চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এক ব্যক্তি নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ কথিত ধর্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ ওই ধর্ষকের এখন ‘বাবা' পরিচয়টা বড়, নাকি তিনি শুধুই ধর্ষক?
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের প্রায় সব সংবাদমাধ্যমেই এসেছে খবরটা৷ মনির হোসেন নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিজের ১৪ বছর বয়সি মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন তার স্ত্রী৷ তিন সন্তানের জননীর অভিযোগ, তার স্বামী ধর্ষণ করার পর ধর্ষণের কথা কাউকে বললে হত্যা করার হুমকিও দিয়েছিলেন নিজের সন্তানকে৷
খবরটি জানার পর সবার মনেই হয়ত প্রশ্ন জেগেছে- এই ধর্ষক কি সত্যিই বাবা হওয়ার যোগ্য? বাবা কি নিজের সন্তানকে ধর্ষণ করতে পারে? আবার ধর্ষণের কথা কাউকে বললে খুন করার হুমকি দিতে পারে সন্তানকেই?
আসলে সন্তান জন্ম দিলেই কেউ আদর্শ বাবা হয়ে যায় না৷ বাবারাও অপরাধ করতে পারে৷ ঘুসখোর, সন্ত্রাসী, অসাধু ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ী, অর্থ পাচারকারী, ঋণ খেলাপিদের অনেকেই তো কারো-না-কারো বাবা৷
আসলে রাজনীতিবিদরা বিপদে পড়লে যে বলেন, ‘‘অপরাধীর কোনো দল হয় না, অপরাধী অপরাধীই’’, কথাটা কিন্তু শতভাগ সত্যি৷ অপরাধীর কোনো দল, জাত, ধর্ম, বর্ণ সত্যিই হয় না৷
কিন্তু মুশকিল হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘‘অপরাধীর কোনো দল হয় না, অপরাধী অপরাধীই’’ কথাটা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য স্রেফ কথার কথা হিসেবেই বলেন রাজনীতিবিদরা৷ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে বললে ক্ষমতাসীন, ক্ষমতার বাইরের দল নির্বিশেষে সব দলের সব অপরাধীর বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হতো এবং এর ফলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা অনেক কমে যেতো৷
কিন্তু হচ্ছে তো উলটোটা!
ধর্ষণ কমছে কই?
তাছাড়া এমন দলই বা কই, যে দলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে দলের সব পর্যায় থেকে সঙ্গে সঙ্গেই বলা হয় ‘‘অপরাধীর কোনো দল হয় না, অপরাধী অপরাধীই৷ সুতরাং এ অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত এবং অপরাধীর কঠোর শাস্তি হতেই হবে৷’’
এমন কথা বলে সব দল বা সংগঠন যদি বিচার প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করতো তাহলে শুধু ধর্ষণ নয়, সব অপরাধই ধীরে ধীরে কমে যেতো৷
গত অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
ধর্ষণে শীর্ষ ১০ দেশ
বিশ্বের ৩৫ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন৷ এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হলেও চুপ থাকেন, ১০ শতাংশ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেন৷ এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে কোন দেশে কতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor
সাউথ আফ্রিকা
দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ১৩২ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের জরিপ অনুসারে, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন ধর্ষণ করে সেই কথা স্বীকারও করেন৷
ছবি: Reuters
বোতসোয়ানা
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ বোতসোয়ানায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷ দেশটির প্রতি এক লাখ নারীরর মধ্যে ৯৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷
ছবি: picture alliance/AA/K. Mathe
লেসোথো
দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক দেশ লেসোথোয় ২০১৯ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ সেখানকার এক লাখ নারীর মধ্যে ৮৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ২১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৮ জন৷
ছবি: Imago/F. Stark
সোয়াজিল্যান্ড
সোয়াজিল্যান্ডে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৭৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই দেশটির জনসংখ্যা ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৩০ জন৷ সেই হিসেবে ২০১৯ সালে এ দেশে ৮৯৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
বারমুডা
দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৭ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ অনেক দেশেই যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতারিবোধী আইন থাকলেও নানান অসঙ্গতিতে তা ঠিকমতো প্রয়োগ হয় না৷
ছবি: pictureäalliance/dpa/A. Simmons
সুইডেন
ইউরোপের এই দেশটিতে প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৩ জনেরও বেশি নারী ধর্ষিত হন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও বিশ্বজুড়ে পুরুষরাও প্রতিদিন যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/A. Tamboly
সুরিনাম
দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ সরিনামের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৪৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়৷ দেশটিতে পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ২৭২ জন মানুষ বসবাস করে৷ গত বছর দেশটিতে ২৬২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/E.Troon
কোস্টা রিকা
মধ্য অ্যামেরিকার দেশ কোস্টা রিকার প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩৭ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ গবেষণা বলছে, ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সের নারীদের ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: Reuters/J.C. Ulate
নিকারাগুয়া
মধ্য অ্যামেরিকার এই দেশটির প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ন৩২ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫০২ জন৷ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ডটকম বলছে, অনেক নারী যৌন সহিংসতার ঘটনা নিয়ে অভিযোগই করেন না৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Ocon
গ্রেনাডা
ক্যারিবীয় এই দেশটির প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৩১ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার তিনজন৷ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি কলেজ ছাত্রীরাও যৌন নির্যাতনের ঝুঁকিতে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Camara
অন্যান্য
১১৮টি দেশের মধ্যে চালানো এই জরিপে ১৪তম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৪০তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ ৪২তম অবস্থানে থাকা জার্মানিতে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৯ জনেরও বেশি ধর্ষিত হন৷ আর ভারতের প্রতি লাখ নারীর মধ্যে এক দশমিক ৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷