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর আর পূর্ব জেরুসালেম দখলে নেয় ইসরায়েল৷ আইন করে দাবি করে নিজেদের ভূমি হিসেবে৷ যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখনও মিলেনি৷ টেম্পল মাউন্ট বা হারাম আল শরীফের নিজ নিজ ধর্মীয় উপাসনালয়ে যাতায়াত ও প্রার্থনায় অংশ নিতে পারেন মুসলিম ও ইহুদিরা৷
ছবি: Reuters/A. Awad
রাজধানীর দাবি
১৯৮০ সালে ইসরায়েলের সংসদ নেসেট অখন্ড জেরুসালেমকে তাদের রাজধানীর মর্যাদা দেয়৷ দেশটির সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, সুপ্রিম কোর্ট, সরকারি মন্ত্রণালয়গুলোর অবস্থান এই শহরেই৷ জাতিসংঘ কিংবা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে কিংবা পূর্ব জেরুসালেমে দেশটির দখলদারিত্ব, কোনটিরই স্বীকৃতি দেয়নি৷
ছবি: Reuters/A. Awad
যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি
২০১৭ সালে জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ সেই সঙ্গে তেল আভিভ থেকে দূতাবাস সেখানে সরিয়ে নেয়ারও নির্দেশ দেয় ওয়াশিংটন৷ এই পদক্ষেপকে ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হয়৷
ছবি: Getty Images/L. Mizrahi
জনসংখ্যায় পরিবর্তন
১৯৬৭ সালের আগেই পশ্চিম জেরুসালেমে ইহুদিদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়৷ তবে পূর্ব জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ যুদ্ধের পর অবৈধভাবে দুই লাখের বেশি ইহুদিকে সেখানে স্থানান্তর করে ইসরায়েল৷ ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেরুসালেমের জনসংখ্যা দাড়িয়েছে সাড়ে আট লাখে৷ যার ৬৩ ভাগ ইহুদী আর ৩৭ ভাগ ফিলিস্তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/N. Alon
জেরুসালেম বিক্রির জন্য নয়
সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের এক পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ সে অনুযায়ী জেরুসালেম শহর ইসরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী থাকবে৷ আর অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেম হবে ফিলিস্তিনিদের রাজধান৷ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেছেন, ‘‘জেরুসালেম বিক্রির জন্য নয়’’৷