উত্তর প্রদেশে পরপর দুই দলিত মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো দেশকে। পুলিশের আচরণ এবং বিক্ষোভ আটকানোর চেষ্টা নিয়ে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক।
বিজ্ঞাপন
উত্তর প্রদেশে হত্যা, পুলিশের এনকাউন্টার এখন গা সওয়া ঘটনা। দিল্লি ঘেঁষা নয়ডা ও গাজিয়াবাদ থেকে শুরু করে রাজ্যের প্রায় সর্বত্র একের পর এক হত্যা হচ্ছে। সাংবাদিককে গুলি করা হচ্ছে। মারা যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাই বলে প্রায় প্রতিদিন দিনেদুপুরে ধর্ষণ? তাও জাতের নামে? দলিত মেয়েদের উপর অসহনীয় অত্যাচার?
মাঠে ঘাস কাটতে গেলে ধর্যণ, কলেজে ভর্তির ফর্ম জমা দিতে যাওয়ার পথে ধর্ষণ। এ কোন সময়ে বাস করছি আমরা? আর তারপর সেই ধর্ষিতার মৃতদেহ পরিবারের কাছে না দিয়ে মাঝরাতে পুড়িয়ে ফেলে পুলিশ! এমন অমর্যাদাকর ঘটনার পরেও কারো শাস্তি হবে না?
হাথরাসে মা, বোন, ভাইয়ের সঙ্গে মাঠে ঘাস কাটছিল উনিশ বছরের দলিত মেয়েটি। তাঁকে ধরে ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে পাশের বজরা ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। বলরামপুরে কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য বেরিয়েছিল এক দলিত ছাত্রী। তাঁকে অপহরণ করে, অজ্ঞান করে, ধর্ষণ ও অত্যাচার করা হয়। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ধর্ষকরা একটি টোটোতে করে মেয়েটিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। ধর্ষিতার পায়ের হাড় ভাঙা, কোমরের হাড় ভাঙা। মায়ের কাছে তাঁর একটাই আবেদন ছিল, ''মা আমি বাঁচতে চাই।'' বাঁচতে পারেনি সে। বলরামপুর থেকে লখনউয়ে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান ওই দলিত তরুণী।
তা হলে কি অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, কলেজে ভর্তি হতে গেলেও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হতে হবে মেয়েদের? নিজের বাড়ির কাছে ঘাস কাটতে গিয়ে ধর্ষিতা হতে হবে? হাথরাসের ধর্ষিতার জিভ কেটে দেয়া হয়েছিল। ধর্ষণের পর তাঁকে এমন অত্যাচার করা হয়েছিল যে দুই সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেও হেরে গেলেন তিনি। একই অবস্থা বলরামপুরের মেয়েটিরও।
ধর্ষক কেন, কী ভেবে ধর্ষণ করে?
ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের সময় কীভাবে কাজ করে ধর্ষকের মন ও মস্তিষ্ক? এ সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানী কী বলেছেন তা বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/China Photos
সব সময় যৌনসুখ মুখ্য নয়
সাইকোলজি অফ ভায়োলেন্স জার্নালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শেরি হামবির মতে, ‘‘ধর্ষণ যৌনসুখের উদ্দেশ্যে নয়, বরং অপরপক্ষকে দমিয়ে রাখতে ক্ষমতার প্রদর্শন হিসাবে করা হয়৷’’ কিছু ক্ষেত্রে এই ক্ষমতার প্রকাশ শুধু নারীদের বিরুদ্ধে হয়৷ অন্যদিকে, ধর্ষণ কাজ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘জাতে ওঠার’ পন্থা হিসাবে৷ এছাড়া ধর্ষণের পেছনে রয়েছে নানাবিধ মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, যা বুঝতে বিজ্ঞানীরা নানা ধরনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images
কে ধর্ষক?
মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক ড. স্যামুয়েল ডি. স্মিথিম্যান একটি গবেষণার জন্য ৫০জন ধর্ষকের সাক্ষাৎকার নেন৷ সেখানে তিনি বুঝতে পারেন যে, কয়েকটি নির্দিষ্ট আর্থসামাজিক বা ভাষা বা ধর্মগোষ্ঠী থেকেই উঠে আসবে ধর্ষকামী চিন্তা, তা নয়৷ ধর্ষক উঠে আসতে পারে যে কোনো সামাজিক বা অর্থনৈতিক শ্রেণি থেকে৷ পাশাপাশি এক ধর্ষক থেকে আরেক ধর্ষকের মধ্যে ব্যক্তিত্বের বৈচিত্র্যও লক্ষ্য করেন তিনি৷ ধর্ষণের উদ্দেশ্যও সেখানে থাকে ভিন্ন৷
ছবি: Gina Sanders - Fotolia.com
উদ্দেশ্য ভিন্ন, কিন্তু চারিত্রিক মিল
ড. স্মিথিম্যানের গবেষণা বলছে, প্রতিটি ধর্ষণের উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও বেশির ভাগ ধর্ষকের মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়৷ এর মধ্যে রয়েছে নার্সিসিজম বা আত্মমুগ্ধতা, নারীবিদ্বেষ ও অন্যের প্রতি সার্বিক সহানুভূতির অভাব৷ এছাড়া, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ধর্ষকদের মধ্যে নিজের অপরাধের প্রতি ঔদাসীন্য লক্ষ্য করেন৷
ছবি: Getty Images
ধর্ষণ করে ‘জাতে ওঠা’!
গবেষক শেরি হামবি বলেন, ‘‘তরুণরা যৌন অভিজ্ঞতার সাথে সম্মানকে মেলায়৷ এটিকে এক ধরনের জয় হিসাবে দেখে তারা৷ যাদের বেশি যৌন অভিজ্ঞতা হয়নি, তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হয়৷’’ এই ‘জাতে উঠতে চাওয়ার’ আকাঙ্খা থেকে ধর্ষণ করাকে টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি বা ক্ষতিকারক পৌরুষের লক্ষণ হিসাবে দেখেন তিনি৷ ওপরের ছবিতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়া এক নারী৷
ছবি: AFP/Abaad/P. Baz
ধর্ষণ একটি অপরাধ
শেরি হামবি এবং স্মিথিম্যান মনে করেন, ধর্ষণ কোনো বিশেষ মানসিক রোগ নয়, এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ কোনো কোনো ধর্ষকের মধ্যে বিশেষ কিছু মানসিক রোগের লক্ষণ দেখা গেলেও এমন কোনো নির্দিষ্ট মানসিক রোগের সন্ধান পাওয়া যায়নি যা ধর্ষণ করতে বাধ্য করে৷
ছবি: Getty Images/China Photos
নানা ধরনের ধর্ষকামী মানসিকতা
ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় জয়দীপ সরকার ধর্ষকামী মানসিকতার মোট ছয়টি রূপকে চিহ্নিত করেছেন৷ এর মধ্যে রয়েছে সুযোগসন্ধানী ধর্ষক, স্যাডিস্টিক ধর্ষক, প্রতিহিংসাকামী ধর্ষক, কল্পনাপ্রবণ ধর্ষক, ক্ষমতালোভী ধর্ষক ও ক্ষুব্ধ ধর্ষক৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন ধর্ষকের মধ্যে একাধিক ধর্ষকামী মানসিকতার ছাপ লক্ষ্য করা যায়, বলে জানাচ্ছে সেই গবেষণা৷
ছবি: picture-alliance/F. May
বিজ্ঞানের দ্বন্দ্ব
ধর্ষকের মনস্তত্ত্বকে বোঝার উপায় কী হবে, এই প্রশ্ন বিভক্ত করেছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারার গবেষকদের৷ সমাজতাত্ত্বিক, মনোবিদরা ধর্ষণকে যৌনতা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে একে নিছক ক্ষমতার প্রকাশ হিসাবে দেখেন৷ অন্যদিকে, বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান ও নৃতত্ত্বের গবেষক র্যান্ডি থর্নহিল ও ক্রেগ পামারের মতে, ধর্ষণের মূল উদ্দেশ্য যৌনতাই৷ ওপরের ছবিতে ব্রাজিলের সাওপাওলো শহরে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়া এক নারী৷
ছবি: Imago/ZumaPress
ধর্ষণের যত ‘মিথ’
ধর্ষণ বিষয়ে বেশ কিছু মিথ বা ভুল ধারণা সমাজে প্রচলিত রয়েছে৷ উদাহরণস্বরূপ, অনেক ক্ষেত্রেই একটি মিথ কাজ করে, যেখানে ধর্ষক আশ্বস্ত হয় যে, অপর পক্ষ যতই বারণ করুক বা বাধা দিক না কেন, বাস্তবে তারও এতে সম্মতি রয়েছে৷ মার্কিন মনস্তাত্ত্বিক আন্টোনিয়া অ্যাবের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমন মিথে বিশ্বাসী এক ধর্ষকের বয়ান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
গবেষণার প্রাসঙ্গিকতা
মনস্তত্ত্বের আনাচ-কানাচ নিয়ে প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে বহু গবেষণা৷ এর একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ধর্ষণকে বুঝতে চাওয়া চেষ্টা৷ বিভিন্ন চিন্তাধারার বা অ্যাকাডেমিক ডিসিপ্লিন নিজেদের মতো করে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে৷ এতে করে গভীরে গিয়ে চিহ্নিত করা যাচ্ছে ধর্ষণের নানা দিক৷ ধর্ষণ রুখতে ও ধর্ষকের মনস্তাত্ত্বিক ঝোঁক চিহ্নিত করতে কাজে লাগানো হচ্ছে এমন গবেষণাকে৷
ছবি: Ambrophoto - Fotolia.com
9 ছবি1 | 9
হাথরাসের দলিত মেয়েটিকে বেঁচে থাকা অবস্থায় ধর্ষণ করে তাঁর চরম মর্যাদাহানি করল চারজন উচ্চবর্ণের লোক। আর মরার পরে পুলিশ সামান্য মর্যাদাটুকু দিল না। রাতে পুলিশ তাঁর দেহ নিয়ে গেল গ্রামে। কিন্তু দেহ তাঁর বাড়িতে নিয়ে যেতে দিল না। তাঁর অন্ত্যেষ্টি বাড়ির লোক করতে পারলেন না। রাত দুটোর সময় পরিবারের লোকেদের তালাবন্ধ করে রেখে পুলিশই মেয়েটির শেষকৃত্য করে। কেন? এর কোনো জবাব পরিবারের কাছে নেই।
পুলিশ যখন এই রকম আচরণ করে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই একটি প্রশ্ন ওঠে। পুলিশ কি কিছু লুকোতে চাইছে? কী লুকোতে চাইছিল পুলিশ, যার জন্য এরকম অমানবিক কাজ করা হলো? মৃত্যুর পরও অন্ত্যেষ্টির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো পরিবারকে? কেন মেয়েটির এরকম অমর্যাদা করা হলো? কোনো যুক্তিগ্রাহ্য জবাব নেই। বরং বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে।
অন্য সময় বিরোধীরা সোচ্চার হলে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে বিজেপি তাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করে। এই বার প্রতিবাদ বিজেপি-র অন্দর থেকেও এসেছে। দিল্লির বিজেপি সাংসদ হংস রাজ হংস চিঠি লিখে বসেছেন যোগী আদিত্যনাথকে। সেখানে তিনি বলেছেন, পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের কাছ থেকে আগে জবাবদিহি চাওয়া হোক, কেন তাঁরা এই অমানবিক কাজ করল? তদন্ত হোক। তদন্তে তারা দোষী প্রমাণিত হলে কঠোরতম ব্যবস্থা নেয়া হোক। হংস রাজ হংস নিজেও দলিত। তাই দলিত মেয়ের এই নিদারুণ অসম্মান তিনি মুখ বুজে মেনে নিতে পারেননি।
বিশ্বাসে চিড় ধরায় এমন কয়েকটি খবর
কিছু মানুষের কিছু অপরাধ বা অপরাধের অভিযোগ প্রবলভাবে বিস্মিতই শুধু করে না, পারস্পরিক বিশ্বাসেও ফাটল ধরায়৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কিছু সাম্প্রতিক খবর নিয়েই এই ছবিঘর৷ ছবিগুলো সব প্রতীকী৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
প্রতিবন্ধী ছেলের বৌ-কে যৌন নিপীড়ন
ঢাকার পল্লবীতে নিজের প্রতিবন্ধী ছেলের বৌ-কে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ২০ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ৷ পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াজেদ আলী ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, প্রায় চার মাস ধরে প্রতিবন্ধী ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্ক করে আসছিলেন সেই ব্যক্তি৷ অভিযুক্ত ব্যক্তি একটি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
নিপীড়নের অভিযোগ
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র কেন্দ্রীয় নেত্রী জলি তালুকদার সম্প্রতি তার দলের ঢাকা কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন খানের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন৷ ২৮ ফেব্রুয়ারির ঐ ঘটনার পর দলের উচ্চ পর্যায়ে অভিযোগ জানিয়ে সাড়া না পাওয়ায় ১৯ সেপ্টেম্বর রাত থেকে ঢাকায় সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনশন শুরু করেছিলেন জলি৷ বিচারের আশ্বাস পেয়ে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
দুই ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগ
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায় গত জানুয়ারি মাসে দশম শ্রেণির দুই ছাত্রকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে৷ এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
শিশু ধর্ষণের অভিযোগে ইমাম আটক
আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গত মার্চে ঢাকার এক মসজিদের ইমামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কুর্মিটোলার এক মসজিদে আরবি পড়তে গেলে তাকে মসজিদের পাশে নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে ধর্ষণ করা হয়৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid
শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় পুরোহিত আটক
গতবছর এপ্রিলে যশোরে একটি মন্দিরের পুরোহিত প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে৷ মন্দিরে পুজো দেখতে যাওয়া মেয়েটিকে চকলেট দেয়ার নাম করে পর্দা টানানো একটি ঘরে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছিল৷ পরে পুরোহিতকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের অভিযোগ
যশোরে তৃতীয় লিঙ্গের এক শারীরিক প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীন ঢাকা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন৷ ঘটনাটি ঘটে ১৫ সেপ্টেম্বর৷
ছবি: Imago/Imagebroker
৭০ বছরের বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগ
গত জুন মাসে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় ৭০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করা হয়৷ এরপর দায়ের হওয়া মামলায় ৩০ বছরের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ নেশা করে চিৎকার করতে থাকায় ঐ বৃদ্ধা ঐ ব্যক্তি ও তার বন্ধুদের শাসন করেছিলেন৷ সেই ঘটনার জেরে বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
ছেলের বিরুদ্ধে মা হত্যার অভিযোগ
বসতভিটা নিয়ে ভাইদের মধ্যে বিরোধের এক পর্যায়ে কক্সবাজারে গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তি তার মাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ পেকুয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন সরকার মায়ের মরদেহ উদ্ধার ও তার এক ছেলেকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷
ছবি: Reuters
শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গার এক ব্যক্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন৷ এপ্রিল মাসে এই ঘটনা ঘটে বলে ২২ সেপ্টেম্বের এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ঐ মেয়ের বাবা৷ বাড়িতে প্রাইভেট পড়ানোর এক ফাঁকে তার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ এখন তার পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও জানান ঐ বাবা৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor
শিশু ধর্ষণের অভিযোগে কনস্টেবল আটক
খুলনায় চতুর্থ শ্রেণির এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১৪ সেপ্টেম্বর এক পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেফতার করা হয়৷ তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷
ছবি: Kazi Borhan Uddini/AFP/Getty Images
ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় আইনজীবী গ্রেপ্তার
পঞ্চগড়ে দশম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় এক আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ১১ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা ঘটে৷ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই রাশেদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, স্থানীয়রা ঐ আইনজীবীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpaW. Langenstrassen
‘বয়স্ক পাত্র চাই’
সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮) নামে একজন পত্রিকায় ‘কানাডাপ্রবাসীর জন্য বয়স্ক পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ টাকার অংকটি প্রাথমিক হিসাব বলে জানিয়েছেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার৷ ১৭ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকার রামপুরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি এভাবে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: DW
প্রতারণার অস্ত্র বিয়ে
প্রতারণার মাধ্যমে একে একে নয়জনকে বিয়ে করা মোহাম্মদ সুলায়মানকে (২৯) ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে প্রশাসনের বড় কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন সুলায়মান৷ বিয়ে করার পর স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়ার নাম করে অনেক টাকা নিয়েছেন তিনি৷ এছাড়া স্ত্রীদের মাধ্যমে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পরে তিনি লাপাত্তা হয়ে যেতেন বলেও অভিযোগ৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
13 ছবি1 | 13
কিন্তু তিনি যা বলেননি, তা টিভি চ্যানেলে ও সামাজিক মাধ্যমের ভিডিওতে পরিষ্কার। পুলিশ পরিবারকে যেতে দেয়নি অন্ত্যেষ্টিতে। নিজেরাই সেই কাজ করেছে। কার নির্দেশে সেই কাজ হয়েছে? কোন বিষয়টা গোপন করতে চেয়েছিল পুলিশ ও প্রশাসন? কেন একজন পুলিশ কর্মী বা জেলার প্রশাসনিক প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো না? ধর্ষিতা, অত্যাচারিতা নারীকে এবং একজন দলিতের বিরুদ্ধে এমন অন্যায় করার অধিকার কে পুলিশকে দিলো? প্রশ্ন তো আরো উঠছে, এরপরও মুখ্যমন্ত্রী শুধু বিশেষ তদন্তকারী দল বা এসআইটি গঠন করে চুপ করে বসে আছেন কেন? পুলিশ ও প্রশাসন কি যা খুশি তাই করতে পারে, তাঁদের জবাবদিহি করতে হয় না? নাকি উত্তর প্রদেশে এখন তারাই সর্বশক্তিমান? আর পুলিশের বিরুদ্ধে, প্রশাসনের কর্তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ?
অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, এই ধরনের সময় শুধু কালক্ষেপ করা হয়। অন্তত এই উপমহাদেশের পুলিশ ও প্রশাসন জানে, সমস্যায় পড়লেই কালক্ষেপ করতে হবে। সময় মানুষকে সব ভুলিয়ে দেয়। প্রতিবাদের স্পৃহা কমে যায়। তার আগে যে টুকু প্রতিবাদ হচ্ছে, সেটাকেও বন্ধ করে দিতে হবে।
হাথরাসের ওই গ্রাম বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিল করে দেয়া হয়েছে। এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সিল করে দেয়া হয়েছে দিল্লি ও উত্তর প্রদেশের সীমানা। কেন? প্রশাসনের জবাব, করোনার জন্য এই পদক্ষেপ। এটা নতুন কিছু নয়। ১ সেপ্টেম্বর থেকেই চালু আছে। সেটাকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হলো। প্রচুর পুলিশ না কি করোনায় মারা গেছেন। এখন তো আনলকপর্ব চলছে। সব খোলা। সেখানে করোনা হলো পুলিশ ও প্রশাসনের ঢাল।
কংগ্রেসের দাবি, যেই রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধী হাথরাসে গিয়ে দলিত পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা বললেন, অমনি সব বন্ধ করে দেয়া হলো। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কাকে হাথরাসে যেতে দেয়া হয়নি। আটকে দেয়া হয় গ্রেটার নয়ডাতে। তারপর তাঁরা হাঁটতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত রাহুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লাঠি মারাও হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।
শুধু রাহুল নন। দলিত নেতা ও ভিম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখরকেও ঘরবন্দি করেছে উত্তর প্রদেশের পুলিশ। চন্দ্রশেখর ওই দলিত মেয়ের পরিবারের সঙ্গে হাথরাস যাচ্ছিলেন। মাঝপথেই পুলিশ তাঁকে আটকে দেয়। এখন সাহরানপুরে তাঁকে ঘরবন্দি করা হয়েছে। সমাজবাদী পার্টির কর্মীদেরও হাথরাসে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অর্থাৎ প্রতিবাদও করতে দেয়া হচ্ছে না।
প্রতিবাদ হলো গণতন্ত্রের অভিন্ন অঙ্গ। এত বড় একটা ঘটনা ঘটবে, তার কোনো প্রতিবাদ হবে না? ওই পরিবারের কাছে কাউকে যেতে দেয়া হবে না? বহুদিন ধরেই বলা হচ্ছিল, যোগী আদিত্যনাথের উত্তর প্রদেশে পুলিশ সর্বশক্তিমান। এখন দেখা যাচ্ছে সত্যিই তাই।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, যতই সবকিছু বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে, ততই বিতর্ক বাড়ছে। আর সেই সঙ্গে বাড়ছে বিজেপির আশঙ্কা। সামনে বিহারের ভোট। দলিত ভোট না পেলে সরকার গঠন করা মুশকিল হবে। হাথরাস, বলরামপুরের ঘটনার পর বিতর্ক যে জায়গায় যাচ্ছে, তাতে বিহারের দলিতরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেন? রাজনীতির সবটাই তো ভোট নির্ভর। এই ভয়ই কি উত্তর প্রদেশের দুই ধর্ষিতা দলিত মেয়েকে ন্যায় দেবে? অন্তত মৃত্যুর পর?