মেয়েটি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই সুন্দর ও স্বচ্ছ তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি৷ অকপট, কোনো রাখঢাক নেই৷ প্রথম দিন থেকেই অভিনেত্রী কাল্কি কোচেলিন আমাদের অভিভূত করেছেন, ভারতীয় সামাজ নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তৃতায়, বিশেষত নারী অধিকার চর্চায়৷
বিজ্ঞাপন
সেই ছোট্ট বয়সে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানি অথবা নিজের শরীরকে খোলামেলাভাবে তুলে ধরার কারণ বর্ণনা – বিষয়বস্তু যতটাই স্পর্শকাতর হোক না কেন তা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে কাল্কির কোনোদিনই কোনো সংকোচ ছিল না, আজও নেই৷
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় তাঁর সর্বশেষ অবদান অসামান্য একটি ভিডিও, যা একাধারে যেমন নাটকীয়, পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে তেমনই এক মোক্ষম চপেটাঘাত৷ সংবাদপত্রগুলিতে নারী সৌন্দর্যের বিজ্ঞাপন কীভাবে ধীরে ধীরে অথচ ধারাবাহিকভাবে নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলিকে সুচতুরভাবে আড়াল করে চলেছে, কীভাবে একটার পর একটা ধর্ষণের ঘটনা আমরা বোঝার আগে, জানার আগেই উধাও হয়ে যাচ্ছে – এই নিয়েই এবার কলম ধরেছেন তিনি, হয়েছেন সোচ্চার৷ তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠে উঠে এসেছে দিল্লির চলন্তবাসে নির্ভয়ার গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, বেঙ্গালুরুতে ঘটে যাওয়া কুখ্যাত শ্লীলতাহানি অথবা হত্যার পর লাশ গাছে ঝুলিয়ে দেয়ার মতো আরো অনেক ঘটনা৷
মাত্র পাঁচ মিনিটের ভিডিও৷ কিন্তু কাল্কির উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ, ভিডিওতে ব্যবহৃত প্রতিটি ‘বিট', ‘ভিজুয়াল' আমাদের যেন গ্রাস করতে থাকে৷ নিত্যদিনের সত্যটা সামনে, আরো সামনে চলে আসায় একটা সময় এসে হয়ত বা গা গুলিয়ে ওঠে৷ কিন্তু তারপরও চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে ধরে রাখে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত৷ তাই দেখতে ভুলবেন না!
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?