লন্ডনের একটি হোটেলে নিজেকে একেবারে ‘নগ্ন' অবস্থায় পান এমিলি হান্ট৷ সঙ্গে সঙ্গেই আদালতের দারস্থ হন তিনি৷ কিন্তু আইনজীবীরা তাঁর অভিযোগ আমলেই নেননি৷ তাই ন্যায়বিচারের জন্য শেষ পর্যন্ত এক অভিনব পন্থা বেছে নেন এমিলি৷
বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালে লন্ডনে ৩৮ বছর বয়সি এই নারী ধর্ষিত হন৷ তারপর থেকেই অনলাইনে ‘গোফান্ডমি' ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তিনি ১ লাখ পাউন্ড (১ লাখ ১৪ হাজার ইউরো) জোগাড় করার চেষ্টা করতে আরম্ভ করেন৷ ব্যক্তিগতভাবে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতেই এই উদ্যোগ নেন তিনি৷
সব গোপনীয়তার তোয়াক্কা না করে অক্টোবর থেকে এমিলি হান্ট ‘ধর্ষণের বিচার হওয়া উচিত' শিরোনামে এই ক্যাম্পেইন শুরু করেন৷ ব্রিটেনের অপরাধ সংক্রান্ত আইনজীবীদের সংগঠন ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস) জানায়, সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনতে যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না৷
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
'নগ্ন এবং ভীত সন্ত্রস্ত'
ক্যাম্পেইন শুরুর পর হান্টা জানান, তিনি অনেক পরে বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁকে মাদকাসক্তও করা হয়েছিল৷ ২০১৫ সালের মে মাসে সেই ঘটনা ঘটেছিল৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, সেই ব্যক্তির সঙ্গে যৌনতার কথা তিনি মনেই করতে পারেন না৷ তবে পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, সেই ব্যক্তি তাঁকে ধর্ষণও করেছিল৷
অনুমতি সম্ভব নয়
হান্ট শুরু থেকেই দাবি করে আসছিলেন যে সিপিএস সঠিকভাবে টক্সিকোলজি পরীক্ষাটি করেনি৷ এমনকি সিসিটিভি ফুটেজও তারা বিশ্লেষণ করেনি৷ ‘‘আমাকে মাদকাসক্ত করা হয়েছিল৷ ফুটেজে দেখা যায় যে আমি এতটাই নেশাগ্রস্ত ছিলাম যে আক্ষরিক অর্থেই হঠাৎ করে পড়ে যাই৷ কোনোরকম অনুমতি দেয়া তখন আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না'', ব্রিটিশ দৈনিক ‘ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড'-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ সব জানান৷
এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত হান্টের প্রাথমিক প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে৷ শুরু হওয়ার প্রথম ১৬ দিনে ২৫৭ জন দাতার কাছ থেকে ৭ হাজার ৫৪৬ পাউন্ড সংগ্রহ করা গেছে৷
এই প্রচারণার মাধ্যমে যাঁরা তাঁকে সমর্থন করেছেন তাঁদের প্রশংসা করেছেন হান্ট৷ বলেছেন, ‘‘মানুষের ওপর আমার বিশ্বাসের পরীক্ষা যেমন হয়েছে, তেমনি তা পুনরুদ্ধারও হয়েছে৷ আমাদের সমর্থকরা সত্যিই সেরা৷''
আলেকজান্ডার পিয়ার্সন/এএম
ধর্ষিতার দুই আঙুল পরীক্ষা
কোনো নারী ধর্ষিতা হয়েছেন কিনা, তা নিরূপণের জন্য বিতর্কিত দুই আঙুল পরীক্ষা চালু করতে চেয়েছিল ভারত৷ এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে, বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়৷ শেষে অবশ্য বিশেষ কারণ ছাড়া পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়৷ কী এই পরীক্ষা?
ছবি: AP
প্রমাণ করার জন্য
ধর্ষণকারীকে সাজা দিতে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনাটাই যথেষ্ট নয়৷ ধর্ষণ যে হয়েছে, সেটা প্রমাণ করতে হয়৷ তাই এতদিন পর্যন্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা দুই আঙুল পরীক্ষা করতেন৷
ছবি: Fotolia/detailblick
সম্ভোগের অভ্যাস
নিগৃহীতা মহিলার যৌনসম্ভোগের অভিজ্ঞতা বা অভ্যাস আছে কিনা, তা যাচাই করা হতো, কোথাও কোথাও এখনও হয়ে থাকে যোনিপথে আঙুল ঢুকিয়ে৷
ছবি: AP
কুমারিত্বের প্রমাণ
আঙুলের স্পর্শে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, একজন নারীর সতীচ্ছদ অক্ষত আছে কিনা, অর্থাৎ সেই নারীর কুমারিত্ব অক্ষুণ্ণ আছে কিনা৷
ছবি: Fotolia/NinaMalyna
ভিত্তিহীন ধারণা
আঙুলের সাহায্যে নাকি বোঝা যায়, বলপূর্বক যৌন সম্পর্ক হয়েছিল, না সম্মতি নিয়ে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই পদ্ধতিকে ভিত্তিহীন বলে নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
সর্বোচ্চ রায়
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩ সালেই বলেছিল, দুই আঙুল পরীক্ষা ধর্ষিতার পক্ষে শারীরিক ও মানসিকভাবে অবমাননাকর৷ সরকারের বিকল্প পদ্ধতির সন্ধান করা উচিত৷
ছবি: CC-BY-SA-3.0 LegalEagle
আর্মিতে ভর্তি হতে গেলে
ইন্দোনেশিয়ায় মহিলারা আর্মিতে ভর্তি হতে চাইলে, তাঁদের এই পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়৷ দেশটির আর্মি প্রধান জেনারেল মোয়েলদোকোর কথায়, ‘‘দুই আঙুল পরীক্ষা নারীর আচার-আচরণ, চরিত্র নিরীক্ষণের মূল চাবিকাঠি৷’’ বলা বাহুল্য, দক্ষিণ এশিয়া ছাড়াও মধ্য-পূর্ব এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতেও এটি একটি চালু পরীক্ষা৷
ছবি: AFP/Getty Images/A. Berry
6 ছবি1 | 6
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷