1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ষণের শাস্তির মাত্রা কমানো উচিত: ড. শাহদীন মালিক

হারুন উর রশীদ স্বপন
১৫ জানুয়ারি ২০২১

আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, সমাজে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ৷ ধর্ষণের শাস্তির পরিমাণ কমানো হলে বেশি অপরাধী শাস্তি পাবে বলেও মনে করেন তিনি৷

ড. শাহদীন মালিকছবি: DW

কঠোর শাস্তির বিধান অপরাধ কমায়, এমন কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই বলে ডয়চে ভেলেকে জানান ড. শাহদীন মালিক৷

ডয়চে ভেলে: ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ তারপরও ধর্ষণ কমছেনা৷ এর কারণ কী? শাস্তি বাড়ালে কি অপরাধ কমে?

ড. শাহদীন মালিক: গত ১০০ বছরে যত গবেষণা হয়েছে তাতে দেখা গেছে শাস্তি বাড়ালে যে অপরাধ কমে এই ধারণার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই৷ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় অপরাধের শাস্তি অনেক বাড়ানো হয়েছে৷ ৫-১০ বছর পরে দেখা গেছে শাস্তি বাড়ানোর কারণে অপরাধ কমেছে এমন কোনো নজির নেই৷ বাংলাদেশে গণধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ২০ বছর আগেই করা হয়েছিল৷ কিন্তু আজকাল তো দেখছি গণধর্ষণ বাড়ছে৷ মৃত্যুদণ্ড দিয়ে, শাস্তি বাড়িয়ে হয়তো অস্থায়ীভাবে দুই-চার-পাঁচ মাসের জন্য অপরাধ কমানো যায়৷ কিন্তু এটা যে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান না তা দুনিয়াতে ১০০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত৷

তাহলে কী করতে হবে?

শাস্তির ভয়ে যদি লোকে অপরাধ থেকে বিরত থাকত, তাহলে তো দুনিয়ার সব দেশেই শাস্তি বাড়িয়ে দিলে সব অপরাধ চলে যেত৷ যায়না৷ এর অন্য সামাজিক কারণ বুঝতে হবে৷ আমার দৃষ্টিতে ইদানিং দেশে যারা শক্তিশালী এবং যারা দুর্বল তাদের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেড়ে গেছে৷ যারা শক্তিশালী তারা আরো অনেক শক্তিশালী হয়েছে, যারা দুর্বল তারা আরো অনেক দুর্বল হয়েছে৷ অন্তত শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে একটা শক্তিশালী পুরুষ একটা দুর্বল নারীকে ধর্ষণ করে৷ আমরা এখন আরো দেখছি যে শিশু ধর্ষণের হার বেড়ে গেছে৷ এই যে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা এটা আমার দৃষ্টিতে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ৷ ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা কমাতে হবে৷ ক্ষমতাসীন দলের সাথে থাকলে সাত খুন মাফ৷ মাঝে মাঝে কিছু হুলুস্থুল হচ্ছে৷ বছরে হাজার বা লাখো অপরাধ হচ্ছে৷ তারমধ্যে দুই-চার-দশ বা বিশটা ক্ষমতাসীন অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থা করে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা কমছেনা৷

ধর্ষণ মামলায় শাস্তির হার এত কম কেন?

আসল দুর্বলতা হলো পুলিশের৷ একটা মামলা প্রমাণ করতে হলে কোর্টে সাক্ষীকে আনতে হবে৷ কোর্টে সাক্ষী আনার দায়িত্ব পুলিশের৷ কিন্তু এই কাজটা পুলিশ মোটেই করেনা৷

তদন্ত প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে মামলা দুর্বল হয়ে যায় কিনা?

না, এটাকে আমরা অতিরঞ্জিত করছি৷ দুনিয়ার যেকোনো দেশে ধর্ষণ হলে তা প্রমাণ করতে শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন হয়৷ ডাক্তারি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়৷ আমাদের থানাগুলোতে যদি বেশি সংখ্যক নারী পুলিশ থাকত, ধর্ষণের শিকার যা যৌন হয়রানির শিকার নারী যদি নারী পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করতে পারত তাহলে এটা খুব কঠিন কাজ না৷

বিয়ে করবেন ভেবে সম্মতিতেই হলো৷ পরে বিয়ে হলোনা৷ নারী তখন ধর্ষণ মামলা করলেন৷ এই মামলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একই ধারার অপরাধ হওয়া কি ঠিক আছে?

এখানে আইনের দুর্বলতা আছে৷ মিনিমাম যে বিদ্যা বুদ্ধি থাকা দরকার আইন প্রণয়নে তাও এখানে নেই৷ ফলে মিথ্যা মামলার অবারিত সুযোগ আছে এখানে৷

ছেলে শিশু ধর্ষণের শিকার হলে অনেক সময় ধর্ষণ মামলা হয়না৷ এখানে করণীয় কী?

বলাৎকারের ব্যাপারে আগে আমরা চোখ বন্ধ করে থাকতাম৷ কিন্তু আস্তে আস্তে আমাদের চোখ খুলছে৷ আর শিশুর কোনো জেন্ডার ভাগ আইনে নেই৷ আমার মনে হয় আমরা আরেকটু সচেতন হলেই এক্ষেত্রেও ধর্ষণ মামলা হবে৷

ধর্ষণ আর ধর্ষণে সহযোগিতার একই শাস্তি কতটুকু যৌক্তিক?

অবশ্যই যৌক্তিক না৷ ১৭৬১ সালের আগে অপরাধের চেষ্টা এবং অপাধের একই শাস্তি ছিল৷ ওই সময় সিজার বেকারিয়া তার এক বইয়ে দেখান, দুইটার শাস্তি এক করলে অপরাধ বাড়বে৷ চেষ্টা আর সংঘটিত অপরাধের শাস্তি এক করা হলে যে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে তাহলে সে অপরাধ করবে৷ ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে একই শাস্তি হলে পরের দিন সে ধর্ষণের চেষ্টা করবে৷ আমরা যেসব আইন করছি তাতে অপরাধ দমন না করে বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে৷

আইন সংশোধন করে উভয়ের ডিএনএ টেস্ট এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷ এতে কি অভিযুক্তকে শাস্তি দেয়া সহজ হবে?

এটা বিরাট বাধা হবে৷ ডিএনএ টেস্ট করার ল্যাবরেটরি দেশে কয়টা আছে? আমার জানা মতে তিন-চারটা৷ বিভাগীয় শহরের বাইরে যে নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে সে ডিএনএ টেস্ট কেমন করে করাবে? আসামির আইনজীবী বিরাট সুযোগ পেয়ে যাবে৷ বলবে আমার আসামির ডিএনএ টেস্ট করার কথা, করা হয়নি৷ অতএব প্রমাণ হয় নাই৷ অতএব মামলা খারিজ৷

কেউ কেউ বলছেন ধর্ষণের বিচারে জন্য স্পিডি ট্রায়াল করতে আলাদা বিশেষ আদালত দরকার৷ তাতে কি বিচার পাওয়া সহজ হবে?

দেশে এখন নারী ও শিশু আদালত আছে ৯৪-৯৫ টা৷ দ্রুত বিচার করলে বেশি অন্যায় অবিচার হবে৷ সবচেয়ে দ্রুত বিচার হলো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড৷ হাজার হাজার মানুষকে দ্রুততম সময়ে বিচার করা হলো৷ রাতে ধরল, রাতে ধরে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করল৷ ভোরে মেরে ফেলল৷  এরচেয়ে তো আর দ্রুত বিচার সম্ভব না৷ এই হাজার হাজার দ্রুত বিচার করে কী হয়েছে? সমাজে অপরাধ বেড়েছে৷

ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবারকে দায়ী করার প্রবণতা এখনো আছে৷ কলাবাগানের ধর্ষণের ঘটনায়ও তা আমরা দেখেছি৷ এটা আমাদের মানসিকতার কোন স্তর?

আগেই যে বলেছিলাম ক্ষমতা আর ক্ষমতাহীন৷ কলাবাগানের ঘটনায় যেটা হয়েছে যাদের ক্ষমতা আছে তারা ক্ষমতার ব্যবহার করে তাদের দিকটা তুলে ধরছে৷ ওকে ধর্ষণ করেছি৷ ধর্ষণ করে কোনো খারাপ কাজ করিনি৷  ও দুর্বল তাই দোষ তার৷৷ এটা এখন আরো বেশি হচ্ছে৷ কারণ ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা বাড়ছে৷

শাস্তি বাড়ালে অপরাধ কমে এমন ধারণার ভিত্তি নেই: ড. শাহদীন মালিক

This browser does not support the audio element.

কঠোর শাস্তি অপরাধ না কমিয়ে বাড়াতে কখনো ভূমিকা রাখে কিনা?

অবশ্যই৷ শাস্তি যত কঠোর হবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার তত কমবে৷ এখন ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে হলে আপনি বিচারক হাজার বার চিন্তা করবেন৷ কিন্তু যদি ১০ বছরের কারাদণ্ড হয় তখন একটু সন্দেহ থাকলেও বিচারক রায় দিয়ে দেবেন৷ মৃত্যুদণ্ড দিতে বহুবার চিন্তা করবেন আপনি বিচারক হিসেবে৷

আইনের কি কোনো সংস্কারের প্রয়োজন আছে?

আমি বলব শাস্তি কমানোর কথা৷ শাস্তি কমলে যারা দোষী তাদের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার বাড়বে৷ তারা আসলেই শাস্তি ভোগ করবে৷ দ্বিতীয়ত, পুলিশকে সাক্ষী হাজির করার ব্যাপারে সক্রিয় করতে হবে৷ তৃতীয়ত, সমাজের ক্ষমতা, রাজনৈতিক ক্ষমতা, অর্থনৈতিক ক্ষমতা, আইনের ঊর্ধ্বে থাকার ক্ষমতা- এই ক্ষমতার ভারসাম্যহীতা কমাতে হবে৷ জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে৷ না হলে সমাজে অপরাধ কমবেনা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ